স্বপ্নীল ০৬

0
1606

স্বপ্নীল
০৬
যত দূর দৃষ্টি যায়,ছোট বড় সবুজ পাহাড়।ওপর থেকে দৃষ্টি মেললে যেন সবুজ সমুদ্রের ঢেউ।একটি থেকে আরেকটি পাহাড়ের মাঝে সাদা তুলোর মতো আটকে আছে মেঘ।দেশের মধ্যে পর্যটনের এই অপরুপ স্থান হলো সাজেক।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটু ইউনিয়ন এটি।সাজেকের অবস্থান।খাগড়াছড়ি জেলা থেকে উত্তর -পূর্ব দিকে আর ভারতের রাজ্য মিজোরাম সীমান্ত থেকে দূরত্ব মাত্র থেকে ১৫ কিলোমিটার। পাহাড়ি সাজেকে আছে ‘রুইলুই’ ও ‘কংলাক’ নামে দুটি বসতি বা পাড়া।এখানে লুসাই, পাংখোয়া,ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে।

সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এখানে যাতায়াত খাগড়াছড়ি থেকে সহজ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। সাজেকের রুইলুইপাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট।আর ২১০০ ফুট উচ্চতা অবস্থিত কংলাকপাড়া।ভ্রমন পিপাসুদের জন্য সাজেক সারা বছর বর্ণিত সাজে। সেজে থাকে।তবে,বর্ষা , শরৎ,হেমন্ত
সাজেকের চার পাশে মেঘের দেখা যায় বেশি

তাদের গাড়ি এসে পৌঁছায়য় সাজেকে।অনেক গুলো রিসোর্ট আর রেস্টুরেন্ট দেখতে পায় রাস্তা দুইপাশে। রাস্তার বাম পাশে সেনাবাহিনী কর্তৃত্ব সাজেক রিসোর্টটা সাজেকে ঢুকতে সবার চোখে পড়ে।স্বপ্ন সবার উদ্দেশ্য করে বলে,
-“এটা হলো সেনাবাহিনীদের সাজেক রিসোর্ট
নীল ভালো করে তাকিয়ে দেখে,
-“এই রিসোর্ট দেখতে খুব সুন্দর।এই রিসোর্টের রুমে বুকিং দাম মনে একটু বেশি হবে।

-“হুম, সেনাবাহিনীদের পরিচালিত এই সাজেক রিসোর্টটি এসি আর নন এসি প্রতিটি রুম ভাড়া ১০০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা।রিসোর্টটির দ্বিতীয় তলায় আছে সব মিলিয়ে চারটি রুম।সাথে আছে খাবারে ব্যবস্থাও। সাজেক রিসোর্টটি এমন ভাবে তৈরী করা যে রুমের ভিতর থেকে তাকালেই বাহিরে সাজেকের পুরো টা রুপ খুজে পাওয়া যায়।তাই বেশিভাগ কাপলরা প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে এই রিসোর্টটি বেছে নেয় সবার আগে।
নীল ছোট করে বলে,”ওহ”
প্রাচ্য বলে,
-“আমি যতটুকু জানি সাজেকের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নের তিনটি রিসোর্ট।
-“হুম। রুইলুইয়ে সেনাবাহিনী উদ্যোগ গড়ে উঠেছে তিনটি রিসোর্ট । এগুলো হলো, সাজেক, রুনময়,ঝারবুজ। এর মধ্যে বিলাসবহুল সাজেক ও
রুনময় রিসোর্ট রয়েছে পাঁচটি কক্ষ। অপর দিকে ঝারবুজ রিসোর্ট আছে চারটি কক্ষ।
রুনময় রিসোর্ট রুইলুইপাড়া শেষ প্রান্তে অবস্থিত।সেখানে আশে পাশে কোনো বসতি নেই।

রোদ বলে,
-“আমরা কোন রিসোর্ট উঠবো
-“রুনময়।
-“আগে থেকে বুকিং করেছিস, না কি এখন যেয়ে বুকিং করবি।
ধূসর রোদের মাথায় হালকা থাপ্পড় মেরে বলে,
-“এই জন্য তোকে আমি গাধা বলি।এই রকম গাধার মতো প্রশ্ন করিস দেখেই সমুদ্র তোর ভালোবাসা আজ ও বুঝতে পারেনি।
-“আমি কি গাধার মত প্রশ্ন করেছি”
-“কি করিসনি, সেটা আমায় বল,
তারপর ধূসর ব্যঙ্গ করে রোদের কথা বলে,
-“আগে থেকে বুকিং করেছিস, না কি এখন যেয়ে বুকিং করবি, এটা কি গাধার মত প্রশ্ন না,কিরে তূর্ন বল,এটা কি গাধার মতো প্রশ্ন করেনি রোদ।
তূণ বলে,
-“ধূসর ঠিকই বলছে, সাজেকের উন্নত মানে রিসোর্ট হলো রুনময়। এই রিসোর্ট থাকার জন্য অন্তত একমাস আগে বুকিং করতে হয়। আর তুই কি বলেছিস ‘এখন যেয়ে বুকিং করবি’ তোকে তো ধূসর গাধা না বলে বলদ বলা উচিত ছিল।

এবার নীল বলে,
-“তূন ভাইয়া, ধূসর ভাইয়া।তখন থেকে আপনার স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার না করে পুরুষলিঙ্গ ব্যবহার করছেন।এখানে রোদ আপু ক্ষেত্রে গাধা হবে না,গাধি বা বলদী হবে,

ধূসর বলে,
-“ছেলের মতো শার্ট, জিন্স পড়ে, ছেলেদের মতো চাল -চলন তাকে অন্তত আমার মেয়ে মনে হচ্ছে না।লম্বা চুল গুলো না থাকলে পুরো ছেলেদের মত দেখা যেত।তাই আমি স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার না করে পুরুষ লিঙ্গ ব্যবহার করেছি।ওর ক্ষেতে পুরুষলিঙ্গ মানাইসই।কি বলিস তূণ,
তূর্ণ ও ধূসর সাথে একমত হয়ে বলে,
-“তূর্ণ কথা একদম ঠিক বলেছে”
রোদ এবার ক্ষেপে যায়।উঠে গিয়ে ধূসর মাথার দুইহাত দিয়ে চুল মুঠো করে টেনে ধরে। প্রাচ্য আর নীল মিলে থামায় রোদকে।তারপর রোদ বলে,
-“আমার ক্ষেতে পুরুষ লিঙ্গ মানাইসই হলে তোর ক্ষেতে হিজড়া লিঙ্গ মানাই সই।
তূণ প্রথমে ডান গালে হাত দিয়ে বলে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ,
তারপর আবার বাম গালে হাত দিয়ে বলে,
-“আস্তাগফিরুল্লাহ।কিসব বলছিস তুই রোদ।অন্য কেউ যদি এই কথা শুনতো তাহলে ধূসর কোনোদিন বিয়ে করতে পারবে না।সবাই ওকে হিজড়া ভেবে কেউ আর মেয়ে বিয়ে দিবে না।
-“বেশ করেছি।
তখনই চান্দের গাড়ি থেমে যায়।তার এ নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি।
স্বপ্ন বলে,
-“এসে গেছি আমরা,তোরা সবাই নাম।

সবাই মিলে একে কে নেমে যায়। নীল নেমে এদিক ওইদিক তাকায়। তার রুনময় রিসোর্ট ভালো করে দেখে।তারপর নিজের ফোন বের করে।তামিম কে ফোন করার জন্য। এখানে পৌঁছে গেছে তা জানাতে হবে।না হলে তামিম যে টেনশন থাকবে, ঠিক করে পৌঁছে কি না,তাই তামিম কে ফোন করতে নিলে নের্টওয়াক পাওয়া যায় না।বার বার চেষ্টা করে তার পর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। সবার থেকে একটু দূরে যেয়ে মোবাইল উপরে একটু তুলে নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য কিন্ত সিগন্যাল নাগালের বাইরে। দূর থেকে স্বপ্ন নীল দেখছে। বুঝতে পাচ্ছে না, স্বপ্নে এসে নীলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কোনো সমস্যা ”
নীল উপর থেকে হাত নামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
-“কিছু বলেছেন
-“কোনো সমস্যা। এভাবে যে মাথার উপর মোবাইল তুলে রেখেছেন।”
-“ওহ,আসলে আমার মোবাইল নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখানে এসে মোবাইল একটু উপরে তুলে সিগন্যাল পাওয়ার চেষ্টা করছি।”
-“আপনি কি সিম ইউজ করেন”
-” gp
-“এই জন্য বোধহয় আপনি সিগন্যাল পাচ্ছে না।এখানে গ্রামীণসিমের নেটওয়ার্ক পাওয়ার যায় না।সাজেক আসার সময় রবি বা টেলিটক সিম ছাড়া আর কোনো সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।
নীল মুখটাকে অসহায় করে বলে,”ওহ”
-“আমি সবাইকে বলে দিয়েছে সাথে করে যেন রবি বা টেলিটক সিম নিয়ে আসে।আপনাকে প্রাচ্য কিছু বলেনি।
-“প্রাচ্য আপু কিছু বলেনি আমায়।

প্রাচ্য ওদের দেখে এখানে এসে বলে,
-“তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে।চল নীল ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিবি।
-“আপু তামিম ভাইয়া কে একটু ফোন দিলাম ও। কিন্তু আমার মোবাইলে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাচ্ছি না।
-“কেন?? এখানে কি নেটওয়ার্ক সমস্যা দেয় স্বপ্ন।
-“তোদের কে আমি আগে বলে দিয়েছি।সাজেকে আসার সময় সঙ্গে কি কি নিয়ে আসবি। আর যার যার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো যেন সাথে নিয়ে আসবি।
-“হ্যাঁ বলেছিস তো।কিন্তু এখানে কি জিপির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।
-“না।
-“এই যা আমার ও সেইম সিম।এখন কি করবো। বাড়িতে কিভাবে খবর দিবো ”
-“আমি সবাইকে বার বার বলে দিয়েছি এখানে জিপির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।জিপি সিম যাদের তারা যেন অন্য সিম নিয়ে আসে”
-“ভুলে গেলাম আমি।
তখনই রোদ এসে বলে,
-“আমি রবি সিম নিয়ে এসেছি।আমার ফোন থেকে ফোন করে বাসায় বলে দেয়।”
স্বপ্ন বলে,
-“পাওয়ার ব্যাংক এনেছিস তো সাথে।
-“হ্যাঁ”
-“ভালো করেছিস।এখানে সোলার বিদ্যুৎ। মাঝে মাঝে জেনারেটর ব্যবহার করে।সব সময় জেনারেটর থাকে না।তাই পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজন পড়ে।তোর কথা বল।আমি রিসোর্ট রিসিপশনে যেয়ে কথা বলি।
এটা বলে স্বপ্ন চলে যায়।নীল রোদের থেকে ফোন নিয়ে তামিমের নাম্বারে কল করে।
তামিম ফোন ধরে বলে,
-“হ্যালো, কে??
-“ভাইয়া আমি
-“নীল তুই।পৌঁছেছিস
-“হ্যাঁ ভাইয়া মাত্র এসেছি।গাড়ি থেকে নেমে তোমায় ফোন দিয়েছে।
-“ভালো করেছিস।আমি তোর ফোনের অপেক্ষাই ছিলাম।কোনো অসুবিধা হয়নি তো।
-“না ভাইয়া। ভাইয়া ওইদিকে খবর কি??
-“খবর আর কি হবে। সবার একটু রেগে আছে।
-“ওহ
-“তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-“ভাইয়া তোমাই কি দাদু কি বকেছে।
-“না, আমার কিছু বলেনি,
-“আচ্ছা, রাখছি। পরে কথা বলবো।
-“বায়।
টু টু করে ফোন কেটে গেলে।সবাই মিলে রিসেপশনে যায়।
স্বপ্ন এসে বলে,
-“রুনময় রিসোর্ট রুম হচ্ছে পাঁচটা। কিন্তু আমাদের সদস্য সংখ্যা হলো ৬জন।যে কেউ দুইজন একরুম শেয়ার করে থাকতে হবে।

কেউ রাজি হয় না। রুম শেয়ার করার জন্য। তারপর প্রাচ্য আর নীল একরুমে থাকবে বলছে। স্বপ্ন রিসিপশনে গিয়ে বলে প্রাচ্য রুমে এক্সট্রা একটা বেড দিতে। যাতে আরেকজন থাকতে পারে।সেচসবার হাতে সবার রুমের চাবি ধরিয়ে দেয় স্বপ্ন।সবাই চলে যায়।লাগেজ টেনে নিয়ে রুমে ঢুকে,
প্রাচ্য কে বলে,
-“আপু তুমি আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তার পর আমি যাবো।

নীল জানালার পাশে যেয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তার চোখ আটকে যায়।সাদা সাদা অজস্র মেঘের ভেলা পালা করে ছুটে আসছে,চারদিকে মেঘ আর মেঘ।জানালা থেকে একটু দূরে ঘরের নিচে শুধু মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া পাবে।কিন্তু জানালা থেকে অনেকে নিচে মেঘ গুলো।ছোঁয়া যাচ্ছে না।এত কাছ থেকে মেঘ দেখতে পাবে কল্পনাও করিনি নীল।।নীলের এই দৃশ্য দেখে মাতোয়ারা হয়ে যায়।তখনই প্রাচ্য বের হয়ে আসে।আর নীল যায় ফ্রেশ হতে।
স্বপ্ন ফ্রেশ হয়ে সবাইকে ডাকতে আসে।সবাই চলে আসে প্রাচ্য আর নীল বাদে।
কিছুক্ষন পর তারাও চলে এসেছে। নীল পিংক কালারে একটা টপস পড়েছে সাথে জিন্স। প্রাচ্যকে পিঞ্চ করে তূর্ণ বলে,
-“বের হয়েছিস কেন?? আরো আধা ঘন্টা লেট করে আসতি।
-“এখন তো মনে হচ্ছে তাই করা উচিত ছিলো।
নীল বলে,
-“একটা ওয়াশরুম আমরা দুজনকে ব্যবহার করতে হয়েছে।লেট হবে না তো কি হবে।
স্বপ্ন বলল,
-“এখন চলো
ধুসর বলে,
-“হুম চল, ওরা পড়ে ঝগড়া করুক। আমরা খেয়ে দেয়ে আসি।

এটা বলে সবাই চলে যায় সিনারী হোটেল।সাজেক আসলে সবাই সাজেকের ঐতিহ্যবাহী খাবার খায়।তারা জুমের ভাত,নানা রকমের পাহাড়ি ভক্তা।বিভিন্ন শাক-সবজি,ডাল।পাহাড়ি মুরগী মাংস দিয়ে দুপুরে খাওয়া খায়।স্বপ্ন রাতে খাবার অর্ডার দিয়ে আসে। সাজেকের রেস্টুরেন্ট গুলো তে খাবার আগে অর্ডার দিতে হয়।এখানে আগে রান্না করা হয় না।পর্যটক আসলে তাদের অর্ডার অনুযায় রান্না করে।
সবাই রিসোর্ট যায়।এত দূর জার্নি করে এসেছে এখন সবাই একটু রেস্ট নিবে।তার বিকালে রুইলুইপাড়া শিবমন্দির দেখতে যাবে।নীল রুমে না গিয়ে রুনময় রিসোর্ট পিছনের দিকে যায়।সেখানে অনেকগুলো সিঁড়ি থাকে।বসার ব্যবস্থা থাকে।সেখানে দাঁড়িয়ে পাহাড় ভিউ দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়।
মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমিয়ে আছে।কিংবা নীল বলতে পারে পাহাড়ের গায়ে মোড়ানো মেঘের চাঁদর।সাজেক আসলে মেঘ পাহাড়ে রাজ্য। নীলের মনে হচ্ছে,একসময় মেঘ দেখতে দার্জিলিং যেত,শিলং যেত।এই এই চির সবুজের বাংলাদেশেই এমন জায়গা আছে যেখানে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘের সমুদ্র অবগাহন করতে পারে। তার মনে হচ্ছে এবার পালিয়ে এসে, সে সার্থক হবে।এতো সুন্দর জায়গা সে আর দেখেনি, পালিয়ে সে অনেক জায়গা গেছিল কিন্তু এতো সুন্দর ভিউ সে দেখেনি।তার যদি ডানা থাকত সে উড়ে যেত এই মেঘ আর পাহাড়ের মধ্যে।তাদের ছুয়ে ছুয়ে দেখত।এরকন সুন্দর ভিউ অনেক গুলো ছবি তুলে নেয় সে।
#চলবে
#কাউছার স্বর্না

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে