#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৭
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
পরেরদিন~~~~
আবির আর রিমি একটা কফিশপে বসে আছে৷ রিমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আর আবির কপালে হাত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷
রিমিঃআশ্চর্য৷ আমাকে কেনো এনেছেন খবর দিয়ে এখানে? আর এনেছেন তো এনেছেন কিছু বলছেননা কেনো?আমাকে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে৷
আবির কপাল থেকে হাত সরিয়ে রিমির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো৷
“তোমায় আমাকে সাহায্য করতে হবে৷
.
সাহায্য! কী ধরনের সাহায্য?
.
তুমি তো অনুর বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই-না৷ তুমি নিশ্চয় জানো অনু কোথায় থাকে?৷
.
হ্যাঁ জানিতো অনুতো অনুর বাড়িতেই থাকে(জেনেও না জানার ভান করে)
.
না অনু ওর বাড়িতে নেই৷ আমি গিয়েছিলাম সেখানে অনুর চাচী বললেন,অনু নাকি আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে গেছে আর অনুর বাবা সেটা সহ্য করতে না পেরে হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন৷
.
ছিঃ মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে এতো নিচ কথা বলতে পারে৷ অনু কোনো ছেলের হাত ধরে যায়নি বরং ওকে ওর বাড়ি থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে৷ আর অনুর বাবা অনুর জন্য হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাননি উনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে৷আর অনুর বিয়ে দিয়েই শুরু হয় ষড়যন্ত্র৷
.
অনুর বিয়ে মানে?
.
অনুর বিয়ে ঠিক ছিলো সেদিন যেদিন ওর বাবাকে হত্যা করা হয়৷
.
ও রাজী ছিলো বিয়েতে৷
.
হুম৷
.
আবির কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেলো৷ অনু ওর উপরে রাগ করে বিয়ে পর্যন্ত করতে চাইছিলো৷
.
কিন্তু কে মেরেছে উনাকে? আর অনুর চাচা চাচী খুনিকে ধরতে পারেননি?
.
রিমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,যে জায়গায় অনুর চাচা চাচী নিজেই খুনি সেই জায়গায় উনারা খুনিকে কীভাবে ধরবেন৷
.
কীহ!!! অনুর চাচা চাচী উনাকে খুন করেছে নিজের ভাইকে বাট ওয়াই?
.
প্রোপার্টির জন্য হত্যা করেছে৷ আর অনু এখন লেডিস মেসে থাকছে৷ কোথায় মেস সেটা বলেনি৷
.
আবির আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো আবির ফোন নিয়ে একটা কেবিনে ঢুকে গেলো৷
প্রায় পাঁচ ছয় মিনিট পর বেড়িয়ে আসলো৷
“কোথায় গেছিলেন আপনি?
.
একচুয়েলি ম্যানেজার কল দিয়েছিলো৷ আমাকে আজ রাতের ফ্লাইটেই ফিরে যেতে হবে৷সেখানকার নামকরা বিজন্যাস ম্যান আমার সাথে ডিল করতে চাইছেন৷ আর ডিলটা না করলে আমার কোম্পানিরও খুব লস হয়ে যাবে৷
একদিকে অনু আরেকদিকে কোম্পানি৷ কী করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা৷ ওর জন্যই তো দেশে ফিরেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখো ওর সাথে ভালো করে দু’টো কথাও বলতে পারিনি৷
.
চিন্তা করবেননা ভাইয়া আপনার অনু আপনারই
থাকবে সেটার সিওরিটি আমি আপনাকে দিচ্ছি৷ এখন আপনার উচিৎ আপনার কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
.
“অনুকে দেখে রেখো বোন৷
আবির ওর পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজ বেড় করে রিমির হাতে দিলো৷
“এটা অনুকে দিবে৷
.
আচ্ছা৷
.
🍁
অনু ভার্সিটির গেট পেরিয়ে মাঠে পা রাখতেই পিছন থেকে কেউ ওর ওরনা ধরে টান মারলো৷ অনু ভালো করেই জানে এ কাজটা কে করতে পারে৷ সে রেগে পিছনে তাকিয়ে কষিয়ে চড় বসিয়ে দিলো৷
“রনি,,কোন সাহসে তুই আমার ওরনা টান দিয়েছিস৷ কতোবার বলবো যে এসব অসভ্যতামী আমার সাথে একদম করবিনা৷
.
রনিঃএখনো এতো রাগ?
.
তো কী৷ আমার বাবা নেই বলে কী আমাকে অসহায় আর অবলা হয়ে থাকতে হবে নাকি৷ অন্যায়তো অন্যায়ই৷ আর আমি অন্যায়কে একদম প্রশ্রয় দেইনা৷ এতই যদি অসভ্যতামী করার শখ থাকে তাহলে যা না যা রাস্তায় যা তোদের মতো বখাটেদের এটাই আসল জায়গা৷ তোদেরকে ভার্সিটিতে নয় রাস্তায়ই ভালো মানায়৷ভার্সিটিতে কেনো আসিস এখানে তো ভালো মানুষেরা পড়তে আসে৷তুই তো ভালো মানুষ নস৷
.
ওহ্ অনু তোর ওই রাগের উপরেই তো আমি ফিদা৷ তোর কথাগুলো না আমার খুব ভালো লাগে শুধু কথাই না তোকেও ভালো লাগে৷ বলতে লজ্জা নেই আমি তোকে সেই পাঁচ ছয় বছর ধরেই ভালো বেসে আসছি বাট তুই পাত্তাই দিচ্ছিস না৷
.
ওই তা তুই আমাকে ভালোবাসিস কী প্রুফের ভিত্তিতে কথাটা বলছিস?
.
তোর প্রমান লাগবে,হাহাহা৷ যে প্রমান তোকে পাঁচ বছর আগে দিয়েছি সেটার চাইতে বেটার প্রমান হতেই পারেনা৷
.
মানে কোন প্রমানের কথা বলছিস তুই?
.
লাইক সিরিয়াসলি, তুই বুঝতে পারছিসনা আমি কোন প্রমানের কথা বলছি৷ তাহলে শুন,,মনে আছে তোর,রিয়া একদিন আবির আর আর একটা মেয়ের ছবি তোকে দেখিয়েছিলো?
.
হ্যাঁ মনে আছে তো?
.
সেগুলো এডিট করা ছিলো৷ মানে সেখানে আবিরের চেহারা বসানো ছিলো৷ আর তুইও কী বোকা এখনকার যুগের মেয়ে হয়ে সেটা বিশ্বাস করে নিলি এত সহজে৷ শুধু তাই নয় তোকে যে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়েছিলো সেটাও আমিই ছিলাম৷ ছবিটা দেখে এরকমটা মনে হয়েছিলো যেনো আবির কোনো মেয়েকে কিস করছে৷ হ্যাঁ করছিলো কিন্তু কাকে করছিলো জানিস নিজের কাজিনের পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে চুমো দিচ্ছিলো আর তুই কী মনে করেছিস যে আবিরের অন্য কোন মেয়ের সাথে এ্যাফায়ার আছে আর তাকেই কিস করছে হাহাহা৷তুই জানি আমাকে একটা কথা বলিস সবসময় যে আমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই৷ সত্যি কথা বলতে কিন্তু তুই কারও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নস৷ তা না হলে কত সহজেই বিশ্বাস করে নিলি আর এক দুই বছরের সম্পর্কে ইতি টেনে দিলি৷ তোকে দেখেনা আমার খুব আফসোস হয় এটা ভেবে যে তুই কেনো এত বোকা৷
এখন তুই বল আমি যদি তোকে ভালো না বাসতাম তাহলে কী তোকে পাওয়ার জন্য এসব করতাম,উহু করতাম না৷আর কী প্রুফ চাই তোর বল৷
অনু রেগে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলো রনির গালে৷
.
খুব খারাপ তুই রনি খুব খারাপ৷ তোর এই ভুলের কোনো ক্ষমা নেই৷ কক্ষনো তোকে ক্ষমা করবোনা আমি কক্ষনো না৷
.
আজব তোকে কী জোড় করেছিলাম নাকি বিশ্বাস করার জন্য৷
.
অনু কেঁদে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ রিমিও তখন গেটের কাছেই ছিলো অনুকে চলে যেতে দেখে দৌড়েঁ ওর কাছে চলে গেলো৷
“অনু কী হয়েছে তোর?তুই চলে যাচ্ছিস কেনো?
.
আমাকে ছাড় রিমি৷ আমার ভালো লাগছেনা আমি মেসে যাবো৷
.
রিমিও জানে অনু যা বলে তাই করে৷ তাই তাকে আর আটকালো না৷
“যাবি ঠিক আছে যা৷ কিন্তু এটা নিয়ে যা৷ (আবিরের দেওয়া কাগজ হাতে দিয়ে)
.
কী এটা?
.
জানিনা মেসে গিয়ে খুলে পড়িস বাই৷
🍁
অনু একটা রিক্সা ধরে মেসে ফিরে গেলো৷কাগজে কী লিখা আছে সেটা পড়ার জন্য একেবারে ব্যাকুল হয়ে আছে ও৷ কোনমতে ফ্রেস হয়ে এসে কাগজ খুললো,,,,
প্রিয়,,
“অপরাজিতা”৷
“প্রথমেই তোমাকে অপরাজিতা বলার জন্য স্যরি বলে নিচ্ছি৷ ভালো আছো আশা করি৷আমার চিঠি দেখে বোধহয় তুমি অনেক রাগ করেছো৷ কিন্তু কী করবো বলো আমি যে এখনো জানতে পারিনি তোমার আমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার কারন৷ কেনো তুমি আমাকে নেগলেক্ট করছো কী অপরাধ ছিলো আমার৷ আমার জানামতে আমি কোন অন্যায় করিনি যার উপর ডিপেন্ড করে তুমি সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাবে৷ এই আমাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি৷ সম্পর্ক তো আর একজনের পক্ষে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ তুমি ছাড়া আমি আর কোন মেয়ের দিকে ভালো করে তাকাইনি কথাও বলিনি শুধু এটাই মনে করতাম যে ওদের দিকে তাকালে কথা বললে আমার অনু রাগ করবে৷কিন্তু তুমি বিয়ে করতে পর্যন্ত রাজী হয়ে গিয়েছিলে৷আমার কী মনে হয় জানো অনু তুমি আমাকে কোনদিন ভালোই বাসোনি৷ তা না হলে আমাকে ইগনোর করার কারনটা এটলিস্ট বলতে৷ আমি বোধহয় তোমাকে একটু বেশিই প্রেশার দিয়েছিলাম যার জন্যে তুমি বাধ্য হয়ে আমাকে ভালোবেসেছিলে৷ সত্যিকারের ভালবাসাটা এমন হয়না অনু৷ সত্যিকারের ভালোবাসাটা অনেক মজবুত হয়৷ একজন আরেকজনের প্রতি অটুট বিশ্বাস থাকে যাই হয়ে যাক না কেনো তারা আলাদা হবেনা কিন্তু তুমি কী দেখলে শুনলে জানিনা যার দরুন তুমি আমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালে৷ তোমার থেকে দূরে থাকার জন্যই আমেরিকায় গিয়েছিলাম কিন্তু দেখো সেখানেও থাকতে পারিনি আবারো বেহায়ার মতো ছুটে আসলাম তোমাকে এক নজর দেখবো বলে কিন্তু তুমি আমাকে এর বিনিময়ে কী দিলে একরাশ ঘৃনা৷ তোমার কথা আমি রাখবো অনু আমি আর স্বেচ্ছায় কোনদিন তোমার সামনে আসবোনা৷ আমি বোধহয় ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই তাইতো যাকে এতো ভালোবাসতাম তার কাছ তেকে শুধু ঘৃনাই পেলাম৷ আমি চলে যাচ্ছি আজ আর কোনদিন ফিরবো কী না জানিনা,তবে না ফেরার সম্ভবনাটাই বেশি৷ বাংলাদেশে থাকলে আমার আর তোমার কোন না কোন ভাবে দেখা হয়ে যাবে এতে তোমার মনে আমার জন্য আরও ঘৃণার সৃষ্টি হবে৷ আমি যে চাইনা আর তোমার ঘৃণার পাত্র হতে৷ ভালোবাসার মানুষটার মুখ থেকে ঘৃনা শব্দটা শুনা যে কতটা কষ্টের সেটা তুমি বুঝবেনা অনু৷ এখনো খুব ভালোবাসি তোমায় আর বেসেও যাবো৷ভালো থেকো আর আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো৷
ইতি তোমার ঘৃনার
“আবির”
অনু চিঠিটা পড়ে কেঁদে দিলো৷ চিঠির অনেক লিখাই লেপ্টে গেছে বুঝাই যাচ্ছে আবির কেঁদেছে আর চিঠিটা লিখেছে৷
“আমি কী করে ওকে এতোটা অবিশ্বাস করলাম কী করে৷ একটা ফটোর উপর ভিত্তি করে সম্পর্কের বিচ্ছেদ টানলাম৷ আবির আসলে আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি প্লিজ ফিরে এসো আবির প্লিজ ফিরে এসো৷ একদিকে বাবা আরেকদিকে তুমি৷ পাঁচ বছরেও তোমাকে এতটা মিস করিনি যতটা এই একঘন্টা যাবৎ করছি৷ এখন সত্যিটা জানি আমি আবির আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি আবির হারিয়ে ফেলেছি৷
চলবে♥️