স্বপ্নীল
১০
নীল অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে মাউথ অর্গান সুর আসছে।সুর টা খুব মধুর।তার কাছে যেন মনে হচ্ছে এই সুর দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে ডাকছে।এই সুরটা তাকে মাতাল করার জন্য যথেষ্ট । শোয়া থেকে উঠে বসে।তার জানতে হবে কে এত সুন্দর করে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে।ঠিক এখন তার মনে হচ্ছে এই সুরে মালিক দেখার উচিত।যে এত সুন্দর করে বাঁশি বাজাতে পারে।সে নিশ্চয় দেখতে অনেক সুন্দর হবে।সুর টা যে তাকে পাগল করে দিচ্ছিল।কিছুতে ঘুমেতে দিচ্ছিল না।সুর টা যেন টাকে টানছিল।আর এক মুহুর্ত দেরী না করে সে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কোন দিক থেকে সুর আসছে তা জানার জন্য। এ এগিয়ে যাচ্ছে সুরটা খুব কাছ থেকে শুনা যাচ্ছে। সে রিসোর্ট পিছনে অনেক গুলো সিঁড়ি রয়েছে।সেখানে চলে আসে। সেখানে অনেক গুলো বসার জায়গা ছিলো। কে বাজাচ্ছে মাউথ অর্গান তাকে খুজার জন্য সে এগিয়ে যায়।কিন্তু হঠাৎ করে সুরটা বন্ধ হয়ে যায়।তখনই তার মন খারাপ হয়ে যায়।আসে পাশে দেখতে থাকে।তখনই তার কাঁধে কারো হাঁতের স্পর্শ পায়।নীল কিছুটা ঘাপড়ে যায়।তার কেন যেন মনে হচ্ছে ভুত, পেত্নী তার কাঁধে হাত রেখেছে ঘাড় মটকিয়ে দেওয়ার জন্য।সে এই জন্য অন্ধকারে কোথায় বের হয় না।অন্ধকারে সে খুব ভয় পায়।চাঁদের আলো এই জায়গাটা যেন ঝিকমিক করছে। তাই সে এখানে এসেছে ভয় ডর উপেক্ষা করে।কিন্ত তার কাঁধে কে হাত রেখেছে।ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখার সাহস হচ্ছে না। ভয়ে সব কিছু হজম হয়ে যাচ্ছে।এই সাজেকে কি ভুতেরা বসবাস করে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-“কে???
-“……….
কথা বলছে না দেখে তার ভিতরে ভয় আর ঢুকে যায়।এই শীতের রাতে তর তর করে ঘামছে সে।কেন যে বের হতে গেল।সাহস যুগিয়ে বলে
-“কে??
-“আমি
তার এই কন্ঠ খুব চেনা।এটা স্বপ্ন কন্ঠ তার চিনতে ভুল হলো না।তাই সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে।কিন্ত এখন তার হাত পা কাপছে। এখন ঘেমে চুপচুপ।তাকে এভাবে দেখে স্বপ্ন বলে উঠে,
-“এই শীতের মধ্যে ঘামছেন কেন??
নীলের মুখে দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। যদি এখানে স্বপ্ন না থেকে সত্যি সত্যি ভুত থাকত।তাহলে সে ভয়ে হার্টফেল করে ফেলত।
-“কি হলো কিছু বলছেন না কেন??
-“আ….আ..
-“কি?
নীল একনিশ্বাসে বলে ফেলে,
-“আমি মনে করেছি আমার কাঁধে কোনো ভুত তুত হাত রেখেছে।তাই আর কি??
নীলের কথা শুনে স্বপ্নে হেসে দেয়।নীল বুঝতে পাচ্ছে না সে হাসি কি বলেছে।যার জন্য ওই ছেলে হাসছে।তার এমনিতে এখন যেন হাত পা কাঁপছে।আর এই ছেলে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে।তার খুব রাগ হওয়ার কথা কিন্ত তার রাগ হচ্ছে না।বরং খুব ভালো লাগছে। এই ছেলের হাসি দেখতে।নীল হালকা ঘাড় কাত করিয়ে স্বপ্ন হাসি দেখছে।
স্বপ্ন হাসতে হাসতে বলে,
-“আপনি ভুতে ভয় পান??
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
-“কেন ভুতে ভয় ফেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।
স্বপ্ন এবারও মুখে হাসি বজায় রেখে বলে,
-“যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে আসতে পারে।সে মেয়ে নাকি ভুতে ভয় পায়।কি আশ্চর্য ব্যাপার।
-“বিয়ে থেকে পালানো সাথে ভুতের কি সম্পর্ক।
-“আমি দেখছি, আপনার ঘটেও বুদ্ধি নেই।রাতে অন্ধকারে যে মেয়ে পালিয়ে কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড আসতে পারে সে মেয়ে নাকি ভুতে ভয় পায়।বিশ্বাসের করতে পাচ্ছি না।আমি আপনাকে খুব সাহসী ভেবেছি।
-“হ্যাঁ আমি সাহসী মেয়ে।
-“সাহসী মেয়েরা বুঝি ভুতে ভয় পায়।
-“প্রথমত আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই ছোট থেকে।আর দ্বিতীয়ত,বিয়েরদিন রাতের অন্ধকার আমার বন্ধু আর ভাইয়া আমার সাথে ছিল।তারপর গাড়িতে করে এসেছি।তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।নির্জন জায়গা রাতে বেলা আমার খুব ভয় লাগে।আর এখানে আমি ভুত মনে করিছি কেন জানে।এখানে আমি ছাড়া কাউকে দেখিনি।হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে গেলাম।তাই সবার আগে ভুতের কথা মনে পড়ছিল এই মাঝরাতে।আমার দাদিবু বলতেন ভুত পেত্ন নাকি মাঝরাতে আসেন।তাই আর কি??
স্বপ্ন ছোট করে বলে,
-“ও”
তখনই নীলের মনে আসে সে মাউথ অর্গানের সুর শুনে এখানে এসেছিল।কিন্তু তাকে দেখতে পায়নি।
-“আপনি এত রাতে এখানে কেন??” বললো স্বপ্ন।
-“এখান থেকে আমি কাউকে মাউথ অর্গান বাজাতে শুনেছি।সেই সুর কোথায় থেকে আসছে তার সন্ধান করতে করতে এখানে এসেছিলাম। কিন্ত এখানে এসে দেখি সুর হাওয়ায় মিলে গেলো।কাউকে দেখছে পাচ্ছি না, আপনি কি কাউকে মাউথ অর্গান বাজাতে দেখেছেন?”
নীল স্বপ্নে জিজ্ঞেস করে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।সে এখানে ছিল।হয়তো তার আগে এসেছিল এখানে।তার আগ পর্যন্ত এখানে সুরটা বাজছিল।আগে এসে থাকলে হয়ত শুনে থাকবে।সেই আশায় প্রশ্ন করে বসে।তার যেই সুরওয়ালা মানুষ টাকে চাই।
তার সুরে টানে যে ঘর ছেড়ে তাকে আসতে হয়েছে। সেই মানুষ তাকে একটা নজর যে তাকে দেখতে হবেই।তার সুরে প্রেমে যে পড়ে গেছে।তার অনেক দিনের ইচ্ছা তার স্বপ্নের রাজপুত্র তার রাজপ্রাসাদে বাগানে বসে বাঁশি বাজাবে।আর সেই বাঁশির সুর শুনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে একধ্যানে তাকিয়ে তার পাগল করা বাঁশির সুর শুনবে।কিন্তু এখানে বাঁশি নাই হোক মাউথ অর্গানের এত পাগল করা সুর তাকে যেন পাগল করে দিচ্ছে।
স্বপ্ন তা কথার আন্সার না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করে বসে।
-“আপনি সে মানুষটা কেন খুজচ্ছেন।??
-“আজব তো।কেন খুচ্ছি মানে?যে এত সুন্দর করে মাউথ অর্গান বাজাতে পারে।তাকে খুজবো নাতো কাকে খুজব।
-“আপনার কি মাউথ অর্গানের সুরটা ভালো লেগেছে।
নীল খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
-“ভালো লেগেছে মানে।আমি তারে এখন পাইলে বিয়ে করে ফেলতাম।
-“আপনি কি কিছু বলেছেন?
তার এক্ষুনি মনে পড়ে সে খুশিতে লাফিয়ে এই ছেলে সামনে তার সুরওয়ালা ক্রাশ কে বিয়ে করা কথা বলে ফেলেছে।তারপর স্বপ্নে কে বলে
-“না কিছু বলি নাই”
-“ও”
নীল আলত পায়ে হেঁটে যায় দুই কদম।উদাসীন মনে বিড়বিড় করে বলে,
-“ইশ……কি সুন্দর করে না বাজাচ্ছিল। তার পিছন ফিরে স্বপ্নে দেখে তাকে বলে,
-“আপনি আমার উত্তর দিলেন না কিন্তু..
-“কিসের উত্তর?
-“এখানে আপনি কাউকে দেখেছেন মাউথ অর্গান বাজাতে।
স্বপ্ন কাটকাট কথা বলে,
-“না।
-“কেন আপনি দেখেননি? আপনি তো আমার আগে এসেছিলেন।”হতাশ হয়ে বলে নীল।
-“আমি তোমাকে এত রাতে এখানে আসতে দেখে এসেছি।
-“তার মানে আপনি আমার পরে এসেছেন?
-“হুম।
-“এই জন্য দেখেনি। কেন যে আমি আরো আগে আসলাম না।না হলে তো তার সাথে স্বাক্ষাত হয়ে যেত।এটা বলে নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যেতে নীলে।স্বপ্নে পিছু ঢেকে বলে,
-“শুনন
-“জ্বী বলুন
-“যাবেন আমার সাথে?
-“কোথায়।
-“যেয়ে দেখে নিবেন।
স্বপ্ন তাকে হ্যালিপ্যাডে নিয়ে এসেছে।সে চারপাশ তাকিয়ে নিজের মনে মনে জায়গাটার সৌন্দর্য বর্ণনা দিতে থাকে।আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের চূড়ো দাঁড়িয়ে চেনা রাত কে অচেনা মনে হচ্ছে।পাহাড়ের রহসো ডানা মেলতে হিম হাওয়া রাতে,হাজার ফুটের পাহাড় পেরিয়ে রাতের দিগন্ত পূর্নিমার শীতল আলো।জোৎস্নার আলো ঢেকে আছে পুরো প্রকৃতির অরণ্য। গভীর অরন্য যেন ঢেকে রেখেছে পুরো উপত্যকা। রাতের আকাশে মেঘ উড়ে যাচ্ছে থেমে থেমে,যেন মেঘ গ্রাস করে নিচ্ছে চন্দ্রের মায়াবী আলো।।নিঃশব্দের মত জেগে আছে পুরো অরণ্য প্রকৃতি। পাহাড়ের নির্জনতায় কেবলই জেগে থাকা পাখিরা,রাতের অদূর থেকে ভেসে আসছে অচেনা পাখির ডাক।রাত জাগা পূর্নিমার রাতের পাখির ছন্দ যেন অরণ্যের চেনা রুপ।হ্যালিপ্যাডে চূড়োয় বসে এমন রাত পাওয়ায় সত্যি বিমুগ্ধ করে।পাড়া বসবাসরত লুসাই আর ত্রিপুরা বসতি গুলো তখন ঘুমের রাজ্য,গভীর রাত যেন পূর্নিমার আলো গাঢ় পাহাড়ের গ্রাম-অরণ্য-প্রকৃতি।ধবধবে পূর্নিমার আলো আলোকিত পুরো উপত্যকা। ধীরে ধীরে মেঘ জমছে সাজেক উপত্যকার ভাজে ভাজে,মেঘের সাদা রঙ ঢেকে যাচ্ছে সবুজ বনানী।পূর্নিমার রাতে মেঘ যেন বৃত্তের মত চারপাশ ঘিরে রাখছে হ্যালিপ্যাড।
-“কেমন লাগছে?
-“কি বলব বুঝতে পাচ্ছি না,আপনি আমায় এখানে না নিয়ে আসলে এত সুন্দর চাঁদের আলোর প্রকৃতি ভিউ দেখাটা মিস করে ফেলতাম। আমার যে কি ভালো লাগছে ,,,,,
-“সমতল ভুমি থেকে সাজেকের হ্যালিপ্যাড থেকে চাঁদ অনেক স্পর্শ দেখা যায় আর,,,
স্বপ্ন মুখে কথা কেঁড়ে নিয়ে নীল বলে,
-“আর অনেক বড় দেখা যায়।
স্বপ্ন আর কিছু না বলেই সেখানে শুয়ে পড়ে মাথার নিচের দিকে এক হাত দিয়ে,এই চাঁদনী রাতে তার আকাশের চাঁদ দেখে লাভ নেই,,তার সামনে যে মস্তবড় একটা চাঁদ বসে আছে,তার সৌন্দর্য সে আটকে পড়েছে,কি করে আজকে এই চাঁদকে বাদ দিয়ে আকাশের চাঁদকে দেখবে।নীল তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন শুয়ে আছে,তার ইচ্ছা করছে এভাবে শুয়ে আকাশের তারা গুনতে,তাই সে শুয়ে পড়ে স্বপ্নে পাশে, এই মেয়ের এহেম কান্ড স্বপ্ন অবাক হয়, সে নীলকে তার পাশে শুতে দেখে আরেকটু সরে যেয়ে দুরুত্ব বজায় রাখে। নীলের কোনো দিকে খেয়াল ও নেই সে তো চাঁদ, তারা দেখতেই ব্যস্ত।তারপর বল উঠে,
-“আপনার গানটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
স্বপ্নর এই কথা বদলে কি বলা উচিত সে বুঝতে পাচ্ছে না।
-“গান ভালো লাগে
-“গানের চেয়ে ও আমার মাউথ অর্গান, পিওনোর সুর ভালো লাগে।এক কথা আমার মিঊজিক ভালো লাগে”।
এটা বলে নিজের ভাবনার অতল সাগরে ডুব দেয় সে।তার এখন মনে হচ্ছে সেই সুরওয়ালাকে যদি খুজে পেত,তাকে দরকার হলে ধরে নিয়ে আসত এখানে।এই চাঁদনী রাতে এরকম একটা রোমান্টিক পরিবেশে তার ওই সুরওয়ালা মাউথ অর্গান বাজাতো। আর সে এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে তার সুর শুন ত।কিন্তু সে খুজে পায়নি, আর পাবে কি না সেতো জানে না।ওই সুরওয়ালা কি আর বাজাবে ওইখানে বসে মাউথ অর্গান।তার দেখা কি পাবে সে।এটা ভেবেই তার মন খারাপ হয়।কিন্তু সে এখন মন খারাপ করে এত সুন্দর মুহুর্ত নষ্ট করবে না।
নীলের অনুরোধে স্বপ্ন আরেকটা গান গাইল।দুজন হ্যালিপ্যাডে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগল।মাথার উপরে রাশি রাশি নক্ষত্র। তারাগুলো দেখে মনে হচ্ছে সব গুলো মাথার উপর দিয়ে ঝুলে আছে,মনে হয় একটা ঢিল ছুড়লেই টুপ করে গায়ে উপরে পড়বে।এত কাছ থেকে,চাঁদ নক্ষত্র, কখনো দেখেনি নীল।ওর এত পরিনাম সুখ সুখ লাগছে!মাঝে মাঝে মেঘ গায়ের উপর দিয়ে উড়ে এসে চলে যায়।এত সুন্দর কেন সবকিছু!
#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা
(প্লিজ গঠন মূলক মন্তব্য করবেন।তাহলে আমি বুঝতে পারবে কেমন লাগছে এই গল্প টা আপনাদের)