স্বপ্নীল
২৪
তামিম এসে সোহার হাত চেপে ধরে।এত জোরে হাত চেপে ধরেছে তার হাত ছিঁড়ে যাওয়ার পথে।চোখ তুলে তাকায় সোহা তামিমের দিকে।সোহা স্পর্শ দেখতে পাচ্ছে তামিমের কপালের রগ গুলো খাঁড়া হয়ে গেছে।সোহা খুব ভালো করে জানে তামিম যখন রেগে যায় তখন এমন হয়।তামিমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে যেন তাকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিবে। ভয়ে ঢোগ গিলে! গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।ভয়ে শীরদার দিয়ে শীতল স্রোত বেয়ে যাচ্ছে।তামিম তাকে টানতে টানতে বাগানের দিকে নিয়ে আসে!গাছের সাথে সোহার এক হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে তামিম বলল,
-“এই ছেলে কি বলছে তোকে!
সোহা চুপ থাকতে দেখে তামিম দ্বিগুন রাগ নিয়ে বলল,
-“কথা বলছিস না কেন?
আমি কেন উনাকে ভয় পায়।উনার কথা শুনতে বাধ্য নই। যা!সোহা উনার মুখে উপর বলে দে! ভয় ফেলে চলবে না তোকে।তুই কি তা হুকুমের গোলাপ নাকি! সাহস যুগিয়ে সোহা মুখ খুলল,
-“ওই ছেলেটা আমায় যাই বলুক! আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
তামিম একহাত দিয়ে শক্ত করে সোহার চিবুক ধরে বলল,
-“বাধ্য!তুই আমাকে বলতে বাধ্য!
সোহা ব্যথা কুকঁড়িয়ে উঠে!নিজের বাম হাত দিয়ে তামিম হাত চিবুক থেকে সরিয়ে ফেলে।বড় বড় করে নিশ্বাস নিয়ে!চোখ রাঙিয়ে সোহা তামিমের দিকে তাকায়
-“কিসের বাধ্য!কাজে মেয়ে বলে কি আপনাকে আমার ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করতে হবে।নো মিস্টার তামিম!নো!”
সোহা কান্না করতে করতে চলে যায়।তামিম নিজের হাত গাছের সাথে ঘুষি মারে রাগের চোটে।
-“স্বপ্ন! আমি যা দেখছি তুই কি তা দেখছিস?”
ধূসরের কথা সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে যায়।সবাই ভ্রু যুগল যোগ করে তার দিকে তাকায়!স্বপ্ন বলল,
-“কি দেখছি তুই!
-“আমার মনে হয় প্রাচ্য আমাদেরকে কোনো রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসেছে ভুল করে”
প্রাচ্য এসে বলল,
-“ভুল হবে কেন? তোকে আমাদের মির্জা প্যালেস নিয়ে এসেছি।”
-“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা শাহি আমলের রাজপ্রাসাদ।”
তৃণ বলল,
-“রাজপ্রাসাদ জীবন দেখিসনি তুই!তাই প্রাচ্য রাজ প্রাসাদে নিয়ে এসেছে তোকে দেখানোর জন্য।”
তৃণ কথা প্রতিত্তুর না করে প্রাচ্যকে আবার ধূসর বলল,
-“হে রে প্রাচ্য তোদের কে রাজ ছিলো!তোর দাদু নাকি!
-“নারে ভাই! আমার দাদার বাপের দাদা ছিলো!
সমুদ্র পিছন থেকে বলল। সমুদ্র দেখে হেসে দে ধূসর। সমুদ্র তাদের কাছে এসে বলল,
-“আমাদের রাজপ্রাসাদের ইতিহাস পরে জানতে পারবি।এখন উপরে চল!”
সবাই উপরে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সবার সাথে পরিচয় হয়ে কুশল বিনিময় করে।সবাই সমুদ্রের সাথে গ্রামে বেড়াতে যায়।তারা তিনজন কখনো গ্রামে আসেনি।গ্রামের নির্মূল বাতাসে প্রান ভরে শ্বাস নেয়!সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা ঘোরাফেরা করে। তারপর বাড়ি ফিরে যায়।সমুদ্র বাসায় ঢুকতে সামনে পড়ে রোদ।ভ্রু যুগল যোগ করে রোদের আগ পিছ ঘুরে তাকে পর্যবেক্ষণ করে সমুদ্র!তার কিছু না বলে চলে যায় সে।রোদ কপালের সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে বলল,
-“অদ্ভুত! ”
হাসির শব্দ শুনে রোদ পিছন ফিরে তাকায়!নীল হাসছে!নীল তার কাছে হাসতে হাসতে এসে বলল,
-“কি বুঝলে রোদ আপু! ”
রোদ কিছু না বলে রাগ করে চলে যায়। নীল আবার হাসছে।উপর থেকে কেউ তার হাসির মুক্ত কুড়াছে।নীল যদি একবার উপরের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেতে স্বপ্ন রেলিং উপরে কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে তাকে হা করে দেখছে।কিন্তু আফসোস নীল উপরে না তাকিয়ে কিচেনে চলে যায়। স্বপ্নের কাঁধে হাত রেখে তৃণ বলল,
-“কিরে শালা! এভাবে হা করে না দেখে ওকে যেয়ে বলে দে,”
স্বপ্ন তৃণর মুখোমুখি হয়ে বলল,
-“বলবো! ”
যদি বলি নোয়াখালীতে আসলে নোয়াখালী বলে কোনো এলাকা নেই।মানে নোয়াখালী বাংলাদেখের একমাত্র জেলা যার নিজ নামে কোন শহর নেই।নোয়াখালী জেলা শহর এর নাম মাইজদি নামে পরিচিত। নদীগর্ভে মূল শহর বিলীন হয়ে গেলো ১৯৫০ সালে জেলা সদর সপ্তর মাইজদি স্থানান্তর করা হয়।নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া।নোয়াখালীর সদর থানা আদি নাম সুধারাম।
সবাইকে বের হয়েছে নীল নোয়াখালীর দার্শনিক স্থান গুলো দেখানোর জন্য।নোয়াখালী জেলার আনাচেকানাচে সব চেনে নীল।এমন কোনো জায়গা নেই সেখানে সে যায়নি। তামিম বাদে সবাই এখানে উপস্থিত আছে।পাশের গ্রামে দাদুর বন্ধুকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করতে গেলো সে।
তৃণ বলল,
-“কই গো নীল তোমাদের নোয়াখালী জেলার কি দেখাতে নিয়ে আসলে! আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না!”
নীল তীক্ষ্ণ নজরে তৃণ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” এত তাড়া কিসের! ”
তৃণ শার্টের দুইটা বোতাম খুলে মেয়েদের মত দুইটা ফু দিয়ে বলল,
-“বাপরে বাপ আমি খুব ভয় পেয়েছি তোমার তাকানো দেখে!মনে হচ্ছে এক্ষুনি তুমি আমায় গিলে খেলে ফেলবে।”
স্বপ্ন আর ধূসর হু হু হু করে হেসো দিলো তৃণ কথায়।নীল রাগে ফুঁসতে থাকে।সোহারর খুব রাগ লাগছে তাদের কোথায় তাই সে ঠেস মেরে বলল,
-“নীল এমন কিছু বললেনি যার জন্য দাঁত কেলিয়ে হাসার আছে।”
ধূসর বলল,
-“আমাদের দাঁত আছে বলে তাই কেঁলিয়ে হাসছি।তুই দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারো! আমরা কিছু মনে করবো না।
সোহা আর কিছু না বলে ভেঙছি কেটে সামনে চলে যায়।তৃণ শার্টের বোতাম খোলায় লোমশ বুকটা দেখা যাচ্ছে।লোভনীয় ভাবে তাকিয়ে আছে।তার পাশে কি হচ্ছে তার ধ্যানজ্ঞানের বাহিরে। হুট করে তৃণ চোখ যায় প্রাচ্য উপরে।প্রাচ্য দৃষ্টি তার বুকের দিকে তা দেখতে পেয়ে চট জলদি শার্টের বোতাম আটকিয়ে ফেলে।প্রাচ্য চোখ তুলে তৃণ দিকে তাকিয়ে লজ্জা নুয়ে যায় সে। কেন সে এভাবে তাকাতে গেলো।এখন তৃণ কি ভাববে।এটা বলে পাশ কেটে চলে যায় সে।তৃণ আবার। বলল,
-“নীল তোমাদের এখানে কয়টা পর্যটন স্থান আছে? ”
-“আছে অনেক গুলো তার মধ্যে হলো নিঝুম দ্বীপ,শহিদ ভুলু স্টোডিয়াম,বজরা শাহি মসজিদ, গান্ধী আশ্রম,ম্যানগ্রোভ বন অঞ্চল,চর জব্বর,মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর, আমতলী মেলা, ননদিয়া মেলা,মূসাপুর বেড়িবাঁধ, ভূঞা দিঘী,চর এলাহি, সূবর্ণচর।
ধূসর ঠাট্টা করে বলল,
-“এত কম কেন নীল?
নীল কিছু বলে না।স্বপ্ন বলল,
-“আমরা এখন কোথায় যাবো?
-“নিঝুম দ্বীপ দেখতে!”
নিঝুম দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের কোলে জেগে উঠা এক নিঝুম অঞ্চল।প্রথমে স্থানীয় জেলেরা এই দ্বীপ আবিষ্কার করে।শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে।জেলেদের ধরা নানা রকমের মাছ শুকানোর জন্য এটি একটি আর্দশ স্থান হিসাবে ব্যবহার হয়।নিঝুম দ্বীপে ছয়টি বাজার আছে। নীল সবাইকে নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনা করে দেখাচ্ছে।এখান থেকে তার সোজা চলে যায় গান্ধী আশ্রম। গান্ধী আশ্রম নোয়াখালীর একটি দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন। জেলা সদর মাইজদী কোর্ট হতে প্রায় ২৫ কিঃমিঃ উত্তরে সোনামুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশেই এর অবস্থান। তৎকালীন জমিদার প্রয়াত ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে উক্ত গান্ধী আশ্রম স্থাপিত হয়। ১৯৪৬- এর শেষভাগে সারা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তখন পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নোয়াখালীতে প্রভাব পড়ে। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর চৌমুহনী রেলস্টেশনে প্রথম মহাত্মাগান্ধী নোয়াখালীর মাটিতে পদার্পন করেন। ধারাবাহিকভাবে চলল তার পরিক্রমা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি জয়াগ গ্রামে এসে পৌঁছেন। সেদিনই নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার জয়াগ গ্রামের কৃতী সন্তান হেমন্ত কুমার ঘোষ মহাশয় তার জমিদারির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জনকল্যাণ খাতে ব্যয়ের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধীর নামে উৎসর্গ করেন। আশ্রম পরিচালনার ভার দেওয়া হয় গান্ধীজীর স্নেহভাজন, জনসেবা ব্রতী, চিরকুমার শ্রীযুক্ত চারু চৌধুরী মহাশয়ের ওপর। বর্তমানে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব হিসাবে কর্মরত আছেন শ্রীমতি ঝর্ণা ধারা চৌধুরী (৭২)।
নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিক্সা যোগে সম্মুখে জয়াগ বাজার নেমে যার তারা। রিক্সা না দিয়ে সবাই নানা ধরনের কথা বলতে বলতে পায়ে হেঁটে আধা কিলোমিটার পুর্বে গেলে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছে যায় তারা।সবাই গান্ধী আশ্রমের কিছুক্ষণ সময় কাটায়।হাঁটা হাঁটা করে সবাই মিলে সেলফি তুলে।গান্ধী আশ্রম থেকে বের হওয়ার সময় ধূসর বলল,
-“নোয়াখালীতে মনে রাখার জন্য এই গান্ধী আশ্রমটাই আছে। গান্ধী আশ্রমের উসিলায় তোমাদের এই নোয়াখালীকে তবু ওকয়েক জন্য চিনে, না হলে কেউ জানতে ও পারত না।বাংলাদেশে নোয়াখালী বলে কোনো জেলা আছে।”
-“ভালো হয়েছে।”নীল বলল
আমতলী মেলায়, মূসাপুর বেড়িবাঁধ সেখানে যেও একনজর চোখ ভুলিয়ে আসে।বাসায় আসতে আসতে তাদের সন্ধ্যায় হয়ে যায়।
#চলবে
#কাউছার