সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-০৮ (বোনাস পার্ট)

0
2578

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৮(বোনাস পার্ট)
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আদিল ভাইয়া আর আদনান ভাইয়া আমাদের পাড়ে রেখে আবারও বোটে উঠে পরলো৷আরও কতগুলো মেয়েরাও উঠেছে৷ মেবি ওরা পিকনিকে এসেছে৷আমি আর সামান্তা ভেজা শরীর নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছি৷ এক বোট আরেক বোটকে ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে৷ ধাক্কা ধাক্কির এক পর্যায়ে একটা মেয়ে ছিটকে পানিতে পরে গেলো৷ আমি আর সামান্তা মেয়েটাকে পানিতে পরতে দেখে হাসতে হাসতে শেষ৷ আমরা এই মুহুর্তে ভুলে গেছি যে একটু আগে আমরাও পানিতে পরেছিলাম৷ মেয়েটা ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে হেল্প হেল্প করছে৷ ওরা হেল্প করবে দূরের কথা দাঁত আরও কেলিয়ে হাসছে৷
একটা ছেলে পুলে নেমে পরলো৷ তারপর মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো সে মেয়েটাকে হেল্প করবে৷ মেয়েটি ভাইয়াদের দিকে একবার তাকিয়ে সাতরে পাড়ে চলে এলো৷

সামান্তাঃওরে রুহি রে বেটি তো বারি বজ্জাত৷দেখলি সাতার জানে তারপরও কিভাবে অভিনয় করলো৷ এরে তো নবেল দেওয়া দরকার৷
.
আরুহিঃহুম সবই ভাইয়াদের কোলে উঠার ফন্দি বুঝলি৷
.
সামান্তাঃতার মানে আমাদের যখন ভাইয়ারা কোলে নিয়েছিলো তখন আমাদের খুব রোমান্টিক কাপল লাগছিলো আর এটা দেখেই এদের জেলাস+কোলে উঠার শখ হয়েছে৷
.
আরুহিঃএকটু বেশিই ভাবিস তুই৷ আমাদের রোমান্টিক কাপল লাগতে যাবে কেন?আমরা ভাইয়ার কোলে উঠেছি হাসবেন্ডের কোলে উঠিনি৷
.
সামান্তা কিছু না বলে মুচকি হেসে আদনান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো৷৷

“এই বেটির মনে আবার কী চলছে আল্লাহ্ই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
পার্ক থেকে রিসোর্টে এসেছি বেলা ২টায়৷ এখন আবার সবাই জাফলং যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি৷ জৈন্তি হিল রিসোর্ট থেকে জাফলং মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে৷ তাই এখন যাওয়া যাবে৷
রিংকির ফোন দেখে আমার বুক ধক করে উঠলো৷
রিংকিকে তো জানানোই হয়নি যে আমরা সিলেট এসেছি৷ বেচারি শুনলে খুব কষ্ট পাবে৷ আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম৷

“হ্যালো রিংকি৷
.
রুহি তুই আমার সাথে এতো বড় অন্যায় কিভাবে করলি৷ তোরা সিলেটে এলি আর একবারও আমাকে বললি না৷ এতটা পর হয়ে গেছি আমি৷
.
প্লিজ বইন রাগ করিস না৷ আমার একদম মনে ছিলোনা৷ তারাহুরোর মধ্যে আসা হয়েছে৷
.
আচ্ছা ঠিকাছে৷ কিন্তু আমি তো সিলেট এসে গেছি৷ এখন তোরা কোথায় আমি তো জানিনা৷
.
কীহ!!!! তুই সিলেট এসেছিস বাট হাউ??
.
কেনো বাস দিয়ে৷ কাল আহিল ভাইয়া দেখেছি তোদের সবার গ্রুপ ছবি ফেইসবুকে আপলোড দিয়েছে৷ আর ক্যাপশন দিয়েছে সিলেটের বিকেল বেলা৷ তখুনি বুঝতে পারলাম তোরা সিলেট আছিস৷ মা বাবাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে সকালেই রওনা দিলাম একটু আগে পৌঁছিয়েছি৷
.
কোথায় আছিস তুই এখন৷
.
উসমানী মেডিকেলের পাশে৷
.
এখান থেকে তো অনেক দূর৷আচ্ছা আমি কাউকে পাঠাচ্ছি৷ বাই৷
রিংকির সাথে কথা বলে বাইরে বেড়িয়েই দেখলাম আহিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে৷

ভাইয়া আমার একটা হেল্প করবে??
.
কী হেল্প??
.
একচুয়েলি রিংকিকে আনতে যেতে হবে৷ ও আমাদের সিলেট আসার খবর শুনে চলে এসেছে৷ এখন উসমানী মেডিকেলের পাশে আছে৷ প্লিজ ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি যাও৷
.
আচ্ছা যাচ্ছি৷ ওকে বলে রাখিস এক পাও যাতে না নড়ায়৷ আর সবাইকে বলে দিস জাফলং যাতে চলে যায় আমি রিংকিকে নিয়ে সেদিক থেকে চলে যাবো
🍁🍁🍁🍁
আদিল উসমানী মেডিকেলের কাছে গিয়ে রিংকিকে খুঁজে চলেছে৷ এতো বড় মেডিকেল কোন দিকে থাকবে সেটা ওতো জানেনা৷ হঠাৎই আহিলের চোখ পরলো দূরে একটা মেয়ে ব্রেঞ্চে বসে আছে৷ পরনে একটা শর্ট কুর্তি আর প্যান্ট গলায় স্কার্ফ পেছিয়ে রেখেছে৷ চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে একপাশে এনে রেখেছে৷ মুখও ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা তবে আহিলের ডাউট হচ্ছে এটাই রিংকি৷ তাই সে তার ডাউট দূর করার জন্য মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো৷ মেয়েটার মুখ দেখে নিশ্চিন্ত হলো আহিল না এটা রিংকিই৷

“ম্যাডাম চলুন৷ ”
আহিলের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রিংকি৷ সে ভাবতেই পারছেনা আহিল ওকে নেওয়ার জন্য এসেছে৷
.
কী হলো চলো৷
.
রিংকি আহিলের সাথে চলে গেলো৷ আহিল কারে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসেছে আর রিংকি ব্যাক সিটে৷

“এই যে মিস আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হয়৷ ব্যাক সিটে বসেছো কেনো ফ্রন্ট সিটে এসে বসো৷

রিংকি যেন এটাই চাইছিলো৷ আহিলের বলতে দেড়ি ওর ফ্রন্ট সিটে যেতে দেড়ি নেই৷ তারাহুরো করতে গিয়ে একেবারে হোঁচট খেয়ে আহিলে উপরে পরে গেলো৷ রিংকি তারাতাড়ি সরে যেতেই ওর চুলে টান অনুভব করলো৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ওর চুল আহিলের শার্টের বোতামের সাথে আটকে গেছে৷ রিংকি আলতো করে ওর চুল ছাড়াচ্ছে৷ পরে যেতে নিতেই আহিল রিংকির কোমড় ধরে আবার উপরে উঠালো৷ রিংকি তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেছে৷ লজ্জা মাখা মুখ নিয়েই সে আহিলের দিকে তাকালো৷ আহিলও ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি তারাতাড়ি চুল ছাড়িয়ে সিটে বসে পরলো৷ আহিলও একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো৷

অনেকবারই রিংকি আর আহিলের চোখাচোখি হয়েছে৷ দুইজন দুজনের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরার সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে৷ এসব করতে করতেই ওরা জাফলং পৌঁছে গেলো৷
🍁🍁🍁🍁
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু দু’জনেই দৌড়ে গেলাম৷ আয়েশা আপু আর অদ্রিতা আপুও ভিষন খুশি৷আপুদেরও রিংকির কথা খেয়াল ছিলোনা৷ আদনান ভাইয়ারা গেছে বিরিয়ানি আনার জন্যে৷কিছুক্ষন হেটে হেটে দেখার পর সবাই বসে পরলাম জাফলংয়ের বড় বড় পাথরের উপরের৷ আমি একটা জিনিস অনেক্ষন যাবত খেয়াল করছি রিংকি খুব লজ্জা পাচ্ছে৷ আশ্চর্য এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে৷ আগে তো এতো লজ্জা পেতে দেখেনি৷

বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়েছে ৫টা কিন্তু আমরা মানুষ ৯জন৷ শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে একটা দুজনে ভাগ করে খাবে৷ আমি আর আদিব ভাইয়া, আদিল ভাইয়া আর আয়েশা আপু,আদনান ভাইয়া আর সামান্তা,আহিল ভাইয়া আর রিংকি৷আর অদ্রিতা আপু একা একটা৷ যদিও নিজের ভাগ থেকে আমাদেরও দিয়েছে৷
সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে শুধু আমি ছাড়া৷আমি মাংস নিতে যাই ওমনি আদিব ভাইয়া মাংস নিয়ে মুখে পুরে ফেলে৷ বিরিয়ানি মাংস ছাড়া খেতে ভালো লাগে নাকি৷ সবার দিকে একবার চোখ বুলালাম৷ ওরা সবাই কতো সুন্দর করে খাচ্ছে৷ আয়েশা আপু আদিল ভাইয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে,একজন আরেকজনকে মাংস বেছে দিচ্ছে৷ সামান্তা মাংস পেলে আদনান ভাইয়াকে দিচ্ছে আর ভাইয়া পেলে সামান্তাকে দিচ্ছে আহিল ভাইয়া আর রিংকির সেম অবস্থা৷ অথচ আমাকে দেখো আদিব ভাইয়া সব মাংস খেয়ে আমাকে দারচিনি,এলাচি,তেজপাতা,কাঁচামরিচ বেছে দিচ্ছে৷ এরকম ভাই থাকলে শত্রুর দরকার পরেনা৷আমি রেগে আমার এটু হাত দিয়েই আদিব ভাইয়ার চুল টানতে শুরু করলাম৷ ইচ্ছে মতো টেনে তারপর ছাড়লাম৷ আদিব ভাইয়া চুলে হাত দিয়ে নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ শুকলেন৷

“এমা আল্লাহ্ গো৷ আমি এত দামী জেল দিসিলাম চুলে এখন দেখি আমার চুলে খালি বিরিয়ানির গন্ধ করে৷
.
মাংস যে খাইসো ওইটার প্রমাণ৷
🍁🍁🍁🍁🍁
খেয়েদেয়ে আবারও আমরা জাফলংয়ের চারিদিক দেখছি৷ কি সুন্দর পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়৷ ইন্ডিয়াও দেখা যায়৷ অনেক স্টুডেন্টদেরও দেখা যাচ্ছে হয়তো স্কুল থেকে থেকে পিকনিক করতে এসেছে৷ রিংকি পানির নিচে পাথর দেখে ধপাস ধপাস করে পাথরে হাটতে লাগলো৷ আমি আর সামু ওর পিছু পিছু আছি৷ আহিল ভাইয়া ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে৷ রিংকি হাটঁতে হাঁটতে হিল জুতো মুচরে ধপাস করে পরে গেলো পানিতে৷পাথরও ছিলো ব্যাথা তো পেয়েছে নিশ্চয়৷
রিংকিকে দেখে আমি আর সামু হেসে কুটিকুটি৷ আজ খালি একের পর এক পরছেই পরছে৷ ধপাস ধপাস,ধপাস ধপাস৷ রিংকি বাকি ছিলো এবার রিংকি ও পরে গেলো৷ রিংকি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ ওর এমন চাহনি দেখে আমরা আরও বেশি হাসছি৷
আহিল ভাইয়া দৌড়ে এসে আমার কাছে ক্যামেরা দিয়ে চলে গেলেন রিংকির কাছে৷ তারপর কোন কিছু না ভেবে কোলে তুলে নিলো ওকে৷রিংকি লজ্জায় মুখ লুকালো আহিল ভাইয়ার বুকে৷ আর ভাইয়ার মুখেও কেমন এক হাসি৷ আমি আর সামু তো অবাক, হায় আল্লায় আজ এসব কী হচ্ছে৷ আমার তো মনে হচ্ছে সিলেট এসে কোনো এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে৷

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে