সূর্যস্নান পর্ব-০৪

0
1158

#সূর্যস্নান
#পর্ব_০৪
#Nishat_Tasnim_Nishi

—“আপনি বলুন শর্ত কী?”

কথাটা গম্ভীর হয়ে বললাম আমি।

–“বেশি কিছু না আজকে সারাদিন আমার চাই।ব্যাস এটুকু!!”

আমি বিস্ফোরিত হয়ে বললাম,,

–“কীহ?”

উনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন,,

–“এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনো? আমি বলতে চাইতেছি আজকে সারাদিন আমার সাথে থাকতে।আমি তোমার সাথে সিলেট শহর ঘুরতে চাই। তুমি যদি শর্তে রাজি থাকো তাহলে আমি তোমার আর নিদ্রের ব্যবস্থা করে দিবো..!!রাজি?”

–“শর্তে রাজি না হয়ে উপায় আছে?বলেন কোথায় ঘুরতে চান?আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না সন্ধ্যার আগেই বাড়ী যেতে চাই..!!”

উনি অন্যদিকে ফিরে বললেন,,

–“চিন্তা করো না।আমি তোমাকে ঠিক সসময় পৌঁছে দিবো!”

আমি কিছু বললাম না আবার ফোন নিয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করতে লাগলাম। এ একটা কাজ করতে যে সময় কখন চলে যায় বুঝতেই পারি না। আশেপাশে গাড়ীর হর্ণের আওয়াজ পেয়ে আমি বাহিরের দিকে তাকালাম,ওমা তাকিয়ে দেখি গাড়ী আর গাড়ী। হঠাৎ মনের মধ্যে কৌতুহল জাগলো উনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমি বাহিরের দিকে দৃষ্টি রেখেই উনাকে বললাম,,

–“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

–“এখন জাফলং যাচ্ছি।”

–“কীহ?এত দ্রুত চলে এসেছি।এখানে আসতে তো দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। ”

উনি এক হাত দিয়ে মোবাইল টা আমার সামনে রেখে বললেন,,”টাইম দেখো!”

টাইম দেখে আমি সত্যিই অবাক দুইঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। এই ফোনের ভেতর ঢুকলে দিন-দুনিয়ার খবর থাকে না আমার, আজকে আবার সেটার প্রমান পেলাম।

–“এটা কোন রাস্তা না মানে এর আগে তো অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।”

–“হুম এর আগে মামার বাজার রাস্তা দিয়ে এসেছো। এখন আমরা গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্টে যাচ্ছি। এ রাস্তাটা এখন অধিক জনপ্রিয়।”

আমি ছোট্ট শব্দ করে বললাম,,”ওহ..!!”

বহু পথ-ঘাট পেরিয়ে পৌঁছালাম জাফলং এর মায়াবতী ঝরনার পাশে। এ জায়গা টা এত সুন্দর বলার বাহিরে,,কী সুন্দর পাহাড় বেয়ে স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে পড়ছে! সবগুলা পানি নিচে এসে জমা হচ্ছে। ঝরনার দিকে একপলক তাকাতেই দেখলাম,,বিশাল সবুজ লতা-পাতা ঘেরা পাহাড় বেয়ে রাশি রাশি জল কালো কালো পাথর গুলোর মাঝ দিয়ে বয়ে আসছে। এ জায়গা টা সবচেয়ে সুন্দর লাগে। আমি ধীর পায়ে হেটে পাহাড়ের পাশে দাড়িয়ে আলতো হাতে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পানিগুলো ছুঁয়ে দিলাম। সাথে সাথে পানির ছিটকা এসে গায়ে পড়লো। আমি সরে আসতেই আয়ান এসে আমার পাশে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন “কী হলো সরে গেলে যে?”

আমি মন খারাপ করে বললাম,,”জামা-কাপড় আনি নি তো..ভিজে গেলে কী পরবো?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,” আমি আসার সময় সব নিয়ে এসেছি।তোমার আম্মু প্যাক করে দিয়েছেন।”

মুহূর্তেই খুশিতে মন টা ভরে উঠলো।আমি সত্যি বলে লাফিয়ে পানিতে নেমে গেলাম। উনি বলতে লাগলেন আরে আস্তে, পিছলে পড়ে যাবে তো। পড়বো না বলে আমি পাথরের উপর দাড়ালাম। পায়ের হাটু পর্যন্ত ভিজে গেছি, তবুও আমি এক পা এক পা করে সবগুলো জায়গায় হাটতেছি। ছোট ছোট পাথরগুলোর উপর হাটতেই কেমন যেন শিরশিরে অনূভুতি হচ্ছে। পানির উপর দিয়ে আমার ফর্সা পা ভেসে উঠছে। হঠাৎ দেখলাম উনিও আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছেন। সূর্যের আলো সরাসরি আমাদের উপর পড়ছে সাথে পানির বালিগুলোও চিকচিক করছে। অনেক্ষণ হাটাহাটির পর আমরা দুজনেই উপরে উঠে আসলাম,চারপাশে কত কাপল রা হাত ধরে হাটাহাটি করছে আর উনি তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে গিলছেন। ব্যাপার টা অনেক্ষণ থেকেই খেয়াল করছি, কেনো যেনো মনে হলো উনার বোধ হয় ইচ্ছে করছে আমার হাত ধরে হাটতে। আমি বিষয়টা বুঝেও না বুঝার ভান করে সেখান থেকে উঠে আসলাম। উপরে এসেই বড় একটা পাথরের উপর বসলাম, অনুভব করলাম সূর্যের তীক্ষ্ণ আলো আমার উপর পড়ছে। আমি পা দুটো রোদের দিকে মেলে বসেছি যাতে শুকিয়ে যায়। কিছুর আওয়াজ পেয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম আয়ান আমার ছবি তুলছে। আমি তাকাতেই উনি আমতা আমতা করে বললো,,

—“না মানে সূর্যের ঝলমলে আলো তোমার উপর পড়ছিলো আর তুমি সেই আলো গায়ে মাখছিলে সেটা দেখে আমার একটা ছবি ক্যামেরায় বন্দি করার ইচ্ছা হলো তাই করেছি।”

আমি ফিক করে হেসে দিয়ে বললাম,,

–“এত মানে মানে করছেন কেনো ভাইয়া।আমাকে বললেই তো আমি সুন্দর পোজ দিতাম তাহলে তো আরো সুন্দর পিক আসতো।তাছাড়া এটাকে না সূর্যস্নান বলে,অর্থাৎ সূর্যের আলোয় গোসল করা।”

আমার কথা শুনে উনার মুখের অসহায় ভাব টা উবে গেলো আর উনি হাস্যউজ্জল চেহারায় বললেন,,

—“আমি কিন্তু এর আগেও তোমাকে সূর্যস্নান করতে দেখেছি!”

উনার কথা শুনে আমার কপালে চিন্তার ভাব ফুটে উঠলো।আমি কপাল কুচকে বললাম,,

–“মানে?”

উনি থতমত খেয়ে বললেন,,

–“আরে আমি মজা করে বলেছি। ”

আমি বললাম,,”ওহ,আচ্ছা।” এরপর আমরা আরো অনেক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম। ওহ আবার তামাবিলে গিয়ে ইন্ডিয়ার বোর্ডার ও দেখেছি,এখানে যেতে পার্সপোর্ট লাগে।সবচেয়ে অবাক করার বিষয় উনি আমার পার্সপোর্টও নিয়ে এসেছেন।আমি আর বিষয়গুলো নিয়ে এত গাটাগাটি করলাম না নিজের মতো সবকিছু উপভোগ করলাম। চা বাগানেও কিছু সোনালী মুহূর্ত উপভোগ করলাম। পাহাড়ীদের সাথে আমরা দুজনে চা পাতাও তুলেছিলাম। আমি অবশ্য কয়েক টা মুহূর্তের ছবি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলাম। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাসায় পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। অনেক টা ক্লান্তি নিয়ে যখন সিড়ি দিয়ে উঠে ঘরে যাচ্ছিলাম তখন আয়ান পিছন থেকে ডাক দিলেন। আমি পিছনে ফিরে বললাম,,

—“কিছু বলবেন?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,,

—“না কিছু বলবো না। ভালো থেকে, তোমাদের জন্য শুভকামনা রইলো!”

–“থ্যাংকইউ সো মাচ ভাইয়া। আপনি যদি রাজি না হতেন তাহলে হয়তো,, ”

আমাকে শেষ করতে না দিয়ে উনি বললেন,,

–“ইট’স ওকে,আমি বুঝি..!!”

আমি চুপ করে গেলাম। আবারও এক সিড়ি পার হতেই উনি ডাক দিলেন,আমি মিষ্টি সুরে বললাম,,”জ্বি..!!”

উনি এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলেন। উনাকে উশখুশ করতে দেখে আমি বললাম,,”কিছু বলবেন?”

উনি মুখ ছোট করে বললেন,,

—“না মানে,কিছু দেওয়ার ছিলো। তুমি না চাইলে থাক।”

আমি কৌতুহল নিয়ে বললাম,,,

—“কী?”

উনি আমার কাছে এসে একটা ছোট ব্যাগ দিয়ে বললেন,,

—“একচুয়েলী, এটা আমি তোমার জন্য এনেছিলাম,অনেক আগে। তোমার পছদ হবে কী না জানি না তবে রাখলে খুশি হতাম। পরার দরকার নেই, শেষ আবদার হিসেবেই না হয় রাখো..!! ”

–“এখানে কী আছে?”

—“বাসায় গিয়ে দেখো,এখন নয় প্লিজ।”

আমি আচ্ছা বলে চলে আসলাম। বাসায় আসতেই মায়ের হাজারও প্রশ্ন শুরু হয়ে গেলো। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,”মা,আমি খুব ক্লান্ত,পরে বলবো..!!” বাবাকে ঘরে দেখলাম না হয়তো ডিউটিতে আছেন, রুমে এসেই ঠাস করে শুয়ে পড়লাম। এক ঘুমে পুরো রাত চলে গিয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে ঢুলতে ঢুলতে ড্রয়িং এ গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে বসলেন,বাবা অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন,,

—“দোলন..!!”

আমি মাত্র ব্রেড মুখে দিচ্ছিলাম বাবার ডাক শুনে আর মুখে দিলাম না, সাথে সাথে প্লেটে রেখে দিয়ে বললাম,,”জ্বি, বাবা..!!”

বাবা পানির গ্লাসে জগ থেকে পানু ঢালতে ঢালতে বললেন,,

—“কাল তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?”

আমি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম,আমি তো কী না কী ভেবেছিলাম। আমি সবকিছু বলতেই বাবা গম্ভীর সুরে বললেন,,

—“আর কোথাও কারো সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই..!!”

আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আম্মু বলে উঠলেন,,

—“এসব কী ধরনের কথা?কারো সাথে মানে ও নিজের হবু জামাইয়ের সাথেই তো গিয়েছে।তুমি আবার এসব কী বলছো!”

.

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে