স্পর্শ পর্ব-১০

0
1435

#স্পর্শ
#part_10
#sarika_Islam

দিতি সোজরে দিয়া গালে চর বসিয়ে দিল।দিয়া মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।দিতি রিপোর্টটা দূরে ফালিয়ে দিয়ে বলল,
-যার জন্য এতকিছু করলাম তাই হলো!!

দিয়া মাথা তুলে দিতির দিকে তাকাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
-মানি?

দিতি রাগের মাথায় বলল,
-আরমানকে তোর থেকে দূর করলাম আর তুই কিনা আরমানের অংশ নিয়ে এসেছিস নিজের মধ্যে??

দিয়া আরেকদফা অবাক হয়ে বলল,
-দুর করেছ মানি?তুমি কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলছ না কেন??

দিতি বলল,
-সেই শুরু থেকে তোকে আরমান থেকে দূরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করেছি।কিন্তু তুই মানতে নারাজ তাই আরমানকেই আমার নিশানার শিকার বানালাম।আমি সফলও হয়েছিলাম কিন্তু তোর সেইরাতের ভুলের জন্য আমার সব প্লানিংএ পানি ঢেলে গেল।

দিয়া দিতির কথা শুনে ধপ করে নিচে বসে পরলো,কাদতে কাদতে বলল,
-তুমি করেছো এইসব?আরমান,,আরমানের কোন দোষ নেই এইখানে?সব তোমার রটানো কান্ড!!!

দিতি দিয়ার কাছে বসে দিয়ার হাত ধরে বলল,
-দেখ দিয়া যা করেছি তোর জন্যই করেছি তোর ভালোর জন্য,,

দিয়া দিতির হাত ঝারা দিয়ে ফেলে বলল,
-এই ভালো করেছো তুমি?নিজেরই মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছ তুমি শেষ করে দিয়েছ,
-দেখ আমি আর রায়ান তোর ভালোর জন্যই করেছি,,

দিয়া এইবার খুব বেশিই অবাক হয়ে গেল।রায়ান!!!সে কখনো ভাবতেও পারেনি এই সব নোংরামির সাথে রায়ান জরিত থাকবে।দিয়া চোখের পানি মুছে উঠে দারালো দিতিও দিয়ার সাথে সাথে দারালো,
-রায়ানও ছিল তোমার সাথে??

দিতি অপরাধী স্বরে বলে উঠে,
-হুম

দিয়া আর এক মুহুর্তও সেখানে দারায় না রায়ানকে আজ হিসাব দিতে হবে কেন সে দিয়ার সাথে এমন পল্টি বাজী করলো।দিতি পিছন থেকে বহুবার ডেকেছে কিন্তু দিয়া একবারও পিছে ফিরে তাকায়নি।
রায়ানের বাড়ির সামনে এসে দারাল কলিং বেল বাজাতেই ডলি এসে দরজা খুলল।ডলি দিয়াকে দেখে বলল,
-আরে দিয়া আসো ভিতরে আসো।

দিয়া ভিতরে ঢুকে রায়ানকে খুজতে লাগলো।
-আন্টি রায়ান কোথায়?
-ওতো ওর রুমে,তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কিছু কি হয়েছে?

দিয়া উওর না দিয়ে উপরে উঠলো ঠিক রায়ানের রুমে দিকে।দরজা খুলে দারালো রায়ান বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাটছিল।দিয়াকে হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে নিজের বাড়ি দেখে কিছুটা চমকালো,,আবার দিয়ার এই অবস্থা দেখে কিছুটা চিন্তিত হলো।রায়ান দিয়ার সামনে গিয়ে দারালো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দিয়া রায়ানের গালে এই থাপ্পর বসিয়ে দিল।রায়ান গালে হাত দিয়ে অবাক নয়নে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
-লজ্জা করে না একটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতে?একটা বারের জন্যও ভাবলে না এরপরে আমার কি হতে পারে?আমি কি করবো?

রায়ান তখনও ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না।রায়ান অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-কি বলে যাচ্ছো এইসব দিয়া?ঠিক আছো তো?

বলে দিয়াকে ধরতে নিলে দিয়া কিছুটা পিছিয়ে যায়,
–dont you dare,,সাহসও করবেনা নিজের নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছোয়ার।আরমান আর আমাকে আলাদা করার জন্য এতটা নিচে নেমে গেছ তুমি রায়ান ছিহ ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে।

রায়ান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমি ভালোবাসি তোমাকে দিয়া তাই এমনটা করেছি আমি।আমিই কিছু করে বসতাম আরমানের সাথে কিন্তু পরে জানলাম আন্টিও অপছন্দ করে আরমানকে তাই আন্টির সাথে মিলে সব করেছি।

দিয়ার দুই বাহু ধরে বলল,
-আমি ভুল কিছু করিনি দিয়া আমি ঠিক করেছি।everything is fair in love & war,তুমি জানো না?

দিয়া নিজেকে ছারিয়ে বলল,
-তাই বলে তুমি এতটা নিচে নেমে যাবা?আমি তো আরমানকে ভালোবাসি,,আমি কখনোই তোমার মতো একজন ছেলেকে ভালোবাসতে পারবো না।

বলে সেখান থেকে বেরিয়ে পরলো।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তার কিনারা ধরে হাটছে দিয়া। কেমন পাগল পাগল লাগছে নিজেকে শুন্যহীনা মনে হচ্ছে।নিশব্দে চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরতে লাগলো।কিছুক্ষন পর দরজার কলিং বেল বাজালো শ্রেয়া এসে দরজা খুলল।এই অবেলায় দিয়াকে নিজের বাড়ির দরজায় দেখে শ্রেয়া কিছুটা ভড়কে গেল।দিয়া একদম পরে যেতে নিলে শ্রেয়া ধরে ফেলে।ভিতরে এনে বসায় আর বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে হয়েছে টা কি?কিন্তু দিয়ার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।শ্রেয়াকে জরিয়ে শব্দ করে কেদে উঠলো শ্রেয়া শান্তনা দিতে দতে বলল,
-কি হয়েছে দিয়া বল আমায়!

দিয়া হেচকি তুলতে তুলতে বলল,
-আমার আমার মা আর রায়ান মিলে সব করেছে শ্রেয়া।আমার জীবন টা তারাই বরবাদ করে দিল শ্রেয়া শেষ করে দিল।

দিয়া এক এক করে সব কাহিনি খুলে বলল শ্রেয়ার কাছে।শ্রেয়া অনেকটা অবাক হয়ে গেল,
-বুঝেছিস তো আরমান কিছুই করেনি তাহলে ফোন কর ওকে।ওকে বল তুই প্রেগন্যান্ট!

দিয়া নিজের পেটে হাত রেখে বলল,
-নাহ, আমি অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না জানবে না।এই সার্থপরতা থেকে বহু দূরে।যেখানে কেউ আমাদের খুজে পাবে না।

বলে শ্রেয়ার গায়ের উপর ঢলে পরলো দিয়া।শ্রেয়া দিয়ার মুখে হাল্কাভাবে চাপর মারতে লাগলো কিন্তু দিয়া উঠছে না।
চোখ মেলে দিয়া নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।শরির দুর্বল প্লাস অনেক কান্নার ফলে হুশ হারিয়ে ফেলেছিল দিয়া।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে আরমান দারিয়ে আছে।দিয়া আরমানকে দেখে চোখ গরিয়ে পানি পরতে থাকে।আরমান দিয়ার হাত ধরে তার পাশে বসে।
-তোমার তো সাহস কমনা আমাকে ফেলে তোমরা দূরে যাওয়ার প্লানিং করছিলে!!

দিয়া আরমানের কথায় অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।পাশেই শ্রেয়া দারিয়ে,
-আমি আরমানকে ফোন করে ডেকেছি।তোরা কথা বল আমি বাহিরে,

বলে বাহিরে যায় শ্রেয়া।দিয়া উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা আরমান ধরে বসিয়ে দেয়।এক হাতে ক্যানেল লাগানো আরেক হাত আরমানের হাতের মুঠোয়।
-আরমান আম সরি তোমাকে ভুল বুঝার জন্য,

অপরাধীর মতো হয়ে বলল দিয়া।আরমান দিয়ার এক গালে হাত রেখে বলল,
-নাহ বরং আমি সরি তোমাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-তুমি আমাকে সব বললেই পারতে আরমান কেন বললে না তুমি??
-তোমার মা আমাকে এমনভাবে বলেছে যে আমি তোমার সাথে অমন আচরন করতে বাধ্য হয়েছিলাম দিয়া।আমার কাছে খুব কান্না কাটি করেছে খুব আকুতিমিনুতি করেছে তোমাকে ছারার জন্য।কিন্তু প্রথমে আমি মানতে চাইনি পরে তার মায়ের মমতায় আমি রাজী হয়ে গিয়েছিলাম।
-ওই মেয়েটা?
-সেটা শুধুই তোমাকে দেখানোর জন্য ছিল আর কিছুই নয়,আমি জানতাম তুমি অবশ্যই আমার খোজ করতে আসবে।
-তুমিও আমাকে কম বড় ধোকা দাওনি আরমান।

বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় আরমান দিয়ার মুখ নিজের দিকে নিয়ে মাথা নিচু করে বলে,
-আম রিয়েলি সরি দিয়া প্লিজ মাফ করে দাও,,

দিয়া আরমানের হাত নিজের পেটের উপর রেখে বলল,
– যদি বেবী মাফ করে তাহলে আমিও মাফ করে দিব,

আরমান মাথা তুলে দিয়ার দিকে তাকায়,
-আরমান তুমি বাবা হতে যাচ্ছো।আরমান আমি প্রেগন্যান্ট,উই আর প্রেগন্যান্ট আরমান,

বলে কপালে কপাল ঠেকালো।আরমানের চোখ বেয়ে খুশির এক ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরে। দিয়ার কপালে চুমু খেল,দিয়া আরমানের হাত ধরে বলল,
-আরমান আমরা বিয়ে করবো এখনি এই মুহুর্তে,

আরমান দিয়াকে উঠালো দিয়া দারাতে গিয়ে পরে যেতে নিলে আরমান ধরে ফেলে।কোলে নিয়ে গড়িতে বসায়।
কাজী অফিসের সামনে দারিয়ে আছে তারা।দুইজন দুইজনের হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো।তিন কবুল পরে তারা বিয়ের বন্ধনে আবব্ধ হয়ে গেল।
একটা পুকুরের সামনে গিয়ে বসলো। অন্ধাকার খোলা আকাশের নিচে প্রিয় মানুষটির সাথে থাকার আনন্দই আলাদা।আরমান দিয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে বলল,
-ভালোবাসি,

দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-সত্যি?এইযে এইবার বলেছো কিন্তু ভালোবাসি।

আরমান দিয়ার এমন বাচ্চামো কথায় হেসে উঠলো,
-হুম ভালোবাসি খুব বেশিই ভালোবাসি,

দিয়া আরমানের কাধে মাথা রেখে বলল,
-আমিও

————-সমাপ্ত———–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে