#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব৬
সুমাইয়ার কথা শুনে বৃষ্টি বুঝতে পারে যে সুমাইয়া নিজেও দ্বিধায় ভুগছে।সে যে বাড়ির বউ তাকে বেশি কথা বলা মানায় না। সুমাইয়া হয়তো তাই এই কথা তোলার সাহস পাচ্ছে না।
~আমি বুঝতে পারছি আজকে বড় ভাইয়া আসলে তুমি একটু কথা বলে দেখিও এই বিষয়ে। সাফোয়ান ভাইয়া নাকি বলেছে যে তাড়াতাড়ি তাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চায় সে রাজি কিনা।
বৃষ্টির কথা শুনে সুমাইয়া সানাকে বলে,,
~তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে ভাইয়ার সাথে এই নিয়ে কথা বলো। ভাইয়া এসে তারপরে তোমার বাবা আর ভাইয়ের সাথে কথা বলবে নে।তাহলে তো কোন সমস্যা হবে না। বুঝতেই পারছ আমি যদি বেশি কথা বলি ব্যাপারটা খারাপ দেখা যায় ।
রাতে সুমাইয়ার থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে আসে বৃষ্টি।আজ রাতে সানার সাথে সে ঘুমাবে। সানা মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে।
~এভাবে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে না থেকে কল দিয়ে কথা বলে নে। এই যে নাম্বার ভাইয়ার।
সানা বৃষ্টি থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে কল দেয় সাফোয়ান কে।প্রায় ২-৩ বার রিং হওয়ার পর কল কেটে যায়। কল কেটে যাওয়ায় সানার মন খারাপ হয়ে যায়।এখন তার ফোন তুলবে না এটা ভেবে। পরক্ষণে তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে সানার মুখে হাসি ফুটে উঠে। সাফোয়ান তাকে কল ব্যাক করেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় সাফোয়ানকে সালাম দেয়,,,
~আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?
~ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
~আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি কল দিয়েছিলাম তো আপনি কেটে দিলেন যে।
~হ্যাঁ আমি তো বুঝতে পেরেছিলাম যে কলটা আপনি দিয়েছেন তাই কেটে ব্যাক করলাম। আপনার স্বামীর লক্ষ লক্ষ টাকা না থাকলেও এইটুকু আছে যে নিজের টাকা খরচ করে স্ত্রীকে ফোন করতে পারবে।
সানার মনের মধ্যে অনেক ভালোলাগা কাজ করলো।সাফোয়ানের বলা এই ছোট ছোট কথাগুলো ও অনেক আবেগপ্রবণ হয়।
~তারমানে আপনি আমার ফোন নাম্বার চিনেন। আপনার কাছে ছিল, তাহলে এতদিন আমাকে কল করলেন না কেন আপনি?
~আপনি তো আমাকে পছন্দই করেন না। তাহলে ফোন দিলে যদি রেগে যান এইভেবে দেই নাই।
~আমাকে ক্ষমা করবে না আসলে ওই দিনের জন্য। আমি বুঝতে পেরেছি আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি আপনার সাথে । আমার ওই ভাবে রিয়্যেক্ট করা উচিত হয় নাই।
~সমস্যা নাই। আমি কিছু মনে করি নাই।
~আপনি যদি কিছু মনেই না করতেন তাহলে ৯ দিন আমার সাথে যোগাযোগ না করে থাকতেন না।
সানার এই কথাটাই বুঝা যায় সে অনেক অভিমান করেছে সাফোয়ানের উপর।
~অভিমান হয়েছি বুঝি আমার উপর?
~আপনার উপর আমার অভিমান কেন হবে বলেন তো?
এতক্ষণ ধরে বৃষ্টি তাদের কথাবার্তা শুনে হাসছিলো। এরপর সানার হাতে চিমটি মেরে বলে আসল কথা বলতে।
~আসলে সাফোয়ান আমি আপনাকে একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছিলাম।
~কি বলবেন বলুন?
~ঐদিন যে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন না আমি রাজি কিনা? আপনার সেই প্রস্তাবে আমি রাজি।আপনি বাড়িতে এসে আব্বু আর ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।
সাফোয়ান অনেক অবাক হয়ে যায় যে সানা রাজি হয়ে গিয়েছে তার কথায়। সানার ও এখন একটু ভালো লাগছে সাফোয়ানের এর সাথে কথা বলতে পেরে।
বৃষ্টি এইবার ঘুমিয়ে পরলো তার পক্ষে আর সম্ভব না রাত জেগে সানার কথা শোনার। সানা আর সাফোয়ানের এই কথোপকথন অনেক রাত পর্যন্ত চললো। ভোর রাতের দিকে সানা ঘুমালো।
পরের দিন সাফোয়ান সত্যিই তাদের বাসায় এসে সানাকে নিয়ে যাবার কথা জানালো। প্রথমে সবাই অবাক হলেও পরে বুঝিয়ে বলে সুমাইয়া তাদের। কারন বাড়িতে সাইফ একা থাকে এই এক কারনেই তো মেয়ে দিয়েছিলো তিনি৷ মেয়ে যেহেতু বিয়ে দিয়েছেন তখন মেয়েকে শশুর বাড়িও পাঠাতে হবে৷ সাদিক সাহেবের মনের মধ্যে প্রচন্ড ঝড় বয়ে যাচ্ছেন। মেয়েকে না দেখে কিভাবে থাকবেন? একমাত্র এই মেয়ের মুখ দেখেই সে বেচে ছিলেন। সানাকে জন্ম দিতে গিয়েই তো তার স্ত্রী শারমিনের মৃত্যু হলো। সেই থেকেই মেয়ে তার স্ত্রীর রেখে যাওয়া আমানত, কখোনো ভুলের টোকাও লাগতে দেয় নাই। নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত করে বললো।
~তাহলে আগামী বুধবার তোমাদের অনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে পড়িয়ে উঠিয়ে দিবো সানাকে।
জহির তার বাবার কথার উপরে কোন কথা বলার সাহস পেল না। কিন্তু ভেবে পাচ্ছে না তার বাবা কিভাবে এত সহজে সানাকে তুলে দেওয়ার জন্য মেনে গেল। আসলেই কি সাফোয়ান কোন জাদু জানে নাকি?নিজের কথায় সবাইকে যেভাবেই হোক কামভেন্স করে ফেলে।
~জি আচ্ছা আঙ্কেল তাহলে আজ আমি উঠি।
~কিছু মনে করবেন না বাবা আমি বলি কি ভাইয়া আর সানার গায়ে হলুদ আমাদের বাড়ি থেকেই হোক।আর বিয়ের সব অনুষ্ঠান কারণ আমাদের বাড়িতে তো কেউ নেই গুরুজন। আমাদের কোন আত্মীয়-স্বজনের সাথেও আমাদের যোগাযোগ নাই।সাইফ আর ভাইজান এখানে থাকুক। আমরা এখান থেকেই সব অনুষ্ঠান পালন করি?
~যা ভালো বুঝো মা তাই করো তুমি।
জহিরের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সে চুপচাপ বসে আছে। কেন জানিনা আপনাকে বাড়ি থেকে যেতে দিতে চায়না। হয়তো নিজের হাতে লালন পালন করা বোন কে বিদায় দিতে পারবে না তাই।
~আচ্ছা যেহেতু আপনাদের এইরকম ইচ্ছা আজ আমি উঠি। সাইফ কে নিয়ে চলে আসবো আমি। আর কেনাকাটার জন্য কল দিলে সুমাইয়া আর সানাকে পাঠিয়ে দিবেন ভাইয়া। আমার প্রচুর ইম্পোর্টেন্ট মিটিং আছে নাহলে আমি নিজেই নিয়ে যেতাম।
~ ঠিক আছে।
মুখে ঠিক আছে বললেও জহির মনেমনে ভাবে কাজ তো সে একাই করছে। জহির নিজের সালাকে শত্রু ভাবছে। কি যে হিংসা আসলো শালা-দুলাভাইদের সম্পর্কে। অন্যদিকে দরজার আড়ালে সানা আর বৃষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো। সানা লাজুক ভাবে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আর বৃষ্টি তাকে ক্ষেপাচ্ছে।
~আহা বৃষ্টি থাম না এবার? আর কত লজ্জা দিবি আমাকে? যা ঘরে গিয়ে বসে থাক।
~ সত্যি কথা বললেই দোষ। যাইহোক আজ আমার যেতে হবে রে। আম্মাকে বাসায় একা রেখে এতোক্ষন থাকা উচিৎ হচ্ছেনা। যতোই আম্মা বলুক না কেন আমি জানি ওনার রান্না করতে সমস্যা হবে।
~ এখোনি চলে যাবি? থাক না আমার কাছে তুই।
~ তোর বিয়েতে আম্মাকে নিয়ে চলে আসবো। এখন যেতে হবে রে আমার। আম্মাকে নিয়ে আসবো আবার কথা দিচ্ছি।
~ আমি যাবো তোদের আনতে। আন্টি আর তুই ছাড়া এই অনুষ্ঠান আমার কাছে অসুসম্পূর্ণ হবেরে। নাস্তা তো করে যাবি?
~ লেট হচ্ছে আর ভাইয়ারাও কথা বলছেন বাহিরে। এখন না আমি যেতে পারবো আর না এই সময় বড়দের মাঝে তোর যাওয়া ঠিক হবে। এক কাজ করি চলে যাই বাহির থেকে নাস্তা কিনে বাসায় গিয়ে আম্মাকে নিয়ে খাবো।
~ আচ্ছা আমি তোকে রিক্সাত তুলে দিয়ে আসি।
~আচ্ছা।
বৃষ্টির চলে যাওয়াতে অনেক কষ্ট হচ্ছে সানার। বৃষ্টির ও কিছু করার নাই। তার বাবা একজন প্রবাশি। প্রবাশে একা থাকেন তার বাবা।আর বৃষ্টি তার মায়ের সাথে থাকেব। বৃষ্টির বড় ছোট ভাই -বোন নাই। বৃষ্টি একমাত্র মেয়ে তাদের। মায়ের জন্য মন আনচান আনচান করছে তার।সানা ওকে এগিয়ে দিয়ে আসে বৃষ্টিকে। তখন ভাবি এসে জানায়,,
~ বিকেলে রেডি থাকিস। আমরা শপিং এ যাবো, ঘুমিয়ে থাকিস না।ভাইজান বারবার বলেছে যাতে কিছু মিস না যায়। তোর জন্য লেইট হলে আমি ঝাড়ি খাবো এবার। বিয়ের সব কেনাকাটা আজকেউ সেরে ফেলতে চাইছে।
#চলবে?