#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১৫
#পিচ্চি_লেখিকা
হসপিটালে এসে এমন কিছুর সম্মুখীন হবো ধারণার বাইরে ছিলো। আমি আগে থেকেই পাগল টাইপের মানুষদের খুব ভয় পায়। এখানে ব্যাতিক্রম কিছু না। লোকটা কে দেখেই ভয়ে ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই দেখলাম লোকটা আমার পিছে লুকানোর চেষ্টা করছে। সামনে থেকে কয়েকজন নার্স এগিয়ে আসছে। পেছনে থাকার ফলে মুখটা দেখতে পারছি না। কিন্তু স্পর্শ টা কেন যেনো জানান দিচ্ছে লোকটা আমার কাছের কেউ। আমারও মুখ ঢাকা ছিলো তাই কেউ আমাকে চিনতে তো পারবে না বুঝতেছি। লোকটা আমার পিছনে লুকাতে লুকাতে বললো,,
“আমি যাবো না তোমাদের কাছে। তোমরা অনেক পঁচা। আমাকে শুধু মারো।”
লোকটার বাচ্চা সূলভ কথা শোনে যতটা অবাক হয়েছি তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছি “আমাকে শুধু মারো” এটুকু শুনে। প্রথমত এটা কোনো মেন্টাল হসপিটাল না তাহলে এখানে মানসিক ভারসাম্যহীন লোক কেন রেখেছে? আজব! আর দ্বিতীয়ত লোকটা কে ভালো কোনো হসপিটালে না নিয়ে গেলেও বাসাই রেখে বা বড় কোনো হসপিটালে রেখে ট্রিটমেন্ট করতো বাট এরকম একটা হসপিটালে কেন? যদি তারা মধ্যবিত্তও হয় তাহলে তো মেন্টাল হসপিটালে রেখে আসতে পারতো! আর মারে মানে কি? মাথায় এমন উদ্ভট প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলাম না। আমার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ খেয়াল করলাম লোকটা আমার হাত চেপে ধরেছে। সামনে থাকা ৩ জন নার্স তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার ভয়টা একটু কেটেছে। লোকটা যে কোনো ক্ষতি করবে না তা তো বুঝলাম। লোকটাকে টানতে দেখে নার্স কে বললাম,,
“উনাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ব্যাথা পাবে তো!”
একটা নার্স তেড়ে এসে বললো,,
“আপনি কে হ্যাঁ? পেশেন্টের কেউ তো নন আপনি তাহলে মাঝখানে কেন কথা বলছেন? যত্তসব।”
“এই যে মিস ভালো ভাবে কথা বলুন। আপনারা জনগণের সেবার জন্যই নিয়োজিত। তাই ভুল করলে সেটা সংশোধন করে দেওয়া আমার মতো নাগরিকের দায়িত্ব।”
হঠাৎ করেই লোকটা একট নার্স কে কামড় দিয়ে আর ২ টা কে ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে আমার কাাছে এসে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ওড়না দিয়ে নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করে। উনার এমন বাচ্চামো দেখে আমার পেট ফাটিয়ে হাঁসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কোনো রকম নিজেকে শান্ত করে লোকটার দিকে ঘুরে কিছু বলতে যাবো তখনই নার্স বললো,,
“দেখেছেন কত ভালো? আপনার সাথে কথা বলতে গিয়ে এই লোকটা আমাকে কামড়ে দিলো। কোথা থেকে আসেন বলেন তো আপনারা?”
আমি নার্সকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে লোকটার দিকে ঘুরে বললাম,,
“ঠিক আছেন আপনি? এভাবে কি কেউ কাউকে কামড়ায়? এগুলো কিন্তু একদম ঠিক না। আপনি উনাদের সাথে নিজের কেবিনে যান।”
লোকটা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,,
“না না আমি যাবো না। ওরা আমাকে আবার মারবে!”
একটা নার্স রেগে বললো,,
“এই ছেলে এই চুপচাপ কেবিনে চল! যত্তসব আজাইরা পাগল দিয়ে হসপিটাল ভরায় রাখছে স্যার।”
আমি এবার রক্তচক্ষু নিয়ে নার্সটার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“যদি এতই বিরক্ত আপনারা পেশেন্টের প্রতি তবে জব কেন করেন? যত্তসব আজাইরা পেশেন্টরা না আপনারা। এটা কেমন হসপিটাল? একটা ডক্টর ও দেখিনি এখন পর্যন্ত।”
“দেখুন আপ….
” শাট আপ। চুপ থাকুন।”
এবার লোকটা কে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
“আপনাকে কেউ কেন মারবে? কেউ মারবে না আপনাকে। নিজের কেবিনে যান!”
“না আমি যাবো না। আমি স্নিগ্ধবতীর কাছে যাবো।ওরা আমাকে নিয়ে যায় না স্নিগ্ধবতীর কাছে। আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?”
লোকটার মুখে স্নিগ্ধবতী শুনে থ মেরে গেছি। স্নিগ্ধবতী? এই টা অনুভব ডাকতো। হ্যাঁ আমার স্পষ্ট মনে আছে যখন ই রাগ করতাম বা কান্না করতাম তখনই অনুভব মিষ্টি করে বলতো “আমার স্নিগ্ধবতী বউটার এতো রাগ কেন?” আবার অনেক সময় বলতো “স্নিগ্ধবতীর স্নিগ্ধ চেহারায় কান্না নয় হাসিটাই মানায়” অনেক সময় জ্বালাতো এই স্নিগ্ধবতী বলে! লোকটা আমায় ঝুকিয়ে বললো,,
“নিয়ে চলুন না! আমি স্নিগ্ধবতীর কাছে যাবো!”
লোকটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম। সেই চোখ, সেই কন্ঠ,, এতক্ষণ কন্ঠ খেয়াল না করলেও এখন করেছি। উনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েই বুঝে গেছি উনি অনুভব। দাড়ি গুলে বড় বড় হয়ে গেছে। চুল গুলোও আগের ন্যায় অনেকটাই বড় উসকো খুসকো চুল। ওকে দেখেই মনের মধ্যে ঝড় উঠে গেছে। ইচ্ছা করছে এখনি চিৎকার করে কাঁদতে,,কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,,
“নিয়ে যাবো আপনার স্নিগ্ধবতীর কাছে এখন কেবিনে যান।”
নার্স রা এসে টানছিলো কিন্তু অনুভব যেতে নারাজ। কিছুতেই আমাকে ছাড়ছে না। শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমারও ইচ্ছা করছে ওকে ধরে রাখতে কিন্তু আগে আমার সবটা জানতে হবে। এর মধ্যেই অনুভবের টানাটানিতে মুখের বাধা ওড়না টা সরে যায়। কয়েক সেকেন্ড পরই মুখের কাপড় তুলে অনুভবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনুভবকে জোড় করে নিয়ে গেলো। একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম ওরা ওকে কি যেন ইনজেকশন পুশ করলো সাথে সাথেই নিস্তেজ হয়ে যায় অনুভব। আমি কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে রিসেপশনের দিকে হাঁটা লাগালাম। এগিয়ে এসে রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম,,
“আপনার থেকে একটা ইনফরমেশন দরকার ছিলো!”
রিসেপশনিস্ট আমার দিকে কেমন করে তাকালো। এখানকার সব কিছুই কেমন অদ্ভুত। রহস্যময় একটা জায়গা।
“কি ইনফরমেশন?”
“এখানে কি অা……
আর কিছু বলতে পারলাম না তাার আগেই একটা মেয়ে এসে বললো,,
” আরে আপু তুই এখানে? আয় আয়।”
রিসেপশনিস্ট কেমন করে তাকালে তা দেখে মেয়েটা বললো,,
“আরে ম্যাম ও আমার বড় আপু৷ আমারই খোজ নিতে এসেছিল৷ আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো!”
রিসেপশনিস্ট আর কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিলে৷ এদিকে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি মেয়ের কান্ডে! ওকে আমি জিবনে দেখছি কি না সন্দেহ আর ও কি না বলে আমি ওর বড় বোন। মেয়েটার মাথায় কি সমস্যা না কি? অবশ্য এই হসপিটাল টাই তো কেমন যেনো! মেয়েটা আমাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো৷ বাইরে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। আমি মেয়েটার থেকে হাত ছাড়িয়ে বললাম,,
“কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না। তাহলে? নিজের বড় বোন কেন বললেন?”
মেয়েটা ফিসফিস করে হাসি মুখে বললো,,
“জায়গাটা আপনার জন্য সেইফ না। এটুকুই বলবো আমি আপনাকে চিনি। আপনি অনুভব স্যারের ওয়াইফ স্নিগ্ধা।”
আমি মেয়েটার মুখে আমার নাম শুনে অবাক হয়ে গেলাম। মেয়েটা আমাকে চেনে? কিন্তু কিভাবে? অনুভবকেও চেনে? আমি তো চিনি না।”
আমার ভাবনার মাঝেই মেয়েটা বললো,,
“আমি জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন সেগুলোর উত্তর আমি আপনাকে দেবো তবে এখানে না। আপনি যতদ্রুত সম্ভব পালিয়ে যান। আপনাকে আমি বাদে এখানকার কেউ এখনো দেখে নি। আপনাকে রিকুয়েষ্ট করছি ভাবি অনুভবকে স্যারকে বাঁচান। ভেতরে যে ছিলো সে অনুভব স্যার। আমি তার সাথে দীর্ঘ ৬ মাস কাজ করেছি। আপনাকে আমি চিনি কিভাবে চিনি তা না হয় পরে বলবো। এখন এটুকুই বলবো হাতে সময় খুব কম। যে করেই হোক অনুভব স্যারকে বাঁচান। এখান থেকে যে করেই হোক নিয়ে যান নয়তো ওরা মেরে ফেলবে। আপনার ফোনে আমার নাম্বার দিয়ে দিয়েছি। আমি আজই এই শহর ছেড়ে চলে যাবে। এতদিন অনুভব স্যারের জন্যই এখানে ছিলাম। আর কিছু বলতে পারবো না। আপনি তাড়াতাড়ি এখান থেকে অনুভব স্যার কে বের করে নিয়ে যান নয়তো অনেক খারাপ কিছু হবে।”
মেয়েটা এবার মুখের কৃত্রিম হাসি বজায় রেখে বললো,,
“এই আপু তুই বাড়ি যা। আমি ছুটে নিয়ে চলে আসছি্।”
বুঝলাম মেয়েটা আমাকে বাঁচানোর জন্যই এমন করে কথা বললো। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখেছি। তার কথা গুলো শুনে যেন আমার হাত পা অবশ হয়ে গেছে। মাথায় ছুটছে হাজারও প্রশ্নের পোকা। আমি তড়িঘড়ি করে ফোন নিয়ে আইদার কাছে কল দিলাম,,২ বার ঢুকতেই আইদা কল ধরে বললো,,
“ওই আপু কই তুমি? পুরো হসপিটাল খুজা শেষ আমার৷ ”
সমানে হাত পা কেঁপে চলেছে। গলা যেন ধরে আসছে,,কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,
“আ..আইদা তাড়াতাড়ি বাইরে আসো ভাবি আর সিফাত কে নিয়ে।”
“কিন্তু আপু…..
ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় আইদা, ভাবি আর সিফাত। ওদের পেছনেই রয়েছে সেই মেয়েটি। হাতে একটা ব্যাগ। মেয়েটা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,
” তাড়াতাড়ি যান এখান থেকে। কেউ আপনাকে চিনে ফেললে সমস্যা বাড়বে।”
আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“আপনার নাম কি?”
মেয়েটা হয়তো এই সময় এমন প্রশ্ন আশা করেনি তাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,,
“আমার নাম সিমা। এগিয়ে চলুন সামনের মোড় থেকে আমি বাস নিয়ে চলে যাবো। এখানে সবাইকে এক সাথে কেউ দেখলে অনেক প্রবলেমে পড়তে হবে।”
সিমা আর কিছু না বলে সামনে হাঁটতে লাগলো। আইদা আর ভাবি ফ্যালফ্যাল করে একবার আমার দিকে তো আরেকবার সিমার দিকে তাকাচ্ছে।
“আপু এইটা কে?”
“বলছি আগে এখান থেকে চলো।”
তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে এসে সামনের মোড় থেকেই সবাই গাড়িতে উঠলাম। সিমা বাসে করে চলে গেলো। গাড়ির ভেতর বসে সব কথা ভাবছি। যে অনুভব সব সময় পরিপাটি থাকতো সে আজ কত অগোছালো। যে অনুভব রাগ, জিদ আর এটিটিউডের ডিব্বা ছিলো আজ সে বাচ্চাদের মতো করে ঠোট উল্টো কাঁদে। আচ্ছা অনুভব এখানে কেন? কি হয়ছে অনুভবের? এত বড় হসপিটাল+বাড়ি থাকতে এমন ছোট একটা হসপিটালে কেন? মামুনি বাবাই তিশা আপু ওরা সবাই কোথায়? কেউ কি অনুভবের বিষয়ে জানে না নাকি সবাই জেনে শুনেই ওকে এখানে রেখে গেছে? ভাবতে পারছি না আর। আমার ভাবনার মাঝেই আইদা জিজ্ঞেস করলো,,
“আপু,,বললে না তো মেয়েটা কে?”
“হুম,,উনি এই হসপিটালের একজন কর্মচারী।”
“তোমাকে চেনে কিভাবে?”
“চিনে কোনো এক ভাবে।”
“মন খারাপ কেন?”
“কই না তো। মন কেন খারাপ হবে?”
“এমন রোবটের মতো বসে আছো কেন তবে? বলোই না কি হয়েছে?”
আইদার সাথে সাথে এবার ভাবিও যোগ দিলো,,
“এই স্নিগ্ধু বলো তোমার কি হয়ছে? এমন মন মরা হয়ে আছো কেন?”
“কই?”
“দেখো আপু একদম লুকাবা না..বলো কি হয়ছে?
ওদের ২ জনের জোড়াজুড়িতে বলবো বললাম। তারপর ঘটে যাওয়া সবটাই ওদের বললাম। ২ জনেই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরাও আমার মতো মানতে নারাজ যে অনুভব পাগল হয়ে গেছে। আইদা আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে বললো,,
” চিন্তা করো না আপু। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো। আর অনুভব ভাইয়ার ও কিছু হবে না। তুমি দেখো।”
আইদার সান্ত্বনা দেওয়া দেখে আরো বেশি কান্না পাচ্ছিলো তাই নীরবে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের মাঝে এমন অনেকে আছে যারা কান্না করার সময় কেউ সান্ত্বনা দিলে আরো কান্না করে দেয়। আমিও তাদের মাঝেই একজন। আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। আমি জানি আমার ভালোবাসার মানুষটা ভালো নেই। তার যে বিপদ তবুও আমি কিছুই করতে পারছি না। কিভাবে বাঁচাবো তাকে? আমি তো নিজের পরিচয় দিয়েই ওকে আনতে পারবো কিন্তু সিমা বলে দিয়েছে নিজের পরিচয় যেনো না দিতে যায়। আর যা করতে হবে তা দুর থেকে। বুঝতে পারছি না কি করা উচিত?
বাড়িতে এসে দেখি আন্টি লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছেন। আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,
“কি রে এত টাইম লাগে তোদের? সেই কখন গেছিস!”
পাশ থেকে ভাবি বললো,,
“আর বলবেন না মা ডক্টর নাকি পাগল সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। আর যাবোই না ওখানে!”
“তুমি রুমে যাও আগে,,সিফাতকে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও। ওকে আর কতক্ষণ কোলে রাখবা!”
“আচ্ছা মা যাছি্।”
আমি কোনো কথা না বলে চলে আসতে লাগলাম। পেছন থেকে আন্টি বললো,,
“স্নিগ্ধা…
” হুম আন্টি।”
“কি হয়….
আন্টিকে থামিয়ে আইদা বললো,,
” আম্মু ওকে যেতে দাও। ও ফ্রেশ হয়ে আসুক। স্নিগ্ধা আপু তুমি যাও।”
আমি মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম রুমে। আইদা হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আন্টিকে আর কিছু বলতে দিলো না। হয়তো সে নিজেই বলবে নয়তো পরে আমাকে জিজ্ঞেস করতে বলবে। রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ শাওয়ার নিলাম। মাথাটা এখন হালকা লাগছে। ভালো লাগছে না কিছুই। সব কেমন অসহ্য লাগছে। মাথায় হাজারো চিন্তার পোকার নাড়া দিচ্ছে। আমি চলে আসার পর কি হয়েছিলো? কেন অনুভব পাগল? কিভাবে সে একজন মানসিক রোগী হয়ে গেলো? এত ছোট একটা হসপিটালে কি করছে অনুভব? আর মামুনি বাবাই তারাই বা কোথায়? তারা কেন অনুভবকে এমন একটা জায়গায় থাকতে দিয়েছে? কে বা কারাই চায় অনুভব কে মারতে? কেন মারতে চায়? কি এমন হয়েছে এই ৮ মাসে? সিমা আমাকে চিনে কিভাবে? সিমার কথা কি সত্যি? নাকি সেও মিথ্যা বলছে? না তার চোখে এক ফোটা মিথ্যাও আমি দেখিনি। সব কিছুর শেষে আমি অনুভবকে ওখান থেকে বের করবো কিভাবে? না জাস্ট ভাবতে পারছি না। এক এক করে সব কিছু মেলাতে লাগলাম। সব প্রশ্ন এক করলাম। এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অনুভবকে আমার আগে সেইফ রাখতে হবে। আরো একবার সাহায্যের জন্য হাত পাততে হবে। আমি কিছু ভেবে উঠে গিয়ে লিভিং রুমে গেলাম। সেখানেই আন্টি মন মরা হয়ে বসে আছে। আমাকে দেখেই আন্টি হাতের ইশারাই তার কাছে ডাকলেন। আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম,,
“আমাকে সবটাই বলেছে আইদা,,তুই এতটুকু বয়সে কতকিছু সহ্য করছিস মা,,আল্লাহ তোকে ধৈর্য আর সহ্যশক্তি দান করুক। চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,,
“হুম আন্টি। সব কিছু ঠিক করতে আমার আগে সেইফ করতে হবে। কি করে ওকে ওই হসপিটাল থেকে বের করবো বুঝতে পারছি না আন্টি।”
“মাথা ঠান্ডা করে ভাব সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আমি আন্টির হাত চেপে ধরে বললাম,,
“আন্টি তুমি আমাকে অনেক সাহায্য করেছো,,মেয়ের মতো আগলে রেখেছো,,ভালোবেসে বুকে ঠায় দিয়েছো। আন্টি গো আমার আর একটা উপকার করবে আন্টি?”
আন্টি আমার হাত আলগা করে নিলো……..
চলবে……..