স্বপ্নীল
২২
-“কূপের মতো নাভিটা যখন সবাইকে দেখিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলি! তখন কোনো সমস্যা হয়নি এখন সামান্য টপস ছিঁড়ে ফেলছি বলে পিছন ঘুরে যেয়ে ন্যাকামি করছিস!”
নীল তার পেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তার নাভিটা দেখা যাচ্ছে।টপসে উপরে উঠে গেছে!কখন হলো এমন! হয়তো কাজ করতে করতে কখন উঠে গেছে! কিন্ত সমুদ্র এটা কি বলছে, সে নাভি দেখিয়ে বেড়িয়েছে সবাইকে!মানে কি?
পিছন মুখ করে দাঁড়িয়ে রোদ বলল,
-“মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন!কিছু বলছি না দেখে,,,,, ”
তার আগে সমুদ্র একটানে তার দিকে ফিরায় রোদ কে।রোদ লজ্জায় দুইহাত বুকের উপড়ে জড়ো করে।সমুদ্রে তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
-“হাত সরা!”
সমুদ্রের কথায় রোদ মুখ তুলে তাকায়।সমুদ্র কি করতে চাইছে তার মাথা আসছে না।সমুদ্র ধমকিয়ে বলল,
-“হাত দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছিস!আমি তোর জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছি?তোর সর্বনাশ করছি!”
বেয়াদব ছেলে ছেঁড়ার বাকি কি রাখলি? ইচ্ছা করছে তোকে আচঁড়ে ভক্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলতে!কিন্তু আফসোস কিছু করতে পারবো না! মনে মনে বলল রোদ।
-“এভাবে সঙের মতো দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় না করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে যা!”
রোদ খুব অসহায়দের মত করে বলল,
-“আমি কি পড়বো ফ্রেশ হয়ে! ”
-“যেভাবে অসহায়দের মতো বলছি,আমি তো ভাবলাম এক কাপড়ে সারাজীবন পার করছি তুই,,,,,,আর হ্যাঁ, এক কাপড়ে সারাবছর না কাটালে কি হয়েছে?
রোদ তাকিয়ে আছে সমুদ্রের মুখের কথাটা শুনার জন্য।সমুদ্রে উপর নীচ রোদকে ভালো করে তাকিয়ে পরখ করে বলল,
-ছেঁড়া কাপড়,তালি-তোলা কাপড় আজীবন পড়ে কাটাস!”
রোদ এটাই আশা করেছিল। তাকে অপমান করে কথা না বললে সমুদ্রের পেটের ভাত হজম হয়না সেটা সে খুব হাঁড়ে হাঁড়ে জানে।সে আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়।সমুদ্র তাকে বলল,
-“মায়ের শাড়ি আছে আলমারিতে, সেখান একটা নিয়ে পড়ে নিবি!আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোকে নিচে দেখি!”
শাড়ি!সে তো শাড়ি পড়তে জানে না। একবার শুধু শাড়ি পড়েছে। তাও মা পড়িয়ে দিয়েছে!এখন কি হবে? কে শাড়ি পড়িয়ে দিবে?
সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যায়।সেখানে রোদকে দেখতে না পেয়ে মায়ের রুমে যায়।রুমে ঢুকে বলল,
-“এখন হয়নি তোর!
এটা বলে তাকায় সে!রোদ দুইহাত দিয়ে কুচি করা চেষ্টা করছে!বুকের উপরে শাড়ি আঁচল রাখা। সাদা ধব ধব পেট দেখা যাচ্ছে। চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে।রোদ কুচি করা বাদ দিয়ে হা করে সমুদ্রকে দেখছে।সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট যা এক কথা অসাধারণ লাগছে সমুদ্রে। ভেজা চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে!গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।এভাবে তাকে কেউ দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে।রোদের খুব ইচ্ছা করছে মানুষটার এই খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো আলতো করে ছুয়ে দিত।ইস!মানুষটা এত সুন্দর না হলে পারতো।এখন যে আরো একবার তার প্রেমে পড়ে গেছে সে।এই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য যদি হাজার বার বকা -অপমান তাকে সহ্য করতে তাহলে ও সে করবে।মানুষটাকে সে চাই য়ে- চাই।
-“এভাবে হা করে আছিস কেন? মুখে মশা ঢুকে যাবে তো?
সমুদ্রের কথায় তার ধ্যান ভেঙে।কপাল মুখ কুঁচকে সে মনে মনে বললো,এই মানু্ষকে নিয়ে একটু কল্পনাএ জগৎ ভাসছিলাম।আর সে কি না এরকম কথা বলে মুড নষ্ট করে দিলো।
-“এভাবে পেট দেখিয়ে কি বুঝাতে চাস তুই!”
রোদ এমন কথা শুনে সে ভাবতে থাকে! সমুদ্র ভাইয়া তাকে কি মিন করে কথা বলছে!এই সমুদ্র ভাইয়া সব কথা কিছু না কিছু মিন করে তাকে বলবেই।হাবলার মতো প্রশ্ন করলো সে,
-” কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?
-“বার বার যে পেট বের করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাস! সেটা আমি ভালো করে বুঝে গেছি!এসব করে কোনো লাভ নেই রোদপাখি।তুমি কি জানো রোদ পাখি তোমার এই সস্তা জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্টিং নেই এই সমুদ্রের!সুমদ্রে যেটাতেই ইন্টারেস্টিং থাকে! সেটা না পেলে জোর করে নিতে জানে!কিন্তু আমি না ফ্রী কোনো কিছু নিয়ে মজা পাইনা।
সমুদ্রের এমন কথা শুনে কান্না করতে ইচ্ছা করছে রোদের।সে কি ইচ্ছা করে এমন করছে নাকি? সমুদ্র ভাইয়া তো নক না করে চলে এসেছে? নাক টানতে টানতে বলল,
-“একটা মেয়ে মানুষ একটা রুমে থাকলে! সেখানে আসতে হলে অন্তত নক করে আসা লাগে! সেটা বোধ হয় আপনি জানে না সমুদ্র ভাইয়া!
-“বাড়িটা যখন আমার! যেখানে সেখানে যেতে পারবো। ”
-“আমি একবার বলেনি বাড়িটা আমার!আমি জানি বাড়িটা আপনার।যেখানে সেখানে যেতে পারবেন। কিন্তু কারো রুমে ঢুকতে হলেই নক করে নেওয়া উচিত।”
-“তোর থেকে আমায় শিখতে হবে এখন এসব।আর কি বললি, আমি নক করে আসিনি কেন? যেখানে দরজা খোলাই ছিল সেখানে নক করে আশার কথা আসছে কোথায় থেকে। ”
এবার রোদের মনে পড়ে গেলো সে তো দরজা আটকায়নি এখন আবার এটা নিয়ে সমুদ্রভাইয়াকে যে একগাদা কথা শুনিয়ে ফেলেছে।আল্লাহই জানে তাকে এখন কি করে সমুদ্র ভাইয়া।তার ভাবনা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে সমুদ্র ভাইয়া তাকে বলল,
-“আমার খুব খিদে পেয়েছে!দয়া করে নিজে আয় তাড়াতাড়ি!
এটা বলে চলে যেতে নিলে রোদ বলল,
-“সমুদ্র ভাইয়া আমি শাড়ি পড়তে পারি না।”
রোদের কথা শুনে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে আসে।তাকে এগিয়ে আসতে দেখে রোদ পিছপা হতে গেলে শাড়িতে পা লেগে পড়ে যেতে নিলেই সুমদ্র তার এলোমেলো শাড়ি কুচি দেওয়া যেখানে ছিলো সেখানে ধরে টান মেরে তার বুকে এনে ফেলে।
-“সিনেমার হিরোদের মত। তোকে শাড়ি পড়াতে এগিয়ে আসছি আমি।এত ভেবে থাকলে, আমি বললো তুই ভুল ভেবেছিস।সমুদ্র এই সস্তা জিনিস হাত লাগিয়ে নোংরা করতে চায় না।”
এটা বলে ধাক্কা মেরে খাটের উপরে ফেলে দেয় রোদকে। খাটের উপরে শুয়ে কান্না করতে করতে থাকে।বার বার সমুদ্র তাকে সস্তা জিনিস বলছে। এই জন্য খুব খারাপ লাগছে তার।কেন সমুদ্র ভাইয়া তার ভালোবাসা বুঝে না? কেন সে এমন করে তার সাথে?কি করেছে আমি? তার জন্য সমুদ্র ভাইয়া কাছে বার বার অপমান হই আমি?
বারবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে।এবার নীল মহাবিরক্ত হয়ে ফোন ধরে কর্কশ কন্ঠে বলল,
-“দেখছেন তো ফোন ধরছি না তবে কেন বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন?
কোনো কথা বলছে না স্বপ্ন।কি বলবে? আর নীল যদি শুনে আমি ফোন করিছি!যদি সে কারণ জানতে চায়!তাহলে কি বলব?
-“এই আপনি কি বোবা? কথা বলছেন না কেন?
-“না!আমি বোবা নয়।”
-“যাক অবশেষে কথা বলছেন? কিন্ত আপনার গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে? কোথায় যেন শুনেছি?”
-“শুনছেন তো বটেই?
-“তার মানে কি আপনি আমার পরিচিত কেউ?
-“হতে ও পারে!”
-“হেয়ালী না করে ক্লিয়ার করে বলুন! কে আপনি?
-“আমি তো পরিচয় দিবো না! আপনি খুঁজে বের করেন? কে হতে পারি আমি?
-“আমার এত দরকার নাই আপনার খুঁজ বের করার।দয়া করে ফোনটা কাটুন! ”
-“আরে রেগে যাচ্ছেন কেন?
-“রাগবো না তো’কি নাচব নাকি! ”
-“সত্যি আপনি নাচ জানেন!তাহলে যখন আমাদের দুজন দেখা হবে! আমাকে আপনি নাচ পরিবেশন করে দেখাবেন! ”
-“হুম!সখ কত!আমি আপনাকে নাচ পরিবেশন করে দেখাবো!
নীল ব্যঙ্গ করে কথাটা বলল! স্বপ্ন শুধু এই কথা বিনিময় একটু হেসেছে সেটা হয়তো নীলের অজানা।নীল আবার বলল,
-“আমাদের দুজনের দেখা হবে মানে! ”
-“বিধাতা যদি চায়!হয়তো আমাদের দুজনে কোনো একগ্রীষ্মের দুপুরের দেখা হবে!”
-“বাপরে বাপ কি ইচ্ছা আপনার!
-“কেন খারাপ কি বললাম?
-“খারাপ নয় বটে কি? অনেকের অনেক রকম ইচ্ছা দেখলাম! কিন্তু আপনার মতো এরকম ভিন্ন ইচ্ছা পোষণ করা মানুষ দেখিনি!দেখা করার ইচ্ছা আমার সাথে তাও আবার এক গ্রীষ্মের দুপুরে! শরৎ,বসন্ত বাদ রেখে দিয়ে গ্রীষ্মের কাঠখড় রোদে!”
তখনই প্রাচ্য রুমে ঢুকে নীলকে ডাকতে থাকে!
-“নীল কোথায় তুই!”
নীল কানের থেকে মোবাইল সরিয়ে উত্তর দিলো,
-“আপু আমি বারান্দা! এখানে এসো!”
প্রাচ্য বারান্দায় এসে বলল,
-“কার সাথে কথা বলছিস! ”
ফোনের ওপাশে স্বপ্ন প্রাচ্য’র কথা শুনতে পায়। প্রাচ্য যদি নাম্বার টা দেখে বলে দেয় আমার!তাহলে কি হবে।
-“দেখো না আপু! ইদানীং একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে! কিন্তু পরিচয় দিচ্ছে না!কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের চেনা মানুষের মধ্যে কেউ একজন।!
-“তোর ফোনটা দে, ”
নীল ফোনটা বাড়িয়ে দেয় প্রাচ্য’র দিকে।স্বপ্ন এখনো লাইনে আছে।প্রাচ্য মোবাইলে নাম্বারটা দেখে মুচকি হাসে।প্রাচ্যকে হাসতে দেখে নীল ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে বলল,
-“কিব্যাপার আপু তুমি হাসছো কেন?
প্রাচ্য মোবাইলের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
-“এমনি! ”
-“তোমার হাসি টা যেন আমার কাছে রহস্যমূলক ছিলো।”
-“বাব্বাহ!আমাদের নীল কবে থেকে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করা শুরু করেছে!
-“এখন শুরু করিনি!বাট এখন থেকে চেষ্টা করব।”
প্রাচ্য নীলকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“ফোনটা বোধহয় কেটে গেলো!
নীল হাত বাড়িয়ে ফোন নেয়।প্রাচ্য নীলের রুম থেকে বেরিয়ে স্বপ্নের নাম্বারে ডায়াল করে।স্বপ্ন ফোন ধরতেই প্রাচ্য বলল,
-“বাব্বাহ!আমাদের স্বপ্ন যে তলে তলে প্রেমে ভালো চালিয়ে যাচ্ছে!”
স্বপ্ন এর প্রতিত্তুর কিছু বলল না। শুধু হেসেছে!স্বপ্ন প্রাচ্যকে বলল,
-“তুই বলে দিয়েছিস এটা যে আমার নাম্বার ছিলো।”
-“পাগল নাকি! আমি বলতে যাবো কেন? আর তুই পরিচয় দিসনি কেন?
-“আরে বলব!এখন একটু ফোন করে জ্বালাই।তারপর বলবো।”
-“সময় থাকতে বলে দিস! বেশি সময় নিতে যেয়ে আবার হারিয়ে না ফেলিস।”
-” কিছুতে হারাতে দিবো না! তোর বিয়েতে আসলে বলে দিবো!
-“হুম!আচ্ছা রাখি!
-“প্রাচ্য!
-“হুম! বল।”
-“কেন এমন করছিস!জিদ করে বিয়ে করলে কী সুখে থাকতে পারবি!
-“কে বলল,আমি জিদের বসে বিয়ে করছি!আমি খুব ঠান্ডা মাথায় বিয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছি।
-“এই সিধান্তর জন্য যদি তোকে কখনো পস্তাতে হয়।
-“বায়! স্বপ্ন। এই বিষয় কথা বলতে ভালো লাগে না।”
-“তুই আমাদের বন্ধু! তোর খারাপ আমরা কেউ কখনো চাইবো না।তোর লাইফের সিদ্ধান্ত তুই -এ নিবি।কিন্ত বন্ধু হিসাবে একটাকথাই বলবো।আরে একবার ভেবে দেখ!যদি কখনো ভুল ভেঙে যায়! তখন তুই চাইলে আর সব ঠিক করতে পারবি না।এখন ও হাতে সময় আছে।বায়!
-“কেন কথা বলছেন না ? আমার সাথে!
-“তোকে কে বলছে আমার রুমে আসতে?
-“আমি এসেছি আমার ইচ্ছায়! কেউ আসতে বলেনি।কেন রাগ করে আছেন আমার উপরে।
তামিম এবার দাঁতে দাত চেপে বলল,
-“আমি তোর উপরে রাগতে যাবো কেন? একটা কাজের মেয়ের উপরে রাগ করব কেন আমি?হুয়াই?
সোহা চোখ তুলে তামিমের দিকে তাকায়।চোখে পানি চিকচিক করছে।কি করে বলতে পারলো তামিম ভাইয়া তাকে এই কথা।এটাই ছিলো তার ভালোবাসা। খুব কষ্টের নিজেকে সংযত করে বলল,
-“আমাকে আমার জায়গা দেখিয়ে দেখার জন্য ধন্যবাদ!
এটা বলে দৌড়িয়ে বেরিয়ে আসে!এতক্ষন যে খুব কষ্টের নিজের কান্না চেপে ধরেছে!এখন তার চোখে দিয়ে অঝোর চোখের পানি ঝরছে।কান্না করতে করতে নিজেই নিজেকে বলছে!!আমি ভুলেই গেলাম! আমি এই বাড়ির কাজের মেয়ের মেয়ে।আর কখনো এই সীমালঙ্ঘন করবো না।আজকে আপনি আমার চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আমার জায়গা কোথায়।আর কখনো সেটা ভুলব না।
#চলবে
#kawsar sorna
(ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আপনার পাঠক ভুল ধরিয়ে দিলে তো লেখকরা শুধরে নিতে পারবো।)