#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
পর্ব৮_অন্তিম পর্ব
রিক্সা থেকে নামতেই সাফোয়ানের দেখা পেলো তারা। কালো জিন্সের প্যান্টের সাথে হাল্কা ক্রিম কালারের শার্ট ইন করে পরা৷ শ্যাম বর্নের এই পুরুষ টিকে দেখে সানার মনের মধ্যে প্রেম প্রজাপতির মতো পাখনা মেলে উড়ছে। হাতে ঘড়ি, বারবার সেই ঘরির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকানো সব কিছুই ভালো লাগছে সানার। এই প্রথম ভালবাসার নজরে তাকালো সানা সাফোয়ানের দিকে। লোকটি দেখতে মোটামোটি সুদর্ষন বলা যায়। সাফোয়ানের দিকে এভাবে সানাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুমাইয়া বলে ফেলে।
~ এভাবে একনজরে তাকিয়ে দেখলে ভাইজানের নজর লাগবে সানা। চোখের পলক তো ফেলো একবার। দূর থেকে দেখলেই হবে চলো ভাইয়ার কাছে যাই। হয়তো আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছে সে।
~ কি যে বলো না ভাবি। তুমি সবসময় আমাকে এইভাবে লজ্জায় ফেলে দেও।
সানা লজ্জায় সুমাইয়কে অন্যকথা বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো। তারা দিয়ে সাফোয়ানের কাছে গেলো সুমাইয়াকে নিয়ে। সাফোয়ানের ওখানে যেতেই ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ হয়ে গেলো।
~ ভাইজান!
সুমাইয়ার চিৎকারে সাফোয়ান পিছু ফিরে দেখে তার বোন আর স্রী এসে দাঁড়িয়ে আছে৷
~ এতো লেট হলো যে?
~ জ্যামের কারনে ভাইজান।
~ আচ্ছা। সাবধানে আয়।
সানা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সানাকে দেখেই সাফোয়ানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। আজকাল এই মেয়েকে দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় তার। প্রেম-ভালোবাসা একজন মানুষ কে ঠিক কতোটা বদলে দিতে পারে বলার মতো না।
~আপনি কি সানার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন ভাইজান? নাকি যেই কাজের জন্য এসেছি সেই কাজের জন্য যাবেন?
সুমাইয়া যে কিভাবে সাফোয়ান কে লজ্জা দিয়ে দিবে তা কি সে ভেবেছে? অথচ বাদর মেয়ে বড় ভাইকেও লজ্জা দিতে ছাড়েনা।তবুও হাল্কা কেশে গলা ঝেড়ে নিলো সাফোয়ান।
~পাকামি না করে তোরা ভিতরে যা আমি তো আর এসবের কিছু বুঝবো না। তাই তোদের পছন্দ মত কেনাকাটা করা শুরু করে দে।
~না এটা হবে না ভাইজান। তোমার বিয়ের জামা কাপড় সব তোমার আর সানার পছন্দ মত নিবো। তানাহলে পরে বলবা নিজেদের পছন্দ মতো কিছু হয় নাই।
~ কি যে বলিস না তুই। তোর পছন্দ অনেক ভালো আমি জানি।
~ এই সানা তুমি বুঝাও তোমার জামাই কে। কেনো সে কথা শুনে না আমার?
~ আমি কি বলবো ভাবি?
~দেড়ি হচ্ছে তোমরা কি যাবে?
সুমাইয়াকে রেগে যেতে দেখে সাফোয়ান আর সানা কথা বাড়ালো না তার সাথে শপিং মলের ভিতরে যেতে লাগলো। কারণ সুমাইয়া রেগে গেলে আজকে আর শপিং করাই হবে না। সুমাইয়া নিজের পছন্দমতো শপিং করছে আর এই সুযোগে সাফোয়ান সানার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।সানা তাকিয়ে আছে সাফোয়ানের দিকে বিনা সংকচে কি সুন্দর তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সানার লজ্জা লজ্জা লাগতেছে। সানাকে লজ্জা পেতে দেখে মিটিমিটি হাসছে সুমাইয়া।
~ এইযে শুনছেন আপনি আমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
~ কেনো আমি হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার কোন সমস্যা আছে?
~ সবার সামনে আমার লজ্জা লাগছে সাফোয়ান।
সাফোয়ান তাকালো তার স্ত্রীর পানে। কেমন লজ্জাবোধ করছে মেয়েটি। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। সানাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে সাফোয়ানের ভালোই লাগছে। সানার হাতটি কে আরো জোড়ালোভাবে আটকে ধরলো সানা৷ এভাবে খুনসুটির মধ্যে দিয়ে সপিং শেষ করলো তারা।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো। সানাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বৃষ্টি তাকিয়ে আছে সানার দিকে। সানা নিজের বিয়েতে এত পরিমান খুশি যা বলার মত নয়।তা দেখে বৃষ্টি বললো।
~ এই খুশিটা চেপে যা মেরি আম্মা নিজের ই না নজর লেগে যায়।
বৃষ্টির কথা শুনে নিজেকে কান্ট্রোল করলো সানা।
~ আরে কি বলবো তোকে কিরকম যেনো খুশি খুশি লাগছে আমার।
~ এই মেয়ে নাকি বিয়েতে রাজি ছিলো না ভাবা যায়। দেখে কেউ বুঝবে রাগ করে কার সাথে কথা বলে নাই যেই মেয়ে। শশুরবাড়ি যাওয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে জামাইকে একা ফেলে চলে আসছে আর সে এখন বিয়ে নিয়ে কি পরিমান এক্সাইটেড।
~ এভাবে বলছিস কেনো হ্যাঁ? আমি এত অল্প সময়ে ওই লোকটাকে কীভাবে যেনো ভালোবেসে ফেললাম। নিজের অনুভূতি আমি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। কখন কিভাবে এরকম হলো আমি নিজেও জানিনা। তাই বলেছি পুরনো কথা নেই তুই এখন আমাকে খোঁচা দিবি ?
সানার কোথায় হেসে ফেলল বৃষ্টি।হাসি থামিয়ে বলে উঠলো।
~আরে চিল আমি মজা করতেছি।
ওদের কথার মাঝে কাজি সাহেব চলে আসছে সানার নিতে। সানাকে যখন কবুল বলতে বলা হলো তখন সানা নিজের বাবাকে দেখে কেদে উঠলো।সানার এরকম কান্না দেখে বৃষ্টি আর সুমাইয়া ও কেদে ফেললো। সানার বাবা সানাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল।বয়ষ্ক লোকটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কতোটা কষ্টে নিজেকে শক্ত রেখেছে মেয়ের সামনে।
সানাকে দিয়ে অনেক কষ্টে কবুল বলানো হলো।
বিদায়ের সময় সবার কান্নাকাটি দেখে সাফোয়ান ভাবছে এর থেকে বউ এখানে রেখে গেলেই ভালো হতো।নিজের বোন,শশুর,বউ মেবি এবার অজ্ঞান হবে।জহির কোনোরকম বাবা থেকে সানাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসলো সানাকে।সাফোয়ান কে বললো।
~সানা আমার অনেক আদরের। ওকে দেখে রেখো। ওর যেনো কোনো সমস্যা না হয়।
~ যেদিন থেকে ও আমার স্ত্রী হয়েছে সেদিন থেকে ওর যাবতীয় সমস্যা আমি নিজের মনে করা শুরু করেছি। তাই আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আর আমার বোনের প্রতি একটু নজর দিন।
জহির চমকে তাকালো সাফোয়ানের দিকে। সাফোয়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে সেখান থেকে চলে গেলো।সাফোয়ান গাড়িতে উঠে দেখলো তার স্ত্রী কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেছে। আনমনে হেসে ফেললো দেখে।
সাফোয়ানের বাড়ি সম্পূর্ণ খালি। নিজের বেডরুম সাজিয়ে বিদায় নিয়েছে তার বন্ধুরা। নিজের জীবন সঙ্গিকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো সাফোয়ান। সানা ভাবতেও পারেনি যে বাড়িতে এতো দিন সে বেড়াতে আসতো সেই বাড়িটিই তার নিজের ঠিকানা হবে।
~ আমাদের কোনো আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমাদের সম্পর্ক না থাকার কারণে তোমার বরণ করে ঘরে তোলার হলো না।
~প্রয়োজন নেই আমি এসব মানিনা আমার কাছে এসব কুসংস্কার লাগে।
~আজ রাতে একটু কষ্ট করে এডজাস্ট করে নিয়ো আমার সাথে।আগামীকাল সকালেই তোমার ভাবি বান্ধবিরা সবাই চলে আসবে।
~ আপনি থাকলে সাথে একা কোথায়।
সাইফ ওদের মাঝে বলে উঠলো:
~ ভাইয়া তুমি কিন্তু ভাবিকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে যাবে।
সাইফের কথায় লজ্জা লাগলো সানার। সাফোয়ানের কাছে সাইফের প্রস্তাব মন্দ লাগলো না। কোলে তুলে নিলো সানাকে। সানা টাইটলি সাফোয়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো।সাইফ এসব ভিডিও করতে লাগলো। সাফোয়ান সানাকে তার রুমে নিয়ে ফুলে সাজানো সুন্দর বিছানায় বসালো। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছ্ব তার রুমট। গাধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো ঘরটিতে গাধা ফুলের গন্ধ তে ভরে আছে।
সানাকে ফ্রেশ হতে বলে সাফোয়ান আর সাইফ বেড়িয়ে গেলো কোথাও। এই ফাকে সানাও ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে একটি লাল রঙ্গের শুতির শাড়ি পড়ে নিলো। সাইফ আর সাফোয়ানের হাতে খাবারের প্লেট দেখে বুঝতে পারলো দুই ভাই খাবার আনতে গিয়েছিলো।
~ খাবার গুলো ভাইয়া গরম করে এনেছে।
~ চুপ করে খা তুই।
সাফোয়ানের ধমকে চুপ করে গেলো সাইফ। সানা ওদের দিকে না তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। খুদা লেগেছে অনেক,বাসায় খাওয়া হয় নাই তার।খাবার খাওয়া শেষ করে সাইফ প্লেট নিয়ে চলে গেলো ভাই ভাবিকে গুড নাইট জানিয়ে।
সানা আর সাফোয়ান খাটে বসে আছে। সানার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। নিজের প্রিয়তমা কে কত সাধনার পর পেলো সে।এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সানা বললো।
~ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
~ আমার সুন্দরী বউকে দেখছি।কত সাধনার পরে পেলাম তোমাকে।
~ আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন আগে কেনো বলেন নাই।
~ সব কথা সবসময় বলতে হয়না। হালাল ভাবে পেতে চেয়েছিলাম তোমাকে। আল্লাহ এর দয়ায় পেয়েছি। আজ আমার থেকে বেশি সুখী কি কেউ আছে?
~ আপনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা? সব কিছুর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
~ উহুম এক শর্তে করতে পারি।
~ কি শর্ত?
~ আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে। নামাজ পড়বে না?
নামাজের কথায় সানা হাসফাস করে তাকালো। সানার এরকম ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝলো সাফোয়ান তাই আর প্রশ্ন না করে ঘুমাতে বললো। সানা নিজ থেকেই সাফোয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। একে অপরকে দেখতে দেখতে তারা ঘুমিয়ে পড়লো।
সমাপ্ত।