স্বপ্নীল
০৯
কি করেছি আমি।যার জন্য আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবে।আমি তো শুধু আমার বোনের আবদার রেখেছি।আমার বোন একটা আবদার করেছে। আমি ভাই হয়ে সেটা কি করে না করি।ওকে পালাতে যেমন আমি সাহায্য করেছি তার জন্য দাদু আমায় সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে।অন্যায় শাস্তি দিয়েছে।তাহলে কেন মা তুমি আমার খাওয়া বন্ধ করে দিলে।আমি আর না খেয়ে থাকতে পারতেছি না।আমার পেটের ভিতরের ইঁদুর লাফালাফি করছে।সারাদিন না খেয়ে আছি।আর থাকতে পারবো না।
তামিম এসব বলে পা টিপে টিপে নিজের রুমের বাহিরে আসে।উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে সবাই ডাইনিং বসে খাচ্ছে।সবার খাওয়া দেখে তামিমের খিদে যেন আরো বেড়ে গেলো।সবাই খাচ্ছে অথচ তাকে কেউ এবার ও ডাকে নি।সে বুঝে গেছে তার মানে আজকে কপালে খাবার জুটবে না। নিজের পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার ঘরের ঢুকে যায়।
খাটের উপরে শুয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি করছিল তখনই সমুদ্র ফোন করে। ফোন রিসিভ করে।সে কথা বলার আগে সমুদ্র বলে উঠে,
-“কিরে মামা, তোকে নাকি আজ সারাদিন খেতে দেয়নি।
তামিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“তুই আমায় কাটা গায়ে নুনের ছিঁটা দিচ্ছিস মামা,
-“আমি
-“হ্যা তুই,সারাদিন না খেয়ে আছি। কোথায় বাড়ি সবাইকে বলে মেনেজ করবি আমায় যেন খেতে দেয়।তা না করে আমায় জিজ্ঞেস করছি।’আমায় নাকি সারা দিন খেতে দেয়নি’ এটা কি কাটা গায়ে নুনের ছিঁটা না।”
-“হ, মা বুঝচ্ছি।এখন কি খিদে বেশি লাগছে।
-“কালকে রাত ধরে খাওয়া বন্ধ।
-“একটা কাজ কর আমি তোকে মেসেঞ্জারে কিছু খাবারের পিক পাঠাচ্ছি।ওই গুলো মন ভরে দেখে নিবি।তাহলে পেট ভরে যাবে।
-“মজা নাও,, ভালো।আমার সময় আসবে।
-“একটা কাজ কর হোটেলে থেকে খাবার অর্ডার কর।হোম ডেলিভারি করে দিয়ে যাবে।
-“এটা তোদের ঢাকা শহর নয়, যে রাত বিরতে খাবার অর্ডার করলে ডেলিভারি করে দিয়ে যাবে।এটা হলো মির্জাপুরের মির্জা বাড়ি।
-“হো,আমি ভুলে গেলাম।এখন কি করবি।
-“কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিব।
___________________
-“দেখ তোরা কি কুত্তা মাইরি।আমার হাতের একটা অংশ কামড়িয়ে নিয়ে গেলো।মনে হয় জীবনে গোশত চোখে দেখেনি।”তৃণ তার বন্ধুদের হাত দেখিয়ে বলে।
-“নারে, আমি বাপের জনমে গোশত খাইনি।তাই আজকে তোকে কামড়িয়ে গোশত খাওয়ার স্বাদ মিটাইছিলাম।হেব্বি টেস্টিং ছিলো।”প্রাচ্য বলে
-“কুত্তা কোথাকার। আমার হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
-“বেশ করেছি।
-“এখন নো ঝগড়া।এখন হবে গানের আড্ডা। “ধূসর গিটার নিয়ে আসতে আসতে বলে।
প্রাচ্য তৃণ কে ভেংচি কেটে।ধূসর কে বলে,
-” গানের আড্ডা বেশ জমবে, বসে পড় তাড়াতাড়ি।
রোদ বলে উঠে,
-“গান গাইবে কে?
-“কে আর গাইবে। বরাবর যে গান গায়।
নীল উদ্বিগ্ন গলায় বলে,
-“আপু গান গাইবে কে?
-“স্বপ্ন
নীল স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“উনি কি গান গাইতে পারে।
-“গাইতে পারে মানে পুরো পাটিয়ে দেয়”রোদ বলে
ধূসর গিটারে টং টাং আওয়াজ তোলে।স্বপ্ন নীলের দিকে তাকিয়ে গান গায়,
“কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে।
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে।
ভালোবাসা বাসি আর হবে না।
নীল স্বপ্নের গান শুনে মুচকি হাসে, । ধূসর ইশারা তৃণ দেখায়।স্বপ্নের দিকে যেন তাকায়।স্বপ্ন এখন নীলের চোখে দিকে তাকিয়ে আছে।নীলের চোখের মোহ আটকে গেছে।এই মোহ যে ছাড়বার নয়। জনম জনম যে এই চোখে দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চায়।নীল বেহায়ার মত স্বপ্নের চোখে দৃষ্টি নিজের দৃষ্টি মিল্লাচ্ছে। এই যেন চোখের শুভ দৃষ্টি হচ্ছে দুজনের। উপস্থিত সবাই তাদের দৃষ্টি বিনিময় দেখছে।ধূসর ফ্যাস ফ্যাস গলায় তৃণ কে বলে,
-“কি বুঝলি!
-“যা বুঝার বুঝে গেছি।
রোদ বলে উঠে,
-“আমি ও বুঝে গেছি।
দুজনে ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই আবার কি বুঝলি!
-“স্বপ্নে যে প্রেমে পড়েছে।
– তৃণ খ্যাঁক খ্যাঁক করে কাশি দেয়।তাদের দুজনকে সবার উপস্থিত বুঝানোর জন্য।দুজনের কাশির শব্দ ঘোর কাটে।বন্ধুদের এহেম কান্ড স্বপ্ন কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।নিজের মাথার চুল হাঁতড়া হাঁতড়া তাদের দিকে তাকায়।
প্রাচ্য বলে,
-“শুভ দৃষ্টি বিনিময় শেষ হলে, দয়া করে গান গাওয়া শুরু করনে।
স্বপ্ন মুচকি হেসে আবার গান গায়।
“শতরাত জাগা হবে থালে ভাত জমা রবে,
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না,
হুট করে নিয়ে এসে লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না,
তখন প্রাচ্য কথা শুনে নীল খুব লজ্জা পেয়ে নিচে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।যে অনেক বার পালিয়ে ছিল। অনেক জায়গা একা একা ঘুরে বেরিয়ে ছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলেদের সাথে মিশে ছিল।তাদের প্রতি কোনো ফিলিং ছিল না কিন্তু এবার কেন স্বপ্ন নামের ছেলেটা প্রতি অন্যরকম ফিলিং হচ্ছে।বার বার না চাইতে এই ছেলের সাথে তার দৃষ্টিবিনিময় হচ্ছে।
“আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না”
গান গাওয়া শেষ প্রাচ্য বলে উঠে,
-“প্রতিবারে মত এবার ওপাটিয়ে দিয়েছিস।কিন্তু এবার যেন একটু ভালোবাসা, আবেশ সংমিশ্রণ দিয়ে গানটা গাইলি।এর পিছনে কি বিশেষ কোনো ব্যাপার আছে না কি।
তৃণ বলে,
-“হয়তো আছে।
স্বপ্নে তার বন্ধুদের কথা শুনে নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা এখন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।নীল তাকাতে আবার দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।মুহুর্ত মধ্যে নীল চোখ নামিয়ে ফেলে।
-“এবার গান খাইবো আমি।এই গানটা আমি তৃণকে ডেডিকেটেড করে খাইবো।”
প্রাচ্য একথা শুনে সবাই ভ্রু কুচকে তাঁকায় তার দিকে।ধূসর বলে উঠে,
-“আমাদের সবাইকে ছেড়ে হঠাৎ তৃণকে ডেডিকেটেড করে গান গাইবি।ঘটনা কি??
ত্ৃন দিকে তাকিয়ে বলে
-“ঘটনা কিছু না,,,রোদ গানের সাথে তাল মিলাবি কিন্ত…
“আল্লাহ দিছি তোরে সাড়ে ষোলো আনা,
সোনার বাংলার তোর চেয়ে কে আছে সেয়ানা,,,
তুই এমন একটা পোলা,
তোর আশি টাকা তোলা,
তুই দিলি আমায় দিলে দোলা।
তুই সাড়ে ষোলো আনা পোলায়া,,য়া
এটুকু গেয়েই ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি হাসি রেখে তৃণ দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। তৃণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এবার সে বুঝেছে কেন তাকে ডেডিকেট করে প্রাচ্য গান গাইছে।তার ইজ্জতের ফালুদা উঠাতে।
বোনের এমন গান শুনে নীল হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে।তার হাসির মুক্ত কুড়াচ্ছে অন্যকেউ সে বুঝতে পাচ্ছে না। গানের দ্বিতীয় কলি সে গায়,
” তোর সুইট সুইট হাসি,
আমি বড় ভালোবাসি।
তুই মিষ্টি করে ডাকলে কাছে,বৃষ্টি হয়ে আসি।
নীল হেসে হেসে গানের এই তিন লাইন গায়।তার খুব হাসি পাচ্ছে।হাসি জন্য তার মুখে দিয়ে গানের লাইন বের হচ্ছিল না।তারপর হেসে হেসে একটু বেসুরেলা ভাবে গায়।তার পর ও স্বপ্ন কাছে যেন মনে হচ্ছে, কি সুন্দর ভাবে মুক্তা ঝড়া হাসি দিয়ে গানটা গাইল।এখন মেয়ে টার মুখে হাসি লেগে আছে।এই মেয়েটার এত হাসে কেন??এতো হাসে যে তার বিরক্তি লাগে না, তাই হোক না কেন? মেয়েটার হাসি প্রেমে পড়ার মত।
“তুই সাড়ে ষোলো আনা,
তোর নেই যে তুলনা,
সোনার বাংলা তোর চেয়ে কে আছে সেয়ানা।”
রোদের গাওয়া শেষ হলেই হাসির রোল যেন পড়ছে।সবাই হেসেই যাচ্ছে।ধূসর হেসে হেসে বলে,
-“হায়রে তৃণ , প্রাচ্য কিভাবে তোকে গানের মধ্যে পিঞ্চ মেরেছে দেখেছিস?লাস্ট পর্যন্ত গানের মধ্যে ছাড়ল ও না এরা তোকে।”
-“হিংসে হচ্ছে তো তাই,
হিংসে হবে। একশোবার হিংসে হবে।মেয়েদের সাথে তুই ঘেঁষাঘেঁষি করিস আমার রাগ হয়।ইচ্ছা করে তোকে ঠাঁটিয়ে চড় মারি।আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম।আমি তোকে নিজে গিয়ে আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছি।আর তুই,,, তুই আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছিস।এখন কেন তোর এই টিনা, মিনা রিনা দের সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি করিস।নিজেকে খুব হ্যান্ডসাম ভাবিস তাই না।আমি এবার ঢাকা গিয়ে তোকে দেখিয়ে দিব।আমি চাইলে হাজার টা প্রেম করতে পারি।হু
প্রাচ্য অধরে হাসি রেখা টেনে বলে,
-“আমি কেন তোকে হিংস করতে যাবো। বয়ে গেছে আমার
তৃণ আর কিছু না বলে ধূসর কে বলে
-” রেডি তো
ধূসর ঘাড় কাত করে হ্যাঁ জানায়।
আখ ক্ষেতে ছাগল বন্ধী,জলবন্দী মাছ
তৃণ গান শুনে সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।ধূসর তাদেরকে ধমকিয়ে বলে,
-“হাসলে গান গাইবে কি করে তৃণ।
সবাই চুপ হয়ে যায়।কিন্তু মুচকি মুচকি হাসছে নীল।
নারী কাছে পুরুষবন্ধী ঘোরায় বারোমাস।
সখি গো……আমার মন ভালো নেই।
কালার সাথে পিরিত কইরা,
সুখ পাইলাম না,
এই লাইনটা তৃণ গাওয়া হলে তার সাথে গলা মিলিয়ে স্বপ্ন আর ধূসর গায়।
যে নারী গোসল করে চুলে দিলো ঝাঁড়া,
এক জামাই থাকতে তাহার,
হাজার জামাই খাড়া,
সখি গো,,,,আমার মন ভালো নেই।
কালার সাথে পিরিত কইরা সুখ পাইলাম না।
একজাতির নারীর আছে লম্বা কালোচুল
সে নারী বছরাবছর ঘরের ফুটায় ফুল।
এই কলি গাওয়ার পর তৃণ প্রাচ্য দিকে তাকিয়ে চোখ মারে।প্রাচ্য লজ্জা যেন মাটির সাথে মিশে যেত ইচ্ছা করছে। সে খুব ভালো করে বুঝতে পাচ্ছে। এইরকম একটা গান গাওয়ার মানে কি?? তার এখন ইচ্ছা করছে তৃণ নাক বরাবর ঘুষি মারতে। কি বাজে গান গাইছে। তার জন্য গানের অভাব পড়ছে। গানের কি ছি রি।কিছু না বলে তার গান হজম করে নিচ্ছে সে।
সখী গো আমার মন ভালা না,,,,,,,
-“থাম!থাম!আর গাওয়া দরকার নাই।অনেক গেয়েছিস।” বললো রোদ।
-“কেন কি হয়েছে?
-“সখি গো আমার মনে ভালা না…কি হয়েছে তৃণ।টিনা মিনা কি ব্রেকআপ করে দিয়েছে নাকি??তাই দুঃখে কাতর হয়ে এই সব গান গেয়ে কষ্ট কমাচ্ছিস।
চলবে
# Kawsar_Sorna