গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকা- আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০৩
আদারা দরজা খুলে দেখে মাহিরের চাচা-চাচি, আর মাহিরের চাচাতো ভাই বোন, আকাশ আর মিলি দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে মাহির আসছে হয়তো গাড়ি পার্ক করে আসছে। আদারাকে দেখে মাহিরের চাচি মুচকি হাসি দিয়ে বলে
— কি খবর আদারা মুনি? আদারা হালকা হাসি দিয়ে বলে
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তখন মাহির পিছন থেকে বলে
— বাসায় কি ঢুকতে দিবে? নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকতে হবে আমাদের? আদারা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর ওদের ভিতরে আসতে বলে। মাহিরের চাচাতো ভাই আকাশ আদারার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। মাহিরের চাচির বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে তাই তারা সবাই তাকে দেখতে যায়। আর আজকে তারা যখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বেক। তাদের বাসায় আসার একটু পরই মাহিরও অফিস থেকে চলে আসে। মিলি আদারকে জড়িয়ে ধরে বলে
— আদারা আপুই এবার তুমি আমার সাথে ঘুমাবা। তখনই মাহির বলে
— আদারা এখন তোর আপু না ভাবি লাগে, এই সব বাদ দে এইটা বল নানা ভাইয়া কেমন আছে?
ভাবি কথাটা শুনে মাহিরের চাচা চাচি সবাই অবাক। মিলির মাথা মনে হচ্ছে ঘুরছে। সবাই মাহিরের আর আদারার দিকে তাকিয়ে আছে । আর আদারা নিচের দিকে। মিলি বলে
—- নানা ভাইয়া ভালো আছে। কিন্তু তুমি আদারা আপুকে!!!! মাহির বলে
— বিয়ে করেছি। যাই হোক রাত হয়েছে ঘুমা যা। মাহিরের চাচি বলে
— কি বলছিস, কিভাবে? তখন মাহির তার মনগড়া সেই কাহিনী বলে। আদারা এবার রাগছে কিন্তু রাগটা প্রকাশ করছে না। মাহিরের চাচা বলে
—- যা হয়েছে ভালোই হয়েছে একদিক দিয়ে। আদারা একটা লক্ষ্মী মেয়ে। আকাশ ওদের কথা শুনে চলে যায়। আর মিলি হা হয়ে আছে। মাহির ও উঠে ওপরে চলে যায়। আর আদারাও মাহিরের পিছন পিছন গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে
— কি হয়েছে আপনার এমন কেন করছেন আমার সাথে? মাহির নিজের টাইটা খুলতে খুলতে বলে
— তুই অনেক ভালো নায়িকা হতে পারতি একটিং টা অনেক পারিস। আদারা এবর রেগে গিয়ে মাহির গলার টাইটা অনেক টাইট করে লাগিয়ে দেয় আর মাহির গলায় সেটা অনেক বাজে ভাবে গেঁথে যায়। মাহিরের ব্যাথাও লাগছে। আদারা ধাক্কা দিয়ে মাহিরকে বেডে ফেলে তার উপর উঠে বসে টাইটা সেই আগের নেয় ধরে আদারা বলে
— আমাকে কি মনে করেন আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমি মুখ বুজে সব সহ্য করব? কি করেছি আমি এখন বলবি। নয়তো জানে মেরে ফেলব তোকে। মাহির আদারার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আদারকে নিজের নিচে ফেলে তার উপর ঝুকে বলে
— আমার থেকে আমার মায়াকে কেড়ে নিয়েছিস। আদারা মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে বলে
— আমি কিছু করেনি আপনার মায়ার সাথে। মাহির বলে
— তোর জন্য মায়ার এই অবস্থা ঐদিন মায়াকে কিছু না বলতি তাহলে আজ মায়া আমার সাথে থাকতো, হসপিটালে না। আদারা এইবার অবাকের শীর্ষ পর্যায় আদারা বলে
— আমি কি করেছি.? আপনার মায়ার উপর বাস চালিয়েছি। নাকি ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি? কোনটা?? মাহির চিৎকার করে বলে
— ন্যাকামি করিস? তুই মায়াকে বলিসনি তোর আর আমার সম্পর্ক আছে? বলিসনি তোর আর আমার বিয়ে ঠিক? তোর এই কথা গুলো শুনে ও ভেঙে পরে। তারপর ও একটা গাড়ির সামনে গিয়ে সুসাইড করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় মায়া বেঁচে যায়। আদারাতো ভেবেকুল পাচ্ছে না সে কোনদিন কবেই বা এগুলো বললো?! আদারা বলে
— আপনার ভুল হচ্ছে, আমি কিছুই বলেনি। তখনই মাহির কিছু বলতে যাবে,,, তখনই মাহিরের ফোনটা কান্না করে দেয় মাহির সেটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আজও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে । মাহির বলকনিতে গিয়ে কথা বলতে দেখে। আদারও পিছন পিছন যায় আর বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে দেয় সাথে লাইটাও ওফ করে দেয়। মাহিরের পিএ মাহবুব কল দিয়েছে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। মাহিরও কথা বলছিল তখনই বেলকনির লাইটটা ওফ হয়ে যায়। মাহিরের অন্ধকার জিনিসটাই বেশি ভালো লাগছে। তাই সেও কিছু বললো না। আর ঐদিকে আদারা টান টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে আর ভাবতে থাকে সে কি ভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। অন্যদিকে বেলকনির দরজাটা খুলতে গিয়ে মাহির দেখে সেটা ভিতর থেকে লক করা। সে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর কি যেন বলছে। কিন্তু বাইরের আওয়াজ ভিতরে আসছে না। আদারাও রুমের লাইটা ওফ করে আরামসে শুয়ে পরে। অপর দিকে মাহির রেগে বম হয়ে আছে। আর মশাও মাহিরকে নিজের খাদ্য হিসেবে অনেক মজা করে খাচ্ছে মানে মাহিরের রক্ত চুষছে। মাহির শত চেষ্টার পরও সে বেলকনির দরজাটা খুলতে পারেনা। তাই মনে মনে ঠিক করে আজকে বেলকনিতেই কাটাতে হবে কালকে সে আদারাকে দেখে নিবে। কিন্তু ঘুমতো হবে না মাহিরের যেই মশা। মাহির নিজের ফোন নিয়ে বসে। কিন্তু সারাদিন খাটাখাটির পর সে অনেক ক্লান্ত তাই মশার কামড় খাওয়াটাকে উপেক্ষা করে একসময় ঘুমিয়ে পরে। রাত ৩ টা বাজে৷। আদারা এখন ঘুমায়ানি। সে একটা বালিশ আর ব্ল্যাঙ্কেট নিয়ে যায়। বেলকনির লাইটটা ওন করে দরজাটা খুলে দেখে মাহির ঘুমিয়ে গেছে কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে। আদারা আস্তে করে মাহিরের মাথার নিচে খুব সাবধানে বালিশটা দিয়ে ব্ল্যান্ঙ্কেট টা গায়ে জড়িয়ে দেয়। আদারা খেয়াল করে মাহিরের গলায় দাগ বসে গেছে। আদারার মায়া লাগে কিন্তু তখন কার কথা মনে পরতেই সে রেগে যায়। আর কিছু না ভেবেই রুমে এসে শুয়ে পরে। আর ভাবছে নিজের পরিবারের কথা। বাবা কেমন আছে। মা ঠিক মত ঔষধ খায়তো। সে কিভাবে নিজেকে সবার কাছে নির্দোষ প্রমাণ করবে আর আগের মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সব ভাবতে ভাবতে আদারা ঘুমিয়ে পরে।
সকালের সূর্য স্নানের মধ্য দিয়ে ঘুম ভাঙলো মাহিরের নিজের গায়ে ব্ল্যান্ঙ্কেট আর মাথার নিচে বালিশ আর বেলকনির দরজাটাও খুলা পরে আছে। মাহির রুমে গিয়ে দেখে আদারা বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। অনেক কিউট লাগছে আদারাকে কিন্তু মাহিরের আদারের এই সুখ সহ্য হলোনা, আর রাতের কথা মনে পরতেই সে আরো খেপে যায়। বাথরুমে গিয়ে একবালতি পানি নিয়ে এসে ঢেলে দেয় আদারের উপর। আদারা ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে বসে নিজের সমস্ত শরীর ভিজে একাকার, বিছানাও অনেক ভিজে গিয়েছে। আদারা মাহিরের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মাহির একটা হাসি দিয়ে বলে
—- কালকে বলেছিলাম না এটা তোর বাপের বাড়ি না, যে পরে পরে ১০টা অব্দি ঘুমাবি। আদারা কিছু না বলে উঠে আলমারি থেকে নিজের একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে অনেক জুড়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। মাহির বলে
—- দরজা ভাঙার আগে তোকে ভেঙে ফেলবো, আমার সামনে যদি আরেক বার এমন রাগ দেখিয়েছিস।
আদারা বাথরুম গিয়ে মাহিরের ব্রাশটা হাতে নিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আর ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমের দেওয়াল পরিষ্কার করতে লাগে। আর গান গাইতে লাগলো
—- আহা আকাশে বাতাসে, আহা আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। মাহির ভাবছে কিভাবে সে আদারাকে টাইট দিবে। তাই সে নিচে গিয়ে সার্ভেন্টদের বলে
— আজ নাশতা সবার জন্য আদারা বানাবে, তাই যেন কেউ নাশতা না বানায়।
অপর দিকে, হসপিটালে মায়ার কেবিনে কেউ হুট করে ঢুকে যায়। মায়ার মা তখন মায়াকে আপেল কেটে দিচ্ছিল আর মায়া সেটা খাচ্ছিল আর ফোন চালাচ্ছিল হঠাৎ করে কারো কেবিন প্রবেশ করাতে মায়া ভয় পেয়ে যায়। ভেবে ছিল হয়তো তাদের প্লানটা ভেছতে গেলো কিন্তু মায়া যাকে দেখে সে খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
—- Miss you jaan…
চলবে