স্বপ্নীল
০৮
এক দিকে সূর্য অস্ত আর অন্যদিকে পূর্নিমার চাঁদের আগমন। রক্ত লাল সূর্য ডুবে গেলো আর অপূর্ব সন্ধ্যা নিয়ে সাজেকের এল পূর্নিমার চাঁদ।সাজেকের এই সন্ধ্যাটাকে মনোরঞ্জন করা জন্য তারা ব্যবস্থা করেছে।
ফানুশ উড়ানো, ক্যাম্প ফায়ার, বার বি কিউ পার্টি, আয়োজন করছে ।আজকে রাতে এগুলো করে কাটাবে তারা।
এই রাত কে আরো স্মৃতিময় করে রাখতে তারা সবাই মিলে ফানুশ সাথে মনে সুপ্ত ইচ্ছাটি ও উড়িয়ে দেয়।বিশাল আকাশের ক্যানভাসে নানান রঙের রঙ তুলিতে আঁকা পাহাড়ের রুপ আর মধ্যরাতে সাজেকের আকাশে উড়ে যাওয়া ছোট বড় আলোরর সাথে নীলের মন ঊড়াল দিয়েছে।
স্বপ্ন, তৃণ, আর ধূসর মিলে ক্যাম্প ফায়ারে তৈরী করছে।আজ এই পূর্নিমার রাতে সবাই মিলে আড্ডা দিবে।সারারাত হেলিপ্যাডে কাটাবে। ছেলেরা কিছু কাঠেরর ব্যবস্থা করে, কাঠের টুকরা গুলোকে জড় করে তাদের মাথা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে সবার মাঝ খানে রাখে।এই শীতের কনকনে ঠান্ডা, পাহাড়, অরণ্য মধ্যে ক্যাম্প ফায়ারের মজাই আলাদা। চাঁদের আলোই চিকমিক করছে। স্বপ্নের পাশে নীল বসেছে তার পাশে প্রাচ্য, এভাবে সবাই গোল হয়ে বসেছে।
সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা করছে।তাদের পাশ থেকে নীল উঠে যায় তা দেখে প্রাচ্য বলে,
-“কদম কোথায় যাচ্ছিস তুই।
বার বার সবাই তাকে কদম বলে, এতোবার মানা করার শর্ত। সে বুঝতে পারে না এই নামের মধ্যে কি আছে, এত মানা করার পরে সবাই কেন এই নামে ডাকবে।তার কতো সুন্দর নাম নিলাদ্রী নীল,এই কদম ফুল,,,, আর কিছু না ভেবে মেজাজ গরম করে বলে,
-“আর কখন যদি তুমি আমায় এই কদম ফুল বলে ডেকেছো তাহলে তোমার খবর আছে,এই আমি বলে দিলাম!”
এটা বলে সে দোলনা বসে পড়ে,
প্রাচ্যকে উদ্দেশ্য করে রোদ বলে,
-“তোর এই বোনের কদম নাম নিয়ে তো এলার্জি কেন???”
-” এই নামের পিছনে ইতিহাস আছে তাই।”
ধূসর বলে,
-“প্রাচ্য আমার একটা জিনিস মাথায় আসছে না।তোর এই বোন বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে, তোর চাচাতো ভাই সাহায্য করেছে বোনকে পালাতে।তাও আবার একবার নয় এই নিয়ে ৩৬ বার। তোর কথা অনুযায় তখন বুঝলাম সে বাসায় ফিরে গেলে তোর ফ্যামিলি কেন তাকে কিছু না বলে তার ফিরে আসাতে আনন্দে আটখানা হয়।
-“বড়সর একটা ব্যাপার স্যাপার আছে তাই।
-“তো শুনি সে কি বড়সর ব্যাপার সেপার”
-“এই তার কদম ফুল নাম শুনলে এলার্জি মতো তার গা ছুলকায়।এই তুই মাত্র বললি না, ফ্যামিলির কেউ কিছু বলে না কেন?। এসব পিছনে ইতিহাস আছে”
প্রাচ্য কথা প্যাঁচাচ্ছে দেখে তৃণ বিরক্তি বোধ করে,দুইহাত জড় করে প্রাচ্যকে বলে,
-“কথা না প্যঁচিয়ে দয়া করে ওদের সবাইকে ইতিহাস শুনা।না হলে ওদের কারো ঘুম আসবে না আজকে। বিশেষ করে রোদ আর ধূসরের
ধূসরে এবার বলে,
-“আমার ঘুম আসবে না, নাকি অন্য কারো সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।
তার সে প্রাচ্য বলে,
-“বলে ফেল তোদের ফ্যামিলি ইতিহাস”
প্রাচ্য একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-“আমাদের বংশে ছেলের সংখ্যা বেশি। বড় আব্বুর তিন ছেলে, আমার দুই জন ভাই, জন্ম হওয়ার পর। যখন দাদুর বংশে কোনো মেয়ে জন্ম হয়না। দাদি অনেক ওঝা কবিরাজের কাছে তাদের তিনবঊমাকে নিয়ে যায় অনেক ঝাড় ফু দেয়।তার পর জন্ম নেয় সমুদ্র ভাইয়া আর তামিম ভাইয়া।তাদের জন্ম পর দাদু দাদি নিরাশ এবারও তারা নাতনির মুখ দেখতে পায়নি। তারপর আমার জন্ম হয়। আমায় পেয়ে তারা হাতের চাঁদ পেয়েছে। কিন্তু আব্বু, দাদুর ঢাকার ব্যবসা গুলো দেখভাল করত।বড় ভাইয়া ভার্সিটি পড়ত ঢাকা। তাই মা আমায় নিয়ে ঢাকা চলে আসে।মাঝে মাঝে সবাই আমায় দেখে যেত।।তাদের আদর স্নেহ আমি কম পেয়েছি । আমাদের বাড়ির সামনে অনেক পুরানো একটা কদম গাছ আছে। বর্ষাকাল আসলে সেই গাছে অনেক কদম ফুল ফুটে। কদম গাছটায় যখন ফুলে ফুলে ফুটে উঠত অনেক সুন্দর লাগত।এক কথা বলা যায় বর্ষাকাল আসলে কদম গাছটার কারণে মির্জা বাড়ির সৌন্দর্য বেড়ে যেত।দাদি অনেক প্রিয়া ছিল সেই গাছটা।মাঝে মাঝে দাদি বারান্দা দাঁড়িয়ে কদম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করত।এরকম একদিন বর্ষাকাল নীলের জন্ম হয়।সেদিন যেন গাছটা দ্বিগুণ কদম ফুল ফুটেছে।দাদির প্রিয় গাছে এই দ্বিগুন ফুল ফুটেছে বলে সেই ফুলের নাম অনুযায় তার নাতনির নাম রাখে কদম ফুল।দাদু রাখে নীল নামটা।নীলের জন্ম দিন মুষলধারে বৃষ্টি ছিলো। বিকালে দিকে বৃষ্টি কমে গিয়ে আকাশের সাঁত রং ধনু উঠেছিল।দাদুর আবার রং্ধনু প্রিয়।তার রং্ধনু সবচেয়ে প্রিয় রং ছিল নীল।তাই তিনি ঠিক করেন তার নাতনির নাম নীল রাখবে। দাদু আর দাদির মধ্যে অনেক ঝগড়া হয় নাম নিয়ে।দাদু বলে নীল নাম রাখার জন্য,দাদি বলে কদম ফুল।এই নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়। তারপর শেষ ঠিক হয় নীলের দুইটার নাম রাখা হবে। ফ্যামিলি অর্ধেক মানুষ দাদুর রাখা নামে নীল কে ডাকবে।আর অর্ধেক মানুষ দাদির রাখা নামে ডাকবে।সেই হিসাবে কেউ নীলকে কদম বলে আর কেউ নীল বলে
।দাদি মারা যাওয়ার পর দাদু দাদির রাখা নামেই নীলকে এখন ডাকে।কিন্তু নীলের এই কদম ফুল নাম ভালো লাগে না।তারা বন্ধুবান্ধব সবাই কে বলত তার নাম কদম সবাই তারএই কদম নাম নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত।তাই সবাইকে মানা করে যাতে কেউ তাকে কদম ফুল নামে না ডাকে।
কথা বলে প্রাচ্য তার বন্ধুদের দিকে তাকায়।বন্ধুদেরকে এভাবে তাকাতে দেখে বলে
-“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন???
তৃণ বলে,
-“ভাবছি
-“কি”
-“কি আর ভাববো। তোর বইন যে একটা ইতিহাস। সেটাই ভাবছিস।একটা নামের পিছনে এতো লম্বা ইতিহাস হয় আমার জানা ছিলো না।
তৃণ কথা শুনে মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায় তার।কিছু বলতে নিলি তার মাঝে স্বপ্ন বলে উঠে,
-” আমার একটা হিসাব কিছুতে মিলছে না।
-“কি হিসাব।
-“তোর কথা অনুযায় তো।তোর দাদুর বংশে প্রথম নাতনি তুই।আমার অভিজ্ঞাত যত টুকু বলছে,যাদের অনেক গুলো ছেলে সন্তান হওয়ার পর তাদের বংশের প্রথম মেয়ে সন্তান হলে তাদের অনেক আদরের থাকে সেই সন্তানটা। তাই সবাই সবার প্রিয় নামে সেই মেয়ের নাম রাখে।কিন্ত তুই তোদের বংশের প্রথম মেয়ে সন্তান হয়ে তোর নাম রাখা উচিত ছিলো নীলের নামের মত করে। তোর ক্ষেতে সেটা হয়নি কিন্ত নীলের ক্ষেতে কেন হয়েছে।সেই হিসাব এখনও বুঝলাম না।”
-“আমি তোদের কে বলছি, ছোট থাকতে আমি ঢাকা চলে আসি।দাদু, দাদির নাম রাখার সময় ফেলে কই।
তৃণ বলে,
-“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।বংশের প্রথম মেয়ে যদি তুই হোস! তাহলে তারা তোকে আদর করে কোনো না কোনো নামে নিশ্চয় ডাকে।কিন্তু তুই আমাদের এখন বলতে চাস না।
-“আমি সত্যি বলছি।
-“আপু মিথ্যে বলছে। নীল বলে উঠে।সে আগের জায়গা বসতে বসতে বলে।
-“আপু মিথ্যে বলছে,,আপু আরেকটা নাম আছে সেটা দাদু দাদি রেখেছিলে।
-“দেখলি তো, তোরা।আমি ঠিক বলিছি প্রাচ্য আরেকটা নাম আছে তার দাদু দাদির দেওয়া।নীল বলে ফেলে তো প্রাচ্য নাম টা। নিশ্চয় খুব ইউনিক হবে”।তৃণ বলে।
-“হুম ইউনিক তো বটেই।”এটা বলে প্রাচ্য দিকে তাকায় নীল।প্রাচ্য চোখে ইশারা দিয়ে মানা করে যেন তার নাম না বলে। নীল তার ইশারা উপেক্ষা করে বলে
-“তুমি যখন আমার নামের ইতিহাস তোমার ফ্রেন্ড কে বলে দিয়েছো।তাহলে তাদের ও তো জানা উচিত।প্রাচীয়া প্রাচ্য আরেক নাম যে শিউলিফুল।”
-“কি নাম বললে” তৃণ বলে।
-“শিউলি ফুল।
এই কথা শুনে রোদ, তৃণ , ধূসর হাসতে থাকে। স্বপ্ন তার বন্ধুদের হাসি দেখে মুচকি হাসে।তার এই মুচকি হাসা মুগ্ধ ভাবে পরোখ করছে নীল।নিজের গালে হাত দিয়ে বলে,
ইশ,,উনি হাসলে উনার গালে খাদ হয়ে যায়।কি সুন্দর টোল পড়ে। উনার টোল পড়ার গালের হাসি দেখে যে কেউ ফিদা হয়ে যাবে।
তৃণ হাসতে হাসতে সুরেলা গলায় বলে,
-” শি….উ লি ফু— ল।দারুণ নাম।প্রাচ্য এরকম একটা নাম আছে নীল না বললে জানতে পারতাম।
তার সাথে তাল মিলিয়ে রোদ বলে,
-“শিউলি ফুল, কদম ফুল দুই বোনের দুইটা ইউনিক নাম আছে।
প্রাচ্য খুব ইচ্ছা করছে তার বোনকে দুই টা থাপ্পড় মারতে। সে এই জন্যই তার নামটা বলতে চায়নি তার বন্ধু মহলে।তারা যে এই নাম নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করবে। তার খুবই জানা ছিল।খুব জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“এভাবে দাঁত বত্রিশ গা ভেটকিয়ে হাসা কি আছে।
ধূসর বলে,
-“আহা প্রাচ্য চেতস কেন তুই। তোর কি সুন্দর একটা নাম শুনছি। তার জন্য তো একটু আকটূ হাসা লাগেই।এবার ধরে আমরা তোকে প্রাচ্য বলে ডাকবো না। শিঊলি ফুল বলে ডাকবো। কি বলিস তোরা।
কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে প্রাচ্য বলে উঠে।
-“শিউলি ফুল নামে আমায় যে ডাকবে।তার হাত কামড়িয়ে দেবো আমি।হু
-“হাত কামড়া বা পা কামড়া যাই করিস না কেন আমরা তোকে শিউলি ফুল বলে ডাকবো।”তৃণ বলে
-“আর একবার তুই বল শিঊলি ফুল।তার পর দেখিস কি করি আমি।
তৃণ প্রাচ্যকে ক্ষেপানোর জন্য আবার বলে,
-“শিউলি ফুল
প্রাচ্য আর কিছু না বলে তৃণ দিকে তেড়ে আসে।প্রাচ্য তার দিকে এগোতে দেখে তৃণ উঠে দাঁড়ায়। পিছন থেকে সবাই প্রাচ্যকে ডাকে কিন্তু প্রাচ্য তাদের কথা কোনো উত্তর না দিয়ে তৃণ কে ধাওয়া করে।তৃণ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে যায় তাই বসে পড়ে। প্রাচ্য এসে তৃণ পাশে বসে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে তৃণ দিকে তাকায়। প্রাচ্য এই সুযোগে তৃণ হাত কামড় দে।তৃণ আর্তনাদ করতে থাকে।প্রাচ্য আচমকা এরকম করবে সে ভাবতে পারেনি। কামড় দিয়ে উঠে চলে যেতে যেতে বলে,
-“কান খুলে শুনে রাখ আমার নাম প্রাচীয়া প্রাচ্য।”
#চলবে
#Kawsar_sorna
(আমার সামনে ফাইনাল এক্সাম। তাই গল্প দিতে অনেক লেট হবে।গল্প টা ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ হচ্ছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।আপনার গঠনমূলক কমেন্ট করে গল্পটা সম্পর্কে কিছু বলবেন প্লিজ)