স্বপ্নীল
৩১
সিঙ্গারার বানানোর আলু মধ্যে বয়ামের অর্ধেকের চেয়ে ও বেশি মচিরের গুড়া ঢেলে দেয়।আলু সাথে মরিচের গুড়া গুলো মিক্সড করতে থাকে। আলু গুলো লাল টক টক হয়েছে । সোহা কিচেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীলের কান্ড দেখছে।সোহা বুঝতে পাচ্ছে না নীল এসব করছে কেন?তাই প্রশ্ন করে বসে।
-“এগুলো এরকম করছিস কেন? ”
নীল তর্জনী আঙুল উঠিয়ে ইশারা করে বলল,
-“সসসস! আস্তে কথা বল।কেউ শুনে ফেলবে।”
সোহা ফিসফিস করে বলল,
-” কি করবি এগুলো দিয়ে বল!”
নীল হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে ড্রয়িং রুম দেখিয়ে বলল,
– “এদের কে মরিচের গুড়া নতুন রেসিপি সিঙ্গারা খাবাবো।”
সোহা আঁতকে উঠে বলল,
– ” কি?
-” আস্তে কথা বল!”
-” নীল!”
নীল সোহার কথা কর্ণপাত না করে নিজের কাজে মনযোগ দিয়ে করতে থাকে।সোহা বার বার মানা করতে থাকে।যাতে এই কাজ না করে।নীল তার কথা পাত্তাই দেয় না।সিঙ্গারা বানানোর শেষে ট্রে তুলে নিয়ে সাজিয়ে নেয়।
সোহাকে নীল বলল,
– ” চল! এখন দেখবি আসল মজা।”
এটা বলে ট্রে নিয়ে চলে আসে।সোহা ও টার পিছন পিছন চলে আসে।নীল ট্রে টা টি- টেবিলের উপরে রেখে বলল,
– “সবার জন্য গরম গরম সিঙ্গারা আনলাম!”
সমুদ্রে একটা সিঙ্গারা নিতে গেলে নীল বাঁধা দেয়।কারণ এখানে দুই রকম সিঙ্গারা আছে। ঝাল দেওয়া, আর না ঝাল না দিয়ে বানানো।সেখানে মরিচের গুড়া দেয়নো সেখান থেকে একটা সিঙ্গারা নিয়ে সমুদ্রেকে দেয়।সমুদ্রে তার বন্ধুদের কে বলে,
-” নীলের হাতের সিঙ্গারা দারুণ মজা।একবার খেলে বলবি আবার বানিয়ে আনতে।”
সবাই মাথা সায় দেয়।নীলের বড় ভাইয়া একটা সিঙ্গারা খায়।স্বপ্ন নীলের দিকে তাকায়।স্পর্শ দেখতে পায় নীলের চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসির রেখা।তারপর নজর যায় সিঙ্গারা গুলো দিকে ত।কেন যেন একটা লাল লাল দেখা যাচ্ছে?সিঙ্গারা গুলো দেখে তারর মনে হচ্ছে এগুলোর মধ্যে কিছু একটা ঘাবলা আছে।তৃণ সিঙ্গারা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে স্বপ্ন হাত ধরে ফেলে।নীল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-“হাত ধরলে কেন তৃণ ভাইয়ার।উনার হাত ছাড়ুন ! ”
এটা বলে ট্রে থেকে একটা ঝাল সিঙ্গারা তৃণ হাতে তুলে দিয়ে বলল,
-” ভাইয়া খান! ”
স্বপ্ন তৃণ কাছে ফিসফিস করে বলল,
-“সিঙ্গারা খাইছ না।হাতের মধ্যে রেখে নাড়াচাড়া করবি।”
ধূসর তার কথা শুনে বলল,
-“কেন?
স্বপ্ন বলল,
-” যেটা বলছি সেটা কর দুজনে।”
স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট করে সিঙ্গারা বানালে। তুমি খাবে না।”
-” না আমি খাবো না।”
-” ওমা! সেটা কেমন কথা।”
– ” তুমি একটা খাও।”
প্রাচ্য বলল,
-” হ্যাঁ নীল খা তো।সবাই মিলে খেলে মজা বেশি।”
নীল আসতে নিলে সোহা হাত টেনে ধরে।তখনই স্বপ্ন ট্রে ওদলবদল করে ফেলে।ঝাল গুলো জায়গা ভালো গুলো রাখল।ভালো গুলোর জায়গা ঝাল গুলো। স্বপ্ন খুব ভালো করে জানে নীল ঝাল না ওয়ালা গুলো খাবে। নীল হাত ছাড়িয়ে সোহাকে বলল,
-” ঝাল সিঙ্গারা খেলে মরে যাবে ওরা।”
– ” মরলে আমি খুশি!হাত ছাড়!”
এটা বলে নীল সিঙ্গারা নেয়।প্রাচ্য আর রোদ ও সেই ঝাল সিঙ্গারা গুলো থেকে একটা একটা করে নেয়।নীল বলল,
– ” আপনারা খাচ্ছে না কেন? ”
স্বপ্ন বলল,
-” খাচ্ছি!”
কারণ তারা আগের ঝাল সিঙ্গারা রেখে দিয়ে ভালো গুলো থেকে নেয়।
সবাই খেতে থাকে নীল ভ্রু কুচঁকে তাকায় তাদের দিকে। এত ঝাল দিলাম এই ব্যাটা হা হুতাশ কিছু করে না ঝালে।এতক্ষণে তো ঝাল খেয়ে দৌড়া দৌড়ি করা কথা।না কি ঝাল খেয়ে চেপে আছে। কিছু বুঝতে পাচ্ছি না। নীল সোহার দিকে তাকায়।সোহা ইশারা বলে সে ও কিছু বুঝতে পাচ্ছে না।স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” বাহ! খুব দারুণ বানিয়েছো সিঙ্গারা।অনেক মজা হয়েছে।”
নীল বুঝতে পাচ্ছে না ঝাল সিঙ্গারা খেয়ে বদ ব্যাটা তার প্রশংসা করছে।তৃণ বলল,
-” কি ব্যাপার নীল তুমি খাচ্ছো না কেন? ”
-” খাচ্ছি! খাচ্ছি।”
এটা বলে সিঙ্গারা এক কামড় বসাতে চিৎকার দিয়ে উঠে।নীলের বড় ভাইয়া বলল,
-“চিৎকার করছিস কেন নীল?”
এক কামড় খেয়ে তার খুব খারাপ অবস্থা।জিহ্বা যেন জ্বলে যাচ্ছে।নাক, কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।কারো কথা বুঝতে পাচ্ছে না সে।তার পর বলল,
-” ভাইয়া খুব ঝাল! ”
-” কোথায় ঝাল।আমি তো দেখছি ঠিক আছে সব!”
-” না, ভাইয়া সত্যি জাল।”
নীলের ভাই তাকে ধমক দিয়ে বলল,
-“বেয়াদব ! সব কিছু নিয়ে ফাজলামো করিস। কারো কাছে ঝাল লাগলো না।শুধু তোর কাছে নি ঝাল লাগে।ভদ্রতার লেশ মাত্র নেই তোর কাছে। সব সময় এমন করিস!”
ভাইয়ার সবার সামনে নীলকে অপমান করে।তাই রাগ করে হাতে থাকা বাকি সিঙ্গারা খেয়ে ফেলে খপখপ করে।ঝালের চোটে চোখে দিয়ে পানি চলে আসে। কান ঝাঝা করছে।চোখ দিয়ে ঝাপসা হয়ে আসছে।তারপর স্বপ্ন দিকে একবার তাকায়। রহস্যময়ী হাসি দেয় স্বপ্ন! নীলের আর বুঝতে বাকি রইল না এসব পিছনে স্বপ্নর হাত রয়েছে।তার মানে সে ট্রে বদলে দিয়েছে।। ঝাল সিঙ্গারা তুলে নিয়েছে সে ভুল করে।আর এক মিনিট না দাঁড়িয়ে দৌড়িয়ে চলে যায় বেসিনের সামনে। বমি করে ভাসিয়ে ফেলে।টেবিলের উপরে জগ থেকে পানি খেতে থাকে।কিছু পানি মুখে যাচ্ছে বাকি পানি জামা ভিজিয়ে দিয়েছে। না! আর এক মুহুর্তে এখানে থাকা যাবে না।এক জগ পানি নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
নীলের ভাইয়া উঠে চলে যায়।প্রাচ্য নিজের হাতে থাকা সিঙ্গারাটা মুখে দিলে ‘ঝাল ‘ বলে একটা চিৎকার করে থুথু করে মুখের ভিতরে সিঙ্গারা ফেলে দেয়।
ঝাল সিঙ্গারা মুখে দেবে বলে কামড়াচ্ছিল তখনই প্রাচ্য চিৎকার শুনে দৌড়িয়ে আসে।
-” কি হয়েছে?”
– “পানিইইইইইই!”
ধূসর দৌড়িয়ে যে য়ে পানি আনে! এক গ্লাস পানি প্রাচ্য’র দিকে এগিয়ে দেয়।পাচ্য ঢকঢক করে পানি পান করে।গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-” আরো আন! ”
ধূসর আবার দৌড়ালো।এভাবে পাঁচ গ্লাস পানি এনে দিল।তাতে প্রাচ্য ঝাল কমলো না। স্বপ্ন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে দিয়ে বলল,
-” ধর মিষ্টি খা! তাহলে ঝাল কমে যাবে।”
দুহাত দিয়ে মুখে মিষ্টি মুখে নেয়।সমুদ্র মাথা কিছু আসতেছে ঝাল কোথায় থেকে আসছে।সে তো সিঙ্গারা খেয়েছে ঝাল তো লাগেনি।তাহলে এরা কেন ঝাল ঝাল বলে চিল্লাছে।মিষ্টি খেয়ে একটু ঝাল কমেছে প্রাচ্য’র। সে তৃণ দিকে তাকায়।সবাই তার এই অবস্থা দেখে এটা ওটা এনে দিয়েছে খেয়ে ঝাল কমানোর জন্য।আর তৃণ দেখে বুঝা যাচ্ছে যে এখানে কিছুই হয়নি।সব স্বাভাবিক।কি সুন্দর করে সিঙ্গারা খাচ্ছে?অন্য সময় সবার আগে তৃণ ছুটে যেত।আর আজ,,,,,, একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।এতই ঘৃণা করিস তুই আমায়!আমার এই অবস্থা দেখে তোর কোনো হেলদুল হলো না।ভাববো না আর তোর কথা।তুই যদি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারিস, আমি ও পারবো। নিজেকে ঠিক করে সে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
-” এই জন্য নীল বার বার সিঙ্গারা খেয়ে ঝাল ঝাল বলছিল।আমি সামান্য একটু খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।নীল পুরো খেলো কেমনে? তার এখন কি অবস্থা?
সমুদ্র বলল,
-” সিঙ্গারায় ঝাল আসল কোথায় থেকে? আমার থেকে তো জ্বাল লাগে নি।তোদের কেন ঝাল লাগল?”
তৃণ বলল,
-” তোর বোন নীল,সে আমাদের জন্য ঝাল ঝাল সিঙ্গারা বানিয়ে এনেছে খাবাবে বলে।স্বপ্ন তার উল্ট চাল দিয়ে তাকে কুপোকাত করে দিয়েছে!”
-” কিন্তু আমার টায় ঝাল ছিল না।”
– “হুম ! তুই নীলের ভাই।তোকে কি করে সে জেনে শুনে ঝাল সিঙ্গারা খাবাবে।সে খুব ভালো করে জানে। এই সিঙ্গারায় ঝালের পরিমাণ কেমন ছিল!”
– ” আমি খেয়ে বুঝেছি এখানে কেমন ঝাল ছিল।তোরা যখন বুঝতে পেরেছিস এখানে ঝাল সিঙ্গারা ছিল।আমায় বলবি না কেন?জেনে শুনে আমাকে ঝাল সিঙ্গারা খাবালি।এখন ও জিব্বা জ্বলে যাচ্ছে।”
-” সিঙ্গারা অদলবদল হওয়া বুঝতে পারিনি তোরা ঝাল সিঙ্গারা নিয়েছিস নাকি ভালো গুলো! ”
রোদ তার হাতের সিঙ্গারা থেকে একটু চিমটি মুখে দিয়ে দেখে তারটা ও ঝাল,থু মেলে ফেলে দিয়ে বলল,
– ” আমার টা ও ঝাল।যাক বাবা একটু জন্য বেঁচে গেলাম।না হয়ে আমি খেলে আমার একই অবস্থা হতো।”
প্রাচ্য বলল,
-” স্বপ্ন তুই তো জানতি মনে হয় নীল হাতে ঝাল সিঙ্গারা ছিল।”
-“হু!
-” তুই নীল কে আঁটকালি না কেন? না জানি নীলের এখন কি অবস্থা।বেচারী মনে ঝাল চোটে মরে যাচ্ছে।”
ধূসর বলল,
-” কেন আঁটকাবে স্বপ্ন।হোয়াই? তোর বোন আমাদের ঝাল খাইয়ে মারতে চাইছিল।এখন বুঝুক এই ঝাল খেলে আমাদের কি হতো।”
-” ধূসর! নীল না বুঝে করেছে তাই বলে তোরা,,,,,
-“একদম ঠিক করেছি।বোনের হয়ে সাফাই গাইবি না। না হলে এখন বাকি ঝাল সিঙ্গারা তোকে খাইয়ে দিব।”
নীল দুইহাত দিয়ে নিজের চুল খামচে ধরছে।এখন ও ঝাল কমার নাম নেই। রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে।বিছানার চাদর, বালিশ সব ছুড়ে ফেলছে ঝাল কমছে না বলে।জগের পানি ও শেষ হয়ে যায়।সোহা তাকে আবার পানি এনে দেয়। পানি খেতে খেতে নীল হয়রান হয়ে যায়।শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।ফ্লোরে হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে। জগ উবু করে মুখের উপর পানি ঢালতে থাকে।আবার জগের পানি শেষ হয়ে যায়!পাশে জগ রেখে উপরে থাকিয়ে হা করে ঝাল মুখের উপরে ডান হাত দিয়ে বাতাস করে ঝাল নিবারণ করে।তখনই স্বপ্ন তার রুমে ঢুকে।নীলকে এভাবে দেখে তার হাসি পায়।নীলে কাছে এসে বসে বলল,
-” গর্ত করলে কার জন্য? সে গর্ত তুমি-ই পড়লে!”
নীল স্বপ্ন দিকে তাকায়।এখন তার ইচ্ছা করছে জগ দিয়ে স্বপ্ন’র মাথা পাঠিয়ে ফেলতে।কিন্তু শরীরে সেই শক্তি ও নেই।তাই শুধু রাগী চোখে তাকয়ে আছে।
-“ইস! এভাবে তাকাবে না প্লিজ।আমার দিলে এসে লাগে।
অভিনয় করে নিজের বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে স্বপ্ন বলল।রাগে নীলের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।স্বপ্ন স্ট্রং হয়ে বলল,
-“আমায় কুপোকাত করতে এসে নিজে কুপোকাত হয়ে গেলে। সো স্যাড়!”
লাস্ট কথা নীলকে বিদ্রুপ করে বলল স্বপ্ন। নীল হাত দিয়ে স্বপ্ন গলা আঁকড়ে ধরে কামড় বসায়।স্বপ্ন মোটে প্রস্তুত ছিল! এমন কিছু হবে ধারণার বাহিরে ছিল।নীল নিজের সর্বোশক্তি দিয়ে স্বপ্ন গলায় কামড় বসায়।একসময় সে হয়রান হয়ে ছেড়ে দেয়।স্বপ্ন ব্যথা পেয়ে ও একটা শব্দ করল না। নিজের হাত রাখে গলায়। গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাতের আঙ্গুল ডগায় রক্ত দেখে নীলকে বলল,
– ” রক্ত বের করে ফেলল,ভ্যাম্পায়ার লেডি না কি তুমি?
– ” এটা খুবই কম কিছু।আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার শোধ তুলব।ওয়েট এন্ড ওয়াচ! ”
এটা বলে নীল চলে যায়।এখন যাবে তার দাদুর রুমে।তার বড় ভাইয়ের নামে নালিশ জানাতে।সবার সামনে তাকে বকাঝকা করে ছোট করেছে।সোলোমান মির্জা কাছে এসে কাঁদো কাঁদো হয়ে ভাইয়ের নামে কিছু সত্যি বলছে, কিছু মিথ্যে বলে বিচার দেয়।সোলামান মির্জা নাতনী মাথা হাত ভুলিয়ে সাত্বনা দিয়ে বলে।ভাইয়ের বিচার করবে পরে।দেখা হলে ইচ্ছা মত বকাঝকা করবে কেন তার নাতনী কে বকছে।নীল খুশি হয়ে দাদু গালে চুমু খেয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়। নাতনী এই পাগলামি দেখে তিনি হাসে।তার দুই নাতনীর দুইরকম স্বভাব।
কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে মাফ করবেন।একদিন পর পর গল্প পাবেন সবাই
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/925662824531104/