#সেদিনও_ছিলে_তুমি❤
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৩ (অন্তিম)
৩৫.
আদ্র ভোর হতেই শেফার বাসা থেকে আমাকে নিয়ে আসলো। বেচারি শেফার আরামের ঘুমটা ভাঙিয়ে যখন আদ্র বললো, ‘আমরা চলে যাচ্ছি, তখন ওর ঘুমঘুম চেহারাটা পুরোই পাল্টে গেলো!’
আদ্র আমাকে একটা কথাও বলতে দেননি। সোজা বাসায় নিয়ে আসে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। বাসায় ঢুকে দেখি মা-বাবা ডাইনিংয়ে সকালের নাশতা খাচ্ছেন। মা সকাল সকাল কলেজে চলে যান, আসলে ওনি একটা প্রাইভেট কলেজের শিক্ষিকা। আমাদের দেখেই ওনারা হাসলেন। মা যদিও জানতো আমি আদ্রকে শিক্ষা দেবার জন্য বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছি। আমি মার দিকে তাকাতেই ওনি ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন, ‘যাও। ছেলে খুব রেগে আছে!’
আমিও চুপচাপ ওনার সাথে ঘরে চলে এলাম। ওনি ঘরে এসেই ঠাস করে দরজা লাগালেন। আমি ভয়ে চুপচাপ বসে আছি। ওনি বললেন, ‘ডানা কাটবো?’
আমি চুপ।
—“বাহ, খুব ভালো। এত নাটক করেও এমন ভাব নিচ্ছো যেন তুমি খুব মহান কাজ করেছো!”
আমি তেড়ে উঠলাম। মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো, ‘ওহহ আমি নাটক করি? আর আপনি? আপনি মেলোড্রামা করেন, তাই না?’
ওনি অবাক হয়ে বললেন, ‘মানে?’
আমি ওনার কলার চেপে ধরে বললাম, ‘কিচ্ছু বুঝেন না আপনি? কিচ্ছু না? এতদিন আমার সঙ্গে লুকোচুরি করার মানেটা কি? এভাবে রাতেরবেলা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে আসা, কেন এরকম করতেন?’
আদ্র চুপ। শকড হয়েছে আমার কথায়। আমি আবারও বললাম, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে শাড়ি দেওয়া, গায়ে হাত দেওয়া এসব কি ভালোবেসে করতেন? নাকি আমাকে রাস্তার সস্তা প্রস্টিটিউট ভেবে করতেন? এতো নাটক করেও সবটা আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন? চারদিন বাসায় আসেননি, ফোন করলে কথা বলতেন না। আর আমি যে-ই না একদিন বাসার বাইরে গেলাম অমনি বড়মুখ করে বলছেন আমি নাটক করি!’
আদ্র নরম গলায় বললেন, ‘তুমি জানো?’
—“কেন? আমি জানাতে আপনার প্রবলেম হচ্ছে?”
—“কে বলেছে?”
—“আমার শ্বাশুড়ি!”
আদ্র আমার কাছে এসে বললেন, ‘সব যখন জানো! তখন বলি, তোমাকে যখন প্রথম দেখি, তখনই আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। হুম, যেতাম রাতে তোমার কাছে। তোমাকে একপলক না দেখলে আমি রাতে ঘুমাতেই পারতাম না। তোমার ঘুমন্ত মায়াবী চেহারা দেখলে এক নিমিষেই মনে হতো, আমার দুনিয়া আমার সামনে। আমি তোমাকে ভালোবাসি আরশি।
—“সেটা কি আপনার আবেগ? এখন কি নতুন কাউকে পেয়েছেন?”
আদ্র রেগে বললো, ‘সেদিনও ছিলে তুমি, আর আজও আছো তুমি। এর আগে, পরে, মাঝে কেউ আসেনি, আসবেওনা!’
—“বুঝলাম। সেজন্যই আমাকে রেখে এতদিন পালিয়ে ছিলেন?”
—“তুমিই তো রাগিয়ে দিয়েছিলে আমাকে!”
—“মোটেই না।”
আদ্র হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভালোবাসো আমায়?’
আমি কি উত্তর দেবো, ভেবে পেলাম না।
—“ভালোবাসো? প্লিজ বলো হ্যাঁ বা না!”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, ‘মনে হয়। আমি ঠিক জানিনা!’
আদ্র’কে দেখে মনে হলো, আমার থেকে এ উত্তরটা ওনি আশা করেননি। আমার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট হেসে বললেন, ‘ঠিক আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।’
৩৬.
সারাটাদিন মায়ের সাথে কথা বলে কেটে গেলো। আদ্র গিয়েছেন ভার্সিটিতে, বাবা অফিসে। রাতেরবেলা সবাই ফিরলে একসাথে খাওয়াদাওয়া করা হলো। ঘুমাতে যাওয়ার জন্য রুমে এলাম। আদ্র’কে জিজ্ঞেস করলাম,
—“আচ্ছা, আপনি জানলেন কিভাবে আমি শেফার কাছে? ওদের বাসায়?”
—“বলবো না।”
—“কেন?”
—“তুমি জানিয়েছিলে?”
—“আহা, বলুন না!”
—“ওকে, বলবো। একটা শর্তে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি শর্ত?’
ওনি আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘চুমু খেতে দেবে আমায়!’
আমি রেগে বললাম, ‘যান তো! অভদ্র একটা!’
—“প্লিজজ!”
আমি ওনাকে ঠেলে সরিয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লাম। ওনি মুখ গোমড়া করে আমার পেটে ঠান্ডা হাত রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি কেঁপে উঠতেই ওনি বললো, ‘সবসময় এরকম করো কেন, বলতো মেয়ে!’
—“জানিনা!”
—“সব জানো তুমি, আমাকে কষ্ট সেজন্যই দিতে চাও!”
—“আমি আপনাকে কষ্ট দিইনা।”
—“খুব দাও মেয়ে!”
তারপর ওনি চুপ করে গেলেন। প্রায় অনেকক্ষণ কোনো কথা বললেন না। ঘাড়ে তরল কিছু পড়ার আভাস পেতেই আমি চমকে উঠলাম। পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি আদ্র’ আমাকে জড়িয়ে ধরে নিরবে কাঁদছেন। আমি হা হয়ে গেলাম। এই শক্ত-সামর্থ্য মানুষটাকে কি এসব মানায়? ওনার হতে হবে আগের মতো কঠোর স্বভাবের মানুষ! আমি ওনার গালে হাত রেখে শান্ত গলায় বললাম, ‘আপনি কি মেয়ে? এমন ছিঁচকাদুনের মতো কাঁদছেন কেন?’
ওনি বললেন, ‘কেন? ছেলেদের বুঝি কাঁদতে নেই? ওদের কি কষ্ট হয়না?’
আমি ভাবলাম, ‘সত্যিই তো! ছেলেদের ও তো মন আছে, কষ্ট আছে। তাহলে আমরা কেন ওদেরকে সবসময় কষ্ট ভাগ করতে দিইনা? নাহ, এমন করা উচিৎ নয়।’
আমি বললাম, ‘আপনার কি কষ্ট, সেটা বলবেন?’
—“তুমি পাশে থাকলে আমার আর কোনো কষ্ট নেই আরশি। কিন্তু তুমি কাল যখন বলেছিলে সুসাইড করবে তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিলো সেটা ভাবতে পারো?”
আমি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললাম। বললাম, ‘আচ্ছা এই ব্যাপারটা বাদ দিন। আমি আর এরকম করবোনা।’
—“করতে দিলে তো!”
—“আচ্ছা আপনি জানলেন কি করে আমি শেফার বাসায়? প্লিজ বলুন না!”
ওনি মুখ কালো করে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘তুমি ওখানে যাওয়ার পরপরই শেফা ফোন করে আমাকে! তারপর আমি যাই, তখন রাত প্রায় একটা বাজে। গিয়ে দেখি পরম সুখে আপনি ঘুমাচ্ছেন, আমার উপস্থিতি আপনি টের পাননি।’
আমি মনেমনে ভাবলাম, ‘শেফা? কত্তবড় হারামি! বারবার না করা স্বত্তেও আদ্রকে বলে দিলো আমি ওর বাসায়? দেখা হোক, বুঝাবো মজা।’
আমি হালকা কেশে বললাম, ‘ওহহহ!’
তারপর আদ্র গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো না আরশি?’
আমি লজ্জ্বালজ্জ্বা গলায় বললাম, ‘হুম!’
আদ্র বিছানায় উঠে বসলো! বললো, ‘হুম মানে?’
—“হুম মানে জ্বি, জ্বি মানে রাজি, রাজি মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি!”
আদ্র আমাকে বুকে টেনে নিলেন। কপালে উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুমি জানোনা আমি কতটা খুশি হয়েছি!’
—“সবসময় এভাবে ভালোবাসবেন আমায়?”
—“এভাবে হয়তো না, তবে আরও বেশি ভালোবাসবো এটা বলতে পারি!”
আমি বললাম, ‘ফারিনের মতো?”
আদ্র রেগে গেলো। বললো, ‘ফারিন আমার কেউ ছিলোই না মেয়ে! জাস্ট ফ্রেন্ড!’
আমি বললাম, ‘আমিতো এম এ.. এমনিই বলেছি। রাগার কি আছে!’
—“রাগিনি!”
—“বোঝাই যাচ্ছে!”
আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। আমার ঠোঁটে চুমু খেলো আলতোভাবে।বললো, ‘ভালোবাসি তোমাকে সেদিনের মতোই। সেদিনও বোকাবোকা সুন্দরী ছিলে, আজও সেদিনের মতোই সুন্দরীই আছো!’
আমি আলতো হেসে আদ্রে’র বুকে মুখ গুঁজলাম। একটা ভালোবাসাময় রাত ছিলো সেদিন। একটা মেয়েকে চুপিচুপি ভালোবাসা! এই একতরফা ভালোবাসা থেকে দুজনের মাঝেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার অনুভূতি কতোটা সুখের, সেটা বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!
(খুব ভালো লিখতে পারিনি, আধঘন্টায় লিখেছি। ভুল-ভ্রান্তি মাফ করবেন। সুন্দর হয়নি শেষটা, নেটওয়ার্ক ঝামেলায় আরও অসুন্দর হয়েছে।)
👉”যে ঘরে কন্যা সন্তান আছে
সেই ঘরটি বেশি কল্যানময়!”
~ হযরত আলী (রাঃ)