সুখ সন্ধানী পর্ব-০৬

0
462

#সুখ_সন্ধানী
পর্ব-৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
★★★

নাহারের বাসায় আজকে হরেক রকমের রান্না হচ্ছে।আজকে তার বড় আপা নুরজাহান নতুন বাসায় আসবে তাই নাহারের বাসায় রান্নার আয়োজন।নাহার ব্যাস্ত পায়ে নিশির রুমের সামনে এসে নিশিকে ডেকে বলল,
—“এই নবাবজাদি একটু কি কাজে সাহায্য করা যায় না?”

নিশি মোবাইলে নাটক দেখছিল।ভ্রু কুচকে বলল,
—“আরে আম্মু আপুতো সাহায্য করছেই।”

নাহার মাথা নেড়ে বলল,
—“তুই তাড়াতাড়ি কালাভুনাটা করে দে তোর হাতের কালাভুনা শিহাব খুব পছন্দ করে।”

নিশি বিরক্ত হয়ে বলল,
—“কালাভুনা তুমিও করতে পার আমাকেই কেন করতে হবে?”

নাহার চোখ পাকিয়ে বলল,
—“কারন তোর রান্না মজা হয়।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি আয়।”

নিশি মোবাইল বিছানায় ছুড়ে রাগে গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে গেল।রান্নাঘরে রেগে গেলেও সে রান্নাটা মনোযোগ দিয়েই করল।এই রান্নার কাজটা করতে ভিষণ ভালো লাগে।আর কোন এক কারণে তার সব রান্নাই শিহাব খুব পছন্দ করে।

সকাল সকাল নুরজাহান বেগম চলে এসেছেন সাথে বাসার আসবাপত্র। এখন সবাই হাতে-হাতে বাসা গুছানোর কাজটা করছে।বাসা পাল্টানো যে কতোবড় ঝামেলার কাজ সেটা যে পাল্টায় সেই বুঝে।নুরজাহান এখন কিছুতেই বাসা পাল্টাতে চায়নি।বছর খানিকের মধ্যেই তাদের বাড়িটা বানানো পরিপূর্ণ হবে,তখন সেখানেই একেবারে উঠত,তাই আর বাসা নাড়িয়ে ঝামেলা বাড়াতে চায়নি কিন্তু নাহার অনেক দিন ধরেই তার পাশে থাকার অনুরোধ করছে এবার আর না করতে পারেনি।নাহাররান্নাবান্না সেড়ে নিজেই চলে এসেছে বোনের বাসা গোছানোতে সাহায্য করতে সাথে নিশিকে নিয়ে এসেছে।নিশি প্রথমে আসতে চায়নি ইসরাতকে পাঠাতে চাইছিল কিন্তু ইসরাতের মাথা ব্যাথা তাই বাধ্য হয়ে নিশির-ই আসতে হল।নিশির আসাতে নুরজাহান অনেক খুশি হলেন।খুশি হয়ে বললেন,
—“নিশি এসে খুব ভালো করেছিস আম্মু।ওই রুমে শিহাব একা কি করছে গিয়ে একটু হেল্প কর।”
নিশি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।পাশের রুমে যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যায়।এর চেয়ে নিচতলা থেকে ভারি ড্রেসিংটেবিলটা উঠাতে বললেও শান্তি পেত।শরীরের সমস্ত রক্তকনিকা একজোট হয়ে বলছে নিশি এক-পা ওদিকে নিবি না ওদিকে এক-পা নেয়া মানে বিপদ ডেকে মাথায় তুলা।নিশি অসহায় হয়ে তার খালামনির দিকে তাকাল। এই মানুষটা তাকে খুব ভালোবাসে। একটা মেয়ের শখ ছিল কিন্তু শিহাব জন্ম নেয়ার পরে আর বেবি হয়নি। সেই অভাব পূরন করে নিশিকে দিয়ে যদিও আরো বোনের মেয়ে ভাইয়ের মেয়ে আছে কিন্তু নিশির প্রতি যেন আলাদা টান এটা নিশি সেই ছোটবেলা থেকেই বুঝে গেছে।সেই খালামনির কথা কিভাবে অমান্য করবে বুঝতে পারছে না। নাহার মেয়ের অবাধ্যতা দেখে চোখ রাঙ্গানী দিয়ে বলে,
–“যা না নিশি।”
নিশি করুন চোখে মায়ের দিকে তাকায়।সে কিভাবে বলবে শিহাবের আশেপাশে থাকতেও নিশির ভয় হয়।এই মানুষটা নিশির সাথে খুব খারাপ আচরণ করে।অবশ্য এটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না।সবার সামনে বাবার একমাত্র রাজকুমার হলেন শিহাব।অতি ভদ্র,শিক্ষিত, মার্জিত ব্যবহার,দেখতে সুদর্শন সব মিলিয়ে এই ছেলে থেকে খারাপ আচরন আশা করা যায় না।নিশি তারা খালামনির দেখানো রুমে ঢুকে দেখে শিহাব তার কাপড় গুছিয়ে আলমারি খুলে রাখছে।নিশিকে একপলক দেখে নিয়ে আবার কাজে মন দিল।নিশি ভয়ে কাছে গেল,
—“আমি রেখে দেই শিহাব ভাই?”

শিহাব ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
—“তুই কি আমার বউ নিশি?”

নিশি আতকে উঠে বলল,
—“আসতাগফিরুল্লাহ।ছি ছি।বউ হতে যাব কেন?আমি আপনার বোন।”

শিহাব টিশার্ট গুছাতে গুছাতে বলল,
—“একটা ছেলের আলমারিতে বউ ছাড়া অন্য কেউ হাত দেয়া ঘোরতর অপরাধ।একমাত্র বউ এলাউড বোন টোন এলাউড করা যাবে না।”

নিশি যেন একটু অপমানিত হল।গাল ফুলিয়ে বলল,
—“তাহলে আমি চলে যাই। খালামনিকে সাহায্য করি।”

শিহাব এবার তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
—“এসেই যখন পড়েছিস তাহলে বারান্দার ফুলের টব গুলো সাজিয়ে যা।”

নিশি বারান্দায় গিয়ে দেখল ইতোমধ্যে শিহাবের সব ফুলের গাছ এখানে রাখা।একটা ছেলে কিভাবে এত ফুল ভালোবাসতে পারে এটা ভেবেই নিশি কূল কিনারা পায়না।নিশি ফুলের টব সাজিয়ে রাখে।টবের মধ্যে বেশির ভাগই বেলীফুল গাছ।নিশির মনে হলো শিহাব প্রায়ই তাকে বেলীফুল দেয় আর বলে,” আমার বেলী ফুল পছন্দ।”নিশি হাসল কেমন ভালোলাগা আশেপাশে ছড়িয়ে গেল।পাশাপাশি ফ্লাট হওয়ায় শিহাবের এই বারান্দা থেকে নিশির বারান্দা দেখা যায়।নিশি গ্রীলে হাত রেখে বাহিরে তাকায়,থেমে থেমে আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে খুব বৃষ্টি হবে বোধহয় দুপুর দেড়টা বাজে কিন্তু বাহিরের গোমট ভাব দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বৃষ্টি এলে নিশির কেমন প্রেম প্রেম অনুভূতি হয়।ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে নিশি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।নিজেকে খুব শূন্য মনে হচ্ছে তার একান্ত প্রিয় মানুষটা কাছে থাকলে মন্দ হতো না।
শিহাব অপলক প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে।এখন থেকে যখন তখন এই মিষ্টি মুখটা দেখতে পারবে।তার নাহার খালা যখন বলল তাদের পাশের ফ্লাটে আসার কথা তখনি শিহাব তার মাকে একটু আগ্রহ দেখিয়ে রাজি করিয়ে ফেলেছে।এই মেয়েকে দেখার লোভ যে সামলাতে পারেনা।এই যে এমন বৃষ্টির দুপুরে কি দেখতে পেত যদি এই ফ্লাটে না আসত।শিহাবের বুকে শান্তির বাতাস বয়।আলতো পায়ে নিশির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।নিশি তখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে।ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে নিশি টেরই পায় নি শিহাব তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।শিহাব যেই না কথা বলতে যাবে তখনি নিশি বিরবির করে বলল,
“”কবে আসবে তুমি?খুব ভালোবাসব।তাড়াতাড়ি আস প্লিজ।”

শিহাব বিষ্ফোরিত চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে।এই মাত্র কি বলল নিশি?কাকে বলল?তারমানে সে খুব দেরি করে ফেলেছে?অন্য কেউ ইতোমধ্যে নিশির বন্ধ দরজায় কড়া নেড়ে ফেলেছে?নাহ শিহাব আর ভাবতেই পারছে না বুকে ব্যাথা হচ্ছে।এত কাছে থেকেও নিজের নির্বুদ্ধিতার কারনে কি অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেল?শিহাব যেভাবে চুপিচুপি গিয়েছিল তেমনিভাবে রুমে এসে খাটে বসল।এই জন্যই কি নিশি তাকে দেখতেই পারে না?

–চলবে–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে