#সূর্যস্নান
#পর্ব_২
#Nishat_Tasnim_Nishi
উনি ইতস্ত করে বললেন,,
—-“নূপুর তোমার হাত টা দেও।”
আমি কিঞ্চিৎ চমকে নিদ্র ভাইয়া থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম। আমি চুপ করে দাড়িয়ে রয়েছি,এটা দেখে আরুশি আমার হাত টা টেনে উনার সামনে ধরে বললো,,”এত লজ্জা পেলে হবে?”
উনি আমাকে পরে দিলেন, এরপর আম্মুর জোরাজুরিতে আমিও চোখ বন্ধ করে পরিয়ে দিলাম। ব্যাস হয়ে গেলো আংটি বদল। রাত আট টার পর পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে ঘরে আসলাম। রাগে ফোসফোস করতে করতে জামা-কাপড় বদলে নিলাম। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা আম্মুর রুমে চলে আসলাম,আমাকে দেখে আম্মু হাসি মুখে কিছু বলতে নিচ্ছিলো তার আগেই আমি চেঁচিয়ে বললাম,,
—“একদম খুশি হবে না। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেসস করে এত বড় সিদ্ধান্ত কেনো নিলে?আমার কথার কী কোনো দাম নেই তোমাদের কাছে?”
আম্মু মুখ টা মলিন করে বললেন,,,”কেনো,তুই খুশি হোস নয়?আমরা কী তোর খারাপ চাইবো নাকি?”
—“আমি কি বলেছি, আমার খুশির কথা চিন্ত করতে?সবসময় কেনো তোমাদের সিদ্ধান্ত আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দাও।”
–“তোর বাবা উনাদের কথা দিয়েছে।”
—“কিন্তু কেনো?আমাকে না জিজ্ঞেস করে কেনো কথা দিবে?”
—“ছেলে তো ভালো,ওর পরিবারও তো ভালো।তুই তো চিনিস উনাদের,আর সবচেয়ে বড় কথা তুই আমাদের সামনে থাকবি।”
–“বাট লাইফ তো আমার, একবারও কি উচিত ছিলো না আমাকে জিজ্ঞেস করার?সবকিছুই তোমাদের মতো করেছি,আজ পর্যন্ত যা করতে বলেছো সেটাই করেছি।আমি কমার্স পড়তে চাইছি,তোমরা সাইন্স নিয়ে পড়তে বলেছো,তোমাদের কথামতো সাইন্স নিয়েছি, রিয়ার সাথে মিশতে বারন করেছো,বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়া স্বত্বেও আমি মিশা বাদ দিয়ে দিয়েছি,ড্রয়িং করতে বারন করেছো,বাদ দিয়ে দিয়েছি,ফুল বাগান করতে বারন করেছো আমি সেটাও বাদ দিয়ে দিয়েছি।এখানে যেতে না বলেছো,ওখানে যেতে না বলেছো,,আমি যাই নি। নানুবাড়ী,দাদাবাড়ীর কথা জিজ্ঞেস করতে বারন করেছো,আমি আর করি নি। সবসময় এটা করো,ওটা করো,, সব করেছি।সবসময় তোমরা যেটা বলেছো সেটা মেনেছি, আসলে আমারই দোষ প্রথম থেকে যদি না মানতাম তাহলে আমাকে আজ না বলে বিয়ের কথা ঠিক করতে পারতে না।”
আমার কথা শুনে মা চুপ করে রইলেন , কী বলবেন কারন উনি জানেন আমি যা বলতেছি তার সবকিছু সঠিক। মা এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত দিতে চাইতে আমি সরে গেলাম। মা ঠোঁট চেপে বললেন,,
–“আমি জানি, ছোটবেলা থেকে তোর উপর সব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কী করবো বল ভয় যদি তুই ভুল পথে চলে যাস, তাই।আয়ান খুব ভালো ছেলে,রাজি হয়ে যা। ”
আমি রাগি চোখে মায়ের দিকে তাকালাম। “নিকুচি করি তোমার ওই ভালো ছেলের। বলে আমি ঠাস করে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম,পিছন থেকে মা চেঁচিয়ে বললো,,”কই যাস এত রাতে?”
—“সিনথিয়া ভাবীরর কাছে।”
–“যা,,,মেয়েটা যদি তোকে বুঝাতে পারে।ওর থেকে কিছু শিখ, শাশুড়ি যেভাবে বলে ওভাবে করে।”
আমি মায়ের কথা শুনেও না শুনার মতো চলে আসলাম উপরে। দরজায় কলিং বেল চাপতেই সিনথিয়া ভাবী এসে দরজা খুলে দিলেন।উনি আমাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন তার আগেই আমি উনাকে পাশ কাটিয়ে নিদ্র ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকতেই দেখলাম উনি জামা খুলতেছেন, আমি ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম।আমাকে দেখে উনি হকচকিয়ে গেলেন দ্রুত অর্ধেক খোলা জামা আবার পরে নিলেন।
–“কারো রুমে ঢুকার পূর্বে নক করে ঢুকতে হয়, এটুকু মেনার্স নেই?”
মেজাজ এমনিতেই চরম খারাপ তার উপর উনার মেনার্সের কথা শুনে আরো খারাপ হয়ে গেলো। আমি রেগে উনার মুখোমুখি হয়ে বললাম,,
–“না,জানি না।”
উনি ভ্রু কুচকে আমার উপর থেকে নিচ চোখ বুলালেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,,,
–“কী হয়েছে?এত রেগে আছিস ক্যান?তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন তো তোর লজ্জা পেয়ে লজ্জাবতী(এক ধরনের গাছ,যাদের একটু স্পর্শ করলে নুয়ে যায়) গাছের মতো হওয়া উচিত।তা না করে উল্টো তুই ঝাঁঝ লবঙ্গ হয়ে আছিস।কাহিনী কি বল তো?”
আমি কটমট করে উনার দিকে তাকালাম,ইচ্ছা করতেছে দুই গালে ঠাটিয়ে দুইটা চড় দেই।বেয়াদপ ছেলে!
–“কী হলে কী বিরবির করতেছিস?আর তুই এত রাতে আমার রুমে,আবার দরজা লাগিয়েছিস কেনো?মানুষ দেখলে উল্টা বুঝবে তো!”
–“মানুষ উল্টা বুঝতেছে অথচ,আপনি বুঝতে পারতেছেন না।”
উনি কপাল কুচকে বললেন,,
–“মানে?”
আমি হুট করে উনার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে বললাম,,
—“আপনি কি একটুও বুঝেন না?”
—“কী বুঝবো?”
আমি চোখ সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।বুঝলাম উনি এভাবে বুঝবেন না।
উনার হাত ধরে টেনে উনার রুমের ব্যালকনিতে নিয়ে আসলাম। কোনো ভনিতা না করে সরাসরি বললাম,,
–“আমি আপনাকে ভালেবাসি।আমি জানি আপনি এটা বুঝেন,কিন্তু বুঝেও না বুঝার ভান কেনো করছেন সেটা জানি না। আমি কি জানতে পারি কেনো এমন করছেন?”
আমার কথা শুনে উনি এক ঝটকায় হাত টা সরিয়ে ফেললেন। আমাকে ঝাড়ি মেরে বললেন,,
—“কী বলছিস এসব আবোল-তাবোল?মাতা ঠিক আছে তো?”
–“আমার মাথাও ঠিক আছে, আমিও ঠিক আছি।আমি সুস্থ মষ্তিষ্কে বলতেছি, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
–“তুই কী পাগল?আজকে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আজকেই এসব আবোল-তাবোল বলতেছিস। তুই যে এঙ্গেইজড সেটা জানিস?”
–“জানি,সব জানি।আর এটাও জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
–“বারবার এক কথা কেনো বলছিস,আমি কী তোকে ভালোবাসি?”
–“কেনো বাসেন না,কী নেই আমার মধ্যে?আমার দিকে তাকান, দেখুন আমি কত সুন্দর।”
কথাটা বলে আমি গা থেকে ওড়না টা সরিয়ে ফেলাম। সাথে সাথে উনি অন্য দিকে ফিরে গেলেন,প্রচন্ড রেগে দাত চেপে বললেন,,
—“দিনদিন কী বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছিস।ওড়না খুলেছিস ক্যান,শরীর দেখাতে চাস।চল তাহলে তোকে পতিতালয়ে দিয়ে আসি।”
আমি সাথে সাথে ওড়না গায়ে দিয়ে দিলাম। রাগে দুঃখে কান্না চলে এসেছে।
–“তো কী করবো?আপনি তো আমার দিকে তাকান ই না।আমি কি এত খারাপ,আমাকে কেনো ভালেবাসা যায় না।আপনি কেনো আমার ফিলিংস বুঝেন না।”
বলেই কেঁদে দিলাম।উনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার সামনে এসে বসলেন। থুতনিতে হাত দিয়ে আমার মুখ উপরে তুললেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,
–“কে বলেছো তুই খারাপ। আমি তোর ফিলিংস বুঝতে পারতেছি, দেখ তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আয়ান কিন্তুু খুব ভালো ছেলে,জানিস যখন জেনেছে তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন থেকে ও কোনো মেয়ের সাথে দরকার ছাড়া কথা বলতো না।জানিস,ওর স্বপ্নের ঢাবিতে ভর্তি না হয়ে তোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েছে।ত,,”
উনার কথার মাজেখানেই আমি গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
–“আমার জন্য মানে?আর আমি তো শুনেছি উনি ঢাবির বুয়েটে পড়েন আর আপনি বলছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেছে?”
–“গাধা নাকি,ঢাবিতে কি বুয়েট আছে?দুটোই আলাদা,বুঝেছিস।আর তোর জন্য মানে হলো,তুই যে একবার ইঞ্জিনিয়ারেরর উপর ক্রাশ খেয়ে সেটা পুরো এলাকা বলে বেড়িয়েছিস সেটা শুনেই আয়ান ঢাবিতে পড়ার ইচ্ছা বাদ দিয়েছে। সত্যি বল তো,তুই কখনো ওর কথা জানতে চেয়েছিস?”
–“না,চাই নি।কেনো জানতে চাইবো?আপনার সম্পর্কে জানি এটাই আমার জন্য এনাফ।আপনি বলুন,আমাকে ভালোবাসবেন কী না?”
–“আমি এত সময় কী বুঝাচ্ছি,তুই কী বুঝতেছোস না?”
–“আপনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ আমি এ রুম থেকে যাবো না।”
বলেই আমি সোজা গিয়ে উনার বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।আমার এমন কান্ডে উনি হতবাক হয়ে তাকয়িে রইলেন। উনি আমার হাত ধরে টেনে বারবার উঠতে বললেন,,আমি একদম রোবটের মতো শুয়ে রইলাম। আজকে পণ করেছি উনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ নড়বো না। উনি খুব ভালো করেই জানেন আমি একদম ঘ্যাড় ত্যাড়া। উনি রাগারাগি করে কোনো ফলাফল না দেখে, চুপ করে গেলেন। উনি কিছুক্ষন পুরো ঘরময় হাটাহাটি করলেন,দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি খুব টেনশনে আছেন। একটুপর আমার পাশে এসে আমাকে নরম সুরে ডাকলেন,,”দোলন,এই দোলন!”
আমি কোনো জবাব দিলাম না।চুপচাপ শুয়ে রইলাম।উনি এবার অসহায় কন্ঠে বললেন,,
–“দেখো,কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।প্লিজ চলে যাও।আমার কিন্তু কিছু হবে না, সবাই তোর চরিএে আঙ্গুল তুলবে।”
–“তুললে তুলবে,,আপনার কী?”
–“প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর।মা আর ভাবী কী মনে করবে বল তো।আচ্ছা,আমি তোর কথা ভেবে দেখবো, এখন চলে যা। প্লিজ,আমি তোর পায়ে পড়ি..!!”
আমি চুপ করে কিছুক্ষন ভাবলাম। এরপর চট করে বললাম,,
–“যদি আমাকে চুমু দেন তাহলে যাবো।”
আমার কথা শেষ হতেই উনি আতকে উঠলেন,কিছুটা জোরেই বললেন,,
–“নাআআ..!!”
আমি আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে বললাম,,
–“আচ্ছা, তাহলে আমিও যাচ্ছি না।”
উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,,
–“এসব কী ধরনের কথা।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,,
–“এহহ,কী ধরনের কথা।মনে হয় এর আগে আপনি দেন নি।”
উনি আমতা আমতা করে বললেন,,
–“ওটা তো এক্সিডেন্টলি হয়ে গিয়েছিলো।”
আমি জবাব দিলাম না।কারন আমি নিজেও জানি ওটা একটা এক্সিডেন্ট। কাহিনী টা বলি কয়েক মাস আগের কথা।সেদিন আমি শিউলি আন্টি অর্থাৎ নিদ্র ভাইয়ার মা উনার কাছে এসেছিলাম শাড়ী পড়তে। কারন এর পরের দিন স্কুলের ফাংশনে শাড়ী পরে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো আমাদের পঞ্চ বান্ধবীর। আম্মুকে অনেকবার বললাম,কিন্তু সেদিন কাজের জন্য উনি আর শিখাতে পারেন নি। তাই বাধ্য হয়ে শিউলি আন্টির কাছে এসেছি,উনি আমাকে উনার রেগুলার পড়ার কাপড় দিয়ে শিখিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আদ্র ভাইয়া রুম থেকে আন্টিকে চা দেওয়ার কথা বললেন।আন্টি আমাকে পড়তে বলে চা বানাতে চলে গেলেন। আমি কোনোরকম কাপড় টা পড়ে,মাথায় আচল দিয়ে গোমটা দিলাম।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছিলাম তখন হুট করে নিদ্র ভাইয়া “মা মা,আমি সিলেক্ট হয়েছি,” বলে রুমে প্রবেশ করেই পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে দিয়েছিলেন। আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন।তৎক্ষনাৎ দূরে সরে বললে,,”সরি, সরি আমি ভেবেছিলাম আম্মু।” আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ জামার উপর থেকে কাপড় টা খুলে ওড়না নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আন্টি,,
.
চলবে?
.