স্বপ্নীল ১৬

0
1385

স্বপ্নীল
১৬
রাঙামাটি শহরের প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত ব্রিজ।সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই ঝুলন্ত ব্রিজ না দেখে কেউ ফিরে আসে না।রাঙামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশ ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি।পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পর্ট।এ সেতুকে বলা হয় ‘symbol of Rangamati’।নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে হৃদ্দিক সম্পর্ক।সেতু পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি নীলকে এনে দিয়েছে ভিন্ন দ্যেতনা।এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হৃদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে পারবে পাচ্ছে সবাই। কাপ্তাই হৃদে মুগ্ধ হতে বাধ্য সবাই।ওপারে রয়েছে আধিবাসিদের গ্রাম।এবার সকলের মিশন হলো হাতিমাথা ও দেবতারপুকুর।হাতিমাথা যাওয়ার জন্য স্বপ্ন সি এন জি ঠিক করেছে জামতলা পর্যন্ত।চেঙ্গি নদীর ঘাট পর্যন্ত ১৫ টাকা করে নিবে।নৌকায় ৫ টাকা দিয়ে পার হয়ে হাঁটা শুরু করে তারা।অল্প কিছু যাওয়ার পর একটা দোকান পায়। সেখানে সবাই পানি খেয়ে নেয়।যখন তারা হাতিমাথা পৌঁছে যায় তখন খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টির ভিতরেই ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট ট্রেকিং শেষে পৌঁছে যায় হাতিমাথা।বৃষ্টি না হলে আরো কম সময় লাগত।২৭৩ সিঁড়ি বেয়ে যখন উপরে উঠল তারা তখন শুরু হয়েছে ঝড়ো বাতাস।এই বাতাসের ভিতরেই সিঁড়ি শেষে আরোও উপরে যাবে তারা ভাবলো।১.৫ফিট পিচ্ছিল রাস্তা দুইপাশে খাদ সাথে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থ্রিলার জন্য আর কি লাগে। উঁচু জায়গা পর্যন্ত উঠছিল তারা।তারপর নেমে আসে।ফিরে আসার পথে সবার দেবতার পুকুর দেখার জন্য যায়।দেবতার পুকুর ঘোরা শেষে খাগড়াছড়ি ফিরে আসে সবাই।তারপর সন্ধায় খাগড়াছড়ি শহরটা একটা চক্কর দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ৯টার বাসে সবাই উঠে পরে বাড়ি ফেরা উদ্দেশ্য।

★★★
সারারাত জার্নি করে সবাই প্রাচ্যদের বাসায় উঠে। দিনের ৩.০০টা বাজে এখন সবাই গভীর ঘুমে আচন্ন। কারো সাড়া শব্দ নেই। কয়েকবার সমুদ্র এসে ঢেকে যায় স্বপ্নদের কে। এই কয়েক রাতের ঘুম দিচ্ছে সবাই আজকে। দিনের এতটা বেঝেছে তাই বাধ্য হয়ে এবার সমুদ্র তাদের উঠাতে আসে।হাতে একমগ পানি আছে। সে জানে তাদেরকে এখন এমনি এমনি ডাকলে উঠবে না।তার বন্ধুদের চোখে মুখে পানির ছিঁটা পড়লে সবাই হুড়মুড় করে উঠবে।পানি ঢালতেই স্বপ্ন বাদে আরদুজন উঠে বসে। ধূসর ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন আর তৃণকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,
-“আরে উঠ তোরা। বৃষ্টি হচ্ছে ভিজে যাচ্ছি আমরা।”
ধূসর কথা শুনে সমুদ্র হাসে।সে আবার পানি ঢালা শুরু করে।ধূসর ধাক্কা খেয়ে তৃণ খাট থেকে পড়ে যায়। ব্যথা কোমর ধরে নিচে থেকে উঠে বলে,
-“কোথায় বৃষ্টি হচ্ছে শালা,আমি দেখি সমুদ্র পানি ঢালছে।”
ধূসর ভালো করে দুহাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে বললো,
-“ও,আমি ভেবেছি,,,,
তার কথা কেঁড়ে নিয়ে তৃণ বললো,
-“রাখ তোর ভাবা ভাবি, আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে কোমরের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিস। ”
সমুদ্র স্বপ্ন মুখে পানি ঢেলে দিতেই ধড়াম করে উঠে বসে স্বপ্ন।কি হয়েছে মাথা ঢুকছে না। এভাবে উঠাতে মাথা হ্যাং হয়ে গেছে তার। পাক্কা ৫ মিনিট লেগেছে বুঝতে। রাগি দৃষ্টিতে সমুদ্রর দিকে তাকায়।সমুদ্র অভিনয় করে বলে,
-“এভাবে তাকাইস না ভাই, ভয় পাইতেছি। মনে হচ্ছে গিলে খেয়ে ফেলবি।”
-“এভাবে কেউ করে। ”
নিজের হাতের মগটা সেন্টার টেবিলে রেখে বলে
-“কি করব শালা। তোদের অনেক্ষণ যাবত ডাকছি খবর নাই তোদের।তাই বাঁকা পথ ধরতে হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আস সবাই।”
চলে যেতে নিলে আবার দুইকদম পিছিয়ে এসে বলল সে।
-“নাস্তা খাবি নাকি ভাত। ”
স্বপ্ন উঠে ওয়াশরুমে যেতে বললো,
-“নাস্তা খাবো না এখন। আন্টি বল ভাত দিতে।”

ছেলে সবাই খাওয়ার টেবিলে এসে পৌঁছায়।নীল বাদে ওরা সবাই উঠে যায়।প্রাচ্য আর রোদ কে আসতে দেখে নীলকে দেখার জন্য স্বপ্ন তাদের দিকে তাকায়।এইদিক ওইদিক তাকিয়ে ও নীলকে দেখতে পায় না সে। তাদের দেখে সমুদ্র বললো,
-“নীল কোথায়!তাকে যে দেখছি না।”
প্রাচ্য চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
-“এখন ঘুমাচ্ছে।”
-“উঠাবি না ওকে।”
ভাতের একলোকমা মুখে তুলে বলল,
-“ওহ!ভাইয়া।তুমি কি নীল কে চিনো না”
প্রাচ্য পাশে রোদ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বললো,
-“তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে কি আমন্ত্রণ করে খাওয়ার টেবিলে বসাতে হবে।”
রোদ গদগদ করে হেটে যেয়ে ধূসর পাশে বসে।সে কিছুতে বুঝতে পারে না সমুদ্র কেন তার সাথে এমন করে। কারো সাথে আর এমন ব্যবহার করে না।তার সাথেই কেন? সে বুঝে উঠতে পারে না কিছুতেই।
-“সবাই তো হাজির। আই অ্যাম লেট।”
ডাইনিং রুমে আসতে আসতে বলল নীল।তাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-“কেমন আছিস বোন আমার।”
-“এখন তো ভাইয়া ভালো আছি।বাট বাড়ি গেলে কি হবে বুঝতে পাচ্ছি না।”
চেয়ার টেনে সমুদ্র পাশে বসে।সমুদ্র বললো,
-” টেনশন করার কোনো দরকার নেই।তুই বাড়ি নেই সেই টেনশনে সবাই হার্টফেল করার অবস্থা।তোকে দেখলে সবাই খুশিতে আহ্লাদ ফেটে পড়বে।”
-“তাই যেন হয় ভাইয়া।”
সমুদ্র সবার উদ্দেশ্য করে বললো,
-“সাজেকে কেমন কাটল তোদের সবার।কি রকম অনুভূতি ফিল করলি। ”
নীল খুব এক্সাইটেড হয়ে বলল।
-“আমি তো সাজেক নিয়ে বলার মত ভাষা খুজে পাচ্ছি না।অনেক মজা করেছি।তুমি সাথে গেলে আরো ভালো হত।

-“কাজে প্রেশার থাকায় আমি যেতেই পারি নি।পরের বার যাবার চেষ্টা করবো।”
রোদ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর সমুদ্র কথা শুনছে।তার দিকে তাকানো সাহস নেই।যে কোনো কিছু বলে অপমান করতে তার বাধবে না।মিনমিন করে বলল রোদ।
-“খাটাশ ব্যাটা তুই যাসনি বলে আমি সুন্দর মত আনন্দ করতে পেরেছি।না হলে আমার আনন্দ মাটি হয়ে যেত।
-“রোদ কি কিছু বললি আমায়।”

রোদ চোখ তুলে তাকায় সমুদ্র দিকে। তার কথা শুনতে ফেলে তাকে আজকে আস্তো গিলে ফেলবে।তার পর মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-“সমুদ্র আমি তোকে কি বলবো।”
সমুদ্র রাগি দৃষ্টি তাকিয়ে বললো,
-“তুই আমাকে ‘তুই বলে সম্মোধন ‘ করছিস কোন সাহসে।আর আমার নাম ধরে ডাকিস কেন? আমি কি তোর সমবয়সী যার জন্য আমার নাম ধরে ডাকবি।”
সমুদ্র এত জোরে কথা শুনে রোদের সারা শরীর কাঁপুনি দেয়।ভয়ে হাত পা থরথর করে কাঁপছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। অপমানে তার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।কি এমন বলেছে সে যার জন্য সবার সামনে এভাবে অপমান করছে।
তৃণ মজার ছলে বললো,
-“আরে ভাই থাম।তোর এত জোরে ধমক শুনে হয়তো রোদ ভয়ে প্রেশাব করে দিয়েছে।”
তার এই কথা শুনে।ধূসর হাসি ফেটে পড়ে।স্বপ্ন তাকিয়ে দেখে রোদ কাঁদছে।তাই ওদের ধমক দিয়ে বলল।
-“খাওয়ার টেবিলে কি শুরু করলি। আর সমুদ্র তোকে কেন রোদ নাম ধরে ডাকতে পারবে না।”
সমুদ্র ভাত একলোকমা মুখে তুলে বললো।
-“রোদ হলো প্রাচ্য বেষ্ট ফ্রেন্ড। আমার নয়।সে হিসাবে আমি রোদের বন্ধুর ভাই হই।আর বন্ধুর ভাইয়ের নাম ধরে কেউ ডাকে।তোরা বলল!”
সবাই চুপ।সমুদ্র আবার বলল।
-“আমি শুধু রোদকে তাই মনে করিয়ে দিয়েছি। আমি তার বন্ধু না।যে সে আমায় নাম ধরে বা আমায় ‘তুই ‘বলে সম্মোধন করবে ন।”
প্রাচ্য তার ভাইয়ের উপরের খুব রাগ লাগছে।তার ভাই কেন রোদের সাথে এত বাজে বিহেভিয়ার করে।শান্ত হয়ে বলল,
-“তাহলে তোমায় কি বলে সম্মোধন করা উচিত ভাইয়া।”
খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে হাত মুছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বুকের সামনে শার্টের বোতাম দুটো খুলে। কলার ঝাঁকিয়ে বলল,
-“কেন? জানে না রোদ।আচ্ছা ও না জানলে তার জন্য আবার বলছি।আমায় আপনি বলে সম্মোধন করবে। আর ভাইয়া বলবে।গড ইট রোদ।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তোরা আয় আমার রুমে।কথা আছে।”
পর পর সবাই খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়।প্রাচ্য উঠে এসে রোদের পাশে দাঁড়ায়।
সান্ত্বনার সুরে বললো,
-“ভাইয়ার হয়ে আমি তোকে সরি বলছি।তুই জানিস আমার ভাইয়াটা এমন।”
চোখ ঝলঝল করে প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে সে বলল,
-“তোর ভাইয়া এমন কেন।সে কেন এমন করে আমার সাথে?সে কেন বুঝে না আমি তাকে ভালোবাসি।সে কি কোনোদিন বুঝতে না আমার ভালোবাসায়।”
নীল বললো,
-“বুঝবে, বুঝবে ভাইয়া তোমার ভালোবাসা তার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।”
নীলের কথায় রোদ মনে সাহস পায়।চোখে পানি মুছে ফেলে।তার ভালো বাসা একদিন না একদিন বুঝতেই হবে সমুদ্রকে।সেই দিনটার জন্য সে অপেক্ষা করবে।অপেক্ষা তাকে করতেই হবে।সে যে এরকম ঘ্যাড়ত্যাড়া সমুদ্রকে ভালোবেসেছে। একটু তো কষ্ট করতেই হবে।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছে নীল।কোলাহলময় শহরটাকে দেখছে সে।রাস্তা যেন গাড়ি গিজগিজ করছে।গাড়ি ছাড়া আর কিছু তার চোখে পড়ে না এই শহরের।এই ঢাকা শহরের সব কিছু ভালো লাগলেই এই একটা জিনিস তার ভালো লাগে না সেটা হলো এই গাড়ির কোলাহল।জাস্ট অসহ্যকর লাগে।কোথায় বের হলে জ্যামে বসে থাকতে হয়। তাই সে ঢাকা আসলে কোথায় ও বের হয় না বেশিভাগ।তার ভালো লাগে গ্রামের সেই হিমহিম শীতল বাতাস। যা শরীর ও মন জুড়িয়ে দেয়।গাছপালাময় সবুজের সমারোহ। নির্মল বাতাস আর এই শহরে দূর্ষিত বাতাসের তার দম আটকিয়ে আসছে।তার ছুটে চলে যেতে মন যাচ্ছে মির্জাপুর। গাছ, পাখির দের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।এই শহরে পাখিদের আনাগোনা নেই, নেই কোনো বড় বড় গাছ।যা আছে ছাদের সামন্য গার্ডেনে। এই সময় তার খুব মনে পড়ছে মায়ের কথা।দাদুর কথা,সোহার কথা,কাকামণি, কাকি সবাইকে খুব মিস করছে সে।নীল তার কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে ,
-“মেজমা।”
বলে তাকে জড়িয়ে ধরে।সায়লা নীলের মাথা হাত ভুলিয়ে বলল,
-” পাগলী মেয়ের কি মন খারাপ।”
-“একটু খারাপ।”
-“বাড়ি কথা মনে পড়ছে।”
-“হুম”
-“ফোন দিয়ে কথা বলে নেয়।”
-“তামিম ভাইয়া ছাড়া আর কেউ ফোন ধরছে না আমার।এবার সবাই আমার উপরে রাগ করে আছে”
-“রাগ করা কি স্বাভাবিক না মা।তুমি কি এখন ছোট নয় মা।এবার তুমি কোনো ছোটখাটো ব্যপারে পালিয়ে আসোনি।বিয়ের থেকে পালিয়ে এসেছো।এই বিয়ের সাথে তোমার দাদূর সম্মান জড়িয়ে ছিল।মির্জার বাড়ি সম্মান জড়িয়ে ছিল।তাই হয়তো সবাই রেগে আছে।কিন্তু তুমি ফিরে গেলে তারা রাগ করে থাকতে পারবে না।বিশেষ করেই তোমার দাদুর।”

মেজমায়ের কথা গুলো ফেলে দেওয়ার মত নয়।সত্যি তো সে অনেক ভুল করেছে।একটাবার ভাবেনি সে বিয়ে না করলে তার পরিবারের সম্মান কোথায় যেয়ে নামবে। আর তার দাদুর কিভাবে এসব পরিস্থিতি সামলিয়েছে।এবারে জন্য কি সবাই তাকে ক্ষমা করবে।
নীল মুখ তুলে তাকায় মেজমায়ের দিকে,
-“মেজ মা সত্যি আমি এবার অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।”
-“হুম।ভবিষ্যৎ যেন এরকম আর না নয়।তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে,বুঝতে শিখেছো।”
-“আমি আর এরকম কিছু করবে না যাতে দাদু কষ্ট পায়।”
-“গুড গার্ল।”

★★★
-“কিছু হলেই এরকম ফ্যানফ্যানি শুরু করছ কেন তুই।”
রোদ বিরক্ত হয়ে বলল।
-“এখন আমি আবার কি করেছি।”
-“তুই কি না করে বেড়াছ।কিছু হলেই চোখে জলের পানি দিয়ে নদী বানিয়ে ফেলিস।”
রোদের খুব ইচ্ছা করছে বলতে। আপনি কেন এভাবে আমায় অপমান করে কাঁদান। তাই জন্য আমার চোখে জল আসে।ভালোবাসার মানুষ যদি এভাবে অবহেলা, অপমান করে তাহলে কি চোখের জল আসবে না।আপনার কারণ তো আমার চোখে জল থাকে।গলা অব্দি আসলে মুখ দিয়ে বের করার সাহস রোদের নেই।সমুদ্র বললো,
-“একদিক দিয়ে ভালো হয়।”
রোদের মনে প্রশ্ন জাগে।তার আগে সমুদ্র বলে উঠে।
-“খরা অভাবে যদি নদীর পানি শুকিয়ে যায়।তাহলে তোর চোখের জল কাজে লাগবে।চোখে পানি দিয়ে খরা অভাব পূরণ করা যাবে তাহলে খরা কবলিত হয়ে দূর্ভিক্ষ দেখা যাবে না।একদিক দিয়ে তোর চোখে পানি সবার উপকার আসবে।কি বলিস তুই!”
রোদ কিছু বলতে যেয়ে থেমে যায়।সে জানে এই বদ রাক্ষসটার সাথে কথায় পেরে উঠবে না সে।তাই কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই সমুদ্র পিছন ডাকে।তাই বাধ্য হয়ে থেমে যেতে হয়।সমুদ্র তার সামনে এসে বলল,
-“জানিস রোদ তোকে এখন কেমন দেখতে লাগছে।”
রোদ ভেবেছে এতদিন পর হলে তাকে তো সমুদ্র চোখে লেগেছে।তাই জানার উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কেমন?
-“রাস্তায় ভিক্ষুক দেখিস।”
রোদ বুঝতে পাচ্ছে না ভিক্ষুক দেখার সাথে তাকে কেমন লাগছে তার সাথে কিসের সম্পর্ক।তাই বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে।
-“দেখিছি।”
-“তাহলে এটাই দেখেছিস।ভিক্ষুক পাঞ্জাবীতে অনেক তালি থাকে।আর পায়জামা হাটু দিয়ে ছিঁড়া থাকে। নানা ররঙবেরঙ কাপড় দিয়ে তালি দিয়ে তাকে।”
রোদ বিরক্ত হয়ে বলে,
-“আমায় কেন এসব বলছেন আপনি। ”
-“তোকে বলার কারণ আছে”
-“কি কারণ”
-“কারণ তোকে সেই ভিক্ষুক দের মত লাগছে।”
রোদ খুব জোরে চিৎকার করে বলল,
-“কি”
সমুদ্র কানে দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,
-“আস্তে আস্তে আমার কানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বি তুই।”
-“কোন দিক দিয়ে আমায় ভিক্ষুকদের মত লাগছে আপনার কাছে।”
-“এই ভিক্ষুকদের মত হাটু ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে আছি।তালি -তোলা দিয়ে। যেন তুই সেই ভিক্ষুকদের কাতারে একজন।”
খুব রাগ হচ্ছে রোদের।তার পর ও নিজেকে শান্ত করে সে বলল,
-“এই যে মিস্টার ভাইয়া আপনি কি ভুলে গেছেন এটা হলো ফ্যাশন।”
তার কথা পাত্তা না দিয়ে সমুদ্র বললো
-“টাকার অভাবে যখন তোর বাপে ভালো জামা কাপড় কিনে দিতে পারে না।তাহলে আমায় বলতে পারতি।আমি তোকে বসুন্ধরায় নিয়ে মার্কেট করিয়ে নিয়ে আসতাম।”
রোদের গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।সে কি করে এরকম একটা ছেলে কে ভালো বাসতে পারল।যার মন এত নিচু।তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সমুদ্র একহাজার টাকার দুইটা কচকচে নোট রোদের হাতে গুজিয়ে দিয়ে বললো,
-“শতহোক তুই আমার বোনের বান্ধবী।তোকে কি আর নিজের চোখে সামনে ভিক্ষুকদের মত ছেঁড়া জামা কাপড় পড়তে দেখতে পারি।এই নে দু হাজার টাকা দিলাম।বাড়ি যাওয়ার সময় অন্তত দুই সেট সেলোয়ার কামিজ কিনে নিস।”
এটা বলে সমুদ্র সেখান থেকে প্রস্থান করে।রোদ হা হয়ে তাকিয়ে থাকার ছাড়া কিছু করা ছিলো না।রাগ করে টাকা গুলো মুচড়ামুচড়ি করে গোল করে ফেলে দিতে নিলে মনে পরে যায় তার ভালোবাসা মানুষ এই প্রথম নিজের হাতে তাকে কিছু দিয়েছে।ভালোবেসে না দিলে এটা তার কাছে সমান।দলা মোচড়া খুলে টাকা গুলো খুব যত্ন করে তার পার্সে রেখে দেয়।

@কাউছার স্বর্ণা
(ভুল -ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টি দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে