স্বপ্নীল ৩০

0
1239

স্বপ্নীল
৩০
রোদের হাত পা সব গুলো বেঁধে রেখেছে। মুখের মধ্যে টেপ মেরে দিয়েছে সমুদ্র।পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলে।ড্রয়ার থেকে সিগারেট নিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালায়।সিগারেট টানতে থাকে রোদের এই ধবধবে ফর্সা পেটের দিকে তাকিয়ে। রোদ বুঝতে পাচ্ছে না সমুদ্র এসব কেন করছে? কি সুন্দর করে তাকে কোলে করে নিয়ে আসছিল।তখনই রুমে এনে ধপাস করে ফেলে দিয়ে এভাবে বাঁধে ফেলে। রোদ উঁহু উঁহু করতে থাকে!সমুদ্র তাদ দিকে তাকায়। সে ইশারা বলল, মুখ থেকে টেপটা সরাতে।সমুদ্র সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চোখ বন্ধ করে সিগারেট টান মারে।আধখাওয়া সিগারেট হাতে নেয়।এগিয়ে যায় রোদের পেটের দিকে।রোদ বড় বড় চোখ করে তাকায়।কি করতে যাচ্ছে সমুদ্র? জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে পেটের তিলটার উপর। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠে!দাঁত মুখ খিঁচে সহ্য করে নেয়। ব্যথায় পুরো শরীর চটপটানি শুরু করে। চোখে বেয়ে পানি পড়তে থাকে। কোরবানের গরুকে যেমন দশ-পনেরো জন ধরে গলায় ছুরি চালায় যখন পশুটা পা মেলে চটপট করতে থাকে।এখন সেই পশুর মত রোদের ও সেইম অবস্থা।

সিগারেট ফেলে দিয়ে হাতের বাঁধন, মুখ থেকে টেপ সরিয়ে ফেলে।তখন রোদকে ধমক দিয়ে বলল,
-” গেট আউট! ”
চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।এখন সে আগের শুয়ে আছে।ব্যথায় যন্ত্রণা মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।উঠে বসার শক্তি যেন পাচ্ছে না সে।তা দেখে সমুদ্র তার হাত ধরে টান দিয়ে খাটের উপরে বসায়।
-“এক্ষূনি বের হয়ে যাবি আমার রুম থেকে।”
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সে সমুদ্র’র দিকে।কি এমন করেছে সে যার জন্য সমুদ্র এমন বিহেভিয়ার করল।খাঁট থেকে আস্তে আস্তে নেমে যায়। দরজা সামনে যেয়ে পিছনে তাকায়। সমুদ্রকে একবার দেখে কান্না করতে করতে জোরে দৌড়িয়ে বেড়ে যায় সে।সমুদ্র খাটে পা ঝুলিয়ে বসে চাদুর খামচে ধরে।
★★★
এক এক করে সবাই চলে যায় শান বাঁধানো ঘাট থেকে। শুধু প্রাচ্য আর তৃণ রয়ে যায়।ঘাটে দাঁড়িয়ে তৃণ কার সাথে কথা বলছে।তার জন্য অপেক্ষা করছে প্রাচ্য।অনেকক্ষণ যাবত কথা বলছে তৃণ! কথা শেষ হওয়ার নাম ও নেই।তাই সে কপট রাগ দেখিয়ে তৃণ হাত থেকে মোবাইল নেয়।তৃণ বলল,
– ” কি সমস্যা!”
লাইন কেটে তৃণ হাতে মোবাইল দিয়ে বলল,
– ” সমস্যা অনেক! এত কথা কার সাথে বলছ!”
কপাল কঁচকে তাকিয়ে তৃণ বলল,
– ” কৈফিয়ত চাইছিস! ”
-” যদি মনে হয় কৈফিয়ত!তাহলে তাই।”
-“কোন অধিকারে জোরে কৈফিয়ত চাস।”
প্রাচ্য তৃণ কাছে এসে বলল,
– ” ভালোবাসার অধিকারে।”
তৃণ তাচ্ছিল্য হাসল।তারপর বলল,
-” ভালোবাসা।”
প্রাচ্য দুহাত দিয়ে তৃণকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“ভালোবাসি তোকে।খুব ভালোবাসি।”
প্রাচ্য হাত পিঠ থেকে সরিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে তৃণ বলল,
– ঘৃণা হচ্ছে না তোর।একটা লুচ্চা ছেলেকে ভালোবাসার কথা বলতে। লজ্জা করছে না তোর।”
-” প্লিজ চুপ কর। ”
– ” কেন? যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। শুধু একজনের ইজ্জত কেঁড়ে নি নাই আমি।রোজ রাতে নিয়ম করে পতিতালয় যাই। আমার যে এক জনে চাহিদা মিটে না।”
প্রাচ্য কিছু না বলে শুধু তৃণ দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে সে।এসব মিথ্যে অপবাদ সে ভুল বুঝে তৃণকে এক সময় দিয়েছে।শুধু অপবাদ নয়!দুই দু বার থাপ্পড় মেরেছে। তৃণ অতি কষ্টে সে কথা গুলো বলছে তাকে।
তৃণ আবার বলল,
-” ফারদার তোর মুখ যেন ভালোবাসা কথা না শুনি। মাথা গেঁথে নেয়,আমি তোকে ভালোবাসি না।আর কখনো বাসবো না। যেটা শেষ হয়ে গেছে সেটা আর কিছুতে শুরু করতে চাই না।”
এটা বলে হনহনিয়ে চলে যায়।প্রাচ্য বসে পড়ে সেখানে কান্না করতে থাকে।জেদ করে এসব বলছে তৃণ।একটা বার ও ভাবছে না জেদ করে থাকার সময় এখন নয়। এভাবে চলতে থাকলে শিহাবকে বিয়ে করে ফেলতে হবে।তৃণকে ছাড়া সে কাউকে নিজের জীবনে মানতে পারবে না।রাগের বশে না হয় সে ভুল সিধান্ত নিয়েছে।কিন্তু এখন তৃণ জেদ করে এমন করছে।
প্রাচ্য বাসায় এসে দেখে রোদ উবু শুয়ে বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।কেন কাঁদছে রোদ। ভাইয়া কিছু করেনি তো।ভাবতে ভাবতেই রোদের কাঁধ হাত দেয়।রোদ ঘাড় ঘুড়িয়ে প্রাচ্যকে দেখে তাকে ঝাপটে ধরে কান্না করতে থাকে।প্রাচ্য রোদের পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
– ” কান্না থামিয়ে বল কি হয়েছে!কেন কাঁদছিস।”
রোদ চোখের পানি মুঁচে ফেলে। পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ক্ষত স্থান প্রাচ্যকে দেখায়।প্রাচ্য আঁতকে উঠে বলল,
-” এত কেয়ারলেস কেন তুই? দেখে শুনে চলতে পারিস না। ইস! পুড়ে কি এক অবস্থা করেছে! ”
রোদ কিছুই বলল না।প্রাচ্য কিছু একটা ভেবে সে আবার বলল,
-” এটা তো কোনো এক্সিডেন্ট ভাবে ঘটেনি।কেউ ইচ্ছা করে এমন করেছে? কে করেছে তোর এমন? ”
চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল।রোদ হেচঁকি তুলে বলল,
– ” তোর ভাইয়া।”
প্রাচ্য হতবিহ্বল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রোদের দিকে।তারপর রোদের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সমুদ্রের রুমে।
-” ভাইয়া তুমি কি মানুষ।!”
সমুদ্র এখন ও সেই আগের অবস্থা বসা ছিল।প্রাচ্য’র কথা শুনে তার দিকে তাকায়।তারপর রোদের দিকে তাকায়, সে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে ফ্লোরে দিকে।সমুদ্র চোখ নামিয়ে ফেলে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।তা দেখে প্রাচ্য বলল,
-” কি হলো উত্তর দাও।রোদের সাথে এমন করলে কেন?”
সমুদ্র চুপচাপ দেখে প্রাচ্য আবার গলা খ্যাঁকিয়ে উঠে বলল,
-” এভাবে চুপ থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে পারবে না।চুপ না থেকে বলো।”
সমুদ্র কিছু না বলে উঠে এসে রোদ আর প্রাচ্য’র হাত ধরে টেনে দরজার বাহিরে দাঁড় করিয়ে মুখের উপরে দরজা লাগিয়ে দেয়।প্রাচ্য’র প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ভাইয়ের উপরে।রোদকে নিজের রুমে এনে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দেয়।ভাইকে ইচ্ছা তরফে বকতে থাকে।আর রোদ কে বলল,
– ” বাংলাদেশে তোর জন্য কি অভাব পড়ছে ছেলের। তাই আমার ভাইকে ভালো বাসতে গেলি। জানোয়ার একটা! মনে দয়া মায়া বলতে কিচ্চু টি নেই।”
রোদ শুধু মুচকি হেসেছে। আজ সমুদ্র আচরণে রোদের একটু ও বুঝতে বাকি রইল না সমুদ্র যে তাকে ভালোবাসে।ভালোবাসে বলে নিজের প্রিয় মানুষের সৌন্দর্য অন্য কেউ প্রশংসা করছিল বলে আজকে এই শাস্তি তাকে দিল।যদি সমুদ্র তাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে এটা তার কিছুই নয়।তাহলে এটা হবে ভালোবাসার উপহার তার কাছে।

-” এটা তোর জন্য!”
সোহা তামিমের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। সে বলল,
– ” কি আছে এখানে? ”
– ” প্যাকেট খুলে নিজেই দেখে নেয়।”
-“আমি কেন খুলতে যাবো?”
এটা বলে চলে যেতে নিলে তামিম হাত ধরে আঁটকায়।প্যাকট থেকে শাড়ি বের করে সোহার মাথা ধরে ঘোমটা দিয়ে বলল,
– ” দারুন মানাবে তোকে।পছন্দ হয়েছে নি তোর।”
সোহা মাথা উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে মুটোবন্ধ করে তামিমের মুখের উপরে ছুড়ে ফেলে বলল,
– ” কাজের মেয়ে প্রতি কিসের এত আধিখ্যেতা। ”
তামিম মুখের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে বলল,
– ” শাড়ি ফেলে দিলে কেন?”
– ” তাহলে কি এটা নিয়ে আমি নাচব!”
সোহার বাঁকা কথা শুনার কোনো ইচ্ছা তামিমের নেই।তাই সোহা হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– ” এটা কালকে যেন পড়তে দেখি তোকে। ”
হনহন করে বেড়িয়ে যায়।সোহা শাড়ি তা খাটের উপরে ফেলে দেয়।তারপর সেটা কে আলমারিতে রেখে দেয়।মা দেখলে প্রশ্ন করে বসবে এই শাড়ি কই পাইছে সে।।তার চেয়ে ভালো আলমারির এককোণ ধলামোচড়া হয়ে পড়া থাকা।সে কিছুতেই এই শাড়ি পড়বেনা।মরে গেলে না!তামিম কথা সে ভাববে না।

রোদ শাড়ি পাল্টিয়ো একটা লং থ্রি পীজ পড়ে নিচে নামে।সবাই ড্রয়িংরুম বসে আছে।বিয়ের ব্যবপারে কথা বলছে। কি ভাবে কি করবে।কি ভাবে সাজাবে বাড়ি টাকে।কালকে সকালে ডোকোরেটের লোক আসবে বাড়ি সাজানোর জন্য এই নিয়ে সবার মধ্যে আলোচনা করছে সমুদ্র।রোদ নিঃশব্দে এসে বসে তার বন্ধুদের পাশে।রোদকে দেখে তৃণ বলল তার বন্ধুদের কে,
– ” তোরা সবাই কি রোদের দিকে খেয়াল করেছিস!”
সবাই তৃণ দিকে তাকিয়ে থাকে উৎসুক হয়ে।তৃণ আবার বলল,
– ” রোদের মধ্যে কিছুটা চেঞ্জড হয়ে গেছে।”
ধূসর বলল,
– ” কি রকম!”
– ” রোদের মধ্যে বাঙালী বাঙালী ভাব চলে আসছে।বাঙালী নারী মত শাড়ি পরিধান করে বেশিভাগ এখন।আগে মত ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ নেই!”
তৃণ কথা কিছুটা স্লান হাসল রোদ।আড়চোখে তাকায় সমুদ্র দিকে। না তার বন্ধুদের কোথায় ভ্রুক্ষেপ নেই।সে নিজের কাজে ব্যস্ত।মনে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।
ধূসর বলল,
– ” কি রোদ প্রেমে পড়েছিস নাকি।”
রোদ উঠে এসে ধূসের কানে ফিসফিস করে বলল,
– ” ডং টা একটু কম করে করলে ভালো হয়।কার প্রেমে পড়েছি সেটা তোরা জানিস।তাই নতুন করে কিছু বলতে চাই না।”

আবার সবাই আড্ডা দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।এই কথা রেখে সেই কথায় যায়।এভাবে আড্ডা টপিক চেঞ্জ হয়!আড্ডা মশগুল হয় সবাই শুধু মাত্র একজন বাদে।সেই একজন চোখ হচ্ছে রান্না ঘরে দিকে।তার প্রিয়াতমা যে রান্না করতে ব্যস্ত। রান্না ভাপে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।সে ঘাম গুলো মুক্তর মত চিকচিক করছে। রান্ন ঘরটা যেন আলোকিত করছে।রান্না করার মাঝে সোহার চোখ যায় ড্রয়িরুমে।কেউ একজন তার দিকে চেয়ে আছে।আর সে কেউ একজন আর কেউ নয়!সে হলো ধূসর।দুজনায় চোখাচোখি হয়। সোহা চোখ নামিয়ে ফেলে রান্না মন দেয়।কেমন একটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।তার দিকে এভাবে তামিম ছাড়া আর কেউ তাকায় নি।আড় চোখে আমার সে ধূসরে দিকে তাকায়।এখন ধূসর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
দূর থেকে কেউ একজন তার দৃষ্টি স্থির রেখে দেখে যাচ্ছে তাদের চোখাচোখি প্রেম। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
#চলবে,,
#স্বর্ণা
গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ।তাহলে লেখার আগ্রহ জাগে।

https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/924628711301182/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে