#স্পর্শ
#part_4
#sarika_Islam
দিয়া নিজের দিকে তাকিয়ে হাল্কা মুচকি হাসলো রায়ান দিয়ার মুচকি হাসা দেখে নিজেও হাল্কা হেসে বলল,
-বাহ তুমি হাসতেও জানো?
সাথে সাথেই দিয়ার হাসি গায়েব হয়ে গেল,দিয়া তারাহুরো দেখিয়ে রায়ানকে নিয়ে বের হয়ে পরলো। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়,, রায়ান পার্কিং থেকে নিজের বাইক টা দিয়ার সামনে আনলো দিয়া দেখেও না দেখার ভান করে রইলো।রায়ান হর্ন বাজাতেই লাগলো দিয়া বিরক্তিতে বলল,
-পরিবেশ দুষন করো কেন?
-বাইকে উঠো ড্রপ করে দেই,
-নো থেংস,
বলে দিয়া হেটে কিছুটা সামনে গেল আজকে সব রিকশার হয়ত হরতাল লেগেছে দিয়া মনে মনে বেশ রেগে গেল।রায়ান আবার দিয়ার সামনে এসে বলল,
-দেখ তোমার লেট হচ্ছে আমি ড্রপ করে দিতে পারি কিন্তু,
দিয়া আর না ভেবেই উঠে গেল আসলেই এভাবে অনেক লেট হয়ে গেছে আর লেট করাতে চায়না।রায়ান সারা রাস্তা বকবক করতে করতে আসলো দিয়া তারাতারি করে নেমেই দিল দৌড়।রায়ান নিজে নিজেই বলল,
-কেমন মেয়েরে বাবা একটা থেংস ও দিল না,
দিয়া তারাতারি করে নিজের কেবিনের দিকে ছুটলো কেবিনে গিয়ে রিলেক্স এ বসলো এসির টেম্পারেচার কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পনে দশটা বেজে গেছে প্রায়।নীল এসে বলল,
-আরমান ডেকেছে,
-আসছি
বলে দিয়া আরমানের কেবিনের সামনে গেলো কেবিনে নক করে ভিতরে ঢুকলো।আরমান থাইয়ের সাইডে দারিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল।দিয়ার হাল্কা কেশে উঠাতে আরমান পিছে ফিরলো,
-জি আরমান!!
আরমান দিয়াকে দেখে সামনে আসলো,হাত বারালো দিয়ার সামনে দিয়া জিনিসটা বুঝতে পারলো না আরমান কি চাইছে ভ্রু কুচকে তাকালো বুঝার জন্য। আরমান বলল,
-ডিজাইন?
ডিজাইনের কথা বলায় দিয়ার মনে পরলো সেতো তারাহুরো করায় ডিজাউন গুলো আনতেই ভুলে গিয়েছে এখন কি হবে?আরমান আবার তার কথা রিপিট করলো,
-আই সেড ডিজাইন? ডিজাইন দাও,
কিছুটা রেগে বলল,দিয়া বুঝতে পারলো না হঠাৎ এভাবে রেগে যাওয়ার কি আছে?দিয়া আমতা আমতা করে বলল,
-আ,,আসলে আনতে ভুলে গিয়েছি,
-তোমাকে এখানে সো করাতে রেখেছি?আউট গেট আউট,
জোরে ধমক দিয়ে বলল আরমান দিয়া কিছুটা কেপে উঠলো ভয়ে।তারাতারি করে চলে গেল কেবিন থেকে নিজের কেবিনে।কান্না পাচ্ছে খুব কেও কখনো এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলেনি তার সাথে তাই আজ অনেকটাই কষ্ট লাগছে দিয়ার।দিয়া একরাশ অভিমান নিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিল কানের দুল খুলে ফেলল হাল্কা লিপ্সটিক লাগিয়েছিল টিস্যু দিয়ে সেটাও মুছে ফেলেছে।
-কেন এত্ত ড্রেসাপ করেছি আমি কেন?হুদ্দাই কোন কাজের না এইসব কোন কাজের না,,
চোখের পানি মুছে দিয়া ওয়াশ্রুমে গেল ফ্রেশ হয়ে চোখ নাক মুখে ইচ্ছে মতো পানি ছিটাতে লাগলো।নিজের কেবিনে এসে চুপচাপ ড্র করতে বসলো।দুপুর পেরিয়ে বিকেল ঘনিয়ে এসেছে দিয়ার সেদিকে হয়ত খেয়ালই নেই সে এক মনে আর্ট করছে আর এক এক করে ছিরে ফেলছে।কোন ড্রইংই আজ সুন্দর হচ্ছে না মাথায় কিছুই আসছে না।মাথা খুব যন্ত্রণা করছে কিছুক্ষন কান্না করার ফলে।মাথা চেপে ধরে ডেস্কের উপর হাত রেখে নিচু হয়ে আছে। কেবিনে কারো আসার শব্দ পেয়ে মাথা তুলে বিরক্তিতে কপাল কুচকে সেদিকে তাকালো।আরমানের দু হাত আজ পকেটে নেই তার দু হাত আজ কফির মগ ধরে আছে??তা কি আদো সত্যি??অবাক দৃষ্টি নিয়ে দিয়া উঠে দারলো।আরমান দিয়ার সামনে এসে কফির মগটা তার সামনে ধরলো।দিয়া আরো অবাক হলো আরমান এই কিছুক্ষন আগে তাকে ধমক দিল আবার এখন কফি এনেছে?বুঝতে পারছে না দিয়া।
-আর কতক্ষন আমি এভাবে ধরে রাখবো?
দিয়া তারাতারি করে মগটা হাতে নিল।থাইয়ের সাইডে গিয়ে দারালো দুজন।একসাথেই কফির মগে চুমুক দিল আরমান হাল্কা হেসে বলল,
-আজ ওয়েদারটা দেখেছ?বেশ সুন্দর কালো মেঘে ঢেকে আছে পুরো আকাশ না বৃষ্টি না রোদ না কোন বাতাশ না কোন তুফান,স্তব্ধ হয়ে আছে প্রকৃতি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল আরমান।দিয়া আরমানের এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-সুন্দর কোথায়?না কোন হাওয়া আছে এই আবহাওয়ায় না কোন বৃষ্টি হচ্ছে।যেন থমকে আছে পুরো পৃথিবী যেন কারো সাথে রাগ করে আছে কথা বলতে চাইছে না এই থমকানো প্রকৃতি।
-তোমার মতো!!
দিয়ার চোখে চোখ রেখে বলল আরমান।দিয়া কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে বেশ ঘভির ভাবে।যেন দুজন দুজনকে কিছু বলতে চায় মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়।হঠাৎ আরমানের ফোন বেজে উঠলো দুইজনিই চমকিয়ে উঠলো।আরমান ফোন হাতে নিয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে।দিয়া মুচকি হাসলো।
সন্ধ্যার দিকে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো দিয়া চেয়ারে বসে গ্লাস দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।প্রচুর বেগে বৃষ্টি পরছে বৃষ্টির পানি থাইগ্লাস বেয়ে বেয়ে পরছে দিয়ার দেখতে বেশ ভালোই লাগছে এখন মনটা একটু ভালো কারন কিছুক্ষন আগে আরমান এসে কথা বলে গিয়েছে।চেয়ারে মাথা রেখে খুব আবেশে বৃষ্টি অনুভব করছে।সন্ধ্যা থেকে সেই যে শুরু হয়েছে থামার নামিই নেই দশটা বেজে গেছে বাড়ি যাবে কিভাবে এখন সে!!ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো কাম্পানি থেকে কাম্পানির গেটে দারিয়ে আছে কোন টেক্সিও পাচ্ছে না ভাবছে কেব বুক করবে।ক্যাব বুক করার জন্য ফোনটা বের করেছে অমনি তার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।দিয়া এত বৃষ্টির বেগে ভালোভাবে বুঝতেও পারছে না কিছু।গাড়ির উইন্ডো খুলে আরমান ভিতর থেকে বলছে,
-গাড়ির ভিতর এসে বসো,
দিয়া কিছু না ভেবে মাথায় ব্যাগটা হাল্কা ভাবে ধরে গাড়ির ভিতরে বসলো।জামা কিছুটা ভিজে গেছে আরমান গাড়ি স্টার্ট করলো। দিয়া গাড়ির জানালা খুলে দিল বেশ বাতাস ছেরেছে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোটা এসে গা ছুয়ে দিচ্ছে।দিয়া চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করছে। আরমান সব জানালা বন্ধ করে দিল দিয়া কপাল কুচকে তাকালো আবহাওয়াটাকে বেশ উপভোগ করছিল আরমান জানালা বন্ধ করায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে আরমানের দিকে তাকালো,
-বন্ধ করলেন কেন?
-বৃষ্টি আসছে ভিতরে,
দিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে জানালা বেয়ে বৃষ্টির ফোটা গুলোর উপর আংগুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে আবেশময় কন্ঠে বলল,
-তো কি হয়েছে ভালোই তো লাগছিল,
-কিন্তু আমার গাড়িতো ভিজছিল,
দিয়া আরমানের এমন কথা শুনে সব রোমান্টিকতা ফুরর হয়ে গেল।তার দিকে অভিমানি চোখে তাকালো,আরমান দিয়ার অভিমান দেখে হাল্কা মুচকি হাসলো,
-আজ তুমি সেলোয়ার সুট পরেছ??
দিয়া আরমানের কথায় নিজের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসলো আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-মুচকি হাসলে বেশ মানায় তোমাকে,
দিয়ার অভিমান সরে খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল তার প্রশংসা হওয়ায়।আরমান দিয়ার লজ্জা মাখা মুখশ্রী দেখে আবার বলল,
-লজ্জা পেলে খুব মায়াবী লাগে,
দিয়া এইবার তো শেষ আরমান তার এত্ত প্রশংসা করছে।দিয়া লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় আরমান সামনে তাকিয়ে বলল,
-প্রকৃতি এখন হয়ত বেশ খুশি খুব বেগে বৃষ্টি পরছে।
-আমিও,
দিয়া ওইদিক ফিরেই বলল আরমান দিয়ার কথায় এক গাল হাসলো।বাসার একদম সামনে এসে গাড়ি থামলো দিয়া গাড়ি থেকে নামার সময় আরমানকে বলল,
-খুব জোরে বৃষ্টি নামছে আপনি কিছুক্ষন আমার বাড়িতে থাকতে পারেন,
আরমান দিয়ার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে।
-আন্টি?
-আমি একা থাকি,
আরমান আর দিয়া লিফটে উঠলো একসাথে পাচ তলায় থাকে দিয়া,, লিফটের বাতি টিপটিপ করছে এই বুঝি বন্ধ হয়ে যায় লিফট।দিয়ার খুব ভয় লাগছে এখন কখনো এমন কিছু হয়নি তার সাথে দিয়া হুট করেই আরমানের হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। আরমানের হাত ধরায় পাশ ফিরে তাকালো দিয়া চোখ খিচে বন্ধ করে তার হাত শক্ত করে ধরে আছে।আরমান দিয়ার এমন ভয় দেখে হাতটা সুন্দর ভাবে ধরলো।
চলবে,,,