সমুদ্র বিলাস পর্ব-০৩

0
2649

#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:৩

গভীর রাতে নিরবের ঘুম ভেঙ্গে যায়।বিছানার এপাশ ওপাশ করতে থাকে।ব্যর্থ হয়ে সে ব্যালকনিতে আসে।আহিলের প্রতি সে অনেক রাগান্বিত।সে ব্যবসা সম্পর্কে তেমন বুজে না তবুও আহিল তাকে ব্যবসার সূত্রে ঢাকার বাহিয়ে পাঁঠিয়েছে।কুয়াশায় ঘোলাটে চন্দ্রালোকের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে কুহেলিকাকে অনুভব করতে থাকে।নিজে ভালোবাসার নেত্রপল্লব দিয়ে কুহেলিকার কাল্পনার জগতে আবিষ্কার করতে থাকে।তাকে বধূরুপে নিজ গূহে অনুভব করে মনে মনে এক প্রফুল্ল ভাব তৈরি করে।ক্রমে ক্রমে তার মনে এক ঝড়ের তৈরি হয়ে যায়।কুহেলিকাকে দেখার জন্য মন উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলো।তৎক্ষনাৎ ফোনে কাঙ্কিত মানুষটিকে ফোন করে।অল্প ব্যবধানে কুহেলিকা রিসিভ করে বলে হ্যালো,কে আপনি?

নিরব মাথা চুলকিয়ে বললো তোমার নাম্বার থেকে আমার এখানে ফোন আসছে।

কুহেলিকা নিরবের কন্ঠস্বর অনুধাবন করতে না পেরে বললো আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আপনার এখানে আমি ফোন দেই নি।

ধরলাম তুমি আমাকে ফোন দেওনি,তাহলে কি আমরা কথা বলতে পারিনা?

দেখেন আমি আপনাকে চিনি না।আর এতরাতে কোন লজিকে আমি আপনার সাথে কথা বলব।

কুহেলিকা তাকে চিনতে পারেনি বলে সে খুশি হয়।হাস্যজ্জ্বল কন্ঠে বলে উঠে তোমার প্রেমাস্পদ ভেবে কথা বল।

প্রেমাস্পদ!আপনার মাথা খারাপ।রাতে ফোন দিয়ে কি সব পাগলের মতো কথা বলছেন।

আমি পাগল,সেটা তোমার প্রেমে কারণে হয়েছি।তাই তো সব উপেক্ষা করে তোমাকে ফোন করলাম।

আপনি পাগল সেটা আবার মাত্রারিক্ত।দয়া করে ফোন রাখেন।

নিরব আরো কিছু বলতে যাবে তখন ফোনে টুন টুন শব্দ হয়।কুহেলিকা রাগান্বিত হয়ে ফোন রেখে দিয়েছে।এতটুকু বাক্যলাপে নিরব নিজের মনের প্রফুল্ল অনুভব করে।বসন্তের বায়ুর তাড়নায় বৃক্ষরাজিতে যেরুপ মর্মর প্রতিধ্বনি হয় এবং চন্দ্রের ধরণীতে নেত্রপল্লবের ন্যায় তার অন্তরে এক ভালোবাসাময় উত্তেজনায় আনন্দ সৃষ্ট হয়।
নিজের বক্ষদেশকে শান্ত করতে সে চিঠি লিখতে বসে।কলমের আচঁরের মাধ্যমে নিজের মনের ব্যাকুলতা লিখে।

প্রত্যুষে কুহেলিকা স্নান করে নিজের আর্দ্র কেশমালাকে শুকাতে ব্যালকনিতে যায়।গতকাল শীতের প্রচন্ডতার কারণে সে স্নান করতে পারেনি।তাই তার সারা রাত ভালো ঘুম হয়নি।
শিশির বিন্দুর ন্যায় টপটপ করে তার কেশরাশি থেকে পানি পড়তে থাকে।নিজের হাত দ্বারা মাঝে মাঝে আলতো করে ঝাড়ঁছে।
আহিল অলক্ষ্য কুহেলিকার পিছনে আসে।বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে সে বলে উঠে কুহি তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

পিছন থেকে পুরুষালি কন্ঠ শুনে সে পিছনে দৃষ্টি দেয়।আহিলকে দেখে রাগান্বিত হয়।সে আর আহিলকে সহ্য করতে পারে না।আহিল কুহেলিকার মৌনতা দেখে বলে উঠে তোমার যদি সময় থাকে তাহলে বলতে পারি।
কুহেলিকা বিরক্তের লেশ নিয়ে বললো তাড়াতাড়ি বলে এখান থেকে চলে যান।
কুহেলিকার বাক্য আহিলের মনে দাগ সৃষ্টি করে।সাথে তার অন্তরে বিষাদময় ব্যথা সৃষ্টি হয়।সে কুহেলিকার কাছ থেকে এমন বাক্য আশা করেনি।সে ভেবেছিলো তাকে দেখে কুহেলিকা আগের মতো পাগলামি করবে।তাকে আপন করতে কান্নাকাটি করবে।কিন্তু কুহেলিকা যেনো যুগের পালা পরিবর্তনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।সে আর কালো মেঘের গর্জন দেখে বসন্তের বারিপাতের আশা করে না।
আহিলকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুহেলিকা বলে যা বলার বলেন,তা না হলে চলে যান।

আহিল নিজেকে ধারস্ত করে বলে তোমার সাথে আমি যা করছি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

কুহেলিকা বিদ্রুপের ন্যায় হেসে বলে ক্ষমা!ক্ষমা তো আমি চাবো।কারণ আমি আপনাকে লোকসম্মুকে মানসম্মানহানী করেছি।

আহিল কি বলবে বুজতে পারছে না।কুহেলিকার মুখশ্রী দেখেই বুজা যাচ্ছে সে রুষ্টা।তবুও চেষ্টা করলে মন্দ নয়।তাই সে কুহেলিকার মন জয় করার জন্য বললো আমি সত্যিই দুঃখিত।আমাদের ভালোবাসার,,,,

তখনি রানু রুমে প্রবেশ করে।আহিলকে কুহেলিকার রুমে দেখে বলেন তুই এখানে কেনো আহিল?

দরকার ছিলো বলে আহিল রুম ত্যাগ করে।আহিল চলে যাওয়ার পরপরে রানু রাগে রগড়িয়ে বলে আমার ছেলের পিছন এখনি ছাড়লি না।আবার বশ করতে উঠে বসে লেগেছিস

কাকি আপনার ছেলে নিজ থেকে আসছে।

বটে মিথ্যা বলতে কখন শিখলি,সাথে মুখে মুখে তর্ক।আর কোনো দিন তকে আহিলের সাথে দেখলে আমি তকে কি করবো তা আমিই জানি।
রানু রগড়াতে রগড়াতে চলে যায়।

পড়ন্তে বিকালে কুহেলিকা টিউশনি করাতে রওনা হয়।তখন মাক্স পরিহিত এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বিনা বাক্যব্যয়ে একটা পার্সেল দিয়ে চলতে শুরু করে।কুহেলিকা ডাকাডাকির পরও লোকটি ফিরেও তাকাই নি।পার্সেল হাতে নিয়ে কুহেলিকা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।কি করবে বুজতে পারছে না।
দাঁড়িয়ে না থেকে পুনরায় চলতে থাকে।তৃষাদের বাসায় এসে দরজায় আঘাত করে।তখন কেউ দরজা খোলে বলে ম্যাম আপনি ,ভিতরে আসেন।
কুহেলিকা রুমে ঢুকে।তৃষা এসে বলে ম্যাম আপনি আজ চলে যান।আজ আমার পেট ব্যথা করছে।
তৃষার কথা কুহেলিকার বিশ্বাস হয় না।তৃষা প্রায় না পড়তে বাহানা খুজে।এটা ওটা বলে পড়া থেকে দূরে থাকে।কুহেলিকা ইংরেজি বই নিয়ে বলে কষ্ট করে যখন আসলাম তখন পড়িয়ে যাবো।
কুহেলিকার কথা শুনে ফের তৃষা বলে ম্যাম সত্যিই পেট ব্যথা করছে।
তৃষার মা এসে তৃষার কাঁধে হাত রেখে বলে আজ সকাল থেকে তৃষার পেট ব্যথা করছে।আমি আপনাকে ফোনে করে বলতে ভুলেই গেছি।

তাহলে আজ কি চলে যাবো।

চা বিস্কুট খেয়ে চলে যান।

না,বিলম্ব করা দরকার নেই।

তৃষাদের বাসা থেকে কুহেলিকা ফিরে পার্সেল খুলতে বসে।পার্সেলের ভিতরে নীল শাড়ি,চুরি,কানের দুল।আর বেলী ফুলের খোঁপা।সর্বশেষে একচিঠি।কুহেলিকা চিঠির ভাজ খোলে,,

প্রিয় পুষ্পপরী

তোমাকে এখন থেকে আমি পুষ্পপরী বলে ডাকবো।কারণ তুমি পুষ্পের ন্যায় মনোহারিতা প্রদান করো।নিজের সৌন্দর্যের মাধ্যমে চারপাশ স্নিগ্ধময় করে তোল। বাবুনা , নার্গিস ফুলের ন্যায় তোমার মুখশ্রী যে আমার অভ্যন্তর দেশে মুর্দ্রিত হয়ে উঠেছে।তুমি যে বিন্যস্ত মুক্তমালার দ্বারা হাসো।বসন্তের কোকিলের কাছ থেকে ধার নেওয়া তোমার কন্ঠস্বর আমাকে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় পরিণত করে।তুমি যে সুভাসিনী,পদ্মপরী,মায়াবতী এই সব গুণে গুনাম্বিত।তুমি বিভিন্ন উপমায় উপমিত।তোমার দেহরত্ন যেনো শিল্পীর আঁকা ছবি।নক্ষত্ররাজির মতো তুমি দীপ্তি হও।চন্দ্রকিরণের ন্যায় তোমার রুপের ঝলক।দিগন্তের স্বর্ণচ্ছটার ন্যায় মধুময়।তোমার প্রতি যে আমি গভীরভাবে আসক্ত হয়েছি।ভালোবাসবে আমায়?তাহলে আমি তোমাকে বসন্তের বারিপাতের চেয়েও স্বচ্ছ ,শিশির বিন্দুর থেকে চকচকে,সাগড় সেঁচা মুক্তার চেয়েও দামি ভালোবাসা দিবো।তোমার মুখশ্রী আমার অন্তরে দাগ সৃষ্টি করেছে।তা বিলিন হয়ে যাওয়ার নয়।তোমাকে পড়ন্ত বিকালে নীল শাড়ি পরিহিত রুপে দেখতে যাই।তখন দুজন দুজনের হাত ধরে সমুদ্র বিলাস করবো।সমুদ্রের বিন্যস্ত তরঙ্গমালা এসে তোমার পা ছুঁয়ে অলক্ষ্য চলে যাবে।দক্ষিনা হাওয়া এসে তোমার কেশমালাকে এলোমেলো করে দিবে।অদূরে বন্যহংসগুলো তোমার সৌন্দর্যের কারণে নিজেদেরকে নিরব জলাশয়ে লুকায়িত করবে। তোমার ঠোঁটের কিণারে যেনো স্নিগ্ধমাখা হাসি থাকে।আমার এই ইচ্ছাকে বাস্তবতার রুপ শুধু তুমিই দিতে পারো।তোমাকে বধূবেসে দেখা আমার অদম্য ইচ্ছা।কোনো এক রজঁনিতে তোমাকে নিজ গৃহে শুভদৃষ্টি দেখে নিজের অশান্ত অন্তরকে শান্ত করতে চাই।কি আর বলবো।আজ তাহলে এখানে কলমের আচঁর শেষ করি।

ইতি অপেক্ষমান ব্যক্তি

কুহেলিকা চিঠি পড়ে ভাবতে লাগলো কে হতে পারে।প্রতিফলে সে ব্যর্থ হচ্ছে।তাকে চিঠি দেওয়ার কেউ নেই।তাই শেষ পর্যন্ত সে বিফল হয়।
রাত তখন বারোটা।আনজুমার বুকের ব্যথা বাড়তে বাড়তে বড় আকার ধারণ করে।কুহেলিকা মাকে ব্যথায় চটপট করতে দেখে কাকিকে ডাকে।কুহেলিকার কাকার তার ফ্রেন্ডের বাসায় পার্টি থাকায় তিনি নেই।আহিল আর মীরা বেড়াতে গিয়েছে।বাড়িতে শুধু কুহেলিকা আর রানু ও মনিরা ছিলো।কুহেলিকা তার কাকিকে জাগ্রত করলে তিনি কর্কশ কন্ঠে বলেন তর মা মারা গেলেও আমি বিছানা থেকে উঠবো না।
নিরাশ হয়ে কুহেলিকা ওষুধ বক্সে ওষুধ খুজে।এবারো সে নিরাশ হয়।বাসায় ওষুধ একটাও নেই।কুহেলিকা তখন ঠিক করে সে ওষুধ কিনতে যাবে।কিছু টাকা নিয়ে মনিরাকে তার মায়ের কাছে বসায়।যাওয়ার আগে বলে যায় মনিরা একটু মার খেয়াল রাখিস আমি ওষুধ কিনেই চলে আসবো।
মনিরা তন্দ্রার ভাব নিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

কুহেলিকা আপন গতিতে হাঁটছে।রাস্তা একবারে সুনশান।মানুষের ছায়া তো দূরের কথা তাদের অস্তিত্বেই নেই।রাস্তার পাশে বসে খুদার তাড়নায় কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে কুকুরের চোখগুলো ভয়ানক লাল দেখাচ্ছে।কুয়াশার প্রবলতার কারণে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রোড দেখা মুশকিল হচ্ছে।হিমশীতল বাতাসে পরিত্যক্ত কাগজগুলো ভয়ানক শব্দ তৈরি সৃষ্টি করছে।সর্বপরি পরিবেশটা যেনো ভুতুরে।হরর মুভির জন্য উপযুক্ত।
কুহেলিকা চাদরটা আরো টেনে গায়ে জড়ায়।তার মনে অজানা ভয়ের উৎপন্ন হতে লাগলো।
তখনি কারো ঠান্ডা হাত সে তার ঘাড়ে অনুভব করে।পিছনে তাকানোর সাথে সাথে তার মুখে রুমাল বাঁধে।অন্ধকারের কারণে লোকটার মুখ তার দেখা হলো না।তবুও লোকটার গায়ের ঘ্রাণ অতি পরিচিত হতে লাগলো।যেনো সেই ঘ্রাণ সে বহুজায়গাই পেয়েছে।ঘ্রাণের কারণে লোকটাকে পরিচিত লাগলো।কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে কুহেলিকা মনে করতে পারলো না কে সেই লোক।লোকটা তাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে নিক্ষেপ করে।কোনো কিছুতে আঘাত লেগে কুহেলিকার সেন্স তৎক্ষনাৎ হারায়।

চলবে,,,,,

রিচেক করতে পারিনি , তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টি দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে