সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০১

0
5970

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#সূচনা_পর্ব
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“লজ্জা করছেনা অলক্ষী নিজের বোনের বরকে বিয়ে করতে৷”কবুল বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো অনু, ঠিক সেই মুহুর্তেই অনুর চাচাতো বোন ঊর্মি সবার সামনে কথাটা বলে অনুর গালে চড় বসিয়ে দিলো৷ দিয়ে চিৎকার করে বললো,,” বলছিস না কেনো? লজ্জা করছেনা তোর নিজের বোনের বরকে বিয়ে করতে৷ আর কীই বা লজ্জা করবে তোর মতো মেয়েদের আবার লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে নাকি৷এই ছিলো তোর আসল প্ল্যান তাহলে৷

ঊর্মির কথা শুনে সবাই নির্বাক হয়ে গেছে৷ বর ঊর্মির স্বামী কিন্তু কীভাবে ঊর্মির তো বিয়েই হয়নি, এই কথাটাই সবার মাথা ঢুকছেনা সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সব থেকে অবাক হয়েছে বেশি অনু৷ সে তো বরকে চিনেও না৷ আর ঊর্মি ওকে সবার সামনে চড় মেরে অপমান করছে৷

ঊর্মি চিৎকার বললো,,
সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সত্যিটা কি শুনতে চাও তোমরা তাহলে শুনো,,,অনুকে নিয়ে আমি একদিন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম আর সেখানো গিয়ে ওকে বললাম যে আমি ওয়াশরুমে যাবো ও যাতে আমার সাথে আসে তারপর ওকে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে আমি ওয়াশরুমে গেলাম আর তখন আকাশ (বর)ও ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য আসলো অনুকে জিজ্ঞেস করলো ওয়াশরুমে কেউ আছে কি-না অনু না করলো তারপর আাকাশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই অনু বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে আসলো আমাদের চিৎকার শুনে রেস্টুরেন্টের সবাই ওয়াশরুমের সামনে চলে এলো৷ দরজা খুলে আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সবাই বলাবলি করছিলো আমরা নাকি,, থাক সে কথা না-ই বলি৷ সবার এরকম খারাপ খারাপ কথা শুনতে খুব কষ্ট হয়েছিলো আমার যে জায়গায় আমার আর আাকাশের কোনো দোষ ছিলোনা৷ তারপর সবাই ঠিক করলো আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে, আর দিলোও,এই দেখো রেজিস্ট্রি পেপার৷(হাতের কাগজ দেখিয়ে)আর এসবের সবই অনু জানতো৷ আমি চাইছিলাম তোমাদেরকে ধীরে সুস্তে জানাবো কিন্তু তার আগেইতো অনু বিয়ের পিড়িতে বসে গেলো৷ আকাশের সাথে আমার যেভাবেই বিয়েটা হোক না কেনো ওতো আমার স্বামী৷ তাই আমি বিয়েটা ভাঙতে চলে এলাম৷

অনুর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে৷ ঊর্মি সবসময় নিজে দোষ করে অনুর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়৷ অনুর বাবা একজন ভালো মানুষ বিধায় তিনি কারও সাথে তর্কে জড়ান না৷ খুব বিশ্বাস করেন নিজের এক মাত্র মেয়ে অনুকে৷
অনুর চোখ দুটো শুধু তারা বাবাকেই খুঁজছে৷ বাবা শুনলে খুব কষ্ট পাবে৷ কিন্তু আমি জানি বাবা আমাকে অবিশ্বাস করবেনা৷

আকাশকে জিজ্ঞেস করতেই সে বললো ঊর্মি সত্যি কথাই বলছে৷ আকাশের কথা শুনে আরও এক দফা অবাক হলো অনু৷ আকাশ কেনো মিথ্যা কথা বললো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার৷ আর ঊর্মি আপু নিজেই তো বর খুঁজে দিলো তাহলে এসব কী শুরু করছে এখন? অনু ঊর্মির দিকে তাকাতেই ঊর্মি সবার দৃষ্টির অগোচরে ডেভিল হাসি দিলো৷ অনু দৌড়ে স্টেজ থেকে চলে গেলো৷

বিকেলে🍁🍁
কাদঁতে কাদঁতে ঘুমিয়ে পরছিলো অনু৷ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো চারটা বেজে বিশ মিনিট৷ হয়তো এতক্ষনে আকাশের সাথে ঊর্মি আপুর বিয়েও হয়ে গেছে৷ অনু আর না ভেবে তারাতাড়ি শাড়ী অর্নামেন্টস্ খোলে শাওয়ার করতে চলে গেলো৷লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো অনু৷ তারপর বাবার রুমের দিকে চলে গেলো৷রুমে ঢুকে খাটের দিকে তাকাতেই দেখলো তার বাবা খাটে সটান হয়ে ঘুমিয়ে আছেন৷

“আশ্চর্য এদিকে আমার বিয়ে ভাঙলো সবাই যা নয় তাই বলে অপমান করেছে আর এদিকে বাবা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন৷
অনু তার বাবার দিকে এগিয়ে গেলো৷ ওর বাবার মুখের পাশেই একটা বালিশ পড়ে আছে৷ অনু বেশ কয়েকবার ওর বাবাকে ডাকলো কিন্তু ওর বাবা কোনো রেসপন্স করছেনা
“বাবাতো এমন করেননা কোনদিন তাহলে কী,, অনুর মন অজানা কারনেই কেঁপে উঠলো৷ সে তারাতাড়ি তার বাবার নাকের কাছে হাত নিয়ে গেলো কিন্তু না শ্বাস প্রশ্বাস মিসিং৷ তারাতাড়ি পার্লস রেট চেক করলো এটাও মিসিং সন্দেহ দূর করার জন্য বাবার বুকে মাথা রাখলো হার্টবিট শুনা যাচ্ছেনা৷ অনু ওর বাবাকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলো৷ সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা তার বাবা আর বেঁচে নেই৷

অনু তারাতাড়ি ওর চাচার রুমে দৌড়ে চলে গেলো৷
তারপর জানালো তার বাবা মারা গেছে৷ অনুর চাচা কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,,, আমি জানতাম এটাই হবে তুই যা করেছিস এসব শুনে তোর বাবা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে৷ যাইহোক আমাদের তারাতাড়ি দাফন করার ব্যবস্থা করতে হবে৷

অনু ওর চাচার মুখে এসব শুনে খুব কষ্ট পেলো৷ নিজের ভাই মারা গেলো মানছি সৎ ভাই কিন্তু আমার বাবাতো নিজের আপন ভাই মনে করতো৷ আমি আমার বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনালাম আমার চাচা একটু বিলাপও করলোনা আরও উল্টো বলছে তারাতাড়ি দাফনের ব্যবস্থা করতে৷
অনু ওর বাবার কাছে গিয়ে আবারো কাঁদতে থাকলো৷ বাড়িতে এতো মানুষ তারপরও কারও চোখ দিয়ে একফোটা জল পরছেনা শুধু অনু ছাড়া৷ অনু কাঁদছে বলে ওর চাচী ওকে বলছে ও নাকি ন্যাকামু করছে৷
🍁🍁🍁🍁
রাত এগারোটা বাজে, জানালা দিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনু৷ চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে৷ অনু চোখের পানি মুছে বড় একটা উজ্জল তারার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,বাবা খুব তো বলতে আমার মা স্বার্থপর আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু এখন তুমি কেনো আমাকে একা রেখে চলে গিয়ে নিজেকে স্বার্থপরের পরিচয় দিলে৷ একদিন তোমার মুখ না দেখলে আমি থাকতে পারতাম না কিন্তু এখন দিনের পর দিন কীভাবে থাকবো বাবা৷ তুমি তো নিশ্চিন্তে অপারে চলে গেলে৷ আমাকেও ওতো নিয়ে যেতে পারতে কিন্তু কেনো নিলেনা বাবা কেনো৷ এখন কে আমি মন খারাপ করলে আমার মন ভালো করবে৷ বায়না ধরলে এনে দিবে৷ দুনিয়াটা যে খুব স্বার্থপর বাবা খুব৷ নিজের মা বাবার চেয়ে কেউ আপন হতে পারেনা৷এখন তো আমার আপন বলতে আর কেউ রইলো না৷ অনু আবারো হাউমাউ করে কেঁদে দিলো৷ দেয়ালে টাঙানো তার বাবার ছবি নামিয়ে তাতে চুমো দিয়ে বুকে চেপে ধরে বাবা বলে কেঁদে দিলো৷

মাথা ব্যাথায় বিছানার একপাশে পরে আছে অনু৷ এমন সময় হলে ওর বাবা ওর জন্য চা নিয়ে আসতো৷ কিন্তু এখন চাতো দূূর কেউ ভাত খাওয়ার জন্যও ডাকলোনা৷
ভারি মাথা নিয়েই কিচেনে যাচ্ছিলো৷ চাচার রুমের পাশ দিশে যেতেই অনুর কানে কিছু মানুষের হাসির আওয়াজ এলো৷ অনু চুপিচুপি দরজার পাশে গিয়ে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে শুনার চেষ্টা করলো কী হচ্ছে ভিতরে৷

চাচাঃএই লোকটার জান একেবারে কই মাছের৷ বালিশ দিয়ে মুখে চাপ দিতে দিতে আমার হাতে ব্যাথা হয়ে গেছিলো কিন্তু তার প্রাণ যাচ্ছিলোনা৷এখন কেউ আমাদের সন্দেহ করবেনা সবাই বলবে অনুর কারনে ওর বাবা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে৷
.
চাচীঃবেশ করেছো মেরেছো,তা না হলে আমরা সব সময় আশ্রিতার মতো এই বাড়িতে পরে থাকতাম আর অনু সব কিছুর মালিক হয়ে যেতো৷
.
চাচাতো ভাইঃবাবা ইউ আর এ বেস্ট এসব কিছু তুমি আমার জন্যই করেছো তাইনা৷
.
ঊর্মিঃকচু,,আমি এতে প্ল্যান করলাম আর এখন আইসে৷

অনু সব কথা শুনে মুখ চেপে ধরে নিচে বসে পরলো৷
” আমার বাবাকে মারার জন্য এতো বড় প্ল্যান করলো৷ ওরা আমার বাবাকে এই সম্পত্তির জন্য প্রাণে মেরে ফেললো৷ একবার বলতো সব সম্পত্তি ওদের নামে করে দিতাম৷নিজে নিজের ভাইকে মেরে ফেললো৷ ওরা কি মানুষ নাকি মানুষ রুপি জানোয়ার৷ একবারো ভেবে দেখেছে একটা সন্তানের জন্য তার বাবা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট৷ ওরা আমার বাবাকে খুন করে ফেললো একবারো হাত কাপলোনা এদের৷শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাসই করতে পারছেনা তার বাবার খুনি তার চাচা৷

অনু উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে দরজা টেলে ভিতরে চলে গেলো৷ অনুকে দেখে সবাই চমকে গেলো৷ ওর চাচা চাচী আর চাচাতো ভাইবোনের মুখের হাসি উধাও৷ওকে দেখে৷

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে