গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৫
মাহির বিছানয় বসে মাথার চুলগুলো আকরে ধরে বসে আছে, আর ভাবছে নিজের কি কোথাও ভুল হচ্ছে। তখনই সে তার ভাবনা জগৎের সুতো ছিড়ে বেড়িয়ে আসে আদারার চিৎকারে। মাহির দৌড়ে নিচে যায়। দেখে আদারা মাহিরের মাকে ডাকছে।
—- ফুপি, ফুপি। তখনই আদারা ডাকে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে আদারার শাশুড়ী আর তার চাচি শাশুড়ী। বাসায় তেমন কেউ নেই সবাই যে যার মতো কাজে। মাহিরকে দেখে। মাহিরের আম্মু বলে
— কিরে বাবা কি হয়েছে আজকে যে অফিসে গিয়েও ফিরে আসলি? আর আদারা তোকে না বলেছি ফুপি ডাকতে না। আদারা বলে
— আজ আমি তোমাদের কিছু কথা বলবো!!! মাহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না আদারা কিসের কথা বলছে। মাহির তাড়াতাড়ি করে আদারের হাত চেপে ধরে আর বলে
— আমি একটু বকা দিয়েছি। সে বাইরে যাওয়ার বায়না ধরেছে, আর আমি তাকে না ঘুরতে না নিয়ে অফিসে চলে গিয়েছি তাই এত রাগ। আম্মু আমি আদারাকে নিয়ে বের হচ্ছি। আদারা কিছু বলতে যাবে তখনই মাহিরের মা বলে
—- এই ব্যাপার, আমি ভাবলাম কিনা কি!!! যাই হোক যা ঘুরে আয়। আদারা বলে
—- না ফুপি। আর কিছু বলতে যাবে তখনই মাহির আদারকে কুলে তুলে নিল মূহুর্তেই আদারা চুপ৷। মাহিরের এমন কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে মাহিরের মা আর চাঁচি। মাহিরের চাচি বলে
— ভাবি চল। মাহির আদারাকে কুলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আর তখনই আদারা বলে
— আপানি একটা বাজে লোক, আপনার মতো খারাপ লোক আমি দুটো চোখে দেখেনি, আপনি কি মনে করেছেন আমি কিছু বলবো না, আজ নাহয় কাল আমি সবাইকে সত্যি বলে চলে যাবো। মাহিষ একটা। মাহির মহিষ নামটা শুনে খেপে যায় আর বলে
— আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার মহিষের মতো লাগে? আদারা কিছু বলে না চুপচাপ নিজের মতো অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মাহির গাড়িতে বসে গাড়ি ইস্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে আপন গতিতে আর আদারা বাইরে তাকিয়ে কান্না করছে আর চোখের জল মুছে। মাহির সেটা দেখে নিজের রুমালটা আদারার দিকে এগিয়ে দেয়। আদারা রেগে গিয়ে সেটাকে বাইরে ছুড়ে দিয়ে বলে
— এখন এত দরদ কেন? কিছুক্ষণ আগ অব্দি তো আপনার চোখের বিষ ছিলাম না আমি? আর আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই আমাকে কোথাও নিয়ে মেরে ফেলবেন? হ্যা সেটাই হবে তাছাড়া তো আর আপনি পারবেনই বা কি। মাহির গাড়ি ব্রেক কষে আদারার চোয়াল শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
— আমি জানিনা তুমি সত্যি কিনা , তুমি যদি সত্যি হও তাহলে তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে সবাইকে সত্যিটা বলে দিব। আর যদি তোমার কথা মিথ্যা হয় তাহলে যেন্ত মাটিতে পুতে ফেলব। আদারা মাহিরের হাত জোরে কামড় দেয়। আর মাহির বলে
—- আহহহহহহ আদর লাগছে। মাহিরের মুখে আজ প্রথম সে আদর নামটা শুনে নিস্তব্দ হয়ে যায়। নামটা তার বেশ ভালোই লাগছে। আদারা কিছু না বলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহির তা দেখে নিজের মতো গাড়ি চালাতে ব্যস্ত
,,, সাময়ের ব্যবধানে অভিমানে নিচে পরে হারিয়ে যাচ্ছে আদারের মনে গড়ে তোলা মাহিরের জন্য এক একটা অনুভূতি। আদারের মনে হচ্ছে সে ভুল কাউকে ভালোবেসেছে। এমন উপর নিচ ভাবতে ভাবতে মাহির চলে আসে আদারাকে নিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। আদারা তাকিয়ে দেখে সামনের দিকে সবুজ রঙের একটা বড় মাঠ। আর মাঠে দুই একটা গরু ঘাস খাচ্ছে । মাহির গাড়ি থেকে বের হলেও আদারা এখনো সেখানেই বসে আছে । মাহির বলে
— বাইরে আসো ভালোলাগবে। আদারার তো ইচ্ছে করছে মাহিরকে জেন্ত গিলে খেতে আদারা গাড়ি থেকে নেমে বলে
— সমস্যা কি আপনার? কি চাই? আমার সাথেই বা এত ভালো ব্যবহার কেন? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে!! মাহির ভ্রু-কুচকে বলে
— তোমরা মেয়েরা না একদম অতিরিক্ত বুঝ। আদারা মাহিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে
— অতিরিক্ত বুঝলেও আপনাদের ছেলেদের মতো অত বেশি বুঝিনা। আপনারা শুনেন ৪ লাই বুঝেন ১৪ লাইন আর লেকচার মারেন ১১৪ লাইন। যত্তসব আমি বাসায় যাবো। মাহির বলে
— দেখ ভালো ব্যবহার করছি এত সুন্দর করে কথা বলচছি তাও তুমি এমন ব্যবহার করবে?? তোমার জন্য সেই আগের মাহিরই ঠিক। আদারা বলে
— ঐটা মাহওর না ঐটা পাগল মহিষ। যখন তখন আক্রমণ করে বসে। আর আপনি যাবেন না তো ওকে আমি এখন চলে যাবো যেদিক দুই চোখ যায়। বলেই নিজের মতো হাটতে লাগলো মাহির পিছন থেকে ডাকলেও আদারা শুনে না। তাই বাধ্য হয়ে সেও আদারের পিছন পিছন হাটতে লাগলো। আর অন্য দিকে মাহিরকে যা মনে আসছে বলছে আদারা
—- শয়তান, খারাপ, বদের হাড্ডি, কালা না সাদা মহিষ একটা। তোকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিব আর তোর যার সাথেই বিয়ে হওয়ার কথা হবে তাকে বলে দিব যে তুই একটা মহিষ। তখনই মাহির পিছন থেকে বলে
— অহহহ আচ্ছা। তাহলে তো আর আমার বিয়েই হবে না!! তাহলে আর তোমাকে ডিভোর্স দেয়া যাবেনা। আদারা মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে এইদিকে ঐদিক কিছু খুঁজে তখন দেখে একটা গাছের ডাল। সেটা সে তুলে নিল। মাহির বলে
— এই তুমি এটা দিয়ে কি করবে? আদারা কিছু না ভেবেই মাহিরের গায়ে একটা বাড়ি লাগিয়ে দেয়। মাহির বলে
— আহহহ, আম্মু। এই আদারা কি করছ টাকি?আদারা আরেকটা বাড়ি লাগিয়ে দেয়। মাহির পিছাতে লাগে আর আদারা আগাতে। মাহির বলে
— দেখ ভালো হচ্ছে না। আদারা বলে
— বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন নামক কোনো আইন নাই, এখন তোকে আমি মেরে শুটকি দিব তারপর তোর ঐ মায়া শাঁকচুন্নি কছে পার্সেল করে দিয়ে আসবো। মাহির একটু রেগে বলে
— মায়ার নামে একটা উল্টো পাল্টা কথা বলবেনা। আদারা এবার রেগে দৌড়ে আসে মাহিরের দিকে। মাহিরও কি মনে করে দৌড় দেয়। আদারা লাঠিটা দিয়ে মাহিরকে মারছে আর বলছে
—- তোর লজ্জা করেনা? নিজের বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়ের নাম নিতে? পরকিয়া করতে। তোকে আজ আমি সত্যি মেরে ফেলব। মহিষের বাচ্চা দাঁড়া বলছি তোকে আজ আমি এই মাঠে চরাবো, তোকে ঘাস খাওয়াবো তারপর যদি তোর এই নষ্ট মাথাটা আবার ঠিক হয়। কোথায় যাচ্ছিস দাঁড়া । মাহির তো দৌড়াচ্ছে ভাবা যায় যেই মাহিরকে একটু আগ অব্দি আদারা ভয় পেত আর সে এখন তাকেই মারছে। মাহির বলে
—- আল্লাহ তুমি আমাকে এই জল্লাদ মাইয়ার হাত থেকে বাঁচাও।
আদারার মনে হচ্ছে আগের মাহির ফিরে এসেছে। কিন্তু তার রাগটা এখন মাথায় চড়ে বসেছে। হঠাৎই মাহির থেমে পিচ ঢালা রাস্তার মাঝে বসে পরে। আদারা তার সামনে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে এক হাত কমড়ে দিয়ে। মাহির তা দেখে নিজের বুকে হাত দিয়ে হাতটা একটু নাড়ায়। যার মানে আমি আর পারবো না। আদারা লাঠিটা ফেলে দেয়। আজও আকাশ মেঘলা কালো মেঘেরা ছুটাছুটি করছে আকাশ। সূর্য মামা ব্যস্ত কালো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে। আদারা মাহিরকে একটু দেখে হাটতে লাগে আবার। মাহির কোন রকম উঠে আবার দৌড় দেয় আদারার সাথে। আদারা সামনে তাকাতেই দেখে গোবর আর সেটা দেখে তার মাথায় বুদ্ধি আসে সে সরে দাড়ায় আর মাহির তার কাছাকাছি আসতেই নিজের একটা পা বাড়িয়ে দিলো আদারা। আর ধপাস করে……মাহির পরে যায় গোবরে আর তা দেখে আদারা হাসি দিয়ে বলে
—- ওয়াও,, হাউ কিউট। এখন একদম মহিষ মহিষ লাগছে । তখনই
চলবে