সমুদ্র বিলাস পর্ব-০৪

0
2049

#সমুদ্র_বিলাস
#Rahnuba_mim
পার্ট:৪

কুহেলিকা মিটমিট করে তার আঁখিযুগল উন্মুক্ত করে।চারদিকে নেত্রপল্লব নিক্ষেপ করে সে নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করে।ড্রায়বিং সিটে লোকটাকে দেখার প্রয়াস চলায়।কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।গাড়িতে অন্ধকার থাকায় শুধু লোকটার পিছনের অংশ দেখা যাচ্ছে।কুহেলিকা নড়াচড়ার করলে সে বুজতে পারে তার হাত বাঁধা।তাও আবার তার চাদর দিয়ে।ঠান্ডায় কুহেলিকা তার কম্পিত দাঁত দিয়ে হাতের বাধঁন খুলতে শুরু করে।কয়েক মিনিট পরপরেই সে তার কাজে সফল হয়।গাড়ির দরজা ভিতর দিক দিয়ে লক করা ছিলো না,তাই কুহেলিকা চলন্ত গাড়ি থেকে লম্প দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
উক্ত শব্দ লোকটার কর্ণঘোচর হলে লোকটা পিছনে তাকিয়ে কুহেলিকাকে দেখতে না পেয়ে গাড়ি থামায়।রাস্তার ইট পাথরের আঘাতে কুহেলিকার তুলতুলে শরীর থেকে রক্ত ঝঁড়তে থাকে।রক্তরাঙা হয় কুহেলিকার সাদা জামা।ভিজে একেবারে জ্যাবজ্যাবা হয়ে যায়।
কুহেলিকা সমস্ত আকাশের আহত বীণারের ন্যায় তার হাত দিয়ে রজঁনী বিলাসের নাইট কোচদের গাড়ি থামানোর জন্য ইশারা করে।কিন্তু তারা অন্ধকারের লেশ বেশি থাকায় কুহেলিকাকে দেখতে পায়নি।পাশ ঘেশে তারা সদর রাস্তা কাঁপিয়ে চলে যায়।লোকটা একদুই পা করে কুহেলিকার দিকে এগুতে থাকে।

কুহেলিকাকে দেখার জন্য নিরবের অন্তঃস্তর উৎকন্ঠিত হয়ে গেলো।চড়ুঁই পাখির ন্যায় তার অন্তকরণ প্রবল বেগে চলতে থাকে।নিজের নেত্রপল্লব দ্বারা কুহেলিকাকে দেখে নিজের বক্ষপিন্ড শান্ত করতে ব্যাগ গুছিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।রাস্তায় পুরোটা সময় কুহেলিকার কথা মনে করে।বারংবার মনের পর্দায় ভেসে উঠছে তার অপূর্ব মূর্তি।
তখনি সে রাস্তার মধ্যখানে কুহেলিকার আহত দেহ দেখতে পায়।সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত পায়ে তার কাছে যায়।চক্ষুযুগল বিস্ফোরিত করে কুহেলিকার কাছে বসে।কুহেলিকা নিরবের দিকে তার আহত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ।পরিচিত মানুষকে দেখে ভয়ে সে নিরবকে জড়িয়ে ধরে।নিরব আগা থেকে মাথা অব্দি কিছুই বুজতে পারেনি।তখন সে সামনে একলোকের ছায়া দেখতে পায়।তৎক্ষনাৎ তার সব বুজে আসে।রাগান্বিত হয়ে লোকটাকে ধরতে গেলে কুহেলিকা তাকে আষ্টিবদ্ধ করে।খামচে ধরে নিরবকে।ভালোবাসার মানুষের দায়িত্ব সঠিকভাবে রক্ষা করতে না পারায় নিরব তার অন্তঃস্তর থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে।নিজের কম্পিত হস্ত দিয়ে কুহেলিকার মাথা বুলাতে থাকে।নিরবের অন্তঃকরণ বলতে লাগলো ঢাকার বাহিরে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি।যার নাম সর্বদায় তার অন্তঃকরণে সুধাবর্ষণ করতো এবং তার মনে ঝড় সৃষ্টি করতো তাকে আহত দেখে তার বক্ষপিন্ড যেনো ছিড়ে যাচ্ছে।কুহেলিকাকে কোলে নিয়ে তার গাড়িতে যায়।
কুহেলিকার হিতাহীত সেন্স নেই ।ঠান্ডায় সে বর্ষার দিনে ভেজা পাতার ন্যায় কেঁপে উঠছে।তাই নিরব কুহেলিকার গায়ে চাদরটা জরিয়ে দেয়।ব্যান্ডেসের যাবতীয় সব তার গাড়িতে ছিলো।নিরব ব্যান্ডেস করার জন্য কুহেলিকাকে তার নিজের কাছ থেকে ছুটানোর চেষ্টা করে।কিন্তু কুহেলিকা তাকে অদৃষ্টবিমূঢ়ের ন্যায় ধরায় সে বিফল হয়।বহু কষ্টে কুহেলিকাকে নিজের বক্ষে রেখেই ব্যান্ডেস করে।ব্যান্ডেসের সমাপ্তের পর নিরব হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত চারটা চুঁই চুঁই।তার মাথায় প্রশ্ন ঘুরতে থাকে কে কুহেলিকাকে অপহরণ করতে চাইছে?আর তার বাসা থেকে তাকে আনলো কি করে?সে কোনো কিছু হিসাব পাচ্ছে না ।যত ভাবছে তত যেনো মস্তিষ্ক নামক বস্তুতে প্রবল ভাবে ব্যথার সৃষ্টি হচ্ছে।ভাবনা রেখে নিরব তার নেত্রপল্লব কুহেলিকার দিকে নিক্ষেপ করে।কুহেলিকা ব্যথার কারণে তার ভ্রুযুগল কুঁচকে ঘুমিয়ে আছে।নিজ হস্ত দিয়ে নিরবকে ধরে রেখেছে।তার সেন্স থাকলে কখনো নিরবকে জরিয়ে ধরতো না।

রাত্রির তার আপন আবরণ সরিয়ে দেয়।সুযোগ করে দেয় দিনকে।আস্তে আস্তে নবযৌবনা কাকের পালকের ন্যায় অন্ধকারের সমাপ্ত হয়।আগমন করে প্রভাত।অন্ধকারের জন্য অস্পষ্টভাবে যে বালুতট ধূ ধূ করছিলো তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে।প্রত্যুষেই ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়তে থাকে শহরের কাকগুলো।কিছু পাখি তার খাদ্যের জন্য বহু দূরে উড়তে থাকে।শীতের এক সূর্য রশ্মিকিরণ এসে নিরবের চোখে পড়ে।নিরব মিটমিট করে চোখ খুলে।লালবর্ণময় আকাশে উড়ে যাওয়া বন্যহংসের দিকে তাকিয়ে ভাবে সাগড় হয়তো নিকটে।নিজের স্নিগ্ধ দৃষ্টি কুহেলিকার দিকে নিক্ষেপ করে।কুহেলিকা অল্পবয়স্কা তরুণীর মতো ঘুমিয়ে আছে।সূর্যকিরণে কারণে কুহেলিকার মুখশ্রীতে এক লাবণ্যময় করে তুলেছে।তার নেত্রপল্লব অতি স্নিগ্ধ।নিরব কুহেলিকাকে এতকাছ থেকে কখনো দেখেনি।নির্দিষ্ট ব্যবধানে তাকে যতটা সুন্দর ভেবেছিলো তার চেয়েও সে সুন্দর।নিরব লক্ষ্য করে কুহেলিকার ডান চক্ষুর নিচে অমাবস্য রজঁনীর ন্যায় একটা তিল।তিলটা যেনো আপন জায়গায় বসে অপূর্ব সৌন্দর্য প্রকাশ করছে।
তখনি কুহেলিকা তন্দ্রার ভাব নিয়ে চোখ খুলে।নিজেকে নিরবের বক্ষে আবিষ্কার করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে।লজ্জাবতী গাছের ন্যায় সে নয়ে পড়ে।লজ্জায় কুহেলিকার গাল রক্তকরবী পুষ্পের ন্যায় হয়ে উঠে।

নিরব কুহেলিকার লজ্জা নিবারণের জন্য বলে উঠে তোমার সাথে এইসব কি করে হলো?

তখনি কুহেলিকার রাতের কথা মনে হয়।মনে পড়ে মায়ের বক্ষের ব্যথা।দুঃখে সে নিরবের সম্মুখে অশ্রুবর্ষণ করতে থাকে।নিজেকে ধারস্ত করে ভেজা কন্ঠে তাকে পুরো ঘটনা বলে।
কুহেলিকার বাক্যবর্ষণ শেষ হলে নিরব বলে তাহলে আমাদের তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।

কুহেলিকা তার অশ্রু মুছে বলে তার আগে বাসায় ফোন দেও।
নিরবও কালবিলম্ব না করে বাসায় ফোন দেয়।রানু ফোন ধরে আলস্যকন্ঠে বলে উঠে সকাল সকাল ফোন দিছস কেনো?

নিরব বললো মা কাকির রাতে বুকে ব্যথা উঠছিলো।তিনি এখন কেমন আছে?

ভালোই আছে।বেশি ব্যথা থাকায় আমি আমাদের ব্যক্তিগত ডাক্তারকে ফোন দিয়ে আসতে বলি।তিনি রাতে ওষুধ খায়িয়েছেন।জানিস রানুর ব্যথার পরপরে কুহেলিকার গায়েব।এই সুযোগে মনে হয় কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।

না মা পালায়নি।কুহেলিকা আমার কাছে।

রানু বিস্ফোরিত হয়ে বলে কি!তর কাছে!

হুম,বাসায় এসে বিস্তারিত সব বলবো।

রানু আরো কিছু বলতে যাবে তখন দেখে নিরব ফোন রেখে দিয়েছে।কুহেলিকা নিরবের পাশে বসে সব শুনেছিলো তাই তার মুখের বদন দীপ্তি হয়ে উঠে।মায়ের সুস্হতায় তার মন ফরফর করতে থাকে।
কুহেলিকার মুখে হাস্যজ্জ্বল দেখে বলে ঢাকায় যেতে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগবে।তাই তার আগে দুজনে কিছু খেয়ে নেয়।

কুহেলিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।নিরব গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।কুহেলিক তার প্রতি নিরবের উপকারে জন্য তাকে ধন্যবাদ দিবে বলে ঠিক করে।পরক্ষণে সে ভাবে নিরবকে ধন্যবাদ দিলে সে হয়তো কষ্ট পাবে।কাছের মানুষের উপকারে ধন্যবাদ বলতে নেই।বরং তার উপকারের প্রতিদান দিতে হয়।
নিরব ফিরে এসে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে বলে পরনের কাপড় পাল্টিয়ে এটা পড়ো।

কাপড় কিনার কি দরকার ছিলো।

রক্তভেজা কাপড় কি পড়ে থাকবে।

কাপড় পাল্টাবো কি করে?

আমার সাথে আসো।

কুহেলিকা নিরবের পদচলা অনুসরণ করতে থাকে।মিনিটবাদেক পরে তারা বাঁশে তৈরি হোটেলের কাছে আসে।হোটেলের ম্যানেজারকে বলে নিরব ঘন্টাদেড়েকের জন্য রুম বুকিং করে।কুহেলিকা রুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে কাপড় পাল্টিয়ে আসে।বাঁশের হোটেল হলেও যেনো হোটেলটা প্রাকৃতিকের মাঝে সুধা প্রকাশ করছে।কুহেলিকা জানালার কাছে আসে ।সেখান থেকে সে সৌকত দেখে আনন্দে ফরফরিয়ে উঠে।সে কখনো সৌকত দেখেনি হঠাৎ নিজেকে সৌকত কাছে আবিষ্কার করে খুশি হয়।নিরব খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে সমুদ্র পরেও দেখতে পাবে তার আগে খেয়ে নাও।

কুহেলিকা মুখে একরাশ হাসি নিয়ে বলে আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না।

কুহেলিকার অসমাপ্ত কথার নিরব কিছুই বুজতে পারেনি।তাই সে প্রশ্নোচক্ষু বলে কি বিশ্বাস হচ্ছে না?

আমি যে সমুদ্র দেখছি সেটা।

ও এটা।সমুদ্রের কাছে যাবে।

যেতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু মার কাছে আগে যাতে হবে।

কাকি এখন ঠিক আছে,চিন্তার কোনো কারণ নেই।তাই বলছি চল সমুদ্র দেখে আসি।না দেখে চলে গেলো আজীবন আফসোস করবে।

কিন্তু মা,

আমি ফোনে কাকির সাথে কথা বলো।
নিরব অনতিবিলম্বে কাকির কাছে ফোন দেয়।আনজুম ধরার সাথে সাথে কুহেলিকা নিরবের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।প্রথমে কথার সূচনা কান্না শেষে হাসি দিয়ে শেষ হয়।কুহেলিকা আনজুমাকে সব খুলে বলে।সর্বশেষে আনজুমা বলে আমি ঠিক আছি তুই সমুদ্র দেখে আস।
কুহেলিকার অনর্গল কথা বলা দেখে নিরব মনে মনে বলে মেয়েরা এত কথা কি করে বলে।
ফোনে কথা বলার শেষে কুহেলিকা নিরবকে ফোন দিয়ে বলে চল সমুদ্র যাই।আমার কতদিনে ইচ্ছা দেখা।কুহেলিকার বদনে হাসি দেখে নিরবও মৃদু হাসে।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে