গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৭
প্লিজ মায়া। আমি সরি। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ বলে
—- I love you… love you so much। মায়াও আকাশকে জড়িয়ে কেঁদে বলে
— Love you too….
আর তখনই কেবিনে প্রবেশ করে কেউ,,, তাড়াতড়ির কারণে আকাশ ভালো করে দরজটা লক করতে ভুলে যায়। ,,, মায়া চোখ মেলে যাকে দেখে তাতে সে ভয় পেয়ে যায়। মাহির দাড়িয়ে পিছনে আদারা। মায়া আকাশকে নিজের থেকে আলাদা করে দাঁড়ায়। আকাশ মায়াকে এমন কাচুমাচু হতে দেখে তার দৃষ্টি লক্ষ করে তাকায়। দেখে মাহির আর আদারা। আকাশ দেখে মাহিরের চোখ লাল টোটকে হয়ে আছে। মাহির এসে আকাশের কর্লার ধরে বলে
— তোর সাহস কি করে হলো? তুই মায়াকে জড়িয়ে ধরেছিস। আর সাথে সাথে একটা নাক বরাবর ঘুসি মেরে দেয়। আকাশের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। আদারা এক কোনে দাড়িয়ে আছে। মায়া দৌড়ে এসে আকাশে ধরে । মাহির আবার আকাশকে মারতে আসলে। মায়া মাহিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে
— ইস্টপ, কি করছটা কি মাহির… মাহির চিৎকার করে বলে
— ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে ধরার। ওকে তো আমি। আর তখনই আদার এসে মাহিরকে থামায়। আর বলে
— কি হচ্ছেটা কি এখানে? এটা হসপিটাল বাসা না। আর মাহির চুপ করে বসুন আর ওদের কথাটা শুনুন। মাহির কিছু বলতে গেলে আদারা মাহিরকে ধমক দিয়ে বলে
— চুপ একদম চুপ একটা কথা বললে খবর আছে। মায়ার মা কেবিনে আসে ভয়ে ভয়ে। মাহির রাগে ফুসফুস করছে। আদারা তা দেখে এক গ্লাস পানি এনে দেয় মাহিরকে মাহির সেটা হাতে চাপ দেয় যার ফলে কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে যায় আর টুকরো গুলো হাত ঢুকে যায়। আদারা সেটা দেখে অন্য দিকে তাকিয়ে কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় মাহিরের গালে। কেবিনের সবাই অবাক। আদারা মাহিরের শার্টের কর্লার ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে আর বলে
— নিজেকে কি মনে করেন আপনি? হিরো ( বিদ্রঃ আগ্গে আন্নেরই সাইকো হিরো) হাতের কি অবস্থা করেছেন। আর অন্য দিকে মায়া ব্যস্ত আকাশকে নিয়ে। আদারা বাইরে গিয়ে ডক্টর ডেকে নিয়ে আসে। তারপর ডক্টরের কথায় একটা নার্স এসে মাহিরের হাতের ড্রেসিং করতে থাকে। আকাশের তেমন কিছু হয়নি।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া পরে যখন মাহির উপরে যায় তখনই আদারা রুমে আসে। মাহির দেখে তার বালিশে ভিজা তোয়ালেটা রাখা। সে সেটা তুলে দেখে তোয়ালেটা একদম ভিজে চুপচুপে আর বালিশটাও ভিজে একাকার। বিছানার উপর আরেকটা ভিজা তোয়ালে রাখা। মাহির আদারাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— এই সবের মানে কি? আদারা বিছানার অন্য পাশে বসতে বসতে বলে
— কি আবার তোয়ালে!!! মাহির বলে
— সেটাই তো, কিন্তু এটা এখানে কি করে? আদারা বলে
— আপনিতো রেখে গিয়েছিলেন। মাহির বলে
— হ্যা কিন্তু সেটা এতোটা ভিজা ছিলো না আর বালিশের ধারের কাছেও ছিল না। আদারা মেকি হাসি দিয়ে বলে
— তোয়ালে হাটতে পারে আর সেও আপনার মতো গোসল করে এসে ঘুমি দিয়েছে। মাহির বলে
—- হোয়াট দ্যা,,,, ফাউল কথা। আদারা এক ভ্রু উচু করে হাসি দিয়ে বলে
— এটা কথা না শিক্ষা নেক্সট টাইম যেন এমনটা না হয়। মাহির বলে
— তুমি একটা? আদারা বলে
— কি আমি? মাহির বলে
— কিছু না। আদারা বলে
— আচ্ছা। আদারা বলে
— আপনার বেলকনিতে ফুলের গাছগুলো খুব সুন্দর। মাহির সোফায় বসে বলে
— ফুল ভালোলাগে? আদারা বলে
— হুমমম। মাহির বলে
— মায়ারও খুব পছন্দের ছিল।। আদারার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সেটা দেখে মাহির বলে
— মায়াকে দেখতে যাবে? আদারা কিছু সময় পর বলে ঠিক আছে। আর দুজনই হসপিটালে আসে মায়াকে দেখতে, কিন্তু কেবিনে বাইরে মায়ার মা ভয়ে দাড়িয়ে ছিল মাহিরকে দেখে। সে মাহিরকে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মাহির সেটাকে পাত্তা না দিয়ে কেবিনে ঢুকে আর দেখে আকাশ মায়া একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। নার্স ড্রেসিং করে চলে যাওয়ার পর আকাশ বলে
— মাহির ভাইয়া আমার কথাটা,,,,, মাহি চিৎকার করে বলে
— কি কি বলবি তুই?? আদারা কেবিনের দরজাটা লক করে বলে
— চুপ,, একদম চুপ। আপনার মহিষের মতো না চেচামেচি করলে ভালোলাগে না তাই না, আকাশ ভাইয়া আপনি বলেন। আজ সত্যিটা সামনে আসুক। আকাশ বলতে লাগে
—- মায়ার সাথে আমার পরিচয় কলেজ লাইফ থেকে আর সেখান থেকেই আমাদের সম্পর্ক, তারপর একদিন আমরা বিয়ে করে ফেলি কাউকে না জানিয়ে। আমি চেয়েছিলাম পরিস্থিতি সামলে তারপর পরিবারের সবাইকে আমাদের ব্যাপারে বলবো। কিন্তু তার আগেই আমরা বন্ধুরা মিলে একদিন একটা পার্টিতে কার্ডস খেলি সেখানে আমি হেরে যাই বাজিতে ছিল ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু তখন আমি ছিলাম বেকার আর টাকার লোভটা আমাকেও আকরে ধরেছিল কিন্তু আমি যখন হেরে যাই তখন আমি টাকা দিতে পারি না, আমি ওদের বললেও শুনেনা। আমিতো ভেবেছিলাম ওরা আমার বন্ধু তাই কোন সমস্যা হবে না, আর আমি মিথ্যাে বলেছিলাম যে আমার কাছে টাকা আছে । তারপর ওরা দাবি করে টাকা দিতে না পারলে আমাকে মায়াকে তার কাছে তুলে দিতে হবে। আর তখনই তোমার সাথে মায়ার এক ফ্রেন্ডের পার্টিতে দেখা। মায়া তোমাকে আগে থেকেই চিনতো তাই সে তোমার সাথে বন্ধুসুলভ আচারণই করে। আর তুমি তার অপর আকৃষ্ট হয়ে পর। আর মায়া আমাকে বলে আমিও তখন একটা প্লান করে ফেলি ওরা আমাকে কিছু সময় দিয়েছিল টাকা দেয়ার জন্য। আর তখনই আমার মাথায় সে বুদ্ধি আসে আদারা না থাকলেও আমি এই প্লানটাই করতাম।
সব শুনে আদারা বুঝতে পারলো এখানে মায়া আর আকাশের দোষ নেই আবার আছেও যদি আকাশ টাকার লোভে না পড়তো তাহলে এমনটা হতো না। আর যদি মাহিরকে সত্যিটা বলে দিত তাহলে হয়তো দুই ভাইয়ের সম্পর্কের মাঝে এমন ফাটল ধরত না। মাহির সব শুনে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। আদারাও দৌড়ে যায় পিছন পিছন। মাহির গিয়ে গাড়িতে বসে পরে। আর আদারাও বসে পরে তার পাশে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বিকেলের শেষ প্রহর চলছে ঘন্টা খানিক পরই সূর্য মামা অস্ত যাবে। মাহির গাড়ি চালাতে লাগে আর ভাবছে তার জন্য আদারার মতো একটা মেয়ে কষ্ট পেয়েছে, তার এটা ভেবে খারাপ লাগছে আকাশ তার ভাই তাকে ঠকিয়েছে। মাহির গাড়িটা নিয়ে হাতিরঝিলের দিকে যায়। গাড়িটা এক সাইডে থামিয়ে মাহির গাড়ি থেকে নেমে উঠে বসে পরে গাড়ির উপরে। আদারাও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। সে মাহিরের সামনে গিয়ে দাড়ায়। সে মাহিরের পিঠে হাত রাখতেই মাহির আদারাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয় ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই কিন্তু মাহির আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নেই। আদারাও পরম যত্নে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় মাহিরকে নিজের সাথে। মুহূর্তেই সব রাগ বরফের মতো গলে যায়। মাহির আদারাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে হয়তো লজ্জা পেয়েছে সে, মাহির আদারকে এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য, তাই সে লুকিয়ে পরে। বাতাস বইছে সুসু করে বৃষ্টি হওয়ার ফলে বাতাসটা ঠান্ডা লাগছে। মাঝে মাঝে দুইএকটা গাড়ি যাচ্ছে। মাহির আদারাকে এভাবে আকরে ধরেছে যে এটাই তার শত আবদারের ভান্ডার । আদারাও মাহিরকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে। আদারা মাহিরের চুলের ভাজে একটা চুমু খেয়ে বলে
— চুপ করেন, এত কাঁদতে হয় না। মায়া আপনার ভাগ্য ছিলনা। সুসুসু চুপ। পিঠে হাত বুলাচ্ছে আর মাহিরকে এইসব বলছে আদারা। মাহির অনেক কষ্ট নিয়ে বলে
— সরি,,,,,, আমার জন্য,, মাহিরকে থামিয়ে বলে
— আমি আর এইসব ভাবতে চাইনা। যা হয়েছে তা হয়েছে। সব নতুন করে শুরু করা যাক।
চলবে