#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ২
#লেখিকা -সাদিয়া জান্নাত সর্মি
হাতের জন্য কান্না পাচ্ছে খুব আমার, একটু আগে একটা বেইমানের জন্য কাদলাম আর এখন হাতের জন্য কান্না আসছে আমার। জীবনের দুঃখের শেষ নেই আমার, ভাবছি পৃথিবী তে কতো ধরনের মানুষ আছে যাদের কেউ মানুষ কে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে আর কেউ কাঁদায়। অদ্ভুত এই পৃথিবীর মানুষ সব, এখন আমি এই হাতের কি করি? মামনি যদি দেখে আমার হাতের এই অবস্থা তাহলে চেঁচিয়ে পুরো বাসা মাথায় করে তুলবে। ছিঃ আর কোনো দিন পেলি না তোরা, শেষমেশ আমার জন্মদিনেই আমাকে এই সব কিছু বলতে হলো। গালে হাত দিয়ে এইসব ভাবছি তখন বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলাম।হাত টা পিছনে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখি আমার ভাই মি.ভদ্র শয়তান দাঁড়িয়ে আছেন। আমি কিছুটা বিরক্তি স্বরে বললাম, ভাইয়া এই সময়ে তুমি আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি করছো?আর কোনো কাজ নেই তোমার, একটু বাইরে থেকে এসেছি রেস্ট ও কি নিতে দেবে না আমাকে।
ভাইয়া নির্বাক ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, না দেবো না। এতক্ষণ বয়ফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটিয়ে আসতে পারলি আর নিজের ভাইয়ের সাথে একটু গল্প করতে পারবি না?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,কে আমার বয়ফ্রেন্ড? আমার বয়ফ্রেন্ড মরে গেছে আজ,কবর দিয়ে এসেছি ওকে।
আমার কথা শুনে যেন ভাইয়া খুব খুশি হয়েছে এমন একটা ভাব নিয়ে বললো,, সত্যি না কি,বলনা ওর মরে যাওয়ার দোয়া পড়ানো কবে হবে? বোনের বয়ফ্রেন্ড বলে কথা, একটু ভালো মন্দ খাওয়া যাবে ওখানে।
ভাইয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে ওকে মা’রতে শুরু করলাম,মা’রতে মা’রতেই বললাম,
পেটুক আমাদের বাসায় কি ভালো মন্দ খেতে পাওনা তুমি? না কি তোমায় খেতে দেয় না বাবা মা যে ওই বেইমান টার দোয়া পড়ানোতে গিয়ে খাওয়ার আশা করছো?
ভাইয়া আমাকে থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,বইন আর মা’রিস না আমাকে, আমি তো এমনিতেই একটু মজা করছিলাম তোর সাথে।
আমি ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলাম।ভাইয়াও আমার পাশে এসে বসল, তার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে তোর স্নিগ্ধা?যখন বাসায় আসিস তুই তখন খেয়াল করেছি আমি তুই কাদছিলি,আর এখন তোর এই হাতটা লাল।বল কি হয়েছে তোর,,
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হাত টা তাড়াতাড়ি করে পিছনে লুকিয়ে ফেললাম, তখন ভাইয়া কে মা’রতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম হাতের কথাটা। আমি কিছু বলছি না দেখে ভাইয়া আমাকে একটু অভয় দিয়ে বলল,বল না বোন কি হয়েছে তোর? আমার হাসিখুশি বোন টাকে একটুর জন্যেও মন খারাপ করে থাকতে দেখে ভালো লাগছে না,কি হয়েছে আমাকে বল,প্রমিস আমি কাউকে কিছু বলবো না।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম তার পর চোখ নামিয়ে নিয়ে বললাম, আয়াশ আমাকে ঠকিয়েছে ভাইয়া।ও আমার সাথে শুধু টাকার জন্যে প্রেম করেছে আর আজ যখন ওর প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে তখন নেহা কে বিয়ে করে আমাকে আমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ উপহার দিয়েছে।
আমার কথা গুলো শুনে ভাইয়া একটুও অবাক হলো না, স্বাভাবিক ভাবেই বললো, আয়াশ যে তোর সাথে এমন টা করবে এটা আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু আফসোস তুই অনেক দেরীতে তা বুঝলি। বাবা তো তোকে অনেক বার বারণ করেছিল তুই তো তা শুনিস নি, তোর কাছে আয়াশ খুব ভালো একটা ছেলে, এখন বুঝেছিস তো ও কেমন ছেলে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে শুধু মাথা নাড়লাম, ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
যা হবার তা হয়ে গেছে এখন এটা নিয়ে ভেবে আর লাভ নেই।আয়াশ তোর সাথে যা করলো তার জন্য আমার যদিও ওর উপর খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু আমি ওকে কিচ্ছুটি বলবো না।ও যা করেছে তার শাস্তি আল্লাহ নিজেই ওকে দেবেন আমাদের কিছু করার দরকার পরবে না, একটা কথা জেনে রাখিস সবসময় যারা অন্যকে ধোঁকা দেয় শেষে তারাও আপনজনের কাছ থেকে ধোঁকা পায়। তুই এখন ওসব কিছু নিয়ে না ভেবে রেডি হয়ে নে, তোর বার্থডে উপলক্ষে বাবা বাসায় হালকা পাতলা একটা পার্টি রেখেছে। মানুষজন সব চলে আসছে এখনই আর তুই যদি সময় মতো ওখানে উপস্থিত না থাকিস তাহলে কেমন দেখায়? আমি যাচ্ছি, তুই দশমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আয়।
ভাইয়া উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, ভাইয়া যাওয়ার পর আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে জানালার পাশে এসে বসলাম।মন টা নিমিষেই ভালো হয়ে গেছে আমার, হবে নাই বা কেন?যার কপালে এমন একটা সার্পোটিড ভাই আছে সে তো হাজার কষ্টের মধ্যেও সুখী।অন্য কারো ভাই হলে হয়তো এতক্ষণে ওকেই বকাঝকা করতো ভুল মানুষের সাথে সম্পর্ক করার জন্য কিন্তু আমার ভাই আমাকে সেটা নিয়ে কোনো কিছুই বললো না। আরো আমাকে এটা বললো যেন যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর না ভাবি। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠল আমার, আয়াশ তোকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম, আরো বেশি ভুল করেছিলাম বাবার কথা না শুনে। কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর সুযোগ আমি পেয়েছি,আর সেটা হচ্ছে তোকে মন থেকে একেবারে মুছে ফেলে। তোকে যদি আমি আরো মনে রাখি তাহলে মনটাকে জেনে শুনে কষ্ট দেওয়া হবে,কি কাজ আমার নিজেকে কষ্ট দিয়ে?
জানালার পাশ থেকে উঠে এসে পার্টির জন্য রেডি হতে লাগলাম। নীল রঙের একটা লং গাউন আর তার সাথে ম্যাচিং করে নীল জিন্স পড়লাম। হালকা ফর্সা গড়নের মেয়ে আমি, এই রঙটাই আমার সাথে মানিয়েছে।রেডি হয়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে নিচে এলাম, সন্ধ্যা হয়ে গেছে ততক্ষনে। নিচে এসে মহাবিপদে পড়ে গেলাম, বসার রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে কোথাও কিছু দেখতেও পাচ্ছি না।সবাই আমাকে রেখে কোথায় চলে গেল, একটু ভয় পাওয়া গলায় ভাইয়া কে ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না। এবার সত্যি সত্যিই ভয় লাগতে শুরু করলো আমার,ভয়ের কারণে যখনি চেঁচাতে যাবো তখন হঠাৎ করে বাসার সবগুলো লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই একসাথে বলে উঠল হ্যাপি বার্থডে স্নিগ্ধা।
চলবে……………. ইনশাআল্লাহ