#সূচনাতে_প্রেম
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব৪
সানা আর বৃষ্টি নিজেদের মাঝে কথা বলা শেষে সানা উশখুশ করতে লাগলো বৃষ্টি কে কিছু জানানোর জন্য। কিন্তু কিভাবে কি বলবে সে ভেবে ভেবে পাচ্ছে না। বৃষ্টি সানার এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে,,
~কিছু কি তুই আমাকে জানাতে চাচ্ছিস তা বলতে পারছিস না?
বৃষ্টি সানাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোভাবে চিনে জানে।তাইতো সে সানার এইরকম অবস্থা দেখে সে বুঝে ফেলল। সানা এবার চুপচাপ বৃষ্টিকে সব কথা খুলে বলতে লাগলো। সব কথা শুনে বৃষ্টিও শকড হয়ে গেলো।সানার বিয়ে হয়ে গেছে এই কথাটা সে জানে না এটা ভেবে আর খারাপ লাগতে শুরু করলো। বেস্ট ফ্রেন্ড বোন সবকিছুই তারা একে অপরকে মানে অথচ এমন দিন এসে সানার পাশে থাকতে পারলো না। সানার কাছে সব ঘটনার বর্ণনা পেয়ে বৃষ্টি নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। এমন পরিস্থিতিতে সে সানাকে বেস্ট উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করবে। যেহেতু বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেহেতু উচিত ভালোভাবে সংসার করা।
~দেখ সানা আজ আমি তোকে কিছু কথা বলব, তুই যদি আমাকে ভুল বুঝিস তাহলে আমার কিছু করার নাই। আমি সব সময় চাই তোর ভালো হোক। তোকে হাসি খুশি দেখতে চাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা। তাই আমি যা বলব তুই মন দিয়ে শোন।
বৃষ্টির এমন গম্ভীর কথার মানে বুঝতে পারল না সানা।এতটা সিরিয়াস ভাবে বৃষ্টি কখনো সানার সাথে কথা বলেনি।
~তুই জানিস আমি তোর প্রতিটা কথা শুনি। তোর বলা কথা মানার চেষ্টা করি। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসোস।
~তাহলে আমার কথা মেনে নে।তোর তো অন্য কোথায় কোন সম্পর্ক নাই সানা।আঙ্কেলের কথা শুনে যখন বিয়েটা করে নিয়েছিস তখন এরকম বাচ্চামো তোকে মানায় না। সাফোয়ান ভাইয়ার কথাও বোঝার চেষ্টা কর। উনি সারাদিন অফিস করেন ব্যাচেলার মানুষ রান্না করতে কষ্ট হয় তার উপর সাইফের দেখাশোনা। যেহেতু তুই তার বউ এইসব দায়িত্ব তোর। তোদের বিয়ের আজ ১৬ দিন হতে চললো অথচ তোর সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। এভাবে চলতে থাকলে তো হবে না। ভাইয়া যেভাবে তোকে বুঝবে সে ভাবে তাকেও তোর বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আবার যদি কথা উঠে তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার তখন দ্বিমত পোষণ করিস না । বিয়ের বন্ধন অনেক পবিত্র একটা জিনিস। নিজেদেরই সম্পর্ককে আর হেলাফেলা করিস না। মানার চেষ্টা কর। এমন তো না যে তুই অন্য কাউকে ভালবাসতিস তাই তাকে মেনে নিতে পারছিস না।
বৃষ্টির প্রতিটা কথা যুক্তিপূর্ণ। বৃষ্টি যে সব সময় তাকে ভালো বুদ্ধি দেবে তা সানা খুব ভালোভাবে জানে। এই একটা মেয়েকে পেয়ে এসে সব সময় ব্লেসড ফিল করে।
~আমি এই জিনিসগুলো নিয়ে দোটানায় ভুগছিলাম এতদিন। ঠিকঠাক ভাবে নিজের প্রশ্নগুলোর উত্তর পাচ্ছিলাম না। আমি জানতাম একমাত্র তুই আমাকে রাস্তা দেখাতে পারবি।
~তা ভাবছিস এখন তুই কি করবি?
~কিন্তু আমি যা ভাবলাম সেই কথা কিভাবে বলব?
~তার কথা পরে আগে তো আমাকে বল কি ভাবলি তুই?
~আমি উনার সাথে তাদের বাসায় যেতে রাজি। কিন্তু এই কথা আমি মুখ ফুটে কিভাবে বলব বল? আমার লজ্জা করছে। তারপরে আবার উনি আমার উপর রাগ করে নয় দিন যাবত কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি। আর আমিও চেষ্টা করিনি অপরাধবোধ থেকে।
~বাসায় যাবি গিয়ে সুমাইয়া ভাবীর সাথে আলোচনা করবি এবং উনাকে দিয়ে সবাইকে বলাবি। যেহেতু ভাইয়ার বাবা-মা নেই এই সংসারের দায়িত্ব এখন তোর। কারণ তুই তাদের বাড়ির একমাত্র বউ।
~আচ্ছা আমি করবো নে। যাওয়া যাক তোর জন্য ফোন কিনতে আজ আর ক্লাস করা হবে না।
~আচ্ছা চল যাও যাক।
বৃষ্টির কোথায় সানার মন অনেক ভালো হয়ে গিয়েছে। মনের মধ্যে চলা সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব মুক্তি পেয়েছে । সে বুঝে গিয়েছে এখন তার কি করতে হবে । তাই সে বৃষ্টিকে আজ ট্রিট দিবে।
বৃষ্টি কে নিয়ে চলে গেল একটা মোবাইল শপে। সেখানে তারা মোবাইল চুজ করছিল। তখন পাশে কারো আওয়াজ পেয়ে সানা চমকে যায়। কারণ আওয়াজটি আর কারো নয় স্বয়ং সাফোয়ান শিকদারের। সানা যখন পাশে তাকিয়ে দেখে তখন সেখানে সাফোয়ান এর সাথে আরো একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। সাফোয়ান মাত্রই খেয়াল করলো সানাকে এই দোকানে। সেও অবাক, কারন সানার আজ না কি দরকারি ক্লাস ছিলো তাই কলেজ গিয়েছে। এমনটাই শুনেছিলো সে। সাফোয়ানের সাথে থাকা ছেলেটা সানাকে চিনতে পেরেছে। বিয়েরদিন সে ছিলো সাফোয়ানের সাথে। সানা তো নিজের ভাবনায় ব্যাস্ত থাকায় কিছুই খেয়াল করেনি সেদিন।
~আসসালামু আলাইকুম ভাবি! কেমন আছেন আপনি?
লোকটির সালামে অপ্রস্তুত হয়ে যায় সানা। সে তো সাফোয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
~ ওয়ালাইকুমুস সালাম!আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
~ আলহামদুলিল্লাহ ভাবি। আপনি যে এখানে আসবেন সাফোয়ান তো জানায় নি আমাকে।
~ উনি জানতেন না যে আমি আসবো। আমার বেষ্টফ্রেন্ড ফোন কিনতে হবে তাই আসা।
~ওহ আচ্ছা। আমি আবান আহমেদ আরিজ। সাফোয়ানের বেষ্টফ্রেন্ড।
বৃষ্টি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছিল কোন কথা বলছিল না। সাফোয়ান আর বৃষ্টি এরা দুইজনে নির্বাক শ্রোতা সানা আর আবানের কথার মধ্যে। এদের কথা থামিয়ে সাফোয়ান বলে ওঠে,
~যেই কাজের জন্য আসে সেই কাজ কর তুই। আর আপনারা মোবাইল কিনে নেন এরপর আমরা একসাথে বের হব।
কথা শেষ করে বৃষ্টি আর সানাকে রেখে সাফোয়ান আবান কে নিয়ে চলে যায় ম্যানেজারের কাছে। সাফোয়ানের মুখটা প্রচন্ড গম্ভীর ঠেকছে কথাগুলো কেমন রুড লেগেছে তার কাছে।
~ভাই তোর জামাই তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর । এমন জামাই থেকে দূরে দূরে কিভাবে থাকোস বইন?
~ছি বৃষ্টি কি ধরনের কথাবার্তা হ্যাঁ? তুই না ছেলেদের দিকে তাকাস না।আজ আমার জামাইর দিকে তাকালি কাহিনী কিতা?
বৃষ্টি সব সময় পর্দা মেইনটেইন করার চেষ্টা করে। কলেজে গেলেও কখনো তার চেহারা কেউ দেখেনি। একমাত্র কয়েকজন মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়া। কয়েক বছর যাবত বৃষ্টি এই ইসলামিক জীবনযাপন করা শুরু করেছে। তাই সানাও সর্বদা চেষ্টা করে তেমন পরিবেশ দেওয়ার। যাতে বৃষ্টির কোন হেজিটেশন না হয়। এই কারণে যখন আবান আর সানা কথা বলছিল তখন বৃষ্টি চুপ ছিল। যাতে তার আওয়াজ তারা শুনতে না পারে ।
~শোন ভাই ভুলে একবার তাকিয়ে ফেলেছিলাম আর এটা জায়েজ আছে। তোর জামাইয়ের দিকে ভুলে তাকিয়েছি হ্যাঁ? যদি কোন ছেলের দিকে প্রথমবার ভুলে চোখ যায় তাহলে সেই টুকু আল্লাহ মাফ করে দিবেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার যদি নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখি তাহলে সেটা জিনা হিসেবে ধরা হবে ।আচ্ছা বাদ দে এসব এখন। আমি তো ভাইয়াকে বলতে পারবো না যে তাদের সাথে আমি গিয়ে কথা বলতে পারব না তাদের সামনে খেতে পারবো না। আমি জানিনা কিভাবে ভাইয়াকে না করবি তুই যে আমি তাদের সাথে যেতে পারবো না।
~আমি কিভাবে না করব? যদি কিছু মনে করে।তারা নিজ থেকে বলেছে তাহলে একটু চল।তাদের সামনে নিকাব খোলাও লাগবে না আর কথা বলাও লাগবেনা। আমি আর তুই আলাদা বসবো তার আলাদা বসাবো এইটুকু করতে পারব।
~বুঝেশুনে করিস কিন্তু আমি বারবার বলছি। বুঝার চেষ্টা করিস আমাকে। তোর কথার উপর বিশ্বাস করে কিন্তু আমি রাজি হচ্ছি যাওয়ার জন্য
সানা আর বৃষ্টির ফোন কেনা হয়ে গেলে তারা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন সাফোয়ান রা আসবে।
#চলবে.?