গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ১২
মাহির এবার ইচ্ছে করেই আদারার হাতে কামড় দেয়। আদারা ব্যাথা পেলেও কোনো রিকেয়শন দেয় না । আবারও মাহির আবার একই কাজ করে আদারা এবার হালকা চিৎকার দেয়। মাহির বলে
— তুমি খাচ্ছ না কেন? আদারা বলে
— আপনি খান। কিন্তু দয়া করে আমার হাত না ভাত খান। মাহির বলে
— হ্যা আমি জানি আমি খান। এবার তুমিও খাও। আদারা বলে
— আমি খেয়ে নিয়েছি তুমি মানে আপনি খান। মাহির বলে
— আরে বেইবি আমি জানিতো আমি খান আর তুমি মিসেস খান। আদারা বলে
— হুমমমম,, মাত্র সারে পাঁচ মাসের জন্য। কথাটা শুনার সাথে সাথে মাহির বলে
— আমি খাবো না। আদারা বলে
— আরেকটু আছে। মাহির বলে
— বললামতো খাবো না আমি । আদারা বলে
— ঠিক আছে কিন্তু রুমের এই অবস্থা কেন? দেখেতো মনে হচ্ছে মানুষ না মহিষ থাকে এই রুমে। মাহির বলে
— তুমি গুছিয়ে দাও। আদারা বলে
— আপনার কি হয়েছে বলেনতো,,, একমিনিট। মাহির কিছু বলে না তাই আদারা কিচেনে চলে যায়। কিচেনে গিয়ে পেলেট টা রেখে হাত ধুয়ে যেই না নিশুর রুমে যাবে তখনই মাহির এসে আদারার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লক করে দেয়। আদারা বলে
— আরে আরে,,, কি হয়েছে? মাহির বলে
— হয়নি তবে হবে তোমার আর আমার দুইটা কিউট বেইবি। আদারা ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে । আদারা মাহিরের কাছে গিয়ে বলে
— একটু নিচু হবেন। মাহিরও আদারার কথায় নিচু হয়। আদারা মাহিরের কাপালে পরা চুল গুলো সরিয়ে দেখে বলে
— কই ব্যাথার তো কোনো চিহ্ন দেখছি না। মাহির আদারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ফু দিয়ে আদারার সামনের কাটা চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে বলে
— তুমি কি করছ একটু বলবে? আদারাতো জমে ফ্রিজ হয়ে গেছে। তার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। মাহির সেটা দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে
— সত্যি আজ খুব গরম। আর তুমি,,, আর কিছু বলার আগেই আদারা মাহিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে চাইলে মাহির গিয়ে আদারাকে বলে
— আসো আমি হেল্প করি,,, বলেই দরজা খুলে দেয়। আদারাকে আর পায়কে বাচ্চাদের মতো দৌড় দেয় আর বেলেন্স সামলাতে না পেরে ঠুসসস করে পরে যায় হামাগুড়ি দিয়ে আদারা রুমে চলে যায়। আর আয়তুল-কূসরী যেই যেই দোয়া পারে সব পরতে লাগে। আর অন্য দিকে মাহির হাসতে হাসতে শেষ । মাহির হাই তুলতে তুলতে বললো
— ভালোই হয়েছে,,, বিয়ের পর বউকে গার্লফ্রেন্ড বানাবো তারপর চুটিয়ে প্রেম করব, কিন্তু অনেক কিছু করতে হবে,, । যাই সকালে উঠতে হবে।
মাহির গিয়ে ঘুমিয়ে পরে ঐদিকে আদারা ভয়ে শেষ তার মনে হচ্ছে মাহিরকে ভূতে বশ করেছে কারণ তার মতে মাহির কখনো সেন্সে এমন করবে না। একসময় আদারাও ঘুমিয়ে পরে ।
সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসে এখন অপেক্ষা মাহিরের। মাহির এসে তার জায়গায় না বসে আদারার পাশে বসে পরে। নিশু আর মিলিতো অবাক। যত যাই হোক মাহির সবসময় তার বাবার পাশের চেয়ারে বসে,,, আর যখন তার বাবা না থাকে তখন সে তার বাবার জায়গায় আর আকাশ মাহিরের জায়গায় এটা এই বাড়ির এক ধরনের নিয়ম বললেই চলে। মাহির বলে
— তাড়াতাড়ি খা,,,,, তোদের আবার ভার্সিটি পৌঁছে দিতে হবে। নিশু বলে
— তুই ভার্সিটি দিতে যাবি!!! অফিস যাবি না? মাহির বলে
— আজকে কোনো মিটিং নেই। আর যা কাজ আছে ঐটা পিএ দেখে নিবে। মিলি বলে
— আদারা আপু খাচ্ছো না কেন? আদারা খাবে কি করে মাহির তার হাত ধরে রেখেছে। মাহির বলে
— ওর শরীরটা খারাপ লাগছে হয়তো চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আর খাচ্ছেও না। আদারা কিছু বলতে যাবে তখনই মাহির বলে
— এই নিশু তুই আর মিলি চলে যা আমি ডাইভার চাচ্চুকে বলছি তোদের দিয়ে আসতে। তোদের কোন সমস্যা হবে? নিশু ঠোঁট চেপে হাসি দিয়ে বলে
— নাহ আমাদের আবার কি সমস্যা । এই মিলি তাড়াতাড়ি চল। বলেই জুসটা মুখে দিয়ে চলে যায়। আদারার তো আর ভয় লাগছে ভূত না তার ঘার মটকে দেয়। নিশু আর মিলি যাওয়ার পর মাহির আদারা হাত ছেড়ে দেয় আর বলে
— তাড়াতাড়ি খেয়ে তৈরি হয়ে নাও তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো। আদারা চেয়ার ছেড়ে উঠে চিৎকার দিয়ে বলে
— এই জ্বিন ভূত তুই কে? কোন গাছ থেকে আমাদানি হয়েছিস?আমার মহিষ আহহহ মানে মিহির ধূর মাহিরকে ছেড়েদে,, এই ব্যাটা তোর চেয়ে বেশি ভয়ংকর খারাপ, খবিশ, তোরা নানার চৌদ্দ গুষ্টির নানার নানা। যদি জানতে তুই তাকে দিয়ে এইসব করিয়েছিস তোকে মানে তোর আত্মাকে কাচা চিবিয়ে খাবে। মাহির ধমক দিয়ে বলে
— হুয়াট ননসেন্স কি বাজে বকছ। ২০ মিনিট সময় রেডি হয়ে নিচে নামবে নয়তো সত্যি ভূত হয়ে ঘাড় মাটকাবো। আদারা বলে
— না না না, এইতো আমি এখনি যাচ্ছি, এই গেলুম এই আসলুম। আম্মুইইই,,,,। বলেই রুমের দিকে ছুট লাগায়। আর এই দিকে মাহির বলে
— ওর মতো,,, একটা এতো সাহসী আর বুদ্ধিমতি মেয়ে নাকি ভূতে বিশ্বাসী!!! ভাবা যায়?? ২৫ মিনিট হতে চললো কিন্তু আদারার কোন খুজ নেই মাহির আদারার রুমের দিকে যেতেই দেখে আদারা একটা হলুদ রঙের শাড়ি সাথে চুলগুলো খুলে রাখা আর ঠোঁটে হালকা রেড কালারের লিপস্টিক। ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিচে নামছে ।
মাহির একটা হাত আপনাআপনি বুকের বা পাশে চলে যায় আর বলে
— মারডালা ইয়ার। আদারা মাহিরের সামনে এসে চুপচাপ দাড়ায়। মাহির আদারা দিকে একমনে চেয়ে আছে। কাততালিয় ভাবে মাহিরও সাদা জিন্স আর হলদে রঙের শার্ট পরেছে। চুলগুলো স্পাইক করা। হাতে ব্রেসলেট। জাস্ট ওয়াও। দুজনকেই সুন্দর লাগছে। মাহির আদারাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। একটু পরপরই মাহির আদারাকে দেখছে। আর আদারারও তাকিয়ে আছে। আদারা মনকে হঠাৎ করে একটা ভয় আকরে ধরে বসেছে। হয়তো কিছু হতে চলেছে ভয়ংকর আতংক করা নারছে আদারার মনে। ভরের দিকে স্বপ্নেও খারাপ দেখেছে। আজকে কেন যেন তার সেই রাগটা কাজ করছেনা আদারা। সামনে যেতেই মাহির দেখে একটা গাছের নিচে একজন বৃদ্ধ মহিলা বেলী ফুলের গাজরা বিক্রি করছে । আর মাহির সেটা দেখে বলে
— তুমি বসো আমি আসছি। বলেই গাড়ি থেকে নেমে পরে। আর রাস্তা ক্রশ করে অন্য দিকে যায় ফুল আনতে। আদারাও কার থেকে নামে মাহিরের কাছে যেতে চাইলে একটা ট্রাক তৈড়িৎ গতিতে ছুটে এসে একটা ধাক্কা দিয়ে আদারাকে অন্য পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়। মাহির আদারা বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসছে।
রক্তের লাল রঙে ভরে আছে পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তাটা আর সেই রক্তের মালিকের নিথর দেহ পরে আছে রাস্তার মাঝখানে, চোখ তার পিটপিট করছে হয়তো এটাই তার জবীনের শেষ কিছু মুহূর্ত। হয়তো তাকে বিদায় নিতে হবে এই সুন্দর নামক নিষ্ঠুরতম পৃথিবীর কাছ থেকে। আর রয়ে যাবে তার হাজারো স্মৃতি আর কিছু না বলা অভিযোগ আর আভিমান। হঠাৎ করেই মানুষ জড় হতে লাগলো আদারার আশেপাশে কিন্তু তার সাথে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। রক্তে লাল আভাতে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। তখনই ভীর ঠেলে কেউ ছুটে আসে আদারার দিকে। কিন্তু এতটা সময়ে অনেক লেট হয়েগেছে তার আসতে। আদারা ধীরে ধীরে নিজের চোখ বুঝে ফেলে। তা দেখে মাহির দৌড়ে আসে আদারার কাছে আর বলতে লাগে
—- আদারা এই,,,এই আদারা চোখ খুল দেখো তোমার,, তোমার মাহির এসেছে,, আদারা। আদারার মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব করে ডাকছে। কিন্তু তার চেয়ে তাকে হাতছানি দিয়ে বেশি ডেকে চলছে এক ঘোর আধার, সেখানটায় তলিয়ে গেলে হয়তো তার আর ফিরে আসা হবে না। মাহিরের তো পাগল পাগল অবস্থা নিজের চোখের সামনে নিজের স্ত্রীর এমন অবস্থা দেখলে কয়জন মানুষ পারে ঠিক থাকতে।। আজ তার মনে হচ্ছে যদি আদারের কিছু হয়ে যায় তাহলে তার বেঁচে থাকার মূল কারণ সে হারিয়ে ফেলবে। নিজেকে সামলে নিয়ে কোলে তুলে নিলো সে আদারাকে। ততক্ষণে এম্বুলেন্সও চলে আসছে।কারণ এত লোকের মাঝে কে জেন এম্বুলেন্সকে কল দিয়ে দিয়েছে।।
চলবে,,,