স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-০৬

0
1172

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ৬
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

আমি শান্ত গলায় বললাম, ভাইয়া নেহা একজন খুব ভালো একটা নাটক বাজ।নাটক করতে ও ভালোই জানে,ও এখনো তোমার সাথে এই কারণে রিলেশন রেখেছে যাতে ও তোমার থেকেও টাকা আদায় করতে পারে। আমার জীবন তো নষ্ট করেই ছে প্লাস তোমার জীবন টাও শেষ করে দিবে এই মেয়েটা মিথ্যে নাটক করে।
ভাইয়া আমার কথার মাঝে হঠাৎ করে বললো,,দাড়া দাড়া এক মিনিট, নেহা আমাকে তখন বলেছিল যে ওর কিছু টাকার খুব দরকার এখন, আমি যেন ওকে বিকাশে কিছু টাকা দিয়ে দেই। আমি ওকে টাকাটা দিতেই যাচ্ছিলাম তখন তোকে এখানে বসে থাকতে দেখলাম।তোর কথা শুনে আমার কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার, এখন বুঝতে পারছি নেহা কেন এতো ঘনঘন টাকা চাইতো আমার কাছে। ওহ শিট, কেন আমি ওর এই ধান্দাবাজি বুঝতে পারি নি,মন প্রাণ দিয়ে ভালো বেসেছি ওকে আর ও আমার সাথে নাটক করেছে।
তার পর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
জানিস স্নিগ্ধা, আমি নেহা কে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি, হাজারো স্বপ্নের জাল বুনেছি ওকে নিয়ে। সুন্দর একটা জীবন আমাদের দুজনের এই স্বপ্ন টা আমি সবসময় দেখতাম আর ওকেও বলতাম আমার স্বপ্নের কথা।ও শুনে শুধু হাসতো কিছু বলতো না এবার আমি বুঝতে পারলাম ও কেন আমার কথা শুনে হাসতো।
আমি ভাইয়ার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম, একদম স্বাভাবিক লাগছে তাকে। অবাক হয়েই বললাম,,, ভাইয়া তোমার খারাপ লাগছে না নেহার এতো বড় একটা সত্যি জেনে?যাকে এতো ভালোবাসলে সে তোমাকে এই ভাবে ঠকালো তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করলো তার জন্য কি তোমার একটুও খারাপ লাগছে না?
ভাইয়া আমার কথা শুনে আলতো হাসলো তার পর বললো,, না খারাপ লাগছে না। বরং আমার ভালো লাগছে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম,কি বলছে ভাইয়া। গার্লফ্রেন্ড ধোঁকা দিয়েছে এটার জন্য ভাইয়ার খারাপ না লেগে ভালো লাগছে মানে কি বুঝতে পারলাম না।প্রায় হালকা চেঁচিয়ে উঠে বললাম,

কি বললে? তোমার ভালো লাগছে, তার মানে তুমি চাইতে নেহা তোমাকে ধোকা দিক, তোমার সাথে নাটক করুক?

না রে আমি সেটা কেন চাইবো? আমার এই ব্যাপার টা ভেবে ভালো লাগছে যে আমি আরো বেশি নেহার মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার আগেই ওর সব কিছু জানতে পেরে গেছি।যদি আরো বেশি ওর মায়ায় জড়িয়ে যেতাম আরো বেশি ভালো বেসে ফেলতাম ওকে তাহলে ওর ব্যাপারে এইসব কিছু জানতে পারলে খুব কষ্ট হতো আমার, মানতে কষ্ট হতো ব্যাপার টা। তবে আফসোস হচ্ছে আমার,যাকে এতো ভালোবাসলাম নিজের সব কিছু ভাবলাম যাকে তাকেই চিনতে পারলাম না আমি। ভালো মুখের আড়ালে যে একটা কুৎসিত রূপ লুকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারলাম না আমি। সেইজন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।

নেহার থেকে পাওয়া ধোকায় তুমি এতো টুকুও কষ্ট পাচ্ছো না? এতক্ষণে আমি বা অন্য কেউ হলে হয়ত কেঁদে সারা করতো আর তুমি কি না এতো টা স্বাভাবিক?

কেন তুই কি ভাবছিস আমি ন্যাকার মতো কাঁদবো? দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবো না কি ও এমন কেন করেছে তাকে সেটা জিজ্ঞেস করবো?যদি সেটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল ভাবছিস আমি সেটা কখনো করবো না। আমি অন্য কারো মতো প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেঁদে কেটে দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়ানোর মানুষ নই, আমি স্ট্রং।ও আমাকে ঠকিয়েছে ভালো করেছে খুব ভালো করেছে,আই উইশ ও আরো ঠকাক আমাকে, ভবিষ্যতে ও একদিন চরম ভাবে ঠকে যাবে আমার কিছু বলার বা করার দরকার পড়বে না। তুই এইসব বাদ দে আর আমাকে ছবি টা ফেরত দে, বলে ভাইয়া আমার হাত থেকে নেহার ছবি টা নিয়ে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো। আমি শুধু হা করে তাকিয়ে দেখছি আর ভাইয়ার কথা কানে ঢুকাচ্ছি।ওর কথা আমার এক কান দিয়ে ঢুকছে আর আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে ওইরকম ভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বললো,, মুখ টা বন্ধ কর নাহলে মশা সব হজম করে নিবি।
ভাইয়া দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে স্টাইল করে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আমি মুখ বন্ধ করে একটা বিষম খেলাম।নাহ ব্যাপার টা ঠিক লাগছে না আমার,সদ্য ছ্যাকা খাওয়া মানুষ টা এতো স্বাভাবিক কি করে? না কি অতিরিক্ত দুঃখে মানুষ যে বলে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর তাই হইছে। না না কি ভাবতেছি আমি, আমার ভাই পাথর হবে কেন? এই নেহা আমাকে তো ধোঁকা দিয়েছে দিয়েছেই সাথে আমার ভাইকেও ধোঁকা দিয়েছে এই মেয়েটা কে তো আমি আর ছাড়বো না। ওকে আমি শাস্তি দিয়ে তবে ছাড়বো একে তো আমার সাথে নাটক করেছে তার উপর আমার ভাইকেও ও জড়িয়েছে। ভাইয়া কে দেখে যতো টা স্বাভাবিক লাগছে ততো টা স্বাভাবিক হয়তো ও নয়, আমার সামনে চোখের পানি ফেলতে চায় না এই কারণেই হয়তো আমাকে ও মিথ্যা কথা বলেছে।

সামনের দিকে তাকিয়ে না থেকে একটু পাশ ফিরে তাকালেও তো পারিস স্নিগ্ধ?
আমি এই টাইপের কথা শুনে ঘুরে তাকালাম, তাকিয়ে চোখ কপালে উঠেছে আমার।হৃদান ভাই পানসে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝলাম না কিছু, এই লোক টা মাত্র দুই দিন আগেই এই বাসা থেকে গেছে আর আজ আবার চলে এসেছে। অতিরিক্ত অবাক হওয়ার কারণে মুখ ফসকে বলেই ফেললাম,,,

তুমি এতো তাড়াতাড়ি আবার চলে এলে হৃদান ভাই? দুই দিন ও তো হয় নি তুমি গেছো।

কেন আমি কি আমার হবু শ্বশুর বাড়িতে আসতে পারি না না কি?তোর এতে বাঁধছে কেন।

না তুমি আসতেই পারো কিন্তু আমাকে স্নিগ্ধ বলে ডাকছো কেন? আমার নাম তো স্নিগ্ধা।
হৃদান ভাই আমার পাশে বসে বললো,,
সে যাই হোক আমি তোকে স্নিগ্ধ বলেই ডাকবো। আমার কতো দিনের ইচ্ছে তোকে আমি আমার মতো করে ভালোবাসবো, আমার মতো করে তোর খেয়াল রাখবো আমি একটুও চোখের আড়াল হতে দেবো না তোকে তাই আর বাসায় মন মানছিল না। চলে এসেছি তোকে একটা বার দেখতে আর তুই কি না আমাকে বলছিস আমি এতো তাড়াতাড়ি কেন আবার তোদের বাসায় চলে আসলাম। সত্যি তুই না একটুও বুঝবি না

আমি চুপ করে থাকলাম কিছু বললাম না, এই ভাবে কথা টা বলা হয় তো উচিত হয়নি আমার। একটু পরে নিরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম,, কেমন আছো তুমি?

হৃদান ভাই কিছু না বলে গোমড়া মুখ করে বসে রইল, এটা দেখে রাগ হলো আমার। জিজ্ঞেস করছি কেমন আছে তা না বলে মেয়েদের মতো ভাব নিচ্ছে।

একটু রাগি গলায় বললাম, তোমার কি আজকাল মেয়ে সাজার ইচ্ছে হচ্ছে না কি হৃদান ভাই?

কেন?

জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো তার উত্তর দিলে না তো তাই।

কেন উত্তর দেবো তোকে? আমার আসাতে তো তুই খুশি হস নি আবার জানতে চাইছিস কেমন আছি, নিজের হবু বরের কোনো খেয়াল রাখিস না তুই।

এইবার বুঝতে পারছি কেন উনি মেয়ের পার্টে অভিনয় করছেন, মনে মনে একটু হাসলাম আমি।যাক কেউ তো আছে যে আমার কথায় অভিমান করে, একজন কে ভরসা করে ঠকেছি আমি কিন্তু এইবার আর ঠকবো না।চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি এই মানুষ টা কে।

চলবে………. ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে