#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
চার মাস পর~~~~~
অনুর রেজাল্ট দেওয়ার বেশ কিছুদিন পর সে চাকরীর জন্য এপ্লাই করে৷অফিসে যাওয়ার পর টেক্সটাইল কোম্পানির ম্যানেজার অনুকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে পরিক্ষা করছে৷ কয়েক ধরনের কাজ দিয়েছে ওকে যেমন,, পোষাকের নকশা বানানো,পোষাকের রং নির্নয়, পোষাকের ধরন ঠিক করা,একটি নির্দিষ্ট পোষাক তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরনের কাপড় ব্যবহার করা হবে তা ঠিক করা,পোষাক তৈরিতে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে তার হিসাব তৈরি করা,চলতি ফ্যাশন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখা৷
অনুকে সবকিছু পরিক্ষার জন্য দেওয়া হলো৷ অনু পোষাকের বর্ননা করে তার সাথে ম্যাচ করে সুতো, পাথর রাখছে৷ কোন কালার সুতার সাথে কোন কালার কাপড় বেস্ট ওগুলোর বর্ননা দিচ্ছে৷ সিম্পল,গর্জিয়াস ড্রেসে কতো টাকা ইনভেস্ট হতে পারে তার হিসাব দিচ্ছে৷ কোন ফ্যাশন এখন বেশি জনপ্রিয়তা,,কোন ফ্যাশনে ড্রেস বানালে কোম্পানির লাভ হবে সেগুলো ম্যানেজার আর টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক কে বলছে
৷ টেক্সটাইল কোম্পানির মালিকের সব থেকে ভালো লেগেছে অনুর রুচিশীলতা দেখে৷ অনুকে অনেক গুলো ড্রয়িং দিয়েছে,, অনু একেকটাতে একেক রকমের ড্রো করেছে৷ বিভিন্ন ধরনের মানুষের জীবনযাত্রা চিন্তাভাবনা ও রুচির কথা চিন্তা করেই ড্রো করেছে৷সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা ও আঁকাআঁকিতে দক্ষ হওয়ায় তেমন সমস্যা হয়নি ওর৷
অনুর কাজ দেখে সবাই খুব খুশি৷ টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক চাইছেন অনু যেনো কাল থেকেই জয়েন করে৷ অনুর মতো দক্ষ আর পটু ফ্যাশন ডিজাইনারই নাকি খুঁজছিলেন উনি৷
অনুও খুশি মনে বেড়িয়ে আসলো সেখান থেকে৷ প্রথমবার এসেই চাকরী কনফার্ম হয়ে যাবে সেটা কখনো ভাবেনি৷
“আর এক বা দুই বছর পর আমিও আবিরের নামে টেক্সটাইল খুলবো, শো রুম ওপেন করবো৷ শহরের একজন নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনার হবো৷ হে আল্লাহ্ তুমি আমার স্বপ্নটা পুরন করো প্লিজ৷
অনু নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর কিছু দূর এগোলেই গাড়ির দেখা মিলবে৷ রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ফোন চেক করছে আবির ফোন দিয়েছে কী না? আজ ও বাংলাদেশে ফিরেছে তাই তারাতাড়ি যেতে হবে৷
“হ্যালো মাই সুইট সিস্টার৷ কী খবর?
.
অনুর চাচাতো ভাইয়ের কন্ঠ শুনে পাশে তাকালো সে৷ সেখানে আকাশ আর ওর চাচাও আছে৷
.
“একি তোমরা এখানে? কী চাই?
.
চাচাঃতোকে৷
.
ওয়াট৷ পাগল হয়ে গেছো তোমরা হে৷
.
হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি৷ যতক্ষণ না তোকেও তোর বাপের মতো উপরে পাঠাচ্ছি ততক্ষণ আমরা পাগলই থাকবো৷
.
কী যা তা বলছো প্রোপার্টি তো পেয়ে গেছো তাহলে এবার আমাকে কেনো উপরে পাঠাতে চাইছো?কী ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের?
.
কারন যতদিন তুই থাকবি ততদিন আমাদের শাস্তি একেবারে নিশ্চিত৷ তো তাই তোকে উপরে পাঠিয়ে দিবো৷ তুই যদি না থাকিস তাহলে আমাদেরকে কে শাস্তি দিবে হুম?
.
আকাশ আর অনুর চাচাতো ভাই যেমনি অনুকে ধরার জন্য ওর দিকে এগোতে যাবে ওমনি ওদের মধ্যখানে একটা কার ঢুকে গেলো৷ কার দেখে ওরা ভ্রু কুঁচকালো৷
আবির কার থেকে নেমে এলো৷ ওকে দেখে সবাই দুই কদম পিছিয়ে গেলো৷
চাচাঃএটা কে আর মধ্যখানে কেনো ঢুকেছে এতো রাস্তা রেখে?
.
চাচাতো ভাইঃআরে চিনোনি ও ওইতো টপ বিজনেস ম্যান আবির রায়হান চৌধুরী৷
.
আবির কারে হেলান দিয়ে সানগ্লাস শার্টে গেঁথে বললো,,,
“আরেহ্ বাহ্ শালাবাবু৷ কতো সহজে নিজের বোনের বরকে চিনে গেলে হুম৷ তা সোয়াগকে সোয়াগাত করবেনা?
.
কিসের সোয়াগ আর কিসের সোয়াগাত আমি তোমাকে ওয়েলকাম জানাতে পারবোনা ওকে৷আর দেখো এখান থেকে ভালোই ভালো কেটে পড়ো৷ এটাই তোমার জন্য মঙ্গল হবে৷
.
আমি খুব ভয় পেয়েছি৷ আমার খুব ভয় করছে দেখেন রীতিমতো হাত পাও কাঁপছে৷ অনু তুমি থাকো আমি গেলাম৷
কথাটা বলে আবির পিছনে ইশারা করলো৷পিছন থেকে কয়েকটা ছেলে এসে ওদের ধরে নিলো৷
চাচাঃএই কী করছেন আপনি?আমাদের কেনো ধরালেন?ছাড়ুন বলছি৷ আপনি জানেনও না আমরা কী করতে পারি!!
.
আবিরঃব্যস!!! জানি আমি আপনারা কী করতে পারেন৷ কী করবেন মেরে ফেলবেন এটাইতো তাহলে মারুন৷ আমিও দেখি আপনাদের কতটা পাওয়ার৷
এই নিয়ে যাও এদের৷ আর যেখানে বলেছিলাম ঠিক সেখানেই রাখবে পালাতে যাতে না পারে৷
.
ছেলেগুলো ওদের সবাইকে টেনে হিচরে কারে তুললো৷
ওরা চলে যাওয়ার পর অনু আবিরের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো৷
.
“আপনি কী করে জানলেন আমি এখানে আছি আর আমার বিপদ আছে?
.
তুমি কী ভাবলে আমি বাহিরে থাকি বলে তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনা হুম?
.
কথাটা সেটা নয়৷
.
বুঝেছি৷ ওই যে ছেলেগুলো ওদের কে আমি রেখেছি যাতে তোমার উপর নজর রাখে৷ দুইদিন হবে এদের রেখেছি৷ দেখলে তোমার বিপদের ঘন্টা বেজে গিয়েছিলো৷ওরা আমাকে জানিয়েছে যে তোমাকে কিছু পুরুষেরা বিরক্ত করছে৷ আমি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আসছিলাম যখন ওরা আমাকে বললো তখন খুব তারাতাড়ি ড্রাইভ করে আসলাম৷
আচ্ছা বাসায় চলো এখন৷
আবির আর অনু বাড়িতে চলে গেলো৷
🍁
রাতে~~~~
“চাচা ওদের সবাইকে কোথায় রাখলেন?
.
আবির সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলো অনুর কথা শুনে ওর দিকে তাকালো৷
.
কেনো বলোতো?
.
এমনি!!!
.
আমাদের গোডাউনে৷
.
ওহ্৷
.
তোমার কী ওদের জন্য খারাপ লাগছে?
.
নাহ!!!এসব কী বলছেন?ওরা আমার বাবার খুনি ওদের জন্য খারাপ লাগতে যাবে কেনো?
.
ওহ আমি ভাবলাম আরকি?
.
আবিরের ফোন বাজছে৷
“অনু ফোনটা একটু এনে দাও তো৷
অনু ফোন নিয়ে আবিরের কাছে দিলো৷
.
“হ্যালো!!!
.
ভাইয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে৷
.
কী হয়েছে?
.
আপনি যাদেরকে বন্দী করার কথা বলেছিলেন তাদের মধ্য দুইজন মার্ডার হয়ে গেছে৷
.
কী বলো?কিন্তু কে খুন করলো৷
.
আকাশ খুন করেছে৷ ও খুন করে পালিয়ে যেতে চাইছিলো তার আগেই আমরা ওকে ধরে ফেলেছি৷
.
গুড৷ যাই হয়ে যাক খুনিকে কিছুতেই ছাড়বেনা৷ ওকে শাস্তি আইন দিবে৷ রাখছি আমি৷
.
আবির ফোন রেখে অনুর দিকে তাকালো৷
“কী হয়েছে?
.
তোমার চাচা আর চাচাতো ভাই খুন হয়েছে৷ আর কে খুন করেছো জানো আকাশ!!
.
কীহ!!!
.
হুম৷
.
দেখলেন খুনের বদলে খুন৷ দুনিয়া বদলার জায়গা৷ ওরা ওদের শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়ে গেছে৷
🍁
পাঁচ বছর পর~~~
আবির ওর চার বছরের মেয়ে অনিতা আর ছেলে আদিব কে রেডি করে দিচ্ছে৷
আবির অনিতাকে চুল আচড়ে দিচ্ছে আর সে বারবার চুল এলোমেলো করছে৷
অনিতাঃপাপা তুমি পঁচা আমার চুলও বেঁধে দিতে পারোনা৷
কোন কাজের না তুমি৷
.
“এভাবে বলে না মা৷ পাপা কষ্ট পাইতো৷
.
আদিবঃপাপা তুমি আমার শ্যু লেইস লাগিয়ে দিলে না কেনো?
.
আবির আদিবের জুতোর ফিতে লাগিয়ে দিলো৷
“এখন হয়েছে?
.
ইয়াপ৷
.
অনিতাঃপাপা আমার চুল৷
.
ইশশশ কোথাই যাই আমি৷ অনু তুমি যদি থাকতে তাহলে আজ আমাকে এসব করতে হতো না৷
.
কী হলো পাপা আমার চুল ঠিক করে দাও৷
.
আবির অনিতার মাথায় ঝুটি বেঁধে দিলো৷
“এখন হয়েছে?
.
হ৷
.
আদিবঃকী হয়েছে যেনো মনে হচ্ছে মাথায় একটা তাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে৷
.
পাপা ওকে বলো যাতে আমাকে পিঞ্চ না করে৷
.
হয়েছে এবার তারাতাড়ি চলো৷
.
অনিতাঃপাপা মাম্মাম কোথায়?মাম্মাম আসেনা কেনো?
.
চলে আসবে মামনী এখন তারাতাড়ি চলো লেট হয়ে যাচ্ছে তো৷
.
[অনিতা আর আদিব আবির আর অনুর ছেলে মেয়ে৷ জমজ হয়েছিলো ওরা]
চলবে♥️