সম্পর্ক শেষ পার্ট

0
3159

#সম্পর্ক শেষ পাঠ

,, আমি একটা ডিসিশন দিতে চাই।

,, কি ডিসিশন স্যার।

,, রাজিয়া বেগম ও হিসামের ডিএনএ টেস্ট করাব, ডিএনএ টেস্ট করতে হলে উপর থেকে পারমিশন নিতে হবে, আপনি যদি চান তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

,, আচ্ছা স্যার ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা করেন, তখনি প্রমাণ হয়ে যাবে, হিসাম রাজিয়া বেগমের ছেলে কি না।

,, কয়েকদিন অপেক্ষা করেন, পরেই জানতে পারব কে সত্য কথা বলছে আর কে মিথ্যা বলছে।

আমি দু-টানায় পড়ে গেলাম কি আসে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টে, অপেক্ষা করতে থাকলাম।
ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসলো প্রমাণিত হলো, হিসাম রাজিয়া বেগমের ছেলে না, আকিবের সঙ্গেও রক্তের সম্পর্ক নেই হিসামের।
রাজিয়া বেগম আর আকিব আদালতে অপরাধী সাবস্ত হলো, রাজিয়া বেগমকে বারো বছর আকিবকে আট বছরের জেল দিলো আদালত।

হিসামকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, তার চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা, অনেক দুঃখী মনে হচ্ছে হিসামকে।
আমি তাকে বললাম শুনো জান, যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে, আর এখন তোমার পাশে আমি তো আছি, ইনশাল্লাহ সারাজীবন থাকব।

আব্বাসউদ্দীন চাচা প্রায় একমাস আমাদের বাসায় ছিলো, চাচা এসে আমাকে বলছে, বৌমা সব ঝামেলা শেষ হয়ে গেছে, এখন আমি কুমিল্লা চলে যাই।
চাচাকে বললাম আরো কয়টা দিন থেকে যেতে। চাচা বললেন, না বৌমা অনেকদিন তো থাকলাম, পরে আবার আসব সময় করে।
আমাদের কথার মাঝে হিসাম এসে চাচাকে বলল,

,, চাচা আমার কি এই দুনিয়ায় রক্তের সম্পর্কের কেউ নেই, সব মানুষের সবকিছু আছে আমার নেই কেন।

হিসামের কথা শুনে আমি আর চাচা চুপ করে আছি, চাচার চোখে পানি চলে আসছে, হিসাম আবার চাচাকে জিজ্ঞেস করল,

,, আমার মা বাবার কি কোন রিলেটিভ ছিল না, এটা কেমন কথা।

,, তোমার আম্মু এতিমখানায় মানুষ হয়েছে, তার কেউ ছিল না, তোমার আম্মু লেখাপড়ায় ভালো ছিল বলে তাকে এতিমখানার পক্ষ থেকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেয়, তোমার আম্মু যখন জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে তখন তোমার আব্বু সঙ্গে পরিচয় হয়। তোমার আব্বু ভালোবেসে তোমার আম্মুকে বিয়ে করে, এতিম পিতামাতা হীন মেয়েকে বিয়ে করছে বলে তোমার দাদু তোমার আব্বুকে ত্যাজ্যপুত্র করে, তারপর থেকে তোমার দাদুর বাড়ির কারো সাথে তোমার আব্বুর সম্পর্ক ছিল না।

হিসাম চাচার কাছে জানতে চায়, তার দাদার বাসা কোথায়।

,, আমি তা বলতে পারব না, তোমার আম্মু আমাকে নিষেধ করেছে।

,, বললে প্রব্লেম কি চাচা, প্লিজ বলুন।

,, হাফসা মেম মনে করতেন তার জন্য তোমার আব্বুকে তোমার দাদু ত্যাজ্যপুত্র করে, তোমার আব্বু মরার পর কেউ দেখতে আসেনি, তার ছেলে তাদের কাছে গেলে তারা তাকে কখনো দেখতে পারবে না, তোমার আম্মুর ইচ্ছা তুমি যেনো কোনদিন তাদের কাছে না যাও।

,, ঠিক আছে, আমি আমার আম্মুর কথা রাখব যারা আমার আম্মুকে মেনে নেয়নি আমার আব্বুকে ত্যাজ্য করছে মারা যাবার পর নিজের ছেলেকে দেখতে আসেনি তারা আমার কেউ হতে পারে না।

আমাদের বিয়ের দশ বছর পূণ্য হয়েছে, হিসাম নিজে এখন ব্যবসা অফিস দেখাশোনা করে, মাঝে মাঝে আমিও অফিসে যেয়ে হিসামকে হেল্প করি। আমাদের দুইজন ছেলেমেয়ে, ছেলে রিয়ান বয়স সাত আর মেয়ে অথৈয় বয়স তিন।

হিসাম ছেলেমেয়েদের অনেক ভালোবাসে, হিসাম এখন সবসময় বলে, অবনী দেখো পৃথিবীতে আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ ছিল না কিন্তু আল্লাহ আমার মা বাবাকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে, আমার সন্তান দুইটা আমার মা বাবা।

আমার মা বাবা এখন আমাদের সাথে থাকে, হিসাম আম্মা আব্বাকে নিয়ে আসছে, আমি বলছিলাম শ্বশুর শাশুড়ী মেয়ের জামাইয়ে বাসায় থাকবে লোকে কি বলবে।
হিসাম আমার কথা না শুনে নিজে গিয়ে আম্মা আব্বাকে নিয়ে আসছে, সে বলে লোকে যা বলার বলুক আমি মনে করব আমার শ্বশুর শাশুড়ী আমার নাম নিজের মা বাবা।

আব্বাসউদ্দীন চাচা মারা গিয়েছে কিছুদিন আগে, অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল, হিসাম আব্বাসউদ্দীন চাচাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করিয়েছে আমাদের বাসায় রেখে তবু ভালো হয়নি।

আমি হিসামের মত পবিত্র মনের মানুষকে স্বামী হিসাবে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি।
হিসাম আমাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে সুখী, আমি যা বলি যা চাই হিসাম সবসময় আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়, আমি আল্লাহর কাছে প্রাথনা করি আমাদের সংসারে যেন সুখ শান্তি চিরদিন অমলিন থাকে।

সাদমান হাসিব সাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে