#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১২)
মির্জা আর শিকদারদের পুরনো রোষের কথা কারো অজানা নয়। তবে এই শত্রুতা বেশ কিছুটা দমে গিয়েছিল গত ছয় বছরে। সেই শত্রুতা পুনরায় জাগ্রত হওয়ার একটি আভাস ইতোমধ্যেই চলে এসেছে। অভিনবর বড় মামা এতদিন চুপ থাকলেও আজ চুপ থাকলেন না। ভাগ্নের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য আসর সাজিয়েছেন। সে আসরে থাকার কথা বাড়ির সব ছেলেদের। এমনকি গত কিছুদিন পরিবারের চোখে সব থেকে নিকৃষ্ট হওয়া আরফান ও উপস্থিত। ইববান শিকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললেন,
“একা কেন? দানেশ কোথায়!”
“জানি না বাবা। বেশ কিছুদিন ধরেই আমার সাথে কথা হচ্ছে না।”
তিনি আর কিছু বললেন না। লিটন শিকদার ভাইয়ের মুখের ভঙ্গিমা বুঝতে পেরে বললেন,
“ভাইয়া আপনি শান্ত হোন। আমি ডেকে নিয়ে আসছি।”
“না যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তামীম,সাদাদ যা ওকে নিয়ে আয়।”
ওরা চলে যেতেই ইববান শিকদার কাউচে বসেন। অভিনব সবটা বোঝার চেষ্টা করছে। একটা সরু চিন্তা ওকে পাগল করে দিচ্ছে। তবু বাইরেটা ভীষণ শান্ত। ওর এই অভ্যাসের কারণেই মামারা অধিক ভালোবেসে থাকেন। দশ মিনিটের মাথায় দানেশ এলো। ছেলেটা একটু অন্যরকম। এসব ঝামেলা একদম ই পছন্দ করে না। অথচ বাবা, চাচারা, ভাইয়েরা সব এক একজন ঝামেলার পাহাড়। ইববান শিকদার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লিটন শিকদার বললেন, “বেয়াদব ছেলে। ভাইয়া আলোচনায় ডাকার পর ও কেন আসছ নাই?”
“বাবা আমি আগেও বলেছি এসব আমার ভালো লাগে না। সব থেকে বড় কথা তোমাদের যে কোনো আলোচনার মানে তো সেই মা রা মা রি, ধরাধরি।”
ছেলের মুখ থেকে এমন কিছু শুনতে হবে তা কোনো কালেই ভাবেন নি লিটন শিকদার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে গেলেন। বাঁধ সাজলেন মুজাহীদ শিকদার।
“কি করছেন কি ভাইয়া! ও কি ছোট? ওকে মে রে ধরে কোনো লাভ হবে।”
“মে রে লাভ না হলে কে টে ফেলব। কোন বংশে ওর জন্ম সেটা বুঝতে হবে। ভয়ে দমে থাকার জন্য শিকদারদের জন্ম হয় নি।”
“থাম, তোরা।”
“বড় ভাইয়া আপনি বুঝতে পারছেন না কতটা বেয়াদব হয়ে গেছে ও।”
“বলেছি তো চুপ করতে।”
পুনরায় কিছু বললেন না লিটন শিকদার। ভয় আর লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আছে দানেশের। ছেলেটা কিছুতেই বোঝাতে পারে না এসবের কারণে কত মানুষের জীবন হুমকিতে। কি দরকার পুরনো কাসুন্দী ঘাটার!
দানেশ কে ছাড়াই আলোচনা শুরু হলো। এত সময়ে অভিনব টু শব্দটি করে নি। তবে এবার বলল, “আমি আসলে বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে।”
“একটু অপেক্ষা কর ইহান। সবটা বলা হবে। এসবের আগে একটা বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার।”
“জী মামা।”
“তুই মির্জা বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করিস?”
অভিনব তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে পারে না। একটু ভেবে বলে, “নিয়মিত নয় মামা।”
“আহা গিয়েছিস কি না সেটা বল।”
“গিয়েছিলাম মামা।”
“কেন?”
ছেলেটা এবার চুপ হয়ে গেল। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইববান শিকদার নিশ্বাস ফেললেন। ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে নির্ভরতা হয়ে বললেন, “নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন গিয়েছিস? তুই জানিস এর জন্য কতটা পোহাতে হবে আমাদের।”
“দুঃখিত মামা।”
“কথাগুলো সিরিয়াস ভাবে নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তুমি সেখানে যাওয়া আসা করছো, এসব আমি আরও আগেই খবর পেয়েছি। তাই নিষেধ করেছিলাম। তবু গত রাতে কেন গিয়েছিলে?”
“মামা, আমি ওকে ছাড়তে পারি না।”
ভদ্রলোক পুনরায় কিছু বললেন না। অভিনবর ছোট মামা মুজাহীদ শিকদার বললেন, “ছয় বছর আগের ঘটনা ভুলে গেলি অভিনব?”
“ভুলি নি ছোট মামা। তবে সব অস্বীকার করা তো যায় না।”
“ধৈর্যহীন হয়ে যাচ্ছিস। অথচ ভুলে গেছিস পুরনো ঘটনা।”
“মেঝো মামা আমি ভুলি নি কিছু। তোমাদের সম্মান করি বিধায় আমি ছয় বছর ধরে চুপ করে আছি।”
সকলেই এবার চুপ। ইববান শিকদারের মুখের পানে তাকিয়ে অভিনব বলল, “ছয় বছর আগেও আমি ভদ্র ছেলে ছিলাম আর ছয় বছর পরেও ভদ্র ছেলে আছি। তোমরা যদি সত্যিই না চাও তবে আমি পিছিয়ে আসব।”
“পিছিয়ে আসবে? বোকার মতো কথা বলবে না। মির্জাদের গুমোট ভাঙতে হবে। শুধু বলো মেয়েটা তোমায় ভালোবাসে কি না।”
অভিনবর মুখ উজ্জ্বল হয়ে এলো। হাসি হাসি ঠোঁটে বলল, “ভালোবাসে, ও আমার ভীষণ ভালোবাসে।”
.
বিরস ভঙ্গিতে বসে আছে ঝিল। ছাদের এ পাশটায় রোদ উঠেছে। মিষ্টি সোনালী রোদ। দেখতে ভালো লাগছে। অন্য পাশে গাছের সমাহার। একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। অন্য সময় হলে এই স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাতেই বসে থাকত। কিন্তু আজ ভালো লাগছে না। মনের ভেতর সুখ নেই। একটা যন্ত্রণা সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। রজনী আপুর কথাটা বার বার মস্তিষ্কে হানা দেয়। সবটা এলোমেলো হয়ে আসে।
“অসময়ে রোদে বসে আছো কেন?”
আচমকা কথাটা শুনে ধরমরিয়ে উঠে ঝিল। রজনী হেসে ফেলে। হাতে আচারের বাটি। এগিয়ে দিয়ে বলে, “কড়া রোদ, আর গোসল ও করলে না। খাবে কখন? কাল রাতে ও তো খাও নি। ঘুম থেকে উঠলে মাত্র। এখন তো লাঞ্চ টাইম চলে এসেছে।”
“ভালো লাগছে না রজনীপু।”
“তা বললে চলে?”
“একটা সত্যি কথা বলবে?”
“হুম। কেন বলব না। আগে চলো গোসল করে নিবে।”
“উহু। আগে শোনো আমার কথা।”
“ঠিক আছে। বলো কি জানতে চাও।”
“সত্যিই তোমার বিয়ে?”
“হ্যাঁ। মিথ্যে কেন হতে যাবে। এখন এসো না।”
রজনী ওকে টেনে নিয়ে গেল। কিন্তু ঝিলের মস্তিষ্কে একটি কথাই দ্বন্দ্ব জুড়েছে। রজনীপু তখন কেন বলল আমি আবার কোথায় যাব।
ঝিলের দুই মামী। বড় মামী ডালিয়া বেগম আর ছোট মামী সুমতি বেগম। এরা একই সংসার থেকে এসেছে। অর্থাৎ দুজন একই মায়ের সন্তান। আর দুজনেই বেশ স্নেহশীল স্বভাবের। কথিত মামীদের মতো বি ষা ক্ত নয়। তবু ঝিল এদের সঙ্গ পছন্দ করে না। এর অবশ্য একটি কারণ ও রয়েছে। ঝিলের মা বাবার প্রণয়ের বিয়ে। অথচ ওর মামারা চেয়েছিল নিজেদের শ্যালকের সাথে বোনের বিয়ে দিতে। জাফর মির্জার সাথে জেহেনাজ চৌধুরীর বিয়ে নিয়ে বেশ দ্বিমত করেছিলেন ওনারা। এমনকি শুরুর দিকে বোনের সাথে সম্পর্কচ্যুত ও করেছিলেন। সেসব গল্প জানে ঝিল। মায়ের আর্তনাদ গুলো আজও স্মরণে আছে। তাই মামা বাড়ির প্রতি এত বিতৃষ্ণা। একটা শ্বাস ফেলল মেয়েটি। বড় মামী খাবার দিয়ে বললেন, “মন খারাপ মামুনি?”
“ঠিক আছি আমি।”
“খাবার খাও, কিছু লাগলে জানিও।”
খাবারের রকমারির দেখে ঝিলের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল। ইলিশ মাছের পাতুরি! মা খুব ভালোবাসতেন খেতে। ডালিয়া বেগম খুব ভালো বানাতে পারেন। অথচ বিয়ের পর একবার আবদার করেছিলেন। রাগের চোটে জেহেনাজ বেগমকে সরাসরি না করে দেওয়া হয়। সেই গল্প বলতে বলতে মা কাঁদতেন। ঝিলের চোখে জল নামে। খাবারের পাত থেকে ইলিশ মাছ উঠিয়ে রাখতেই সুমতি বেগম বলেন, “একি ইলিশ মাছ উঠিয়ে রাখলে কেন?”
“এ খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না ছোট মামী।”
অদ্ভুত শোনায় কথাটা। কেউ কিছু না বুঝলেও ডালিয়া বেগম বুঝতে পারলেন। ঘটনা মনে পড়তেই লজ্জায় ওনার মাথাটা নিচু হয়ে আসে। সাদা ভাত আর ঘন ডাল মেখে ভাত খায় মেয়েটি। এ বাড়িতে মায়ের কত স্মৃতি। সব যেন চোখে ভাসে।
চলবে…
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৩)
একপ্রকার স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ল অভিনব। মস্তিষ্কে এক আকাশসম চিন্তা। গত কয়েকদিন ধরে ঝিলের ফোন সুইচঅফ। সোশ্যাল মিডিয়া ডিএকটিভেট। সব মিলিয়ে ছেলেটা পাগল হয়ে উঠেছে। মেয়েটি কে ভীষণ ভালোবাসে কি না। ওর এই অধৈর্য, উদ্বিগ্নতায় সান্ত্বনা দিচ্ছে তরুণ। ছেলেটা বড্ড ভালো। সর্বদা পাশে থাকে। সে মনে মনে ঠিক করল ঝিলের সব থেকে কাছের বান্ধবী মৌনতার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে। মেয়েটির নাম্বার থাকাতে চটজলদি কলটা করে ফেলল। সেদিন বিকেলেই দেখা করল ওরা। মৌনতা আয়েশি ভঙ্গিতে কফি কাপে চুমুক দিচ্ছে। তরুণ অধৈর্য হলো না। খুব শান্ত ভাবে কুশলাদি করে এক পর্যায়ে প্রশ্ন করল,
“তোমার বান্ধবী কোথায়?”
কথাটি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল ওর। তারপরই পাল্টা প্রশ্ন করল, “কেন কি করবেন?”
“দরকার আছে। প্লিজ বলো, ঝিল কোথায়।”
এবার মৌনতা সিরিয়াস হলো। তরুণের মুখটা শুকিয়ে এসেছে। পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “আমি তো গত এক সপ্তাহ গ্রামে ছিলাম। কাল রাতে ফিরেছি। গ্রামে নেট নেই একদম। তাই যোগাযোগ ও হয় নি। ওয়েট কল করে দেখি।”
মৌনতা তখনি কল করল। কল যাচ্ছে না। মেয়েটা ঈষৎ চিন্তিত স্বরে বলল, “কোনো সমস্যা? ঝিলির বিষয়ে কিছু জেনেছেন কি?”
“তেমন কিছু না। তবে ও বাসায় নেই। অভিনব পাগল হয়ে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছো ওদের ইস্যুটা।”
মৌনতার খারাপ লাগল। অভিনবর সাথে কয়েকবার দেখা হলো। ছেলেটা অদ্ভুত সুন্দর। ব্যবহারটাও দারুণ। সেবার ওরা যখন ঘুরতে গেল তখন অভিনবর আরেকটি রূপ ধরা দেয়। সেই থেকে মৌনতার মনে অভিনব নামটি দারুণভাবে লিপিবদ্ধ। মেয়েটি একটু ভেবে বলল, “আমি দেখছি কি করা যায়। ওর ফ্যামেলি আমার প্রতি খুব লয়াল। আমি নিশ্চয়ই কোনো খবর আনতে পারব।”
পরদিনই খবর দিল মৌনতা। ঝিল তাঁর মামা বাড়িতে আছে। অভিনব এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিল না। কিন্তু পথিমধ্যে বাঁধা দিলেন ইববান শিকদার। ওনার মুখাশ্রী কঠিন হয়ে এসেছে। ঝিলের মামাদের সম্পর্কে অবগত নয় ছেলেটি।
“ব্যস্ত হইয়ো না ইহান।”
“আমি আসলেই সহ্য করতে পারছি না মামা। ওরা সর্বদা আমার বিপরীতে গিয়েছে। এটা খুবই অন্যায়।”
“সেটাই সমস্যা। কিন্তু তোমার মা বুঝে নি এসব। আমাদের নাক কেটে যাই হোক এখন পরিস্থিতি অন্য পর্যায়ে। মির্জারা ভুলে গেছে তাদের সীমা।”
“এখুনি বের হতে চাচ্ছি আমি।”
“বারবার ভুল করো না ইহান। মাথা নুইয়ে কেন দিচ্ছ? সময় নাও,আর বুঝতে দিও না প্রতিপক্ষ তোমার থেকে এক ধাপ এগিয়ে।”
মামার হাজারো নির্দেশের তোয়াক্কা না করে সে রাতেই ছুটলো অভিনব। এমন নয় সে ঝিলকে দেখার জন্য ম রে যাচ্ছে। তবে মেয়েটি যে ভীষণ অভিমানী। গত ছয় বছরে করে আসা ভুলের পাহাড় ফের জমাতে চায় না ছেলেটি।
ঝিলের মামারা বিশাল ক্ষমতাবান। ওদের এই ক্ষমতার কারণে ভয়ে মাথা নুইয়ে চলছে দু চার এলাকার লোকজন। বাড়ির চারপাশ জুড়ে বিশাল প্রাচীর। এগুলো বেয়ে উঠা অসম্ভব। দেয়াল গুলোতে লাগানো কাঁচের টুকরোতে র ক্তা ক্ত হতে হবে। তবে অভিনব জানে তাকে কি করতে হবে। পকেট থেকে এক প্রকার ভেষজ সুগন্ধির বোতল বের করে হেসে ফেলল সে। এই ভেষজ ব্যবহার করেই তো ঝিলের সাথে দেখা করতো। অথচ ঝিল ভেবেছে ছেলেটা অতো গুলো গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে উঁচু দেয়াল টপকে বারান্দা বেয়ে কত কষ্ট করে এসেছে। অভিনব বরাবরের মতোই মাক্স পড়ে নিয়ে ভেষজটা ছড়িয়ে দিল। মেইন ফটকে থাকা গার্ডরা ঘুমিয়ে পড়ল কিছু সময়েই। অতি সহজেই ভেতরে প্রবেশ করল ছেলেটি। তবে সমস্যা দেখা দিল সি সি ক্যামেরা নিয়ে। ঝিলদের বাড়ির সি সি ক্যামেরা ওর আয়ত্তে থাকলেও এখানে তো সে উপায় নেই। একটু চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু তখনি দেখতে পেল বাড়ির পেছনের দিকটার একটা ক্যামেরা ভাঙা। এক চিলতে হাসি ফুটলো অধরে। সৃষ্টিকর্তা যেন ওর বিজয়ের সব পথই খুলে দিয়েছেন। অতি সাবধানে উঠে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে ছেলেটা। ফের সমস্যায় পড়ে যায়। ঝিল রয়েছে কোন ঘরে? এধার ওধার তাকিয়ে ছেলেটা যখন ভীষণ চিন্তায় ডুবে ঠিক তখনি দোতলা থেকে নিচে নেমে আসে ঝিলের বড় মামার ছেলে আয়ুষ। অভিনব চটপট লুকিয়ে পড়ে। ছেলেটা ড্রয়িং রুমে এসে আরাম করে বসে গেমস খেলছিল। অভিনবর ইচ্ছে হলো ছেলেটাকে ঠাটিয়ে কান বরাবর থা প্প ড় বসাতে। তবে সেরকম কিছুই করতে পারল না। অনেকটা আশাহত হয়েই ফিরতে হলো ওকে। সারারাত এধার ওধার ঘুরেছে। চোখের নিচটায় কালি জমে গেছে। অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার কারণে সেসব বেশ চোখে পড়ছে। অভিনব বাড়ি ফিরতেই তামীম ব্যগ্র কণ্ঠে বলল, “সারারাত কোথায় ছিলে ইহান ভাইয়া? আব্বু আর চাচ্চু কত টেনশন করছিল জানো।”
অভিনব উত্তর করে নি। ওর মনে ভীষণ তৃষ্ণা জেগেছে। মেয়েটির এত নিকটে গিয়েও দেখা হলো না। কাল রাতের ব্যর্থতা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। গত ছয় বছরের জন্য ভীষণ আপসোস হতে লাগল। সেদিন জোর খাটালে গল্পটা আসলেই ভিন্ন হতে পারত।
.
গত কয়েকদিনে ঝিল এইটুকু বুঝেছে তাকে মামা বাড়ি পাঠানোর পিছনে রয়েছে অন্য কোনো রহস্য। রজনীপুর বিয়ের কোনো ইয়াত্তা নেই। এদিকে ফোন নষ্ট হয়ে গেল হুট করেই। কারো সাথে যোগাযোগ ও হচ্ছে না। এ বাড়িতে এমন কেউ নেই যার সাথে নিজের মনের অশান্তি টুকু শেয়ার করা যায়। রজনীপু ও খুব একটা আসে না। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থেকে ঝিলের মনে হয় অসুখে ধরে যাবে। ওর এই অস্বস্তি লক্ষ্য করতে পারলেন বড় মামা। ভদ্রলোক আয়ুষকে ডেকে পাঠালেন। ছেলেটা একটু অন্য ধাঁচের। মিশুক নয় একদমই। একা থাকতে পছন্দ করে। তবু তিনি বললেন মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরে আসতে। বেশি দূর নয় কেবল আশপাশটায়। ঝিলের যেতে ইচ্ছে করছিল না। তবে মুখের উপর বারণ ও করতে পারছে না। আয়ুষের সাথে চলছে মুখে কুলুপ এঁটে। ছেলেটা যেন কোনো যন্ত্র থেকে জন্মেছে। এর সঙ্গ ওকে বিরক্তই করছিল। অন্যমনস্ক থাকাতে হঠাৎ ই পড়ে যেতে নিচ্ছিল। নিজেকে সামাল দিতে সামনে থাকা আয়ুষের শার্ট খামচে ধরে মেয়েটি। আয়ুষ ও চটজলদি ধরে ফেলে মেয়েটির হাত। প্রথম বারের মতো কথা বলে, “তুই কি চোখের মাথা খেয়েছিস। এভাবে কেউ হাঁটে। একটুর জন্য কোমর ভা ঙা থেকে বেঁচে গেলি।”
আয়ুষ ঝিলের থেকে কম হলেও পাঁচ বছরের বড় হবে। ছেলেটার সাথে আগে কখনোই কথা হয় নি। একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। আয়ুষ নিজ থেকেই এগিয়ে এলো। ঝিলের পা মচকেছে। হাঁটতে পারছে না একদমই। আয়ুষ সাহায্য করল। কিছুদূর যাওয়ার পর বলল,
“ভ্যান গাড়িতে উঠেছিস কখনো?”
“উহু।”
তখুনি একটা ভ্যান ডেকে আনে আয়ুষ। ঝিলকে উঠিয়ে নিজেও পাশে বসে। গ্রামের হাওয়া, আর পাখিদের কলতান মেয়েটির ভালোই লাগছে। ঝিল নিজ থেকে কথা বলল না বিধায় আয়ুষ ও আর কিছু বলছিল না। হঠাৎ করেই টক পানি দেখে মেয়েটির লোভ জাগল।
“মামা থামান।”
“কেন? কি হলো আবার!”
“টক পানি, টক পানি খাব।”
“ছি, এটা কেউ খায়? জানিস তো আমাদের এখানে এটাকে পাগলা পানি বলে। এটা খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়।”
ঝিলের ভ্রু বেঁকে গেছে। ওর মুখের অবস্থা দেখে গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগল আয়ুষ। ঝিল ও হেসে উঠে। আয়ুষ দুটো টক পানি কিনে আনে। ঝিল চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করে,
“এখন? নিজে খাচ্ছে দোষ নেই। অথচ আমি খেতে চাইলেই ফালতু লজিক।”
স্মিত হাসল আয়ুষ। পুরোটা বিকেল বেশ ভালো গেল ঝিলের। প্রথমবারের মতো ঝিল স্বস্তির দম ফেলল। আয়ুষের সাথে কাটানো গত দু ঘন্টা সত্যিই দারুণ ছিল। ছেলেটা হুট হাট লজিকের দোকান নিয়ে আসে। যার বেশির ভাগই রসিকতায় ঠাসা। বাড়ি ফিরে এসে ঝিলের মনে হলো চোখ দুটো ভীষণ ক্লান্ত। ঘুমে টলে যাচ্ছে সারাদিনের পরিশ্রান্ত দেহ।
চলবে….
#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৪)
গত কয়েকদিনের ঘোরাঘুরিতে অভিনবর কথা একদমই ভুলে বসেছিল ঝিল। মেয়েটির সমস্ত ব্যকুলতা আকুলতা জল হয়ে গড়িয়ে পড়ল মাঝ রাত্রিতে। অতিরিক্ত গরম লাগাতে ঘুম আসছিল না। ব্যলকনিতে এসে বসে ছিল। মৃদু আলোতে চারপাশের পরিবেশটা ভীষণ সুন্দর। ঠিক সে সময়ে চোখ যায় এক জোড়া কপোত কপোতির দিকে। খুব সম্ভবত লুকিয়ে দেখা করছে ওরা। একে অপরকে জড়িয়েও ধরলো। এসব দেখে মেয়েটির হৃদয় ধক করে উঠে। হঠাৎ করেই অভিনবর কথা ভীষণ মনে পড়ে। এদিকে ফোন নষ্ট হয়ে আছে। ঠিক করতে দিবে দিবে করে আর দেওয়া হয় নি। ঘটনাটার পর থেকে মেয়েটির চোখে একদমই ঘুম নেই। অশান্তিতে ছেয়ে গেছে শরীর। দেহের বাঁক বেয়ে নেমে যাচ্ছে ঘামের স্রোত। এত অশান্তি এর আগে অনুভব হয় নি। আচ্ছা ছেলেটা কি ওর খোঁজ নিয়েছে? নাকি ভুলে বসেছে। এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করে মেয়েটি বিব্রত হয়ে পড়ল। সকাল হওয়ার আগ অবধি ওর নিশ্বাস আটকে ছিল গলায়। খাবার টেবিলে দ্রুত খাবার খাওয়াতে নাকে উঠে গেল। রজনী পানি এগিয়ে দিল। আয়ুষ ঠিক দুটো চেয়ার দূরে। ভালো করে লক্ষ্য করেছে।
“তোর কি মন খারাপ?”
“না তেমন কিছু না।”
“এত দ্রুত খাবার খাচ্ছিলি কেন? খুব ক্ষিধে পেলেও তো কেউ এভাবে খায় না। এত তাড়া কিসের?”
ঝিল অধৈর্য হয়ে পড়ল। খাবারের টেবিলে থাকা প্রায় সকলেই আয়ুষের কথা শুনেছে। ছোট মামী সুমতি বেগম বললেন, “ওমা কি রে ঝিল। এত তাড়াহুড়ো করছিলে কেন?”
“এমনি ছোট মামী। কোনো সমস্যা নেই।”
“সমস্যা হলে অবশ্যই বলবে মামুনি। যত দিন আছ অন্তত নিজের মায়ের বাড়ি মনে করে থেকো। সবাই তোমার ভীষণ আপন।”
“জী বড় মামা।”
খাবারে মনোযোগ দেয় ঝিল। ধীরে স্বস্তে খাবার খাচ্ছে এবার। কিন্তু এক জোড়া চোখ গভীর ভাবে দেখছে ওকে। বোঝার চেষ্টা করছে এত ব্যকুল হওয়ার কারণ।
হাত ধোঁয়ার সময় আয়ুষ বলল, “কথা আছে উপরে আয়।”
মনে মনে খুশি হলো মেয়েটা। এই একটা মানুষ ওর সব অনুভূতি বুঝতে পারবে। গত কয়েকদিনে আয়ুষ ওকে এমনটাই ভরসা দেখিয়েছে। মেয়েটি দেরি না করে তৎক্ষণাৎ উপরে এলো। আয়ুষ চা তৈরি করছে। ছেলেটা ভীষণ ভালো চা বানায়। ঝিল এক পলক দেখে চোখ নামালো। আয়ুষের ঘরটা বেশ পরিপাটি। এক পাশের দেয়ালজুড়ে আলমারি। আলিশান খাটের উপরের পাশটায় রয়েছে নানান ছবি। এসব ছবির মূল্য নাকি কয়েক লক্ষ্য টাকার উপরে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ঝিল। এর আগে এই ঘরে আসা হলেও তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় নি। অল্প সময় নিয়ে চা বানায় আয়ুষ। দুটো কাপে চা ঢেলে নিয়ে প্রশ্ন করল, “চিনি কতটুকু?”
“এক চামচ।”
আয়ুষ দেড় চামচ চিনি দিল। ঝিল চায়ের কাপ নিতে নিতে বলল, “এ ছবি গুলো কোথা থেকে এনেছ?”
“বাবা এনে দিয়েছেন। সম্ভবত বিদেশ থেকে ক্রয় করা।”
সবে চা মুখে দিয়েছে। ঝিল বুঝতে পারে চিনির মিষ্টতা। এর কারণ জিজ্ঞাসা করতেই হেসে জবাব দেয় আয়ুষ।
“তোর মনের ভেতর একটা তিক্ততার জন্ম হয়েছে। এই তিক্ততা দূরের জন্যই আধা চামচ চিনি বেশি দিয়েছি। আশা রাখছি এ বাড়ির অন্যদের মতো আমার প্রতি বিতৃষ্ণা আসবে না।”
ছেলেটার এমন লজিকে হেসে উঠে ঝিল।
“বাহ, এই ট্রিকটা কোথা থেকে শিখলে?”
“নিজ থেকেই। এখন বল,তোর কি হয়েছে।”
একটা শ্বাস ফেলল ঝিল। ওর মুখের উপর হঠাৎ কালো মেঘের আগমন বুঝতে পারে আয়ুষ। একটু নরম কণ্ঠে ভরসা দেয়।
“তুই আমায় বিশ্বাস করতে পারিস।”
“আসলে আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। এটা ঠিক করা প্রয়োজন। কাউকে বলতে ইচ্ছে করছিল না।”
“ও এই ব্যপার। এটার জন্য কেউ এমন করে? পাগলি মেয়ে।”
আয়ুষ চায়ের কেটলিটা সরিয়ে রাখল। ঝিল একটু উসখুস করেই বলল, “আয়ুষ ভাইয়া আমি আসলে অন্য বিষয় নিয়ে বিরক্ত।”
মৃদু হাসল আয়ুষ। বিষয়টা আগেই ধরেছিল। তবে ঝিল কিছু বলছিল না বিধায় প্রশ্ন করে নি। ঝিল ধপ করে দোলনায় বসে পড়ল। আয়ুষের ঘরে এই দোলনা লাগানোর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। গত কয়েক বছর আগের কথা। আয়ুষদের এক প্রতিবেশি মেয়ে ওকে ভীষণ পছন্দ করত। মেয়েটার পরিবার খুব বেশি ধনী নয়। তাছাড়া মেয়েটি অন্য ধর্মের। এসবের কারণে নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে পারে নি মেয়েটা। তবে বিয়ের কার্ড দেওয়ার সময় বলেছিল ঘরের খালি জায়গাটায় দোলনা লাগালে নাকি ভীষণ সুন্দর হবে। এটা মেয়েটির দাবি কিংবা অনুরোধ ছিল না। আর না আয়ুষের মনে ওর জন্য ভালোবাসা ছিল। তবু কেন যেন ওর কথাটার পূর্ণতা দিয়েছে আয়ুষ। একটা অব্যক্ত অনুভূতির সম্মানেই হয়ত।
পুরো সকাল জুড়ে অভিনবর গল্প করেছে ঝিল। গল্পটা শুরু হয়েছে অভিনব পাগলামি নিয়ে। ছেলেটা সম্পর্ক খুব বেশি তথ্য কিংবা ঘটনা বলতে পারে নি মেয়েটি। তবে একই কথাই হাজার বার বলছিল। সবটাই চুপ করে শুনছে আয়ুষ। এখন সে বেরিয়েছে ঝিলের ফোন নিয়ে। মেয়েটির চোখ মুখ বার বার বলছিল অভিনবর প্রতি কতটা অনুভূতির জন্ম হয়েছে। মোবাইলের দোকানটায় এসে বসেছে আয়ুষ। দোকানদারকে বলেছে এখনি ঠিক করে দিতে। দোকানদার তাই করছিল। ওমন সময় একটি ছেলে এসে বলল, “মামা পুরনো ফোন হবে?”
“হবে মামা।”
ছেলেটা দুটো পুরনো ফোন নিয়ে চলে গেল। আয়ুষ ভাবছিল অভিনব আর ঝিলের বিষয়টা। ছেলেটা যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকে তাহলে এতক্ষণে উন্মাদ হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া এর আগের পাগলামি গুলো তেমন কিছুরই আভাস দেয়।
.
সিগারেটের নেশাটা বরাবরই বেশি তরুণের। ওর জীবনে এই জিনিসটা একটু বেশিই জায়গা করে নিয়েছে। অভিনবর দুঃখের গল্প শুনতে শুনতে তিনটে সিগারেট শেষ করল। ঘটনাটা এমন যে অভিনব দ্বিতীয় বারের মতো ব্যর্থ। ঝিলের মামা বাড়ির সর্তকতা ভেদ করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ গ্রামের অনুগত কর্মচারী। ওদের টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তরুণের ভাবলেশপানা অভিনবকে বিরক্ত করছে।
“শুনছিস আমার কথা?”
“হু।”
“তাহলে আইডিয়া দে। এভাবে বসে আছিস কেন?”
“ভাবছি।”
“কি?”
“কি করে কি করা যায়। তুই দেখ অভিনব, ঝিলকে হঠাৎ করেই কেন মামা বাড়ি পাঠানো হলো।”
“সেটার কারণ তো ওর কাজিনের বিয়ে।”
“হু কিন্তু আমার মনে হয় আরও কিছু কারণ রয়েছে।”
“সেটা তো রয়েছেই।”
“কিন্তু কি?”
“খুবই সহজ আর পরিষ্কার। আমি শুরু থেকেই খোলামেলা ছিলাম। প্রথম দিনই ওদের সামনে ঝিলকে জড়িয়ে ধরেছি। এমনকি আমার পরিচয় ও গোপন করি নি। যেহেতু পুরনো রেষারেষিটা আছে আর আমি ভীতু প্রকৃতির ও নই, সেহেতু ওনারা ভরসা পাচ্ছিল না। তাছাড়া ঝিল যতই লুকোচুরি করুক না কেন, কোনো না কোনোভাবে ওনারা বুঝেছে ওনাদের মেয়ে প্রেমে পড়েছে। একটু নয় গভীর ভাবে। তাই আমাদের আলাদা করার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে।”
ঘটনাটা সত্য। তরুণ অভিনবর কষ্টটা বুঝতে পারছে। মৌনতাকে ডেকেছে ওরা। মূলত মেয়েটি ওদের নানা ভাবে সাহায্য করতে পারবে। বিশেষ করে ঝিলের সাথে কথা বলিয়ে দিতে। সাড়ে চারটার দিকে এলো মৌনতা। হাপাচ্ছে রীতিমতো। তরুণের দিকে রাগী ভাবে তাকালো।
“কতবার কল দিয়েছেন? আমার জান বেরিয়ে আসছিল। আমি তো রকেট নই। আর রাস্তায় কি পরিমানে জ্যাম।”
“রাগ করছ কেন? তুমি তো গুড গার্ল।”
“যত্তসব ঢং।”
অভিনবর আর সহ্য হচ্ছিল না। ওদের কথোপকথন শেষ করার জন্য এক বোতল পানি এগিয়ে বলল, “পানি খাও আপু।”
“থ্যাংকস।”
“তোমাকে কি বলব আমার জানা নেই। হয়ত তুমি না থাকলে আমাকে আরও বিপাকে পড়তে হতো।”
“উহু, বিপাকে পড়তে হতো না। আল্লাহ নিশ্চয়ই কোনো উসিলা পাঠিয়ে সাহায্য করতেন।”
মৃদু হাসল অভিনব। মৌনতা পুনরায় বলল,
“কয়েকদিন ধরে ঝিলের ফোনটা নষ্ট। এমনটাই বলল ওর ফ্যামেলি থেকে। ওর কাজিনের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছি। ঝিলকে দিলেই আমি আপনাকে ধরিয়ে দিব।”
সায় দেয় অভিনব। মৌনতা রজনীর নাম্বারে ডায়াল করে। কিছুক্ষণ বাজতেই কল রিসিভ হয়।
“আপু আমি ঝিলের বান্ধবী মৌনতা। ওর ফোন তো নষ্ট হয়ে আছে। ওকে একটু দেওয়া যাবে।”
“ও আচ্ছা। কিন্তু আপু ঝিল তো বাসায় নেই। আমাদের এক রিলেটিভের বাসায় গিয়েছে।”
“ও আচ্ছা।”
“ঝিল আসলে আমি বলব তোমায় কল করতে।”
“ঠিক আছে আপু। থ্যাংকস।”
কল কেটে সংবাদটা দিল মৌনতা। অভিনবর মুখের ভঙ্গিমা বদলে গেল। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। মাথায় যন্ত্রণা লেগেই আছে। মৌনতা তরুণের দিকে তাকালো। তরুণের ও চোখ মুখ অন্ধকার। ওরা দুজনেই অভিনবর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছে। খারাপ লাগছে খুব। কিন্তু হাত পা ও যে একেবারেই বাঁধা।
চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি