সুখ সন্ধানী পর্ব-০৯

0
438

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-৯
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★

মামার বাসায় এসে শিহাব নোহার সাথে দেখা করার আগে রাফির রুমে যায়।রাফি তার থেকে বয়সে এক বছরের বড় হলেও শিহাবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।দুজনেই এক ক্লাসে পড়েছে।দুজনের গোপন কথা খুব ভালো করে জানা।
রাফির রুমে গিয়ে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে শিহাব মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,
—“শালা ভং দেখে মনে হয় ছেকা খাইছিস।”

রাফি হাসে।চোখ বন্ধ করে বলে,
—“ঝামেলা হয়ে গেছে।”

শিহাব ভ্রু কুচকে তাকায়,
—“কিসের ঝামেলা?”

—“অনলাইনে একটা লাভ গিফট পছন্দ হওয়াতে কিনছিলাম।সাথে একটা চিরকুট।সেটা আপনার নোহা আপা দেখে ফেলছে।এখন মুখ দেখা বন্ধ।”

শিহাব মাথা ঝাকিয়ে বলল,
—“তুমিতো মামা খারাপ লোক।ধরবাও না আবার ছাড়বাও না।”

রাফি চুল খামচে বলে,
—“ব্যাপারটা তা নয়।পছন্দ হয়েছিল বলেই কিনেছিলাম।”

শিহাব কিছু একটা ভেবে বলল,
—“আচ্ছা আমি দেখছি।”
শিহাব রাফির রুম থেকে বেরিয়ে নোহার রুমে যায়।তার সবসময় অবাধ চলাফেরা এই বাসায় তাই কেউ কিছুই মনে করেনা।নোহা বই খুলে টেবিলে বসে আছে।অথচ লেখাপড়া করছে না।শিহাব পাশে বসে বলল,
—“আসসালামু আলাইকুম বিদ্যাসাগরনী আপা।”

নোহা আচমকা কথা শুনে ভয় পেল।বুকে হাত রেখে বলল,
—“ভাইয়া তুমি!শব্দ করে আসবে তো ভয় পাইয়ে দিলে।”

শিহাব ভ্রু কুচকে বলল,
—“নোহা রাফি কোন প্রেম করেনা এটা জানিস?”

নোহার মনের আগুন জ্বলে উঠে।ফুসে বলে,
—“আমার জানা-জানির দরকার নেই।”

শিহাব হাসে।
—“গিফট বক্স এমনি পছন্দ হওয়াতে কিনেছে।আর চিরকুট আমি লিখেছিলাম দুষ্টামি করে।আমার করা দুষ্টমি যে এতদূর গড়াবে বুঝতে পারিনি।”

শিহাব এক নিশ্বাসে মিথ্যা কথাগুলো বলে।পরিস্থিতি সামলাতে এই মিথ্যা কথাগুলো খুব প্রয়োজন।
নোহা আবাক হয়ে তাকাল।প্রেমে পাগল মন শিহাবের কথা বিশ্বাস করতে চাইল।তাছাড়া রাফির চলাফেরায় কখনোই মনে হয় না গালফেন্ড আছে।মোবাইলেও কথা বলেনা।নোহা জলভরা চোখ পিটপিট করে বলল,
—“সত্যি?”

শিহাব মাথা নেড়ে বলল,
—“যাকে ভালোবাসিস তার উপর বিশ্বাস করতে শিখ।দেখবি একদিন সব তোর।”
নোহা মাথা নেড়ে যায় দিল। সত্যি-মিথ্যা যাচাই না করে নোহা কষ্ট পেল।
—“ভাইয়া সত্যি উনার কেউ নেই?”

শিহাব হেসে বল,
—“বাব্বাহ আমি ভাইয়া আর রাফি উনি!কি কেমিস্ট্রি।”

নোহা লজ্জায় মাথা নত করল।
শিহাব কথা পাল্টে বলে,
—“আমরা যে খালামনির ফ্লাটের পাশের ফ্লাটে উঠলাম তুই গেলি না কেন?”

—“ভাইয়া যেতাম তো কিন্তু মন খারাপ ছিল যে তাই।”

—“এখন মন ভালো হয়েছে?”

নোহা মাথা দুলালো।

—“ভালোবাসলে বিশ্বাস করবি।মন থেকে চাইবি।ফিরিয়ে দেয়ার সাধ্যি কারো নেই।”

নোহা চুপ করে থাকল।শিহাব যা বলার জন্য এসেছিল তা আর বলল না।সিদ্ধান্ত নিল নিশিকেই জিজ্ঞেস করবে।নোহাকে যা বলল তার এটাই মানা দরকার।

শিহাব বাসায় আসল রাত দশটায়।বাসায় এসে দেখল পাখি নিজেই খাচাঁয় ঢোকার জন্য ছটফট করছেন।শিহাব হাসল।নিশি তার মায়ের সাথে কথা বলছে।শিহাব রুমে চলে যাওয়ার আগে বলে গেল রাতের খাবার নানুর বাসায় খেয়ে এসেছে।নুরজাহান বেগম ওয়াশরুমে যাওয়ার পরে শিহাব নিশিকে ডাকল।নিশি শিহাবের উপর রেগে আছে এই লোকটা কোন কারণ ছাড়াই নিশির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।কি যন্ত্রণা! কথা না বললেও ভালো লাগে না।আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্য যে শিহাবের সাথে ঝগড়া করতেও নিশির ভালো লাগে।কেমন সুখ সুখ যন্ত্রণা।
রুমে ঢোকার সাথে সাথেই দরজা লাগানোর শব্দ হলো।নিশি পিছনে ফিরার পরে বলিষ্ঠ হাতের মধ্যে আবদ্ধ হলো।অবাক হয়ে শিহাবকে দেখল একটা ট্রাউজার পড়ে আছে।খালি গায়ে শিহাবকে এই প্রথম দেখল,অজানা শিহরণ সারা গায়ে লেপ্টে গেল।এত কাছে একটা পুরুষ দেখে নিশির কেমন লাগল।ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—“আমার কেমন লাগছে।প্লিজ ছাড়েন।”

শিহাব আরো একটু কাছে টেনে বলল,
—“কার সাথে প্রেম করিস নিশি?”

নিশি মাথা নেড়ে বলল,
—“কারো সাথে না।”

—“তাহলে ওইদিন বারান্দায় কেন বললি ‘কবে আসবে তুমি’?”

নিশি অবাক হয়ে শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এটা শুনে নিয়েছ?তাই রেগে ছিল?তাই তার করা রান্না খায় নি?তাই কথা বলেনি?
নিশি মথা নামিয়ে বলল
—“কেউ নেই আমার জীবনে।”

শিহাব নিচু স্বরে বলল,
—“তাহলে কাকে বললি।”

নিশি লজ্জা পেল।নিজের মনের সুপ্ত কথা অন্যকাউকে এভাবে বলা যায় না।খুব লজ্জা হয়।
—“ফিউচারে যে আমার হবে তাকে উদেশ্য করেই বলেছিলাম।এখন কেউ নেই।”

শিহাব হাসে বুকে শান্তি লাগে।নিশিকে দেয়ালে চেপে ধরে আরো কাছে যায়।চোখে চোখ রেখে খুব কোমল স্বরে বলে,
—“এখন থেকে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে হবে না।মন দিয়ে লেখাপড়া কর যে আসার সময় হলেই চলে আসবে।”

নিশি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে।শিহাবের তপ্ত শ্বাস নিশির মুখে আছড়ে পড়ছে গাল গরম হয়ে লাল হল বলে।নিশি চলে যেতে নিলে শিহাব আটকায়।আরেকটু চেপে ধরে বলে,
—“মনে থাকবে তো?”
নিশির যেন আজ লজ্জা পাওয়ার দিন।এই প্রথম কোন পুরুষ তার এতটা কাছে।লজ্জায় চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।শিহাবের ছোঁয়া আর নেয়া যাচ্ছে না।তলপেটের কাছে দুষ্ট প্রজাপতি সুরসুরি দিচ্ছে।কোনরকম আবছা গলায় বলে,
—“এইজন্য দু’দিন কথা বলেননি?”

শিহাব ঘোরলাগা চোখে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
—“তুই আমাকে বুঝতে পারিস না কেন নিশি?”

—“জানিনা।”

নিশির কানের লতিতে ঠোঁট ছুইছুই করে বলল,
—“এখন থেকে বুঝতে হবে তো নিশি।না বুঝলে যে সামনে তোর ঘোর বিপদ।”
নিশি শিহাবের ঠোঁটের ছোঁয়া কানে পেয়ে শরীরে কম্পমান অগ্নি বয়ে যায়।নিশ্বাস অস্বাভাবিক হয়।শিহাব বুঝতে পেরে আলতো হাসে।শিহাবের হাসি দেখে নিশির বুক কাঁপে।শিহাব সরে দাঁড়াতেই নিশি ছুটে চলে যায়।
শিহাব মাথা চুলকে বলল,এই মেয়েকেই চাই যেকোনো মূল্যে।
নিশি রুম থেকে চলে যাওয়ার আগে শুনতে পায় শিহাব ফিসফিস করে বলছে,–“আমি গরুর মাংসের কালাভুনা খাব নিশি।”

★★★
রাত বারোটা।সবাই ঘুমিয়ে কাঁদা।নোহা চায়ের কাপ হাতে রাফির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখল দরজা ভেজানো।নোহা ছোট ছোট পা ফেলে ভেতরে এল,রুম খালি বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখে অন্ধকারে চাঁদের আলো মেখে কাঙ্খিত পুরুষটি দাঁড়িয়ে আছে।হাতের জলন্ত সিগারেটের লাল বিন্দু উঠানামা করছে।নোহা বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে এল।
—“আপনার চা।”
রাফি নোহার কন্ঠ শুনেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না,যেন জানতই নোহা আসবে।নোহার দিকে তাকাল না।নোহার মনে হচ্ছে রাফি তার সাথে কথা বলিতে চায় না।কেমন গম্ভীর হয়ে আছে।হাতের বাকি সিগারেটের অংশ ফেলে অন্যদিকে ফিরে তাকাল।নোহা চায়ের কাপটা চেয়ারে রেখে রাফিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

—চলবে—

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে