#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৩)
এতটা উত্তেজিত আগে কখনো দেখা যায় নি অভিনবর মাঝে। ছেলেটা যেন মনের সাথে যুদ্ধ করেই দাঁড়িয়ে আছে। ফ্লাইট ল্যান্ড করার কথা রাত দশটায়। সে আরও আগেই চলে এসেছে। অভিনবর এই ছেলেমানুষী দেখে ঝিলের মনটা ভালো হয়ে গেল। এই তো কিছু দিন আগের কথা। বাবা মায়ের খোঁজ নিতে নিতে অভিনব প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল। যখন শুনল বাবার শরীর খারাপ সে রীতিমতো কাঁপছিল। সেটা দেখেই ঝিলের স্মরণ হলো মানুষগুলোর কথা। তখুনি তরুণের সাথে যোগাযোগ করে সে। তারপরের বিষয়টা তরুণ ই সামলে নেয়। অভিনবর বড়ো হাতের তালুতে নিজের হাতের প্রবেশ করাল ঝিল। একটুখানি তাকিয়ে পুনরায় সামনে নজর ফেরায় অভিনব। ঝিলের হাতের উষ্ণতায় ভরসা পায় ছেলেটা। কেমন করে যেন খামচে ধরে। ঝিল হাল্কা ব্যথা পেলেও শব্দহীন দাঁড়িয়ে রইল। খানিক বাদে দুটি মানুষ বেরিয়ে এল। অভিনবর শরীর কাঁপছে। ঝিল নিজেও অস্বস্তিতে ভুগছে। অহেদ সরকার শুরুতেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন।
“মম,পাপা কে ভুলে গেলে বেটা?”
“স্যরি পাপা।”
“ইটস ওকে মাই বয়। তার আগে বল কেমন যাচ্ছে সময়?”
“ঠিক ঠাক।”
অভিনব মায়ের কাছে এগিয়ে গেল। ততক্ষণে ঝিল ও কাছে এসেছে। অহেদ সরকার মাথায় হাত রেখে বললেন, “কি মিষ্টি আমার মামুনি।”
লজ্জা পেল ঝিল। মাথাটা নিচু রেখেই বলল,
“আপনাদের বড়ো চিন্তায় ফেলেছিলাম আমরা।”
“ব্যাপার না। তোমরা যে সকলের কথা ভাবো এটাই আমাদের প্রাপ্তি। আসলে মামুনি স্বার্থ জিনিসটা বড়ো খারাপ। নতুবা সম্পর্ক গুলো এমন হওয়ার কথা ছিল না।”
“বাদ দেও এসব কথা। আগে দেখতে দাও আমার মা কে।”
ইহরিমা সরকার ঝিলকে বুকে টেনে নিলেন। ভদ্রমহিলার সাথে দারুণ এক সম্পর্ক ছিল ওর। বছরের পর বছর কথা না হওয়াতে সম্পর্কটা মলিন হওয়ার কথা থাকলেও তেমনটি হলো না। মাতৃস্নেহ পেয়ে ঝিল নুইয়ে পড়ল। আচমকা কেঁদে উঠল সে। অভিনবর দুটি নয়ন প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে। কি সুন্দর দৃশ্যটি।
পরের কয়েকটা দিন এত মধুর পার হলো যে অভিনবর মনে হতে লাগল বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ না রেখে বড়ো ভুল হয়ে গেছে। ঝিলের মুখের হাসি ওর বুকে প্রশান্তি নামায়। এত স্নেহ, ভালোবাসার মাঝে মুনতাহার কথা স্মরণ ও হলো না। এদিকে খবর পেয়েছে আরফানের নতুন স্ত্রী বাড়িতে ঝামেলা করে বের হয়ে গেছে। সে থাকবে না। তার জন্য আলাদা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা কেনার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে আরেকটচোট ঝামেলা হলো। ইববান শিকদার টাকা দিবেন না। আরফান রেগে গেল। সে বিজনেসে মূখ্য ভূমিকা রাখে বিধায় তাকে কিছু বলতেন না ভদ্রলোক। নতুবা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তটা আগেই নিতেন। এই সেই চিন্তা করে বড়ো ভুল হয়ে গেছে। তিনি আপসোস করলেন ওদেরকে বাড়িতে জায়গা দেওয়ার জন্য। আরফান বাড়ি ছাড়ার পূর্বে রীতিমতো ধমকে গিয়েছে। কারণ সে ভালোই জানে তাদের বিজনেসে বড় ভূমিকাটা তার। এতে অবশ্য পাত্তা দেন নি ভদ্রলোক। বয়স হলেও তিনি কাজের প্রতি ধৈর্য্যশীল। যৌবনে নিজ হাতে ব্যবসা সামাল দিয়েছেন। আজ তার নিজের সন্তান তাকে হুমকি দিচ্ছে! উপরে উপরের নিজেকে শক্ত দেখালেও ভেতরে তিনি ভেঙে গেছেন। এর প্রধান কারণ বাড়িতে নেই দুই ছেলে। হাজার হোক, বাড়ির সন্তানরাই হচ্ছে মূল শক্তি। পারিবারিক ঝামেলাটা বাইরে রটে গেলে শত্রুরা মুখিয়ে থাকে। সে দিক থেকে কিছুটা দূর্বল হয়ে গেলেন তিনি। এক সপ্তাহের মাঝে বিজনেসে ধস নেমে এল। আরফানের শূন্যতা তিনি বুঝতে পারছিলেন। তবে এমন উচ্ছন্নে যাওয়া সন্তানকে তিনি ফেরাতে নারাজ। অবশেষে ভাই আর বাড়ির বাকি তিন ছেলেদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। শেষে সিদ্ধান্ত হলো সবাই বিজনেসে মনোযোগ দিবে। চেষ্টাই সফলতা। সকলে সৎ থাকলে কারো সাধ্য হবে না দমানোর। এসব খবর শুনে সব থেকে বেশি ব্যথিত হলেন ইহরিমা সরকার। ভদ্রমহিলা ভাইদের আদরে বেড়ে উঠেছে। অনেকটাই ঝিলের মতো। সত্যি বলতে ঝিলের মাঝে নিজেকে দেখতে পান তিনি। নিজ কক্ষে স্বামীর সাথে আলোচনা করছিলেন তিনি। সম্পর্ক গুলো কেমন জটিল হয়ে উঠেছে। ঠিক ভুলের কোনো ইয়াত্তা নেই। ওনাদের আলোচনা শুনে ভেতরে এল না অভিনব। সে এত দিন চুপ থাকলেও বস্তুত প্ল্যান সাজাচ্ছিল মস্তিষ্কে। মানুষগুলো তিক্ত হয়েছে কীনা। এদের ঘায়েল করার এক মাত্র অস্ত্র হচ্ছে আবেগ। এই আবেগ ধরেই টান মা র তে হবে।
মুনতাহাদের বাড়িটা মূলত দোতলা। সামনে রয়েছে উঠান। বাড়ির চারপাশে কাঠের দেয়াল করা। শীত কমে আসলেও উঠানে আগুন জ্বালানো হয়েছে। কিছু চন্দন কাঠ রাখা আছে আশে পাশেই। প্রবেশ মাত্র তার সুবাস পেল অভিনব। চন্দনের ঘ্রাণ ভীষণ প্রিয় আরফানের। মুনতাহার কথা ভেবেও খারাপ লাগছে। মেয়েটি এখনো আরফানের প্রতি দূর্বল হয়ে আছে। পরিবেশ খুব বেশি মনোমুগ্ধকর বিধায় ঝিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চারপাশ জুড়ে প্রায় একই ধরনের বাড়ি। খুব মনোযোগ দিয়ে না দেখলে তফাৎ পাওয়া যায় না। ঝিলের মনোযোগ সরে এল মাহেরার কণ্ঠে। মেয়েটি ওর থেকেও লম্বা। দেখতে সুন্দরী আর মর্ডান।
“হে অভিনব! আপু বলেছিল তুমি আসবে। সেই থেকে অপেক্ষা করছি। কি খবর?”
“খুবই ভালো। তোমার কি অবস্থা?”
“গুড। সাথে…?”
“ঝিল, আমার ওয়াইফ।”
সৌজন্যতায় হাসল মাহেরা। কাছে এসে ঝিলকে জড়িয়েও ধরল। অথচ ওর দুটি চোখ ভীষণ জ্বলছে। তবু নিজেকে সামাল দিয়ে বলল, “বিয়ের দাওয়াত পেলাম না। এটা বেশ অন্যায় হলো।”
অভিনব এক গাল হাসল। যেতে যেতে জবাব দিল। “কখন যে বিয়ে করে ফেললাম টের ই পাই নি।”
“হা হা। বেশ ভালো বললে তো। টাকা বাঁচানোর ধান্দা।”
“না না একদম ই নয়। একদিন সময় করে ট্রিট দিব।”
“ওকে। পাওনা রইল তবে।”
“একদম।”
ওদের কথার মাঝে ঝিল টু শব্দটি করল না। এমন নয় মাহেরার আচারন অশোভন। তবু ভেতরে ভেতরে ওর খারাপ লাগা কাজ করছে। কেন এমন হচ্ছে?
মুনতাহার পরনে সাধারণ একটা থ্রি পিস। যা অভিনবর চোখে শান্তি এনে দিল। মেয়েটির অগোছালো ভাব ওর ভালো লাগে না। সে এগিয়ে এসে সকলের সাথে কথা বলল। এদিকে ঝিল কিছুটা বিব্রত। সহসা সকলের সাথে মেলামেশা করতে পারে না,তাই হয়ত। অভিনব সকলের সাথে কুশলাদি শেষ করে ঝিলের নিকটে এল।
“খারাপ লাগছে?”
“উঁহু।”
“একদম ঘাবড়ে যাবে না। আমি আছি।”
ঝিল অভিনবর জ্যাকেট খামচে ধরল। কেন যেন ওর বড়ো ভয় হচ্ছে।
“আপু তুমি অস্বস্তি বোধ করছ?”
“না মানে।”
“আমার সাথে এসো।”
মাহের ওকে নিজ ঘরে নিয়ে এল। ওর স্ত্রী চার মাসের গর্ভবতী। তাই ঘর থেকে বের হতে দেয় না। নতুন মানুষ পেয়ে গল্প করতে লাগল। চট জলদি মিশে গেল। উচ্চ শব্দে হেসে যাচ্ছে সে।
“কি ব্যপার ভাবি? এত হাসছ যে!”
“বোসো মাহেরা। ঝিলের সাথে গল্প করতে দারুণ লাগছে। ভারী মিষ্টি মেয়ে।”
“হুম। কোন ক্লাসে পড় যেন তুমি?”
“অনার্স প্রথম বর্ষ। আপাতত পড়ছি না।”
“কেন?”
“কাগজ পত্র নিয়ে একটু সমস্যা। অভিনব ঠিক ঠাক করে পুনরায় ভর্তি করাবে।”
ঝিলের মুখে অভিনবর নাম শুনে তিক্ত হয়ে এল মাহেরার ভেতরটা। মলিনা আড়াল না করেই সে চা ঢালতে লাগল।
“পালিয়ে বিয়ে করেছ তোমরা?”
“তেমন নয়।”
মাহেরা পুনরায় প্রশ্ন করার আগেই অভিনব এল। লম্বা হেসে বলল, “দুঃখিত। মেয়েলি আড্ডাতে বিরক্ত করার জন্য।”
“একদম ই দুঃখিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি জয়েন করতে পারো আমাদের সাথে।”
“থ্যাংকস।”
পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করল অভিনব। সেটা মিশকাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “মাহেরের সাথে আমার একবার কথা হলেও মনের দিক থেকে আমরা বেশ ফ্রেন্ডলি হয়ে গিয়েছিলাম। বয়সে মাহের আমার ছোট। সেই হিসেবে তোমাকে ছোট আপু বলেই ট্রিট করছি। এটা আমার আর ঝিলের তরফ থেকে।”
“এসবের কি প্রয়োজন ছিল ভাইয়া। আপনি এসেছেন এটাই অনেক।”
“এটা বাবুর জন্য।”
“থ্যাংকস।”
মাহেরা চায়ের গ্লাসে চা দিয়ে বলল,”ফুলের চা দিয়ে তোমায় ওয়েলকাম করে নিলাম। খেয়ে দেখ রিফ্রেশ লাগবে।”
“ওয়াও। এটা তো বেশ ভালো।”
চটপট কাপ তুলে নিল অভিনব। ফুলের চা বেশ পছন্দ ওর। ঝিলের মুখটা বিরস হয়ে আছে। অভিনবর পাশে থাকা মাহেরাকে ওর ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না তা জানা নেই। আসলেই কি এটার কোনো বিশেষ ব্যখা হয় না?
চলবে….
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৪)
খাবারের টেবিলে বসে একচোট গল্প হলো। পুরো গল্পের কেন্দ্রবিন্দু অভিনব। ব্যক্তিগত ভাবে ছেলেটাকে সবাই পছন্দ করেছে। বিশেষ করে অভিনবর ব্যক্তিত্ব। কথায় কথায় কানাডার সব থেকে বড় চিরিয়াখানায় ঘুরতে যাওয়ার কথা হলো। মাহের অবশ্য এতে নারাজ। সে তার বউকে কোথাও বের হতে দিবে না। কিন্তু বেচারির অবস্থা ও বিশেষ ভালো নয়। ঘরে বসে থেকে থেকে কেমন যেন হয়ে গেছে। চিরিয়াখানায় না নিয়ে গেলেও মাহের বলেছে ভিডিও কলে রাখবে। এতেই যেন খুশি হলো মিশকাত। অবেশেষ ঠিক হলো ওরা সবাই টরন্টো বেড়াতে আসবে। যেহেতু শীত কমে এসেছে,তাই ঘুরেও মজা পাওয়া যাবে। একটা দিন থাকার কথা থাকলেও ওরা থাকল না। অভিনবর এ সিদ্ধান্তের কারণ হচ্ছে ঝিল। মেয়েটির অস্বস্তি চোখে পড়েছে। ফেরার পথে অভিনবর বাহু চেপে রইল ঝিল। ছেলেটা স্মিত হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“একটা কথা বলবে অভিনব?”
“হুম।”
“মাহেরা আপু কি তোমায় পছন্দ করত?”
“করত না,এখনো করে।”
ঝিলের মুখটা মলিন হয়ে এল। অভিনব মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। সকলের অগোচরে গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বলল, “ভয় পাচ্ছ?”
“না। ভয় কেন পাব।”
“তোমার চোখে ভয় দেখা যায় ঝিল।”
“জানি না। তবে তোমার পাশে ওকে দেখে ভালো লাগছিল না আমার।”
“বোকা মেয়ে। আমি কি তোমায় কখনো ছাড়ব?”
“তবু বুকের ভেতরটা কেমন করে যেন। এমন কেন হয়?”
“ঘুমাও। ভালো লাগবে।”
টরন্টো ফিরে এসে ঝিল একদমই ফুরফুরে হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইহরিমা সরকারের জন্য। তিনি যে মাতৃস্নেহে মেয়েটিকে আগলে নিয়েছে তা বলতেই হয়। এমি আজকাল ফ্রি সময় পার করে। তাকে রান্না করতেই হয় না। উল্টো খাবার তুলে খাওয়ানোর মতো অবস্থা। ঝিলকে পেয়ে সে বেশ খুশি হলো।
“তোমাকে দেখে কি যে শান্তি লাগছে।”
“কেন এমি?”
“ওল্ড আন্টি তো আমায় কাজ ই করতে দেয় না। সারাদিন বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি।”
“ওল্ড আন্টি!” ফিক করে হেসে দিল ঝিল। এমি নিজেও হাসল। তারপর বলল, “আন্টি বয়সের তুলনায় স্মার্ট আর সুন্দরী। এটা বলার পর আন্টি বলল যে তাকে নাকি পাম দিচ্ছি। তাই ওল্ড আন্টি বললাম।”
“বেশ তো।”
এমি আর ঝিলের গল্পের মাঝে ইহরিমা এলেন চপ আর মুড়ি মাখা নিয়ে। এমি এক চামচ মুখে দিয়েই বলল, “ওয়াও। এটা খুব টেস্টি।”
“হুম। বাংলাদেশে মুড়ি মাখা বেশ প্রচলিত।”
পাশ থেকে ইহরিমা বললেন, “কত বছর হয় দেশের মাটিতে পা রাখি না।” বলতে বলতে বসলেন তিনি। তারপর পুনরায় বললেন,
“জানো ঝিল, তোমার আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম আমরা, দুটো পরিবারকে মিল করাবোই। কিন্তু কিছুতেই হচ্ছে না। এই ব্যথা আমায় শেষ করে দিচ্ছে।”
মায়ের কথা স্মরণ হতেই ঝিলের বুক চিন চিন করে উঠল। সেটা লক্ষ্য করে বুকে টেনে নিলেন ভদ্রমহিলা।
“এক আম্মু নেই তো কি হয়েছে? আমি আছি না? এখনো আন্টি বলে ডাকবে?”
“উঁহু।”
“তাহলে?”
“আম্মু।” শব্দটি উচ্চারণ করেই কান্নায় ভেঙে পড়ল ঝিল। ইহরিমার সরকারের দুটি চোখ ও ভেজা। এদের কথার কিছুই বুঝতে পারল না এমি। তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছে কোনো এক স্মৃতি বেশ দহন দিচ্ছে।
এক সপ্তাহ পর মুনতাহা,মাহেরা,আফরা আর মাহের এল অভিনবর বাড়িতে। নানান গিফ্ট এনেছে ওরা। মুনতাহা গত কয়েকদিন অ্যালকোহল থেকে দূরে ছিল। তাই চেহারায় অদ্ভুত দ্যুতির দেখা মিলল। ঝিল কাছে আসতেই হাসল মেয়েটি।
“কেমন আছ ঝিল?”
“ভালো আপু। তোমাকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে।”
মাহেরা এসেই অভিনবর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। সে দিকে তাকিয়ে ঝিল বলল, “মাহেরা আপুর বয়ফ্রেন্ড নেই?”
“ওর কথা আর কি বলব। উড়নচন্ডী সে।”
“আর আফরা আপুর?”
“সে তো তামীমের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তবে আমাদের সম্পর্কটা ভাঙার পর থেকে ওদের সম্পর্কটাও মলিন হয়ে গেছে।”
অকপটে কথাগুলো বলেই মুনতাহা বলল,
“পৃথিবীর সব থেকে দুঃখের একটি হলো স্বামীর ভালোবাসা না পাওয়া। বিছানার সুখের থেকে মনের সুখ বেশি জরুরি। কিন্তু আমার ভাগ্য বড়ো খারাপ।”
“এমনটা বলিও না। আরফান ভাইয়া নিশ্চয়ই ভুল বুঝতে পারবে।”
“কিন্তু আমার কি উচিত হবে ফিরে যাওয়া?”
এ প্রশ্নের জবাব নেই ঝিলের নিকট। ওকে বিব্রত হতে দেখে মুনতাহা বলল, “আসো সবার সাথে বসি গিয়ে।”
ইশারায় কিছু একটা বলল ঝিল। অভিনব উঠে এসে বলল, “কি হলো?”
“মাহেরা আপুর সাথে এত গল্প কিসের হু?”
“জেলাস হচ্ছেন মিসেস?”
“তো। জেলাস হবো না।”
“আরে বাবা সৌজন্যতা বোধ থেকে গল্প করতেই হয়।”
“না তুমি করবে না।”
“আমার প্রজাপতি দেখি ভীষণ রেগে আছেন।”
“রাগব না?”
ঝিলের ঘাড়ে থুতনি ঠেকাল অভিনব। তারপর বলল, “হু হু রাগার ই কথা।”
“ছাড়ো।”
“না না ছাড়ব কেন? এখন তো ভালোবাসব।”
“কিসের ভালোবাসা। কোনো ভালোবাসা নেই। সব লোক দেখানো।”
“উম। বউ দেখি খুব রেগেছে।”
“আমার ভয় হয়।”
টুপ করে গালে ঠোঁটের ছোঁয়া দেয় অভিনব। তারপর বলে, “কিসের এত ভয়? তুমি জানো না তোমার অভিনব কতটা ভালোবাসে তোমায়।”
“তবু ভয় হয়।”
বলতে বলতে ছেলেটার বুকে মুখ গুঁজে দিল ঝিল। নরম তুলতুলে হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অভিনবর অবাধ্য হাত দুটিও মেয়েটির স্পর্শের সাথে তাল মেলাল। মাহেরা এসেছিল পানি নেওয়ার জন্য। এ দৃশ্য দেখে থেমে গেল সে। সাধারণ দৃষ্টিতে লজ্জা পাওয়ার কথা থাকলেও ওর ভীষণ রাগ হলো। সাথে কষ্টে বুকের ভেতরটা খান খান হতে লাগল। প্রিয় মানুষের সাথে অন্য মেয়ের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত আসলেই চোখে দেখা যায় না। কিন্তু ভাগ্য, সে তো নির্বিঘ্নে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
মাহেরার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে চোখের জল ফেলত। কিন্তু মাহেরা একদমই তেমন করল না। তার বুকের ভেতর জ্বলছে ঠিকই তবে মুখের মধ্যে বিন্দুসম প্রকাশ নেই। সে এত বেশি ফুরফুরে মেজাজে যে ঝিলের সেটা নিয়েও ভয় হলো। মাহেরাকে সে আসলেই ভয় পাচ্ছে। রাতের বেলা বাড়ির সামনে বারবিকিউর আয়োজন করা হলো। মাহেরের গানের গলা ভালো। সে গিটার নিয়ে এসেছে। মাহেরা মিশুক প্রকৃতির বটে। সে নিজ থেকেই আয়োজনে হাত লাগিয়েছে। অন্যদিকে ঝিল চুপচাপ দেখছে। সে সঙ্গ দিচ্ছে মুনতাহাকে।
“আপু,একটা কথা জানার ইচ্ছে হচ্ছে।”
“কি কথা?”
“আরফান ভাইয়া কি শুরু থেকেই এমন ছিল?”
“সেটা তো জানি না বোন। তবে আমার ধারণা শুরুতেই তার জীবনে অন্য কেউ আসে নি।”
“তাহলে এমন কেন হয়ে গেল সে।”
“হয়ত আমা ভাগ্যটাই এমন ছিল। আমাদের পারিবারিক দেখায় বিয়ে হয়। সবথেকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে বিয়ের প্রথম রাত্রিতেই সমস্ত ভালোবাসায় সিক্ত করে দিয়েছিল সে। অথচ এত বছরের সংসারে নাকি কোনো ভালোবাসা ছিল না। বড়ো বোকা আমি।”
মুনতাহার তপ্ত শ্বাসে টরন্টো শহরে যেন উষ্ণতা নেমে এল। শুকিয়ে যাওয়া দুটি চোখ আজ পুনরায় সিক্ত হলো। ঝিল দু হাতে আগলে ধরল। অভিনব সব আয়োজন শেষে ওদের ডেকে নিল। ঝিলের পাশে বসেছে সে। আর নাক বরাবর বসেছে মাহেরা ও আফরা। ওদের দুজনের রোমাঞ্চিত দৃশ্য দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। পাশ থেকে আফরা হাত খামচে ধরল।
“ওরা হাসবেন্ড ওয়াইফ। তাও অনেক বছর ধরে।”
“বাট আমার কি দোষ ছিল আফরা?”
“তোর উচিত নিজেকে কন্ট্রোল করা।”
“বাট আই কান্ট।”
মাহের তখুনি চিল্লিয়ে উঠল। “আমি একা গাইলে চলবে না। সবাইকে গাইতে হবে।”
সকলে সম্মতি দিল। গিটারের দু একটা শব্দ পেয়ে পাশের বাসা থেকে তিনটে বাচ্চা ছুটে এল। ঝিলের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো। এসেই বসে পড়ল ওরা। ঝিল হাসল। বাচ্চা গুলো আনন্দ পাচ্ছে বেশ। মাহের একটা ইংলিশ গানের মাঝ থেকে শুরু করল।
“গার্ল ইউ নো আই ওয়ান্ট ইউর লাভ,
ইউর লাভ ওয়াস হ্যান্ডমেড ফর সামবডি লাইক মি।
কাম অন নাউ ফলো মাই লিড,
আই মেবি ক্রেজি ডোন্ট মাইন্ড মি।”
গান গাওয়ার সময় মিশকাত ভিডিও কলে ছিল। সে সেখান থেকে ইনজয় করছে। গান শেষ হতেই মাহের মিশকাতের সাথে কথা বলতে লাগল। ওদের দুজনের এই মুহূর্তের প্রশংসা করছে সবাই। ঝিলের মাথাটা অভিনবর কাঁধে এলানো। বারবিকিউর দারুণ ঘ্রাণটা নাকে এসে লাগছে। তার সাথে আসছে মৃদু মিউজিকের আওয়াজ। হীম শীতল বাতাসে মিশে আছে চন্দন কাঠের সুবাস। ভালোলাগা আর ভালোবাসায় ভরে উঠেছে ওদের এই মুহূর্ত। অন্যদিকে কিছু হৃদয় ব্যর্থতার প্রহর গুনে চলেছে। সবার জীবনে সব সুখে থাকে না।
চলবে…
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩৫)
সুখের দাম অনেক বেশি। সেই সুখ যদি টাকা দিয়ে কেনা যেত তবে নিশ্চয়ই সুখ কিনে নিত অভিনব। নিজের জন্য নয়,কাছের মানুষগুলোর জন্য। এই যে ওর হৃদয়ে সকলের জন্য মায়া জাগে, এসবের নেই কোনো মানে। তবু সে চায় একটু সুখ এনে দিতে। তাই হয়ত কল করেছিল আরফানের নাম্বারে। ছেলেটার কথায় তখন আত্মগরিমা, সাথে অবশ্য স্বীয় পরিবারের প্রতি ঘৃণাও রয়েছে। সে সাফ সাফ বলল, “তোর জীবনটা আজ এমন কেন বল তো, তাদের জন্যেই তো। না হলে আজ কত সুখী থাকতি। আর তুই নিজেও বা কেমন, অন্যের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিচ্ছিস।”
কত সহজে কথা গুলো বলল আরফান। অভিনবর বলতে ইচ্ছে হয় পরিবারকে নিয়ে যে সুখ, সে সুখের মতো আর কিছু নেই। তবে সেসব বলল না সে। প্রসঙ্গ বদলানোর ন্যায় বলল, “তোমার জীবন কেমন চলে?”
“বিন্দাজ।” কথায় যে শরীর ছাড়া ভাব তা বেশ বুঝতে পারছে অভিনব। কথার এক পর্যায়ে মুনতাহার কথাটা বলল। ওপাশের ব্যক্তিটি নিশ্চয়ই কেঁপে উঠেছে। অনেক দিন পর নামটি শুনেছে কীনা। কিন্তু চালাক চতুর সে খুব সুন্দর সামলে নিল নিজেকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার ভাব করে বলল, “মুনতাহাকে ধরে নেই আমি। সে নতুন জীবন শুরু করলেই পারে।”
কি নিষ্ঠুর শুনায় শব্দ গুলো। এই সময়ে আরফানের জন্য বড়ো আপসোস হলো অভিনবর। ছেলেটা বুঝতে পারছে না কত বড়ো ভুল করেছে সে। কথার বদল প্রয়োজন বোধ করে এক পর্যায়ে আরফান নিজ থেকেই বলল, “বাবা আমার সাথে কাজটা ঠিক করে নি।”
“মামা যা সঠিক মনে করেছেন তাই করেছে আরফান ভাই। তুমি তো তাও বাড়িতে থাকতে পেরেছ,কিন্তু দানেশ তো ঘর ছাড়া।” আরফান যেন একটু মজা পেল। হাল্কা হেসে জবাব দিল, “মাসে মাসে তো খরচ পাঠানো হয়।”
“টাকার থেকে সম্পর্ক বড়ো আরফান ভাই।”
“মামার হয়ে সাফাই গাচ্ছিস?”
“তেমন নয়। আচ্ছা বাদ দাও। তোমাকে যে কারণে কল করা,মুনতাহাকে বুঝিয়ে বলব যাতে তোমায় ডিভোর্স দেয়।”
“হুম।” বলেই মৌন হয়ে গেল আরফান। অভিনব বুঝল সঠিক জায়গায় ঘায়েল করেছে সে। হাজার হোক, একসাথে অতো গুলো বছর থেকেছে। ডিভোর্সের কথা বলে একটু হলেও টনক নড়ানো গিয়েছে। কল রেখে টান হয়ে বসল অভিনব। ঝিল গোসল করে এসেছে। ভেজা চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি ঝরছে। সেদিকে তাকিয়ে পুরুষ মন জেগে উঠল। খানিকবাদেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল সে। একে অপরের উষ্ণতায় মেখে যাচ্ছে কেবল। অথচ ওরা জানতে ও পারল না সুন্দর এই মুহূর্ত দেখে কারো বুকের শ্বাস থেমে গেছে!
বাচ্চাদের ঘুরাঘুরিতে যেতে চাইলেন না দম্পতি। তাদের জোরাজুরি করছে ঝিল। বার বার বলে যাচ্ছে গেলে ভালো লাগবে। কিন্তু তারা সায় দিচ্ছেন না। যৌবনে কম ঘুরেন নি ওনারা। তাছাড়া বাচ্চাদের মধ্যে গিয়ে একটা অস্বস্তি তৈরি করতে চান না। তার থেকে ভালো বাড়িতে বসে দুজনে সিনেমা দেখবে। অনেক দিন হয় এক সাথে বসে সিনেমা দেখা হয় না। প্রস্তাবটা দারুণ লাগল অভিনবর। সে ঝিলকে বুঝিয়ে বলল। মা বাবার একান্তে সময় গুলো নিশ্চয়ই সুন্দর। এদিকে আফরা আর মাহেরা তৈরি হচ্ছে। মেকাপ লাগাতে লাগাতে অগোছালো ভাবে মাহেরা শুধায়, “আমাদের জীবন থেকে প্রিয় মানুষ গুলোর অস্তিত্ব এত দ্রুত হারিয়ে যায় কেন রে আফরা?”
আফরা উত্তর করতে পারল না। মাহেরা আলগোছে উঠে এসেছে। চোখের নিচে তার কালি জমেছে। কনসিলার দিয়ে ঢেকে নিলেও চোখে মুখে বিষণ্নতা বোঝা যাচ্ছে। হাল্কা শীতল বাতাবরণের সাথে ভেসে আসছে চন্দন কাঠের মিহি সুবাস। কিচেন থেকে আসছে বাহারি সব সুস্বাদু রান্নার ঘ্রাণ। সেসব পেটের ভেতর মোচড় দিলেও মনটাকে প্রশমিত করতে পারছে না। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। আফরার হাতের উষ্ণতা পেয়ে ঘুরল মাহেরা।
“তুই ভেঙে পড়েছিস।”
“জানি না,কেন যে এত আকর্ষণ পাই। অথচ সে আমার জন্য নিষিদ্ধ।”
“নিষিদ্ধ বলেই এত আকর্ষণ। তুই অত্যন্ত জেদী মানুষ। মেনে নিতে পারছিস না ঝিল আর অভিনব ভাইয়ার বিয়েটা।”
“হয়ত।”
বিষণ্নতায় ভরা কণ্ঠটা কেমন কম্পন ধরে গেল। হৃদয়ে উদয় হয়েছে তকতকে সব ক্ষ ত। এত খারাপ লাগছে ওর। চোখের সামনে অভিনব আর ঝিলের প্রেমলীলা সত্যিই ওকে কষ্ট দিচ্ছে। একটু নয় অনেকখানি কষ্ট।
খুব সকালে রওনা হয়েছে ওরা। ঝিলের খোলা চুল গুলো হাল্কা দোল খাচ্ছে। অভিনব সেটা ঠিক করে দিতে দিতে বলল,”তোমার এই চুলে আমার ভীষণ লোভ জাগে।”
“কেন?”
“জানি না। তবে বুকের ভেতর কেমন করে।”
“যা তা।”
“হুম সত্যি। সারাক্ষণ রোমান্স এর ভূতে ধরে। দিনের পরিধি কমিয়ে আনতে পারলে ভালো হতো। একজন স্বামী জানে দিনের থেকে রাত কতটা সুন্দর।”
চোখ রাঙিয়ে হাসল ঝিল। অভিনবর বলিষ্ঠ হাতের মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে দিয়ে বলল,
“ইস তুমি কেন এত বছর আমার কাছে এলে না বলো তো।”
“আপনি তো তখন পিচ্চি ম্যাডাম। আঠারো না হওয়া অবধি কিছুই করা যাচ্ছিল না।”
ঝিল কিছু বলল না। অভিনবর কাঁধে মাথা এলিয়ে রাখল। ওরা গাড়ির পেছনের সিটে বসেছে। তার আগে বসেছে আফরা,মাহেরা আর মুনতাহা। ফিসফিস করে বলা কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে মাহেরা। সে ব্যথা নিয়ে আফরার দিকে তাকাল। আফরা শক্ত করে হাতটা ধরল। ইশারায় বুঝাল এটা ওদের অধিকার। পরের রাস্তাটুকু অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গান শুনতে শুনতে এল মাহেরা। ওর এই বিষণ্ন মুখটা দেখে মাহের দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বোনের অনুভূতি ধরেছিল অনেক আগেই। ভেবেছিল অভিনবর সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করবে। কিন্তু তেমনটা হওয়ার ছিল না। সে বহু আগেই অন্যের অধিকার ধরে গেছে।
টরন্টো চিরিয়াখানা যেমন বিশাল তেমনি এর স্নিগ্ধ এর সৌন্দর্য। দারুণ এই পরিবেশে মুগ্ধ হতে থাকে কত পর্যটক। এর বিশেষত্বর মূল হচ্ছে পরিবেশ। চিরিয়াখানার ভেতরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’র পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রও। অনেকটা রুপকথার মতোই সাজানো। মাহের গাড়ি থেকে নেমে লম্বা এক শ্বাস নিল। মুক্ত বাতাসে মন প্রাণ সব জুড়িয়ে এসেছে। ঝিলের হাত ধরে আছে অভিনব। বিষয়টা মাহেরাকে যন্ত্রণা দিলেও মুখ বুজে রইল সে। হাজার হোক,তাদের সম্পর্ক তো বৈধ। ক্ষণে ক্ষণে হৃদয় পো ড়া গন্ধে পরিবেশটা নষ্ট না হোক। সে মুনতাহার পাশে এসে দাঁড়াল।
“কেমন লাগছে আপু?”
“ভালো। তোরা আছিস এতেই শান্তি।”
“আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে।”
“একদমই নয়।”
“মিথ্যে বলিস না।” বলেই বোনকে চেপে ধরল মাহেরা। হাল্কা হাতে পিঠ বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “কথা ছিল এ বছরই আরফান ভাইয়ার সাথে কানাডা ট্যুরে আসবি তুই। টরন্টো জু তে আসা নিয়ে সব থেকে বেশি উত্তেজনায় ছিলি। অথচ সবটা হচ্ছে,কিন্তু আরফান ভাইয়া নেই।”
“এসব কথা বলিস না মাহেরা।”
“দুঃখ আড়াল করছিস?”
“উহু।”
“তবে?”
“ভালো থাকার চেষ্টা করছি। যেমনটা করছিস তুই।”
দৃষ্টি সরিয়ে নিল মাহেরা। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে মুনতাহা বলল, “দেখছিস তো, তোর আপু কত কষ্টে আছে। ঝিলের জীবনে বাঁধা হোস না বোন। সৃষ্টিকর্তা সইবে না।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মাহেরা। বোনের দিকে তাকাতেও অস্বস্তি হচ্ছে তার। খানিক বাদে অভিনব সবাইকে ডেকে নিল। ঝিলের হাতে চকলেট আর চিপসের প্যাকেট। আফরা একটু মজা করে বলল, “ভেতরে লাঞ্চ করার ব্যবস্থা আছে ঝিল। তবে এসব কেন?”
একটু করে হাসল ঝিল। অভিনব মেয়েটার কপাল বেয়ে নেমে আসা চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল, “ওর ছোট ছোট ক্ষিধে পায়।”
লজ্জা পেল মেয়েটি। অন্যদিকে সবাই হাসছে। অভিনব ও হাসল। নাকে স্পর্শ করে বলল, “আজকাল আমার ও ছোট ছোট ক্ষিধে পায়।”
আর কেউ না বুঝলেও অভিনবর ইশারা বুঝতে পারল ঝিল। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ওর ফর্সা ছোট মুখটা। মানুষটা সকলের সামনে এমন ভাবে লজ্জা দিচ্ছে কেন!
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি