#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩০)
টরন্টো শহর দিনকে দিন বড্ড আপন হয়ে উঠেছে ঝিলের। ভ্রমণপিপাসু সে টরন্টোর সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লিখতে চায়। তবে কবি না বিধায় লিখতে পারে না। এক বিকেলে কথা। অভিনব দ্রুতই চলে এসেছে। এমি রান্না করছে। সুস্বাদু খাবারের গন্ধটা একেবারে জ্বালা ধরিয়ে দিল। ক্ষুধাটা তর তর করে বৃদ্ধি পেল। ঝিল তখন জানালার কাছে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে। বাইরের তুষারপাত থেমেছে। বরফ জমে আছে সব খানেই। কাচের জানালাটা ঘোলা হয়ে এসেছে। তার মাঝেই আঙুলের সাহায্যে বড় বড় অক্ষরে লিখেছে অভিনব ও ঝিল। বিষয়টা দেখতে পেয়ে হাসল সে। মেয়েটির স্বভাবে বাচ্চামো রয়েছে। আসলে প্রতিটি মানুষের মাঝেই বাচ্চামো লুকিয়ে থাকে। ঝিল আনমনে বাইরে তাকিয়ে। গায়ে জড়ানো পাতলা সোয়েটার। হিটারের উত্তাপে উষ্ণ কক্ষ। এর মাঝে শীতল হাতটা ঘাড়ে এসে স্পর্শ করল। মেয়েটির পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। অভিনব হেসে আরেকটু কাছে এল।
“কি ব্যপার প্রজাপতি। আপনার শরীরে দেখি বিষণ্নতার গন্ধ। মন খারাপ?”
“উহু।”
“তাহলে? এত বিষণ্ন কেন লাগছে?”
“বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে।”
“এমির সাথে ঘুরে আসতে।”
“সেটা তো রোজ ই যাই। আমার অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে।”
ঘরবন্দী ঝিলের মনের অবস্থা স্মরণ করে অভিনবর মন খারাপ হলো। এত দিন হলেও ঝিলকে নিয়ে বাইরে যাওয়া হয় নি। কানাডায় আসার পর থেকে বড্ড ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। নতুন কিছু শুরু করেছে বিধায় কাজের চাপ ও বেশি। মেয়েটিকে ভার্সিটিতে ভর্তি করানো দরকার। কিন্তু কাগজ পত্র সমস্যা করছে। সেগুলো ঠিক ঠাক করার জন্য ছুটতে হচ্ছে এদিক সেদিক। অভিনব খেয়াল করল শুরুর দিকে ঘরবন্দী জীবন উপভোগ করলেও ঝিল আজ বড্ড তিক্ত। টরন্টো শহরের শীতল হাওয়া ওর উপরিভাগ স্পর্শ করলেও কোথাও একটা খামতি মিলছে। দীর্ঘশ্বাস গুলো চোখে মুখে পড়তেই ঝিল প্রশ্ন ছুঁড়ে, “খাবার খাবে না? চেঞ্জ করে নাও। আমি এমিকে সাহায্য করি।”
ঝিল চলে যেতে নিলে অভিনব হাত ধরে আটকে দিল। সামান্য এগিয়ে এসে খুঁটিয়ে দেখছে ওকে।
“কি হলো?”
“দেখছি।”
“কি দেখ?”
“তোমাকে।”
“রোজ ই তো দেখ।”
“উঁহু আজ স্পেশাল ভাবে দেখছি।”
অভিনবর জ্যাকেটের বোতাম গুলো খুলতে লাগল ঝিল। মাথাটা নিচু করেছে বিধায় ডান হাতের সাহায্য থুতনি উঁচু করল অভিনব। ঝিলের দুটি চোখ কেমন ব্যাথার সুর তুলেছে। অভিনবর দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মেলাতে অস্বস্তি হলো ওর। দৃষ্টি নিচু করতেই বিরক্তি প্রকাশ করে অভিনব।
“আমার দিকে তাকাও।”
“এসো তো তুমি। খাবার খেতে হবে। এমি চলে যাবে একটু পর।”
“আগে তাকাও।”
“চলো তো।”
“তাকাতে বলেছি ঝিল।”
ধমকের সুরটা ঝিলকে তাকাতে বাধ্য করল। মেয়েটির চোখ থেকে এবার পানি ঝরতে লাগল। একটা সময় পর দূরে সরে এল অভিনব। খাবারের টেবিলে বসে দুজনের একটা কথাও হলো না। এমি কিছু সময় পূর্বেই চলে গেছে। পুরোটা রাত অভিনব ঘুমাতে পারে নি। ঝিলের সকল সুখ শান্তি যেন আজ হারিয়ে গেছে। মেয়েটি নিশ্চয়ই কষ্টে আছে। এত ভালোবাসার পর ও অভিনবর মনে হলো পরিবার ছাড়া আসলেই ওরা সুখে নেই। এই সুখের মাঝে পরিবারকে না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। শেষ রাতে ঝিলের কাছাকাছি হয় অভিনব। মেয়েটি নিজেও ঘুমায় নি। অভিনবর উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ গুলো ঝিলের শরীরে উত্তাপ ছড়ায়। শরীর থেকে ভেসে আসা সুবাসে আরেকটু সুন্দর হয়ে উঠে মুহূর্তটা। ঝিলের গলার কাছটায় এগিয়ে এসে অভিনব বলে, “এই কষ্টটা সহ্য করে নাও ঝিল। কথা দিচ্ছি আমি পুনরায় চেষ্টা করব।”
এতদিন অভিনব সত্যিই কারো খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি নিজ বাবা মায়ের সাথেও কথা বলে নি। তরুণ ও জানে না কোথায় আছে ওরা। ঝিল যেমন পরিবার ছাড়া কষ্টে আছে অভিনবও তেমনি। মেয়েটির কষ্টের মাত্রা বুঝতে পারে সে। মা বিহীন পাঁচ ভাইয়ের আদরে কিশোরী জীবন গত করা ঝিলের হৃদয়ের হাহাকার অভিনবর পরের পদক্ষেপ গুলোকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছিল। পুনরায় চেষ্টা করেও কি বিশেষ লাভ হবে? ভাঙবে কি পাষাণ মানুষগুলো মনের দেয়াল। তারা কি বুঝবে কখনো, তাদের আত্মসম্মানের তাপে পু ড় ছে দুটি হৃদয়? এই ভাবনার কোনো ব্যাখা নেই। কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না সে। সে সময় অভিনবর পার্টনার দরজায় নক করে। ড্যানিয়েলকে দেখে হাসল অভিনব। ছেলেটা ওর বয়সী।
“কি খবর ড্যানিয়েল?”
“ভালো অভিনব। তোমার কথা স্মরণ হচ্ছিল। তাই চলে এলাম।”
“গুড। কফি নিবে নিশ্চয়ই?”
“একদম।”
কফি আসার আগ অবধি অগোছালো কিছু কথা চলল ওদের। অভিনব বার বার মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। ওর এই অবস্থা বেশ বুঝতে পারল ড্যানিয়েল। কফি কাপটা রাখার সময় ইষৎ শব্দ করল। মনোযোগ ফিরিয়ে অভিনব বলল, “স্যরি। আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।”
“ইটস ওকে। তোমার জন্য একটা সংবাদ নিয়ে এসেছি।”
“হ্যাঁ বলো।”
“ক্রিসমাসের জন্য উইনিপেগে পার্টির আয়োজন করেছি। তোমার ওয়াইফের সাথে তো দেখা হয় নি। আশা করছি আসবে তোমরা।”
অভিনব সৌজন্যতায় হাসল। হাতে হাতে মিলিয়ে বলল, “নিশ্চয়ই।”
আরফানের প্রতি বিরক্ত প্রতিটি মানুষ। এখন তার নতুন স্ত্রীও এই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথম দিকে মেয়েটি তেমন কোনো অসুবিধা না করলেও আজকাল বড্ড জ্বালাতন করছে। বাড়ির সাহায্যকারী মেয়েদের সাথে যা তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। খাবারের টেবিলে বসেও এক চোট ধমকাচ্ছে। এ বাড়ির খাবার খেয়ে নাকি তার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। রূপও কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে। এ নিয়ে আরফানের সাথেও বেশ তর্কাতর্কি হলো কয়েকবার। ছেলেটা বলেছে আলাদা লোক রাখবে। কিন্তু এক সপ্তাহ গেলেও এর কোনো হেলদোল দেখা গেল না। মূলত এই নিয়েই পুনরায় রেগেছে সে। আজ তো সরাসরি রান্না ঘরে চলে এসেছে। সেখানে তার তিন শাশুড়ি রয়েছে। কাউকে তোয়াক্কা না করেই বলল,
“লতিফা আমার জন্য গ্রিন টি করে দাও। চিনি দিবে না।”
“ভাবী তরকারিটা নামিয়েই করে দিচ্ছি।”
“কত সময় লাগবে?”
“দশ মিনিট।”
“ওকে। এর বেশি যেন লেট না হয়।”
আমেনা বেগম রাগে কাঁপছেন। তার ছেলেটা কোথা থেকে এই মেয়েকে তুলে এনেছে। আস্ত আবর্জনা!
লতিফা গ্রিন টি দিয়ে গেলে পুনরায় ডাক পড়ল তার। মেয়েটির হাতে কাজের চাপ খুব।
“বলেন ভাবী?”
“আমার পায়ের নেলস গুলো কেটে দাও তো।”
লতিফার ভ্রু কুচকে গেছে। সে এ বাড়িতে কাজ করে অনেক বছর। কিশোরী বয়স পেরিয়েছে বহু পূর্বেই। এত বছরে কেউ তাকে এমন কাজ দেয় নি। লতিফার থেকে জবাব না পেয়ে রিসা ধমকে উঠল।
“কি হলো শুনতে পাও নি?”
“জী।”
লতিফার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস নেমে এল। রিসার পায়ের নখ গুলো সুন্দর করে কেটে দিল। রিসা ফোনে মগ্ন। কিছু সময় পর আরফান কল করল। দুজনের রোমাঞ্চিত কথা বার্তায় আরেক ধাপ কষ্ট হলো লতিফার।
মুনতাহার মতো সহজ সরল মেয়েটির কপালের কথা মনে হতেই শরীর কেঁপে উঠল। স্বামীর জন্য রাতের পর খাবার নিয়ে অপেক্ষা করত মুনতাহা। দিনে কতবার কল করে খোঁজ খবর নিত হিসেব নেই। অথচ সেই তার ভাগ্য কতটা নিষ্ঠুর!
রাতের একটি দৃশ্য ইববান শিকদারের টনক নড়িয়ে দিল। রিসার সাথে ওনার কখনো কথা হয় নি কিংবা প্রয়োজন পড়ে নি। আজ ওনি জ্ব ল ন্ত আগুনের ন্যায় তেঁতে উঠলেন। মেঝের মধ্যে পড়ে থাকা খাবার গুলো ওনার রাগকে বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। আমেনা বেগম স্বামীর প্রতি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন। ভদ্রলোক দমলেন না।
“কি ধরনের বেয়াদবি এটা? খাবার ভালো না লাগলে খাবে না। তবে এভাবে মেঝেতে ফেলার সাহস কি করে হয়। এসব কি ফ্রি তে পেয়েছ!”
ভদ্রলোকর ধমকে কেঁপে উঠে রিসা। শব্দ করে কেঁদে উঠে সে। আরফান সবে বাড়ি ফিরেছে। ভীষণ ক্লান্ত তার শরীর।
“কি হয়েছে বাবা? এত চেচাচ্ছ কেন?”
“দেখ তোমার স্ত্রীর কান্ড।”
“রিসা কি করেছে মা?”
আমেনা বেগম জবাব দিলেন না। ওনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বাড়ির ছোট দুই বউ। তারাও চুপ।
“ছোট কাকি,রিসা কি করেছে? বাবা ওকে কি বলেছে?”
“সেটা ওকেই জিজ্ঞাসা কর আরফান। এভাবে খাবার কেন ফেলেছে।”
বড্ড বিরক্ত হলো আরফান। রিসার কান্নারত মুখ দেখে বলল, “বাবা কি বলেছে তোমায়?”
“বাবা আমায় খাবারের খোঁটা দিয়েছেন।”
আরফান শীতল দৃষ্টি ফেলল। “খাবারের জন্য খোঁটা দেওয়া উচিত কি বাবা? ওর সমস্ত দায় দায়িত্ব তো আমার। আমি নিশ্চয়ই বসে বসে খাই না।”
ইববান শিকদার ছেলের এই সাফাই দেখে বড্ড অশান্ত হয়ে পড়লেন। এখানে থাকলে নিশ্চয়ই কলহ রটে যাবে। তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। পেছন পেছন ছুটলেন ওনার স্ত্রীও। রিসার কান্নার শব্দ আরও বেড়ে গেল। ছুটে গেল ঘরের দিকে। আরফানের ক্লান্ত হওয়া শরীর আজ অসহ্য য ন্ত্র ণা য় ভুগছে। নতুন নতুন অশান্তি আর নিতে পারছে না। অথচ তার জীবনটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। প্রকৃতি বুঝি প্রতিশোধ নিচ্ছে?
চলবে…
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩১)
সকালের নরম রোদ ঝিলের চোখ মুখে লাগতেই এক চিলতে হাসির উদয় হলো। অভিনব জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। গায়ে পাতলা ফিনফিনে একটা গেঞ্জি। সারারাত রুমে হিটার চালানো থাকে। সেই সুবাদে রুম উষ্ণ। দারুণ এক মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। বুক ভরে শ্বাস নিল ঝিল। হাত দুটো মেলে দিয়ে ঘুম ভাঙল। অভিনবর ঠোঁট জুড়ে হাসি। কি মোহনীয় লাগছে মেয়েটিকে। নাকের দিকটায় হাল্কা তেল জমে আছে। অভিনব নিজ হাতে মুছে দিল।
“শুপ্রভাত প্রজাপতি।”
“শুপ্রভাত। আজকের দিনটা বেশ সুন্দর তাই না?”
“হুম। তোমার মতো।”
“উহু তোমার মতো।”
“আচ্ছা আমাদের মতো।”
“হুম।” বলেই অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরল ঝিল। আদুরে হাতে মেয়েটির পিঠে হাত বুলায় ছেলেটা। ধীরে ধীরে কানের কাছে মুখ এগিয়ে নেয়। সুরসুরি লাগছে বিধায় ঝিল নড়েচড়ে উঠে।
“এই এই কাছে আসবা না। সারাক্ষণ শুধু জ্বালাতন।”
“তোমায় জ্বালাতে আমার ভালো লাগে।”
“সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে। ছাড়ো এখন।”
“না আরেকটু থাকতে দাও প্লিজ।”
ঝিল নিশ্চুপ হয়ে উঠল। থেকে থেকে অভিনব তার উষ্ণ ঠোঁটের দ্বারা আ ক্র মণ করে যাচ্ছে। এত ভালো লাগছে ঝিলের। এই ছেলেটা ওর জীবনকে কতভাবে রাঙিয়ে দিচ্ছে। তবু একটা শূন্যতা কোথাও রয়ে গেছে।
কলিং এর শব্দে ঝিলকে ছাড়ল অভিনব। ঝিল উঠে এসে অভিনবর চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। মেয়েটি অভিনবর তুলনায় খাটো বিধায় কিছুটা উঁচু হতে হলো। অভিনব বিষয়টা দেখতে পেয়ে স্মিত হাসল। তারপর কোমর চেপে ধরে উঁচু করল। ঝিল ইচ্ছে মতো চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। অন্যদিকে কলিং চেপে অস্থির হয়ে যাচ্ছে এমি। ঝিল নামতে চাইলে অভিনব বিরক্তি প্রকাশ করল।
“এমি’র আসার জন্য এই সময়টাই ছিল।”
“ও কি করে জানবে, তুমি এই অসময়ে রোমান্স করবে।”
“তাও ঠিক।”
“ছাড়ো এখন।”
“হুম।”
ঝিল দরজা খুলে দিল। এমি ঝিলকে দেখে একবার হাসল। ঝিলের এলোমেলো টিশার্ট আর অভিনবর গলায় নখের দাগ ওর নজর এড়ায় নি। সেই জন্যেই হাসছে সে। এদিকে ঝিল ঘুরে বেড়াচ্ছে। রান্না ঘরে প্রবেশ মাত্রই লজ্জা দিল এমি।
“শাওয়ার নেও নি কেন অনা?”
একি লজ্জা! ঝিল তখুনি সরে এল। ওর লাল হয়ে যাওয়া মুখের পানে তাকিয়ে অভিনব বলল, “কি হয়েছে! এত ব্লাস করছো কেন?”
“বলতে পারব না।”
ঝিল মুখ ঢেকে চলে গেল। বোকা বনে গেল অভিনব। ঝিল শাওয়ার শেষে নাস্তার টেবিলে বসল। এমি নিজেও বসেছে ওদের সাথে। কথায় কথায় অভিনব বলল, “এক সপ্তাহ তোমার ছুটি এমি।”
“দুদিনের জন্য ছুটির কথা ছিল। হঠাৎ এক সপ্তাহ!”
“উইনিপেগ যাচ্ছি।”
“ও আচ্ছা। কবে যাচ্ছ তোমরা?”
ঝিল একটা স্যান্ডউইচ এ কামড় বসিয়ে বলল, “আজকেই।”
“শুভ কামনা অনা। উইস আ হ্যাপি এন্ড সেফ জার্নি।”
“ধন্যবাদ এমি।”
রাতের ফ্লাইটে উইপেগ চলে এল ঝিল আর অভিনব। প্ল্যাকার্ড হাতে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। ড্যানিয়াল আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী ওদের রিসিভ করতে একজনের আসার কথা। অভিনব চার পাশে চোখ বুলিয়ে শক্ত করে ঝিলের হাতটা ধরল। এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন দু বছরের বাচ্চা। এত যত্নে ভালো লাগল ঝিলের। ছেলেটার ফর্সা হাতটা চেপে ধরে চলতে লাগল। কিছুদূর যেতেই প্ল্যাকার্ড হাতে একটা লোক দেখতে পেল। অভিনব লোকটার সাথে কুশলাদি বিনিময় করল। গাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ঝিল একদমই চুপ রইল। জানালা দিয়ে হা হয়ে দেখছে বাইরের শহর। ঝকঝকে তকতকে শহরের পানে তাকিয়ে ওর মন খারাপ হলো খুব। আমরা চাইলেও আমাদের মাতৃভূমি এতটা পরিষ্কার করতে পারব না। তবে অনেকটা ঝকঝকে করা সম্ভব। কিন্তু সেসব কেবল ভাবনা। একটা হাহাকার ডিঙিয়ে উইনিপেগের সৌন্দর্য দেখতে লাগল ঝিল। ম্যাপল গাছের পানে তাকিয়ে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে। কানাডার সব সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই ম্যাপল পাতাতে। সোজা রাস্তার চারপাশে সোনালি গাছ গুলো দারুণ লাগছে। ঝিল হা হয়ে তাকিয়ে। অভিনব ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। মেয়েটির মুগ্ধতার সীমা নেই। খানিক বাদে একটা প্যালেসের সামনে এসে গাড়ি থামল। অভিনব ঝিলের দৃষ্টি আঁচ করে বলল, “এই প্যালেসেই বিশাল আয়োজনে ক্রিশমাস এর আয়োজন করা হয় প্রতি বছর।”
“আচ্ছা। এটা খুব সুন্দর।”
ভেতরে যেতে ঝিলকে কিছু সাবধানতার বানী শুনালো অভিনব। কোন খাবার খাওয়া যাব সেসব নিয়ে ধারণা দিল। প্যালেসের বিশাল বাগান ডিঙিয়ে যাওয়ার পথে ঝিল কিছু ছবি তুলল। এত সুন্দর কেন সব?
একটা সাদা গ্রাউন পরা মেয়ে ছুটে এসে ঝিলকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এমন করায় ঝিল চমকে উঠেছে। অভিনব চোখের ইশারায় স্বাভাবিক হতে বলল। মেয়েটি স্পষ্ট ইংলিশে বলল, “অসাধারণ। তোমাকে দেখে ভালো লাগছে।”
“ধন্যবাদ।”
ঝিল খুব স্বল্পবাক্য ব্যয় করছে। বস্তুত সে অস্বস্তি বোধ করছে। কথায় কথায় জানতে পারল এই মেয়েটির নাম অলিভিয়া। সে ড্যানিয়ালের ফিয়ন্সে। খুব দ্রুতই তারা বিয়ে করবে।
“হেই অভিনব।”
ড্যানিয়ালকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল অভিনব। দুজনের বন্ধুত্বের কথা জানত ঝিল। তবে এতটা মধুর সেটা বুঝে নি। অলিভিয়া ঝিলকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগল। একবার পেছনে তাকাল মেয়েটি। চোখের ইশারায় সম্মতি দিল অভিনব।
“তুমি ছবির থেকেও বেশি সুন্দর অনা।”
“ধন্যবাদ। আর তুমি খুব ভালো।”
“হা,হা। এমন কেন মনে হলো?”
“পরিচয় ছিল না আমাদের। অথচ কত সুন্দর মিশে গেলে।”
“তাহলে তুমি দ্বিগুণ ভালো।”
শব্দ করে হাসল ঝিল। অলিভিয়া ওকে প্যালেসের ভেতর নিয়ে এসেছে। একটা জুসের গ্লাস দিতেই নাকোচ করল ঝিল।
“খেতে পারো এটা। ম্যাপল সিরাপ,নো অ্যালকোহল।”
বিনয়ের সাথে হেসে গ্লাস নিল ঝিল। চুমুক দিতেই বুঝতে পারল এটা খুব মিষ্টি। খেতে খারাপ নয়। অলিভিয়া নিজেও পাশে বসেছে। চারপাশ রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আর্টিফিশিয়াল ফুলের পাশাপাশি রয়েছে আসল ফুল ও। চোখ জোড়ানো দৃশ্যের মাঝেও ঝিলের চোখ আটকে গেল অভিনবর মনচোরা হাসিতে। ছেলেটা কিছু একটা নিয়ে হেসে যাচ্ছে। অলিভিয়া সেটা লক্ষ্য করে মৃদু হাসল।
“খুব ভালোবাসো?”
“হুম।”
“তোমাদের লাভ স্টোরি শোনাবে তো?”
“নিশ্চয়ই।”
অলিভিয়া তার পরিচিত কিছু মেয়ের সাথে ঝিলের পরিচয় করিয়ে দিল। অনেক রাত্রি বিধায় বেশি সময় গল্প হলো না ওদের। ঝিল ক্লান্ত। অভিনব দু হাতে আগলে নিল ওকে। অগোচরে ঠোঁটে স্পর্শ করে বলল, “কোনো অসুবিধা হলে সোজা আমায় বলবে।”
“হুম।”
“ডিনার করবে না?”
“না। পেট ভরে গেছে। ম্যাপল সিরাপটা মজা ছিল।”
“আর চুমু?”
“সেটা আরও বেশি মজা ছিল।”
ঠোঁট টিপে হাসল অভিনব। রুমে এসে ফ্রেস হলো ওরা। কিছু তাজা ফুল রাখা হয়েছে ঘরে। অভিনব সেটাতে হাত বুলাতে বুলাতে সুর তুলল,
“এই রাত তোমার আমার,
ঐ চাঁদ তোমার আমার।
শুধু দুজনের….
এই রাত শুধু যে গানের।”
চলবে….
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩২)
অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে দেখে প্রায় থমকে গেল অভিনব। গলার কাছটার তরল শুকিয়ে এসেছে। চোখ দুটি ভীষণ আপ্লুত। আবেগ লুকানোর চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ সামনের ব্যক্তিটি নির্দ্বিধায় হাতের গ্লাস থেকে অমৃত সুধা পান করে চলেছে। বোনাস হিসেবে হাতে রয়েছে আবার সিগারেট ফ্লিটার! অভিনবর গলাটা ধরে এল। ঝিল এত সময় অলিভিয়ার সাথে ঘুরছিল। হঠাৎ করেই ছেলেটার থমকে যাওয়া অবস্থা দেখে ফিরে এল।
“কি হয়েছে তোমার? অসুস্থ দেখাচ্ছে।”
এক পলক তাকাল অভিনব। ঝিলের দুটি চোখ শীতল। ঠোঁটের কোণ জুড়ে একটা প্রাপ্তি। আচমকা মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল সে। কানাডার শহরে এসবে কেউ মাথা ঘামায় না। কেউ তাকাচ্ছে না অবধি। ছেলেটার হৃদয়ের ধুকপুক শুনতে পাচ্ছে ঝিল। আলগোছে পিঠে হাত রাখল সে।
“রুমে যাবে?”
“উঁহু।”
“বোসো একটু।”
“উঁহু।”
“সমস্যাটা না বললে আমি বুঝব কেমন করে?”
“কখনো হারিয়ে যেও না প্রজাপতি।”
“হারাব না। কিন্তু তোমার কী হলো?”
“জানি না। তবে ভয় হচ্ছে।”
“ভয় নেই। আমি আছি তো। কখনো ছাড়ব না তোমায়।”
অভিনবর যে কি হয়েছে কে জানে। ঝিল একই ভাবে পিঠে হাত বুলাতে লাগল। কিছু সময় পর শান্ত হলো ছেলেটা। ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশ ফিরে দাঁড়াল। পুরোটা সময় অভিনবর খারাপ লাগাটা নজরে এসেছে ঝিলের। কিন্তু বিশেষ কোনো জোর খাটায় নি সে। হিটারের উষ্ণতায় রাতের আঁধার যখন ওদের ভালোবাসায় সিক্ত করছিল ঠিক সে সময়টায় ইষৎ মন খারাপের দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটি বলল অভিনব।
“মুনতাহার অবস্থা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে।”
ঘটনাটি জানে ঝিল। তাই সে চমকে উঠল।
“তাকে কোথায় দেখলে?”
“পার্টিটে ছিল।”
“আমায় কেন দেখালে না? ইস আমি মিস করে গেলাম। তাকে খুব দেখার ইচ্ছে আমার।”
“ভাঙাচোরা একজনকে দেখে কি করবে ঝিল? ওর অবস্থা চোখে দেখার মতো না।”
“কি হয়েছে?”
“পুরো বদলে গেছে মেয়েটি। ভদ্র,সাধারণ মেয়েটির হাতে আজ ওয়াইনের গ্লাস।”
চমকে উঠল ঝিল। অভিনবর বড্ড মন খারাপ। ঝিল বিষয়টা কল্পনাও করতে পারছে না। খুব রাগ হলো ওর। বিশেষ করে আরফান এর উপর। কি করে পারল এমনটা করতে? তারপরই মনে হলো সে রাতের ঘটনা। ঝিল যদি সেদিন অভিনবকে ছেড়ে দিত। পরিবার এর কথা ভাবতে গিয়ে সেটা নিশ্চয়ই অন্যায় হয়ে যেত। না ও ভালো থাকত আর না অভিনব। তার হৃদয়টা বেসামাল হয়ে পড়ল ক্ষণিকেই। অভিনব ইষৎ নিচু হয়ে ঝিলের ঘাড়ে মুখ দিয়ে রইল। এই মানুষটাকে ছাড়া আসলেই ভালো থাকা সম্ভব না। কোনো কালেই না।
দুদিন পর একটা শপে এসে মুনতাহাকে পুনরায় দেখল অভিনব। মেয়েটির পরনে জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট। লম্বা চুল গুলো কাঁধে এসে ঠেকেছে। চোখ দুটো বিষণ্ণ। ত্বক কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। হাতে বিয়ারের বোতল। সেটার দিকে গভীর নজর দিয়ে আছে। অভিনবর কেন যেন রাগ হলো। যদিও কোনো অধিকার খাটানো যায় না তবু সে অধিকার খাটালো। চট করেই কেড়ে নিল হাতের বোতলটি। মুনতাহা এক সাগরসম রাগ,ক্রোভ নিয়ে তাকিয়ে আ হ ত হলো। মাথাটা নিচু করে ফেলেছে। এমনকি চোখ দুটো থেকে গড়িয়ে পড়ল জল।
“এটা আমি কি দেখছি! আমার দেখা নম্র,ভদ্র মেয়েটি কিনা শেষমেশ…”
“ঘৃণা করবেন তো ভাইয়া। তবে তাই করেন। আমি ঘৃণারই যোগ্য।”
“ভেবেছিলাম শক্ত হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু এভাবে ভেঙে যাবে আশা করি নি। নিজেকে হারিয়ে দিচ্ছ।”
“হারিয়ে দিচ্ছি? আমি তো হেরে গেছি সেই কবেই। যখন আমার স্বামী আমার সাথে বিছানায় থেকে অন্য নারীর অনাবৃত দেহ কল্পনা করেছে।”
চোখ বন্ধ করে নিল অভিনব। কতটা অকপটে কথা গুলো বলে যাচ্ছে মুনতাহা। যে নারী ইষৎ দৃষ্টিতেই লজ্জায় ডুবে যায় সে নারী আজ কতটা লজ্জাহীন হয়েছে! মুনতাহা বিয়ারের বোতল গুলো রেখে দিল। ঝিল জিনিসপত্র নেওয়া শেষ করে অভিনবকে ডাকতে এল। তখনি নজরে এল মুনতাহাকে। শুরুতেই সে চিনতে পারল না। তবে সেদিনের বর্ননা মিলিয়ে বুঝতে পারল। মুনতাহাও থমকে গিয়েছে। ঝিলের দু একটা ফটো দেখেছে সে। মির্জা বাড়ির মেয়েটি বরাবরই সকলের চর্চায় থাকত। ভাই আর পাপাদের বুকের মধ্যে থেকেছে কি না। সেই থেকেই খানিকটা আগ্রহ জেগেছিল। লুকিয়ে একটি ফটো সংগ্রহ করেছিল সে। শুনেছিল অভিনবর সাথে তার প্রণয় রয়েছে। মস্তিষ্ক অনেক কিছুই বুঝতে পারল। সে এগিয়ে এসে ঝিলের গাল ছুঁয়ে দিল।
“মাশআল্লাহ। লোকের কথাই সত্য। ছবির থেকেও বাস্তবে অধিক সুন্দরী তুমি।”
কিছুটা লজ্জা বোধ করল ঝিল। অভিনব কথা খুঁজে পাচ্ছে না।
“ভাইয়া, এই বাচ্চা মেয়েটিকে কখনো ছেড়ে দিয়েন না। ভারী মিষ্টি কিন্তু।”
অভিনব মনে মনে আওড়াল ছাড়ব না। কিন্তু মুখে বলল, “ছাড়তে চাইলেই কি ছাড়া যায়? জিজ্ঞেস করে দেখ আমি সেসব কল্পনা করলেও খু ন করে ফেলবে আমায়।”
দারুণ করে হাসল মুনতাহা। ওদের দেখে ভালো লাগছে। ঝিল খানিকটা লজ্জিত হয়ে পড়ল। অভিনব কাছিয়ে এসে হাত রাখল ঝিলের কাঁধে। তারপর মুনতাহার উদ্দেশ্যে বলল, “সুযোগ দিলে সবাই সুযোগ নিতে চাইবে। তুমি আমায় হতাশ করলে মুনতাহা। ভাইয়ের বউ হিসেবে নয় তবে ছোট বোনের ন্যায় ট্রিট করেছিলাম আমি। ভুলে গেলে কি বলেছিলাম?”
“বাস্তবতা আমার সাথে ছিনিমিনি করেছে।”
“ভুল। একদম ই সঠিক পথে নেই তুমি।”
“ঝিল তুমি একদিন আমাদের বাসায় যাবে। বাড়িতে তোমার অনেক গল্প করেছিলাম আমি।”
প্রসঙ্গ বদলে ফেলার ন্যায় কথাটি বললেও অভিনব এক চুল ছাড়ল না। বরং এগিয়ে এসে বলল, “তোমার বয়সের তুলনায় তুমি বড় অপরিপক্ক মুনতাহা। তবে এমন বলব না আরফান ভাইকে ধরে রাখতে না পারা তোমার ব্যর্থতা।”
“ব্যর্থতা আমারই ভাইয়া। মুখ লুকিয়ে বাঁচতে হয়।”
“নিজেকে এত তাচ্ছিল্য কেন করলে?”
“তাচ্ছিল্য নয়। এটাই সত্যি।”
অভিনব হতাশ হলো। মেয়েটির জন্য ওর খারাপ লাগছে। ঝিল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। সহসা মিশতে পারে না সে। মুনতাহাকে প্রায় জড়িয়ে ধরল।
“আপু আপনার মতো মিষ্টি মেয়ে আমি আগে দেখি নি। জানি না কেন আপনার সাথে এমন হলো। কিন্তু যে জীবন বেছে নিয়েছেন সেটাও সঠিক নয়।”
“হয়ত তোমরা ঠিক।”
মুনতাহা অন্যমনস্ক। অভিনব চোখের ইশারায় আর কিছু বলতে নিষেধ করল। ঝিল তবু চেয়ে রইল মেয়েটির পানে। দু একটা কথার পর তাগাদা দিয়ে মুনতাহা বলল, “আশা করছি আমাদের আবারও দেখা হবে। ঝিলকে নিয়ে যাবেন ভাইয়া।”
এড্রেস দিয়ে গেল মুনতাহা। তারপরই এলোমেলো পায়ে চলে গেল। কি অদ্ভুত লাগে দৃশ্যটি। মানুষের জীবন কতভাবে বদলে যেতে পারে।
পরের দুদিন ঝিলের বেশ মন খারাপ ছিল। বার বার বলছিল মুনতাহার জীবনটা কি ঠিক করা যায় না। ঝিলের এমন বাচ্চামো দেখে অভিনবর বুক চিরে বেরিয়েছে কেবল দীর্ঘশ্বাস। ওদের জীবনটাই যেখানে এলোমেলো সেখানে আরেকজনের জীবন ঠিক করার কথা বেমানান লাগারই কথা। কিন্তু ঝিল এটা মানতে নারাজ। ওর কথা মতে মুনতাহার মতো মেয়ে এমন জীবনের সাথে যায় না। অন্তত নিজের জন্য বেঁচে থাকুক মেয়েটি। অভিনব নিজেও এই বিষয়ে ভেবেছে। তবে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে খুব বেশি নাক গলানো যায় না। ঝিলের কথা ভেবেই সে ঠিক করেছে মুনতাহার বাসায় যাবে। তার পরের সপ্তাহে একদিন তরুণ কল করল। বেচারা অনেক কষ্টে নাম্বার জোগাড় করেছে।কল করেই রেগে অস্থির।
“এভাবে কেউ আড়াল হয়? এতটা নিষ্ঠুর তুই। আন্টি আর আঙ্কেলের কথা ভাবলি না। ওনারা টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
“শান্ত হ তরুণ।”
“কি শান্ত হব। তুই জানিস সেদিন আঙ্কেলের শরীর কি পরিমানে খারাপ হয়েছিল।”
“জানি।”
“হোয়াট! তুই কি বল তো। জেনে ও কেন এমন করছিস।”
“আমি ওদের খবর রাখি তরুণ।”
“তবে নিজের খবরটা কেন দিস না?”
“কারণ আমার মতো ঝিল ও নিজের পরিবারের ছেড়ে এসেছে। ওর পরিবার ও একই ভাবে চিন্তিত। আমি তো এর আগেও নিখোঁজ হয়েছি কিন্তু ওর পরিবার, যাই হোক মম পাপার সাথে এখুনি আমি যোগাযোগ করতে পারছি না।”
ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তরুণ। একটা সময় পর বলল, “ওদের কি দোষ বলতে পারিস?”
“ওদের দোষ, ওরা নিজের পরিবারের কথাই শুধু ভেবেছে। একবার ভাবে নি অন্যদের কথা।”
“এটা ভুল।”
অনেকটা অভিমান নিয়েই কথা গুলো বলেছে অভিনব। চাপা কষ্টটা আড়াল করতে বলল,
“সময় যাক।”
“তুই একটু বেশিই করে ফেলছিস। আন্টি চেয়েছে তার ভাইদের সাথে সম্পর্কটা সুন্দর রাখতে। এটা কি খুব বেশি কিছু?”
“তার ভাইয়েরা নিশ্চয়ই ভালো মানুষ নন।”
“আর ঝিলের পাপারা?”
“তারাও।” বলে চুপ হয়ে গেল অভিনব। এই দুই পরিবারের জন্য নিজের বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে ফেলল না সে? পরক্ষণেই ভাবল ঝিল ও তো কষ্টে আছে। কিছুই মস্তিষ্কে এল না। অভিনব কল রেখে ডিভানে গা এলিয়ে দিল। ঝিল কিচেন থেকে ফিরেছে। দারুণ এক খাবার রান্না করেছে এমি। সেটা বলতে এসে অভিনবকে দেখতে পেল। তারপর কি মনে করে যেন বলল, “আন্টি আঙ্কেলের কথা মনে পড়ে?”
অভিনব আড়াল করার ন্যায় ঋনাত্মক উত্তর দিল। ঝিল সামান্য হেসে ছেলেটার গাল স্পর্শ করল। ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল ছেলেটা।
“কি এনেছ?”
“আড়াল করতে চাচ্ছ?”
“ধ্যাত আমি আবার কি আড়াল করব।”
“তুমি বড় নিষ্ঠুর অভিনব।”
স্মিত হেসে অভিনব বলল, “হঠাৎ এমন কেন মনে হলো তোমার?”
“নিজের সব কষ্ট আড়াল করে যাচ্ছ। আমার পরিস্থিতিটা বোঝার জন্য নিজের পরিবারকে কষ্ট দিচ্ছ।”
“তেমন নয়।”
“রাতের ফ্লাইটে আন্টি আঙ্কেল আসবে। তাদের কষ্ট দিয়ে আমরা নিশ্চয়ই শান্তি পাব না।”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি