#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara
“হাত কাঁপলোনা নিজের ভাইকে খুন করতে?কী ক্ষতি করে ছিলো আমার বাবা তোমাদের? যার জন্যে উনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে৷ শুধুই কী সম্পত্তির জন্যে?৷ আমাকে বলতে পারতে আমি সব সম্পত্তি তোমাদের নামে করে দিতাম৷
কথাটা বলে অনু কেঁদে ফ্লোরে বসে পরলো৷ঊর্মি এগিয়ে এসে অনুর চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করালো৷
“খুব তো রাগী জেদী ছিলিস৷ কম কথা তো শুনাসনি আমাদের৷ এখন আমাদেরও সময় এসেছে৷আর তুই সম্পত্তি আমাদের নামে করে দিবি কী করে তোর বাবাতো তোর নামে এখনো সম্পত্তি লিখে দেয়নি৷ যদি দিতোও তাহলে তোকেও তোর বাপের সাথে মেরে দিতাম৷
.
চাচীঃকাল সকালেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি৷ কারণ এখন আর এটা তোর বাড়ি নয় আমাদের বাড়ি৷
.
অনুঃআমি এই বাড়ি ছেড়ে যাবোনা৷ কেনো যাবো?আমার বাবা নিজে এই বাড়ি বানিয়েছে বাবার স্মৃতি ভুলে আমি থাকতে পারবোনা৷ আর কোথায়ই বা যাবো আমি৷
.
হতচ্ছাড়িনি তোকে কেউ জিজ্ঞেস করেনি তুই যাবি কী না৷ তুই যাবি মানে যাবে৷আমরা দয়ালু তাই তোকে আজ রাতে এখানে থাকতে দিলাম৷ আর সকালে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোকে আর এখানে দেখি৷
চাচী কথাটা বলে অনুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিলো৷ অনু কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো৷ বার-বার রুমের দিকে তাকাচ্ছে আর কাঁদছে৷
🍁🍁🍁
সকালে মুখে গরম পানি পড়াতে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো অনু৷ তারাতাড়ি মুখ মুছে তাকিয়ে দেখলো ঊর্মি হাতে মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ অনু শক্ত চোখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো৷ কারণ আগের দিন তো আর নেই৷
ঊর্মিঃকাল কী বলেছিলাম কানে যায়নি তোর৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে যাতে তোকে আর এখানে না দেখি আর এখন নয়টা বাজে তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস? সে যাইহোক নিজের কাপড় চোপড় ব্যাগে পুর আর এখান থেকে চলে যা তোর ছায়াও যাতে আশেপাশে না দেখি৷
কথাটা বলে ঊর্মি আবারো মগে থাকা বাকি পানিটুকু অনুর মুখে ছুড়ে মেরে চলে গেলো৷
অনু তারাতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গিয়ে পানির ঝাপটা দিতে থাকলো৷ মুখ লাল হয়ে গেছে প্রচন্ড রকমে জ্বালাপোড়া করছে৷
অনু নিজের জামাকাপড় নিতে গিয়ে দেখলো মাত্র দুটো সুতির জামা কাবার্টে পড়ে আছে৷ সব দামী দামী ড্রেসই মিসিং৷ জুতার ক্ষেত্রেও সেইম এক পাটি স্যান্ডেল ছাড়া আর কোনো জুতাই নেই৷ যেগুলো ছিলো সেগুলোই ব্যাগে পুরে নিলো৷ বাবার ছবিটাও নিলো৷
খিদায় পেট চো-চো করছে৷ ব্যাগপত্র নিয়ে রুম থেকেই বেড় হতে পারছেনা সারা শরীর অবশ হয়ে আছে৷ কাল সকালে দু মুঠো ভাত খেয়েছিলো এরপর মুখে একটা দানাপানিও পড়ে নাই৷ অনু ব্যাগ রেখে ধীরে ধীরে চাচির কাছে গেলো৷ চাচী তখন মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছিলো৷
অনুঃচাচী আমাকে দু মুঠো ভাত দাও প্লিজ৷ আমার খুব খিদে পেয়েছে৷
.
চাচীঃমাংস দেখেই তোর খিদে পেয়ে গেলো৷ তুই ভাবলি কী করে তোকে ভাত দিবো৷ দু মুঠো তো দূরে থাক এক মুঠোও দিবোনা৷ কম কথা শুনাসনি আমাদের সব মনে আছে আমার৷
.
প্লিজ চাচী আমার সত্যি খিদে পেয়েছে আমাকে দু মুঠো ভাত দাও৷
.
ভাত তো দূরে পানিও পাবিনা তুই৷ বেড় হয়ে যা এখান থেকে৷
.
অনু টলমল পায়ে চলে গেলো৷ কোথায় যাবে সেটা জানেনা৷ নিজের মামুর বাড়িও যেতে পারবেনা৷ ওর মা বাবা পালিয়ে বিয়ে করেছিলো বিধায় কেউ ওদের মেনে নেয়নি৷ হাতে একটা কানাকড়িও নেই যে গাড়ি করে যাবে৷ ব্যাগ খোলে ভালো করে খুঁজে দেখলো বেঁচার মতো কিছু আছে কী না৷ খুঁজে নিজের আইফোন পেলো যেটা চৌদ্দ দিন আগে ওর বাবা ওকে কিনে দিয়েছিলো৷ এটাই তার শেষ সম্বল৷ অনু ফোনটা হাতে নিয়ে কেঁদে দিলো৷ এই ফোনটা কতো বায়না করে কিনেছিলো৷ ফোনটা হাতে নিয়ে পাশে একটা ম্যাকানিকের দোকানে গেলো৷
ম্যাকানিককে ফোনের মুল্য জিজ্ঞেস করতেই ম্যাকানিক বললো ফোনের মুল্য দশ হাজার টাকা৷ এতো কম দাম শুনে রেগে গেলো অনু৷
“এসব আপনি কী বলছেন ফোন কিনেছি আমি আশি হাজার দিয়ে৷ মাত্র চৌদ্দ দিন হলো কিনেছি তেমন ইউজও করিনি৷ মিনিমাম সত্তর হাজার হওয়ার তো কথা৷
.
“স্যরি ম্যাম৷ আমরা দশ হাজার দিয়েই কিনতে পারবো৷
.
অনু কোনো উপায় না পেয়ে ফোনটা দশ হাজার দিয়েই বেঁছে দিলো৷ ম্যাকানিকের দোকান ছাড়া আর কোনো দোকানও নেই যেখান থেকে সূলভ মুল্যে বিক্রি করতে পারবে৷ সবাই হয়তো আজ অনুর শত্রু হয়ে গেছে৷ টাকাটার দিকে তাকিয়ে এক ফোটা চোখের জল ফেলে দিলো অনু৷
একটা ছোট খাটো হোটেলে উঠলো৷ হাঁটতে পারছেনা শরীরে শক্তি নেই বললেই চলে৷ আপাতত কিছু খেতে হবে৷ অনু একটা ছেলেকে ডেকে বললো এখানে সকালের হাল্কা পাতলা কিছু নাস্তা পাওয়া যাবে কী না৷ ছেলেটা ” পাওয়া যাবে” বলে চলে গেলো৷ প্রায় এক দুই মিনিট পর প্লেটে করে দুটো পরটা আর আলুর বাজি নিয়ে আসলো৷ বাজিটা দেখে মনে হচ্ছে কালকের বানানো৷অনু খাবারটা দেখে আবারো কেঁদে দিলো৷ জীবনে তার সাথে যা হয়নি সেটাই হচ্ছে৷ মা বাবা মরে গেলে এরকম পরিস্থিতিতেও পরতে হয় সেটা তার বাবা না মারা গেলে বুঝতে পারতোনা৷ পেটের জ্বালায় পরটা আর বাসি রুটিটাই খেয়ে নিলো৷
নাস্তার টাকা মিটিয়ে আবারো হাঁটা ধরলো৷ কিন্তু কোথায় যাবে সে৷
🍁🍁🍁🍁
আমেরিকার নিউইয়র্কে একটি রুমে দাঁড়িয়ে থাই গ্লাস দিয়ে বাহিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবির৷ আর মিনমিন করছে,,
“প্রায় পাচঁ বছর ধরে তোমাকে দেখছিনা এটাও জানিনা তুমি কতো বড় হয়েছো কীরকম দেখতে হয়েছো৷ আমাকে তোমার আদৌও মনে আছে কী না৷ কিন্তু চিন্তা করুনা আমি খুব শীগ্রই তোমার কাছে ফিরছি৷ আর দূরে থাকা সম্ভব নয় তোমার থেকে৷
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাহিরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একটা ফাইল নিয়ে কাজে বসে পরলো৷ কিন্তু একদম মনোযোগ দিতে পারছেনা৷
“না ওকে না দেখা পর্যন্ত আমি কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারবোনা৷ আমাকে যত তারাতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে ফিরতেই হবে৷
চলবে♥️
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]