#সাদা_মেঘের_আকাশ
লেখক: হানিফ আহমেদ
আপনার স্বামীর কাছে আমি নিরাপদ না আম্মা।
কথাটি বলার পর সেদিন থাপ্পড় খেয়েছিল নাওশিন আনবার। তখন তার বয়স ১১বছর ছিলো। আজ সে ১৬বছরের সুন্দরে মুড়ানো এক চাঁদ।
সত্যিই সে নিজের মায়ের স্বামীর কাছে একটুও নিরাপদ ছিলো না। ১১বছর বয়সে যখন তার নরম গালে থাপ্পড় পরেছিল এই কথাটি বলার কারণে। সেদিনই সে বুঝতে পেরেছিল, উত্তাপ মরুতে ফোটা কোনো অজানা নামের ফুল সে। ঘ্রাণ, সৌন্দর্য সবই আছে, কিন্তু ফুলের নামটি কেউ জানে না। কিন্তু তার যে নাম আছে, নাওশিন আনবার।
সাদা পৃষ্ঠাতে আজ সে কিছু লিখবে, কিন্তু তার হাতে একটুও শক্তি নেই। তবুও কলম হাতে নিয়েছে সে।
চোখের পানির ফোটা সাদা কাগজে পরল আবারও শুকিয়ে যায় উপরে থাকা তিন পাকার বাতাসে। আজ তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আজ তার অন্তর পুড়ছে, একটু সুখের আশা তাকে আবারও বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। পোড়া অন্তরে, ক্লান্ত শরীরে একটু সুখ পেতে চায়। কিন্তু পাবে কী?
গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো নাওশিন। কলম চালালো সাদা কাগজে, আজ কিছু অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে সে। যে অধ্যায়গুলো শুধুই তার আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ।
তুমি থেকে আপনি শব্দে যাওয়ার কষ্টটা কী আপনি বুঝেন আম্মা? উত্তর টা হয়তো আমার আর শোনা হবে না। উত্তরটি হয়তো ‘না’ আসবেই।
মনে আছে আম্মা! আমার তখন ১১বছর বয়স। জানতে চেয়েছিলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে কেন ঘুমাতে যাই আমি। উত্তরে বলেছিলাম, আপনার স্বামীর কাছে আমি নিরাপদ না আম্মা।
আমার নরম গালে সেদিন আপনি খুব জোরেই থাপ্পড় মেরেছিলেন। সেই থাপ্পড় আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল এই পৃথিবীতে আমি খুব একা। ওই রাতের অন্ধকারে থাকা একক চাঁদের মতোই আমিও একা।
আপনি চাইলেই আমার কথাটির অর্থ খুঁজতে পারতেন আম্মা।
আমি কী আপনার গর্ভের সন্তান ছিলাম না? মা হয়ে কীভাবে সৎ মায়ের মতো ব্যবহার করতে পারতে?
আজ শুধু কিছু প্রশ্ন-ই করে যাবো আপনাকে। আমার আকাশের মেঘ সরে যখন সূর্যের দেখা পাবো, সেদিনই সব প্রশ্নের উত্তর শুনবো আমি।
শেষ কবে আমাকে এক টুকরো মাছ খেতে দিয়েছিলে আম্মা, বলতে পারবে? আমি কী আপনার গর্ভের সন্তান ছিলাম না?
সন্তানের সুখ তো মায়ের বুকে মাথা রাখা, আমাকে শেষ কবে নিজের বুকের সাথে মিশিয়েছিলে আম্মা?
আম্মা আপনি তিন বেলা পেট ভরে খাবার খেয়েছেন, বলতে পারো আম্মা আমাকে শেষ কবে ভাত খেতে দিয়েছিলে? আমি ভুলে গিয়েছি ভাতের সাথে তরকারির স্বাদ কেমন হয়।
ভেবেছিলাম আমার ১৬বছরের এই জীবনের সব প্রশ্ন আজ আপনাকে করবো, কিন্তু আমার হাতে শক্তি নেই আম্মা। চোখ দু’টো আজ বর্ষণ করছে খুব। বছরের পর বছর যদি আমাকে ভাত নামক খাবারটি না দেওয়া হয়, তাহলে আমার শক্তি থাকবে আম্মা? আমি জানি না আমি কীভাবে বেঁচে আছি। রুটি নামক শুকনো খাবার খেয়ে হয়তো আমার বেঁচে থাকার কথা না, তবুও আল্লাহ আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন৷
একটা সময় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতাম, আম্মা আমায় মে*রে ফেলো। কিন্তু আমাকে ক্ষুধার্ত রেখো না।
পৃথিবীতে সব থেকে কষ্ট কী জানেন আম্মা? সব থেকে কষ্ট হলো, ক্ষুধার্ত থাকা।
আম্মা আপনি লোভের সাগরে থাকা জাহাজের নাবিক হয়ে নিজের মেয়েকেই বছরের পর বছর কষ্ট দিয়েছো।
আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি আজ। অনেক কিছুই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে খুব তাড়াতাড়ি। সেদিন আপনার আর আপনার স্বামীর জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। আমি ফিরবো, আপনাদের খুঁজতে হবে না আমায়। আমাকে খুঁজলেও হয়তো আপনারা পাবেন না, তবে আমি খুব শক্তিশালী হয়েই ফিরবো৷
রাত ৩টা, কু’কুরের ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দই নাওশিনের কানে আসছে না।
সে পিছন ফিরে তাকাবে না, ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় ক্লান্ত শরীর নিয়ে খুব কষ্টে হেটে যাচ্ছে সে। দুই বছরের বন্দী জীবন থেকে আজ সে মুক্তি পেয়েছে। কখনো ভাবেনি নাওশিন, আজ সে পালাতে পারবে।
হাতে একটি কাপড়ের ব্যাগ, অতি সামান্য জিনিস-ই আছে ব্যাগে।
মনের ঘরে খুব ভয় কাজ করছে তার। এইতো মনে হচ্ছে তার, গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেটে যাচ্ছে সে। কিন্তু তার মাথার উপর ল্যাম্পপোস্ট এর আলো জ্বলছে, একটু অন্ধকারের পর আবার আলোর দেখা পাচ্ছে সে। তবুও তার অনুভব হচ্ছে সে গভীর জঙ্গলে থাকা কোনো ক্ষুধার্ত বাঘের খাবার, তাকে পালাতেই হবে।
নাওশিন জানে না সে হাটতে হাটতে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। তবে সে বুঝতে পারছে আরো একটু পরেই ফজরের আজান দিবে।
একটি বাসার সামনে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়ায় নাওশিন। রাস্তায় চোখের সামনে যতো বাসা তার চোখে পরেছে, প্রতিটি বাসার গেইট ভিতর থেকেই বন্ধ ছিলো৷
কিন্তু নাওশিন এখন যে বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই বাসার গেইট সহ বাসার ভিতরে ঢোকার দরজাটাও খোলা।
নাওশিন একটু আশ্রয় খুঁজেছিল, আল্লাহ তাকে হয়তো তা পাইয়ে দিয়েছেন।
নাওশিন কোনো কিছু না ভেবেই খোলা বাসায় ঢুকে পরে।
বাসায় ঢুকেই তার মাথায় আর কোনো চিন্তাই আসেনি। শুধু একটি চিন্তাই পাহাড়ের পিছনে থাকা সাদা মেঘের মতো উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, আর তা হলো রান্নাঘর কোন দিকে।
রান্নাঘরে ঢুকেই অল্প কিছু ভাত পেয়েছে নাওশিন। কিন্তু তরকারি খুঁজে পায়নি রান্নাঘরে। আর কোনো কিছু না ভেবেই ভাতে পানি দিয়ে খেতে শুরু করে সে। ভাত প্রথমবার মুখে দিতেই বমি চলে আসে তার, খুব কষ্টে নিজেকে ঠিক রাখে। একটু মনে করার চেষ্টা করল নাওশিন, হ্যাঁ নিজের ১২বছর বয়সে শেষ বার ভাত খেয়েছিল সে।
ভাতের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি টপটপ করে ফেলে যাচ্ছে নাওশিন। মনের ঘরে প্রশ্ন এসে বাসা বেঁধেছে, ভাতের সাথে কী তরকারির স্বাদ পাবে না সে?
তার ভাত আর তরকারির সাথে সাক্ষাৎ নেই অনেক বছর হলো৷ তাই তো আজ সাদা ভাত মুখে নিতেই বমি চলে আসে।
তার কাছে আজ এই সাদা ভাত পৃথিবীর সব থেকে সুস্বাদু খাবার মনে হচ্ছে।
কথায় আছে না,
‘ক্ষুধার্ত পেটে কেউ বিষ খেলেও মৃ*ত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেই বিষও মধুর মতো লাগে।’
ছোটবেলা নাওশিন নিজের মামাকে একবার প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা মামা পথশিশুদের ওই পঁচা খাবার খেতে ঘৃণা লাগে না কেন?
মামা খালেদ আহমেদ হেসে বলছিলেন সেদিন, মা’রে ওরা হলো ক্ষুধার্ত শিশু। ওদের যদি প্রশ্ন করিস, এই খাবার কী সুস্বাদু? ওরা চোখে ভরা জল নিয়ে বলবে, হ্যাঁ খুব মজা।
নাওশিন আর ভাত খেতে পারলো না। ভাত কয়েকবার মুখে দেওয়ার পর তার মনে হচ্ছে এখনই ভিতর থেকে সব বমির মাধ্যমে বের হয়ে আসবে। ভাতের প্লেট হাত থেকে রাখে নাওশিন। অল্প একটু পানি খায়। অনুভব করতে পারল নাওশিন, শরীরে একটু শক্তি পাচ্ছে এখন।
নাওশিনের মস্তিষ্ক কাজ করতে শুরু করে। মনের ঘরে প্রশ্ন এসে উঁকি দিলো৷ সে কার বাসায় ঢুকেছে? এতো রাতে কীভাবে কোনো বাসার গেইট, দরজা খোলা থাকে?
তার ভাবনার ঘরে এই প্রশ্নগুলো এতক্ষণ আসেনি, কারণ সে ক্ষুধার্ত ছিলো।
আরে ক্ষুধার্ত বাঘ শিকারে বের হয়, কিন্তু ভরা পেটে থাকা বাঘটি কখনো শিকারের জন্য ছোটাছুটি করে না। সে তো ক্ষুধার্ত থেকেই খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ভরা পেটে এসেছে।
নাওশিন আস্তে আস্তে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে একটি রুমে আসে। পায়ের নিচে পানি অনুভব করে সে। চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নাওশিন শুধু চিৎকার দেয়, তার চিৎকার বাসার বাহিরে বের হয় নি। তার কণ্ঠস্বর বরফের মতো জমেছে তো অনেক পূর্বেই।
র*ক্তে লাল হয়ে আছে ফ্লোর। নাওশিন আর দ্বিতীয় বার নিচের দিকে তাকাতে পারেনি। তার আর বুঝতে বাকি নেই, এই বাসায় নিশ্চয়ই খারা*প কিছু ঘটেছে। তাইতো এতো রাতেও এই বাসার দরজা খোলা। নাওশিন ভয়ার্ত শরীর নিয়ে এক পা এক পা করে সামনে এগুতেই খুব ভয় পেয়ে যায়। তার শরীর কাঁপছে। শরীর ঘেমেছে মূহুর্তেই। সামনের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে।
কারণ তার সামনে র’ক্তাক্ত ক্ষ’তবিক্ষত একজন পুরুষ ফ্লোরে পড়ে আছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই পুরুষটি যে আর বেঁচে নেই।
নাওশিন থরথর করে কাঁপছে। এমন কিছুর সাথে সাক্ষাৎ হবে জানলে সে এই বাসায় প্রবেশ করত না। কিন্তু মানুষ যে ভবিষ্যৎ জানে না।
নাওশিন নিজের বুকে একটু সাহস নিয়ে আরেকটু সামনের দিকে যায়। পুরুষটির দিকে ভালো ভাবে তাকানোর পূর্বেই বাসার দরজা দিয়ে এক এক করে পাঁচজন পুরুষ ঢুকে৷ নাওশিন এবার একটু বেশিই ভয় পেয়ে যায়। এরা কারা? এরাই কী ফ্লোরে থাকা পুরুষটিকে মে’রেছে?
তাহলে কী তার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা হবে না? কিন্তু সে-তো বাঁচতে চায়, এই বেঁচে থাকার জন্যই বন্দী চার দেয়াল থেকে পালিয়েছে।
কিন্তু আমি তো কোনো অপরাধ করিনি৷ হ্যাঁ একটি অপরাধ করেছি, আর সেটা হলো এই বাসায় প্রবেশ করেছি।
ভাবনার শহরে কথাগুলো উঁকি দিতেই ভীষণভাবে ভয় পেয়ে যায় নাওশিন। সে অপেক্ষা করছে ওদের মুখোমুখি হওয়ার।
নাওশিন দেখলো ফ্লোরে থাকা পুরুষকে দেখে ওরাও খুব অবাক হয়েছে। ওদের মধ্য থেকে একজন নাওশিনকে দেখেই হাতে থাকা লা’ঠি সামনের দিকে এনে কঠিন গলায় প্রশ্ন করল,
কে তুমি?
মানুষটির প্রশ্নে বাকি চারজন সামনের দিকে তাকায়।
এইদিকে নাওশিন সব কিছু অন্ধকার দেখছে। আজকের এই দৃশ্য থেকে তার বন্দী জীবন ভালো ছিলো৷ নিজের মনের সাথে নিজেই কথা বলে যাচ্ছে।
নাওশিনের সামনে ওই পাঁচজন পুরুষ এসে দাঁড়ায়। নাওশিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, আর কাঁপছে খুব।
এই মেয়েকে তো আমি চিনি। তুমি এখানে?
বাক্যটি শুনে নাওশিন কেঁপে উঠে। ওদের মধ্যে কেউ থাকে চিনে! নাওশিন মাথা তুলে তাকায়। না-তো সে এদের কাউকে চিনে না। কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টিতে বুঝতে পারে, এই পাঁচজন টগবগে যুবক কীংবা ত্রিশ এর কাছাকাছি বয়স ওদের।
নাওশিন নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে চেয়েও পারলো না। এতোটা কাঁপছে যে সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
তুমি নাওশিন আনবার?
এই প্রশ্নে এবার একটু বেশিই অবাক হয় নাওশিন। ওরা নাম জানলো কীভাবে? কে ওরা?
নাওশিনের মনে হাজারো প্রশ্নের ঢেউ উঠেছে, কিন্তু মনের মধ্যে উঠা ঢেউ মুখে নিয়ে আসতে পারছে না।
এ যেনো সাগরের বুকে থাকা বিশাল ঢেউ যা এসে সাগর পাড় ভিজিয়ে দিতে পারছে না।
নাওশিন চুপ। সে কোনো কথা বলছে না। কী বলবে, সে খুঁজে পাচ্ছে না। বন্দী দেয়ালের অ’ত্যাচার আজ তার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে এই আজকের দিনের কাছে। হাজারো চেষ্টা করেও নিজের বুকে সাহস জমাতে পারছে না। কিন্তু সে-তো কখনো এতো ভীতু ছিলো না। তাহলে কী এই বন্দী জীবন থাকে ভীতু করে দিয়েছে?
পুরুষটি আবার প্রশ্ন করল,
তুমি এখানে কী ভাবে এসেছো? কথা বলছো না কেন নাওশিন?
নাওশিন আবারও পুরুষটির দিকে তাকায়। তার দিকে পাঁচ পাঁচটি মুখ তাকিয়ে আছে। পাঁচজনের চোখেই পানি টলমল করছে৷ এই তো মনে হচ্ছে আকাশ গর্জন করার পর যেমন ঝুম বৃষ্টি আসে। ঠিক ওদের চোখের পানিও চোখ ফেটে বের হওয়ার অপেক্ষায়।
কিন্তু ওদের চোখে পানি কেন?
নাওশিন কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। তার মনে হাজারো প্রশ্ন এসে জমেছে।
পুরুষটি আবারও বলল,
সাইফ উপরে গিয়ে দেখ তো ওরা বেঁচে আছে কী?
নাওশিন অবাক হলো, উপরে কী তাহলে আরো মানুষ আছে?
নাওশিন ঠিক শুনতে পেয়েছে, কথাটি বলার সময় পুরুষটির কণ্ঠস্বর ভেঙে আসছিল।
এভাবে চুপ থেকো না নাওশিন। আমরা তোমাকে চিনতে পেরেছি। তুমি জা,,,
পুরুষটি থেমে যায়, কিছু বলতে চেয়েও থেমে যায় সে। নাওশিন মাথা তুলে তাকায় আবার। কী বলতে চেয়েছিল এই মানুষটি?
এই পাঁচজনের মধ্যে কী এতো রহস্য? আর এই বাসাতে ঠিক কী হয়েছে? এরা কী ডা’কাতের দল? আসলে এরা কারা?
হাজারো প্রশ্নের উঁকিঝুঁকিতে নাওশিনের মুখ আজ বন্ধ। কোনো কথা বলার শক্তি নেই তার।
ভাইয়া উপরে আন্টি, পিচ্চি দু’টো কেও খু’ন করা হয়েছে। এতো খা’রাপ ভাবে মেরেছে যে আমি তৃতীয় বার আর তাকানোর সাহস পাই নি।
সাইফের কথা শুনে বাকি চারজনের মধ্য থেকে একজন চোখের পানি মুছে শুধু বলল,
আমরা একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছি আসতে।
নাওশিন দর্শকের ন্যায় শুধু কথা শুনে যাচ্ছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। একটু পূর্বেও এদের কতো কী ভেবেছিল সে, কিন্তু এরা মাত্রই এসেছে। তাহলে চার চারটা মানুষকে কে মে’রেছে?
নাওশিনের দিকে তাকিয়ে একজন বলে উঠলো,
মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে নে। ফজরের আজান এর সময় হয়েছে, এখনই হয়তো আজান দিবে।
কথাটি শুনে নাওশিন এবার নড়েচড়ে বসল,
আয়ায়ায়ায়ামাকে কোথায়ায়ায় নিবেন আপনারা?
খুব কষ্টে প্রশ্নটি করে নাওশিন।
আমরা জানি তুমি এদের কাউকে খু’ন করো নি। কোনো কথা না বলে আমাদের সাথে চলো। ভয় পেয়ো না।
নাওশিন আঁতকে উঠল। ওরা তাকে ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাতে যাচ্ছে এই খু’নগুলো সে করেছে। নাওশিন চোখ বন্ধ করে আছে, চোখ থেকে টপটপ করে পানি ফেলে যাচ্ছে। অ’ত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য তাকে আজ কোথায় নিয়ে এসে দাঁড় করালো।
তুমি এভাবে চুপ থাকলে, সকালের আলোয় সবাই তোমাকেই খু’নী বলবে নাওশিন। আমরা পুলিশকে চাইলেই খবর দিতে পারি, কিন্তু এই দেশের আইন,,, থাক এসব। আমরা জানি তুমি কে, কী তোমার পরিচয়। নির্ভয়ে চলতে পারো আমাদের সাথে।
নাওশিন যেন দোটানায় পড়ে যায়৷ সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কী করবে সে? তাকে কীভাবে চিনে এরা? তাহলে এরা কী তার মা বা তার মায়ের স্বামীর পরিচিত কেউ?
এই চারজনকে কী এরাই মে’রেছে?
নাওশিন সব প্রশ্নকে এক পাশে রেখে ছোট্ট একটি প্রশ্ন নিজের মন কে করল,
আমি তো খু’নগুলো হতেও দেখিনি। কিন্তু এই মানুষদের দেখেছি। তাহলে কী এই মানুষগুলো আমাকে ওই চারজনের মতো কোথাও নিয়ে?
নাওশিন মাথা চেপে ধরলো। তাকে পালাতে হবে।
নাওশিন ছোট্ট করে শুধু বলল,
চলুন।
চলবে,,,