গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖
লেখিকাঃ-আইদা ইসলাম কনিকা
পর্বঃ০১
বিয়ের ভারী লেহেঙ্গা আর ভেজা শরীরে বেলকনিতে ছিটে আসা বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে ফ্লেরে বসে কান্না করছি। ভাগ্যের কি পরিহাস কিছু না করেই আজ সবার কাছে আমি অপরাধী। আর ঐদিকে আমার ডেভিল হাসবেন্ড পরে পরে ঘুমাচ্ছে বিছানায়। এই তো কিছু সময় আগের কথা।
বিয়ের ঠিক কবুল বলার আগ মুহূর্তে আমার সামনে এসে দাড়ায় মাহির ভাইয়া। আর সাথে সাথে আমার গালে কষে একটা চড় বসায়। আমি তো আহম্মকের মতো তাকিয়ে দেখে চল ছিলাম আসলে হচ্ছেটাকি এইসব? মানে কি!! কি করলাম আমি আবার? এইসব ভাবছি তখনই। মাহির ভাইয়া জোরে আমার গাল টিপে ধরে বলে
—- কি মনে ভেবেছিল তুই? আমি অন্য সবার মত মুখবুজে সব মেনে নিব? আমি মাহির অন্য সব ফালতু সস্তা কৃত্রিম প্রেমিকদের মতো না। আপনাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি। আদারার আর আমার বিয়ে হয়েগেছে। কিন্তু ভয়ের জন্য কাউকে বলতে পারেনি,,,, আর এখন ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে কি বলছে টা কি? মাহির ভাইয়াকে আমি পছন্দ করি জানি আমি তাকে প্রপোজও করেছিলাম কিন্তু সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজ, আমার বিয়ে হঠাৎ এমন কেন করছে সে? আর আমাদের বিয়েই বা কবে হলো? এই সব ভাবছিলাম তখনই মা এসে আমার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয়। বাবাতো মাথা নিচু করে আছে। আমার বাবা হলেন আমাদের গ্রামের চিয়ারম্যান সম্মান জিনসটা তার খুব প্রিয়। পরিবার বলতে মা,বাবা, আমি, চাচা, চাচি আর ইমারান ভাইয়া । আমি কিছু বলতে চাইলে আমার মা বলে
—- এর জন্য তুই এত ঢাকা যেতে চাইতি? আমি যদি জানতাম তুই এমন হবি, তাহলে তোকে জন্মের পর লবণ মুখে দিয়ে মেরে ফেলতাম…। কিভাবে পারলি নিজের বাবা মাকে ধোকে দিয়ে বিয়ে করতে? একটু গায়ে বাজলো না তোর? একবার ভাবলি না তোর বাবার সম্মানের কথা?
আম্মুর কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছিল মরে যাই। মাহির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। আমি বলি
—- আম্মু বিশ্বাস কর,,, আমাদের বিয়ে হয়নি। মিথ্যা বলছেন উনি আর,,,,, আর তুমিই বল আমারা কখন বিয়ে করব? মাহির ভাইয়া থাকে ঢাকায় আর আমি গ্রামে, আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা কর আম্মু। তখনই মাহির ভাইয়া বলে
— মামী তুমি ওর কথা বিশ্বাস করবে না। কিছুদিন আগে গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন আমাদের বাসায় বেড়াতে যায় তখনই আমাদের বিয়ে হয়। আর এই দেখ বিয়ের রেজেসট্রেট পেপার। আমি মুহূর্তেই চমকে গিয়েছিলাম আমি সেটা হাতে নিয়ে দেখি সত্যি এটা একটা কাবিন নামা আর সেখানে আমার আর মাহির ভাইয়া সাইন। এটা কিভাবে সম্ভব । পরক্ষণেই মনে পরে এটা তেমন কিছুই না আজকালকার জামানায় । আমি বলি
—- এটা মিথ্যে৷। বাবা আম্মু বিশ্বাস কর। ভাইয়া তুই অন্তত আমাকে বিশ্বাস কর। তখন আমার চাচি বলে
—- আমি আগেই বলছিলাম মাইয়া মানুষকে এত লাইদিতে নাই শুনলেন নাতো ভাইজান দেখছেন এখন। আমার চাচা বলে
—- আহহহহ্ তুমি চুপ করত। বরের বাবা আমার বাবার সামনে গিয়ে বলে
—- এভাবে আমাদের অপমান না করলেও পারতেন। চল সবাই বলেই সে আমার বর মানে আমার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে চলে যায়। এতক্ষণে কানাকানি শুরু হয়েগেছে। পাশের বাসার আন্টিরা একজন আরেকজনকে ফুসফুস করে কি যেন বলছে। বাবা কিছু বলছেনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল । তখনই মাহির ভাইয়া বলে
—- এর আগের বার আমাদের বিয়েটা হয়েছিল গোপনে, কিন্তু এবার আমি সেটা সবার সামনে করতে চাই। মামা মামী তোমাদের সমস্যা আছে?? বাবা চুপ মা বলে
—- কি বলবো কিছু বলার মুখ রেখেছে এই মেয়ে?
আমি বার বার বলার পরও কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। বরাবরই আমার কথা না শুনে সবাই আমাকে দোষারোপ করেছে। আমার কিছু করার ছিলনা। আমি বলে ছিলাম
—- আমি এই বিয়ে করবনা। তখন আমার চাচি বলে
—- বিয়ে করবিনা মানে, করেইত ফেলেছিস। এখন আবার এত ন্যাকামি না করে কবুল বলে বিদায় হও। আমার বাবা উপরে চলে যান সাথে আমার মাও । জোড় করেই আমার বিয়েটা দেয় আমার চাচা আর আমার চাচাতো ভাই ইমরান। আমি না চাও সত্ত্বেও বিয়েটা আমার করতে হয়। ইমারান আমার লাগেজটা নিয়ে মাহিরের গাড়িতে রেখে আসে।
তারপর মাহির ভাইয়া আমাদের বাড়িতে এক মুহূর্ত দেরি না করে আমকে টেনে গাড়িতে তুলে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়।কেমন বিয়ে হোল আমার? কেউ একটু আসলোনা আমাকে বিদায় দিতে। আমার নিজের মা বাবাও আমাকে বিশ্বাস করল না । কান্নায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে কেঁদেই দিলাম আমি। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরি জানি না আমি কিন্তু হঠাৎ করে ব্রেক করাতে আর সিটবেল্ট না বাধার কারণে মাথায় বেশ ব্যাথা পাই আর ঘুমও ভেঙে যায়। দেখি আমার ভাইয়াদের বাসায় পৌছে গিয়েছি। কিন্তু এখন ভয় আকরে ধরেছে যদি ফুপি আমাকে মেনে না নেয় আগের মতো আদরনা করে। যদি আমাকে বাসা থেকে বেড় করে দেয় । মাহির ভাইয়া আমাকে ফেলে গাড়ির দরজা খুবে জোরে লাগিয়ে হাটতে লাগে। আমি তখন ঠাই বসে ছিলাম সেখানে। মাহির ভাইয়া কিছু সময় পর আবার আমার কাছে ফিরে আসে আর দাঁত চেপে চেপে বলে
—- আপনি কি হেটে আসতে পারবেন নাকি হেলিকপ্টার পাঠাবো? আমি বললাম
— কেন করলেন আমার সাথে এমন? মাহির ভাইয়া বলে
— আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেরে নিয়ে তুই সুখে সংসার করবি? তোর জন্য আজ মায়া আমার কাছে নেই। আমি চমকে যাই মায়া আপুর কথা শুনে আমি শুধু এতটুকু বুঝতে পারছি যে সে আমাকে ভুল বুঝেছে। সে আমাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করে দারওয়ান চাচাকে বলে গাড়ি থেকে আমার লাগেজটা বের করে গাড়িটা রেখে আসতে। আমি তাকে কিছু বলতে চাইলে বলে
—- যদি আম্মুর সামনে ন্যাকামি করছিস খবর আছে। আমি যখন সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সামনে তাকিয়ে দেখি ফুপি আমার শাশুড়ী মা আমার ফুপাজান মানে আমার শুশুড় বাবা আর নিশু দাঁড়িয়ে। ফুপির হাতে বরন ডালা। আমি তো অবাক আমাকে দেখে ফুপি বলে
—- আমি জানতাম আমার ছেলে আমার ঘরের লক্ষ্মীকে ঠিকিই নিয়ে আসবে। মাহির আমাকে সব বলেছে। আমাদের বললেই পারতি তোরা। আমি তো তোকে বরাবরই নিজের ঘরের ছেলের বউ করে আনতে চেয়েছিলাম । আমি কিছু বলতে যাবো তখন মাহির ভাইয়া বলে
—- আহহহহ্ আম্মু বাদ দাও তো। কত দূর থেকে এসেছি একটু বুঝার চেষ্টা কর। মাহির ভাইয়ার বাবা বলে
—- হ্যা মাহির ঠিকই বলেছে, ওদের আগে রেস্ট নিতে দাও। আদারার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মুখটা একবারে শুকিয়ে আছে মেয়েটার।
মাহির ভাইয়া
বরাবরই ফুপির ফুপার সবার আদরের কিন্তু তিনি যে এই আদরের এমন কিছু করবে তা আমার জানাছিল না। কিন্তু একটা জিনিস সেটা হলো মাহির ভাইয়ার চাচা চাচিকে দেখছিনা। আর আমার বিয়েতে আমাদের সব আত্মীয় গেলেও ফুপিরা যায়নি হঠাৎ করে মাহির ভাইয়ার আগমন ঘটে। কিছুসময় পর আমাকে নিশু মাহির ভাইয়ার রুমে নিয়ে আসে। অন্য সব পাঁচটা ঘরের মতো না এটা। নিশু আমার লাগেজটা থেকে জামাকাপড় বের করে আলমারিতে ঘুছিয়ে রেখে একটু পর চলে যায় । রুমটা ফুল দিয়ে হালকা পাতলা সাজানো কিন্তু আমার এই সব বিরক্ত লাগছে। তখনই ঘরে প্রবেশ করে মহির ভাইয়া। আমি আর নিজের রাগটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। ছুটে গিয়ে চেপে ধরেছিলাম তার শার্টের কলার
—- কেন করলেন এমনটা আমার সাথে কেন? কি এমন ক্ষতি করিছি আমি আপনার? যার বদলে আপনি আমাকে আমার পরিবারের কাছে একটা খারপ মেয়ে বানাতে ২ বার ভাবলেন না? একটু লজ্জা করলোনা আপনার? মাহির ভাইয়া এক ঝটকায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে
—- তোর লজ্জা করলোনা আমার আর মায়ার এত সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট করতে। তুই আমার থেকে আমার ভালোবাসার মানুষটা কেড়ে নিয়েছিস তার বদলে আমি তোর আপন মানুষগুলোকে তোর থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আর যদি মাকে পাকনামি করে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাস আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আমি বললাম
—- আপনার ভুল হয়েছে। বিশ্বাস করুন আমি মায়া আপুকে কিছু বলেনি। আমি তো। আর কিছু বলতে যাবো তখনই সে আমার দুই গাল জোড়ে চেপে ধরে বলে
—- আর বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে না। নয়তো তোর এই মুখ আমি ভেঙে গুরগুর করে দিব। বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে বেলকনিতে নিয়ে আসে। আর আমাকে বেলকনিতে রেখে দরজা লাগিয়ে চলে যায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল আমি ভাইয়াকে বলেছিলাম
— মাহির ভাইয়া। প্লিজ দরজাটা খুল বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু না সে আমাকে একা ফেলে চলে যায় আর লাইটাও বন্ধ করে দেয় বলকনির ভয়ে আর ঠান্ডায় থরথর করে কেঁপে যাচ্ছি। হঠাৎই খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকায় আর ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি কিন্তু আমার সেই চিৎকার শুনোর মতো কেউ নেই। ডিভেলটা পরে পরে আরামসে ঘুমাচ্ছে,,, এত জলদি কেউ কিভাবে ঘুমাতে পারে? আর বাইরের আওয়াজ রুমেও প্রবেশ করেনা,,, দেখতে দেখতে বৃষ্টি কমে যায় কিন্তু ঠান্ডা বাতাস বইছে আর এই বাতাসের তীব্র ঠান্ডার কারণে শরীরে সব লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মাথা ব্যাথাও খুব করছে। ধীরে ধীরে চোখ বুঝে আসছে,,,,
চলবে