#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১০
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
এই মেয়ে তুমি এতক্ষন আমার ছেলের রুমে কী করছিলে হ্যাঁ? কী এমন দরকার তোমার আমার ছেলের সাথে যে এতো সময় তার সাথে কাটিয়ে আসলে৷
অনু উনার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো৷ আবিরের মা অনুর দিকে আরও এগিয়ে এসে বললেন,,,কী হলো বলছোনা কেনো?
অনু তবুও কিছু বলছেনা মাথা নিচু করেই আছে৷ আবিরের মা এখন একেবারে অনুর কাছেই চলে গেলেন৷ অনু রীতিমতো কাপঁছে৷ যদি আবিরের মা মারেন এটা ভেবে৷চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে ভয়ে৷
আবিরের মা অনুর থুতনি উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিলেন৷ তারপর মৃদু হেঁসে বললেন,,বোকা মেয়ে কাঁদছো কেনো হুম?ভয় পেয়েছিলে বুঝি?আরে আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম৷ আমি জানি তুমি কে?
অনু এবার আবিরের মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালো৷ উনি জানেন মানে?
হুম আমি জানি তুমি কে?তুমি হলে আমার আবিরের ভালোবাসার মানুষ, মনের মানুষ৷ যাকে আবির ছয় বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবেসে এসেছে৷ তুমি যখন আমাদের বাড়িতে এলে তখন তোমাকে চিনতে আমাদের লেট হয়নি৷ আবির তোমার ছবি অনেক আগেই আমাদের দেখিয়েছিলো৷
আবির রুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখলো ওর মা আর অনু হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ আবির পকেটে দুই হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে একটা এটিটিউড নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
.
আবিরঃআরেহ্ বাহ অনু,আমার মায়ের মনও জয় করে নিলে ওয়াও৷
.
আবিরের মা আবিরের দিকে এগিয়ে এসে ওর কান মুলে ধরলেন৷
.
আউচচচচ!!!মা কী করছো লাগছে ছাড়ো!!
.
আবিরের মা কান ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,আমার রোমান্টিক ছেলে,আজ যখন অনু তোমার রুমে গেলো তখন তোমার চিৎকার কই ছিলো হুম৷
.
মা অনু, ওর হাসবেন্ডের রুমে ঢুকেছে তাতে চিৎকার করার কী আছে আজব?
.
অনুঃআপনি আমার হাসবেন্ড কোনদিন থেকে হলেন৷ এখনও হননি যখন হবেন তখন বইলেন৷
.
এক্সাক্টলি!! আচ্ছা তোমরা নিচে এসো আবির তোমার বাবা আর দাদিমা তোমাদের দুজনের সাথে কথা বলতে চাইছেন৷
আবিরের মা চলে গেলেন৷ আবির আর অনুও দেড়ি না করে নিচে চলে গেলো৷
🍁
বাবাঃতাহলে আবির শেষে অনুকে পেয়েই গেলে,তা কী সিদ্ধান্ত নিলে তোমরা দুজন?
.
আবিরঃমানে কীসের সিদ্ধান্ত বাবা?
.
মাঃবিয়ের সিদ্ধান্ত৷
.
আবিরঃওয়াট?বিয়ে মানে?
.
দাদিমাঃআবির তুমি কোনো বাচ্চা মানুষ নও যে বিয়ে মানে বুঝতে পারছোনা?
অনুর মা বাবা নেই, এখন অনুর যদি কারও সাথে দুঃখ কষ্ট শেয়ার করতে পারে সেটা একমাত্র তুমি৷ অনুর জন্য এখন একটা শক্ত হাতের খুব দরকার৷ ওকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারও হেল্পের দরকার৷ আর তুমিই পারো ওকে হেল্প করতে৷জানো তো এই পৃথিবীতে এখন মানুষের হেল্প পাওয়াটা সহজ ব্যাপার নয়৷
আবির আমি আর তোমার মা বাবা চাচ্ছি তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিতে৷এবার তোমাদের মতামত জানাও৷ তাছাড়াও বয়স তো কম হয়নি ছাব্বিশ হয়ে গেছে অলরেডি৷
.
বাবা, মা,দাদিমা আমি রাজী কিন্তু অনু রাজী কী না সেটা জানিনা৷
.
মাঃঅনু তুমি রাজী নও?
.
অনু কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা৷ ওর মন বলছে বিয়েতে রাজী হতে কিন্তু মস্তিষ্ক না করছে৷ অনু কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো৷ তারপর কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে বললো,,,আমি রাজী৷
.
দাদিমাঃআলহামদুলিল্লাহ!!! তাহলে আরকি আমরা আজ রাতেই কাজী ডাকছি৷
.
আবিরঃআজ রাতেই বিয়ে হবে নাকি৷
.
বাবাঃহ্যাঁ আজ রাতেই৷ অনুর সিদ্ধান্ত আমরা জেনে গেছি সো আর লেট করতে চাইনা৷
এটাই ফাইনাল আজই তোমাদের বিয়ে হচ্ছে তাহলে৷ আর ঘরোয়া ভাবেই হবে৷ কাউকে জানাবো না এখন৷ বাড়িতে প্রেসের লোক বিনা নিমন্ত্রণে এসেই হামলে পরবে অনুকে নিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করবে৷ তিল কে তাল বানানোই এদের স্বভাব৷ পরবর্তীতে অনুষ্টান বড় করে করা যাবে৷ এটা আমাদের মতামত এবার তোমাদের কোনো মতামত থাকলে বলতে পারো৷
.
না বাবা আমার কোনো মতামত নেই৷
.
আবিরের মা অনুকে উনার রুমে নিয়ে গেলেন৷
“অনু তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি৷
.
না আন্টি তার দরকার নেই৷ আমার খিদে নেই৷
.
চুপ করো মেয়ে তোমার খিদে পেয়েছে কী না পেয়েছে সেটা তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে৷
.
আবিরের মা খাবার এনে অনুকে সুন্দর ভাবে খাইয়ে দিলেন৷
🍁
রাতে~~~~
অনুকে একটা কাতান শাড়ি আর কিছু গয়না পড়ানো হয়েছে৷ অনু নিজেকে বার বার আয়নাতে দেখছে৷ আজ থেকে ও আবিরের স্ত্রী হয়ে যাবে ভাবতেই মনের ভিতরে একটা আলাদা শিহরন বয়ে যাচ্ছে৷ তবে আজ তার বাবাকেও খুব মনে পড়ছে৷ বাবা থাকলে কতই না খুশি হতেন নিজের একমাত্র মেয়েকে বধু রুপে দেখে৷
কিছুক্ষণ পর আবিরের মা এসে অনুকে নিচে নিয়ে গেলেন৷অনু সিড়ি বেয়ে যতই নিচে নামছে ততই যেনো ক্রমশ ওর মনের ধুকপুকানি বেড়েই চলছে৷
অনুকে আবিরের পাশে বসানো হয়েছে৷আবির বার বার আড়চোখে অনুকেই দেখছে৷
🍁🍁🍁
ইসলামিক সব নিয়ম কানুন মেনেই ওদের বিয়ে হয়েছে৷ আবিরের মা অনুকে নিয়ে আবিরের রুমে দিয়ে গিয়ে চলে গেলেন৷ অনু তো রুম দেখে হা৷ কী সুন্দর ফুল দিয়ে মশারী ডিজাইনে সাজানো হয়েছে ফুলসজ্জার খাট৷ শুধু গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে৷ খাটের মধ্যখানে আবার বকুল ফুলও আছে৷ সবই অনুর পছন্দের৷ অন্য কিছুর ব্যবস্থা না হলেও এটার ব্যবস্থা ভালোই করা হয়েছে৷
দরজা খুলার শব্দে অনু পিছনে তাকালো৷ আবির এসেছে হাতে একটা প্লেট আরেক হাতে শরবতের জগ নিয়ে৷
অনু ভ্রু কুচকে এগিয়ে গেলো আবিরের দিকে৷
এসব কী?
.
কীসব?
.
আপনার হাতে৷
.
ও এই সব মা দিয়েছেন মিষ্টি মুখ করার জন্যে৷
.
ও তাই৷ ঠিকাছে৷ আগে দরজা বন্ধ করুন৷
.
আবির দরজা বন্ধ করলো৷ অনু আবিরের হাতে কাটা চামচ তুলে দিয়ে বললো,,,নিন আমাকে মিষ্টি মুখ করান জলদি৷
.
এত তাড়া?
.
হু৷
.
আবির একটু মিষ্টি নিয়ে অনুর মুখে দিলো৷ অনু নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আবির বুঝতে পারছেনা অনুর এমন তাকানোর মানে৷
কী হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
.
চামচটা আমার কাছে দিন৷
.
কেনো?
.
দিন আগে তারপর বলছি৷
.
অনু আবির যতটুকু মিষ্টি দিয়েছিলো অনু তার চাইতেও এক গুন কমিয়ে ওকে মিষ্টি দিলো৷
.
এটা কী হলো?
.
কী হলো?
আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি৷
.
নাথিং৷
অনু মিষ্টি গপাগপ করে খেতে লাগলো৷
জানেন আমার না ছানার মিষ্টি খুব ফেভারিট৷ এই মিষ্টিটাই খাই৷ তাই এখনও খাচ্ছি কিছু মনে করবেননা হ্যাঁ৷
অনু খাচ্ছে আর বকবক করছে৷ আবির বেচারা শরবত খেয়ে নিজেই নিজের মিষ্টি মুখ করছে৷
অনু মিষ্টি খাওয়াতে এতটাই মগ্ন ছিলো যে আবির কখন ওর পাশ থেকে উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো সেটাই টের পায়নি৷
একি আবির কোথায় গেলো৷
আবির!!আবির!!কোথায় আপনি৷
অনু ডাকছে বাট আবিরের কোনো রেসপন্স নেই৷
অনু ব্যালকনিতে যেতেই দেখলো আবির রেলিঙে হাত দিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷
অনু আবিরের কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো৷
কী হয়েছে??
.
কিছুনা৷ শুয়ে পড়ো যাও৷
.
আপনি শুবেন না??
.
না পরে৷
.
আমি এখন শুবো না আপনার সাথে চন্দ্র বিলাশ করবো আর গল্প করবো৷
.
আমার মুড নেই অনু৷ প্লিজ তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো৷
.
না আমি যখন বলেছি তখন গল্প করে তবেই শুবো হু৷
.
বললাম না গিয়ে শুয়ে পড়ো এক কথা বার বার বলতে হয় কেনো তোমায়?সব কিছুর জন্যই একটা মুড দরকার বুঝেছো৷ আমার এখন গল্প করার মুড নেই৷ (হাল্কা ধমক দিয়ে)
.
আপনি আমার সাথে এমন করে কেনো কথা বলছেন? আমি কী কোনো দোষ করে ফেলেছি?প্লিজ দোষ করে থাকলে বলুন আমি শুধরে নিবো তারপরও রাগ করবেননা(ছলছল চোখে)
.
তুমি কোনো দোষ করোনি৷ যাও শুয়ে পড়ো৷
.
অনু কেঁদে দিলো৷ কাঁদাটা যেনো এখন ওর নিত্যদিনের সঙ্গি হয়ে গেছে৷
“এখন আর কেউ আমাকে ভালোবাসে না৷ থাকবো না আর এই পৃথিবীতে একে বারে চলে যাবো সবাইকে ছেড়ে তখন সবাই বুঝবে হু৷
অনু বকবক করে ব্লাঙ্কেট টেনে শুয়ে পরলো৷
.
ধ্যাত ওকে বকে আমিও শান্তিতে থাকতে পারিনা৷ কেনো যে অতীত কে মনে করতে গেছিলাম৷ যাই ম্যাডামের রাগ ভাঙাই আগে৷
.
আবিরও গিয়ে অনুর পাশে শুয়ে পরলো৷ অনু বুঝতে পেরে আরেকটু সরলো৷আবির অনুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারছেনা৷ অনুর গায়ে হাত দিচ্ছে তো আরেকবার সরাচ্ছে৷ এভাবে অনেক্ষণ করে শেষে অনুকে জড়িয়েই ধরলো৷
.
রাগ করেছো জানেমন?
.
ছাড়োন আমাকে৷ কেনো এসেছেন আমার কাছে?(ভাঙা গলায়)
.
কেমন বউ তুমি হ্যাঁ স্বামীর রাগও ভাঙাতে জানোনা?
.
আবির অনুর গা থেকে ব্লাঙ্কেট সরিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো৷
.
এই এই কী করছেন নামান নামান আমাকে বলছি৷
.
আবির অনুর কথায় কর্নপাত না করে ওকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো৷
.
তুমি না গল্প করতে চাইছিলে৷ শুরু করো৷
.
মুড চলে গেছে শখও মিটে গেছে৷
.
হঠাৎ মুড চলে গেলো?বকেছি সেই কারনে?
.
না৷
.
তাহলে কী নতুন কোনো মুড এড হলো নাকি৷ (ভ্রু নাচিয়ে)
.
একদম না
.
আচ্ছা৷
আবির ওর পকেট থেকে একটা বক্স বেড় করলো৷
.
এটা কী?
.
রিং৷ তোমাকে তো রিং পরাইনি৷ আমি এই রিং আমেরিকা থেকেই অর্ডার দিয়ে বানিয়ে এনেছিলাম৷
.
আবির অনুর হাত টেনে ওর অনামিকা আঙুলে রিং পরিয়ে দিলো৷
.
পছন্দ হয়েছে?
.
খুব৷ থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর রিং গিফট করার জন্য৷
.
হুম৷ তা আমি তো তোমাকে গিফট করলাম৷ তোমার ওতো উচিত আমাকে কিছু গিফট করা তাই-না৷
.
কিন্তু আমার কাছে যে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই৷
.
কে বলেছে দেওয়ার মতো কিছু নেই?আমার টা আমি নিয়ে নিবো(চোখ টিপ দিয়ে)
.
অনু মুখ ফিরিয়ে নিলো৷ আবির এগিয়ে এসে অনুকে আবারো কোলে তুলে নিলো৷
“কী দিবেনা আমাকে উপহার?
.
অনু মৃদু হেঁসে লজ্জায় আবিরের বুকে মুখ লুকালো৷ অনুর লজ্জা পাওয়ার কারন অনুর সম্মতি৷আবিরও বুঝে গেলো৷সে মুচকি হেসে অনুকে নিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে গেলো৷
চলবে♥️
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ ]