#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__১২
মোহনা হুট করেই আদিত্বকে জড়িয়ে ধরলো। মোহনার ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আদিত্বও এক পা পিছিয়ে গেলো। আদিত্বও একটা মুচকি হাসি দিয়ে মোহনাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। একে অপরকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
আদিত্ব তার টি-শার্ট এর বুকের দিকটা কিছুটা ভেজা আন্দাজ করলো।
দুই হাত দিয়ে মোহনার মুখটা উচু করে ধরতেই দেখে মোহনার চোখ বেয়ে পানি পরছে।
একহাত দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলো আদিত্ব।
—- তুমি তাহলে ওই শাকচুন্নিটাকে বিয়ে করে ফেলবে তাইনা?
—- কে বলছে তোকে?
—- দুইদিন পর তার বাবা আসবে কথা বলতে, তুমি কেনো আমাদের ব্যপারটা সবাইকে বলছোনা?
— সময় হোক।
—- কখন সময় হবে? যখন তুমি তাকে বিয়ে করে সংসার করবে? আর তোমার ছেলে মেয়েগুলো আমায় ফুফি ফুফি বলে ডাকবে তখন?
—- হুম(একটা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে)
—- দেখো আমি কিন্তু এই সব ফাজলামি করতেছিনা। তুমি নাহয় আজকের ভিতর কিছু করবে নাহয় আমার মরা মুখ দেখবে।
আচমকাই ঠাস করে একটা চর পরে গেলো মোহনার গালে।
— আবারো তুই মরার কথা মুখে আনলি?
মোহনা গালে হাত দিয়ে বলে উঠে,
— মারো, তোমার যত ইচ্ছে মারো। পারলে মেরেই ফেলো। তার পরেও আমি তোমাকে চাই। তুমি হিনা বেচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো।
—- সত্যিই তোকে মেরে ফেলবো আমি যদি এরোকম কথা আর বলিস।
এই বলেই আদিত্ব রুমের দিকে হাটা ধরলো। থেমে গিয়ে আবার মোহনার দিকে তাকালো সে,
— সামনেতো বিয়ে, বিকালে একটু কেনা কাটা করবো, আর তুইও আমার সাথে যাবি। রেডি থাকিস।
মোহনা এবার আর কিছু বলছেনা, নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের কেনাকাটা করবে সে, কয়জনের ভাগ্যেই জুটে?
________________________
দুপুরে শ্রাবন ও তার মা এক সাথে লান্স করছে। কজের মেয়েটা খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে টেবিলে।
— মা, হয়তো আজ আমাদের সাথে এখানে অনিকাও থাকতো।
— ওই চরিত্রহিন মেয়ের কথা আমি শুনতে চাইনা। ওর আসল চেহারাটা সেদিনতো নিজের চেখেই দেখলি।
— এমনওতো হতে পারে, যা সত্য তা আমরা দেখছি না, আর যা দেখছি তা সত্যি না।
— তুই কি আমার নিজের চোখে যা দেখেছি তাই অবিশ্বাস করতে বলছিস।
—- যাদুতে বিশ্বাস করো?
— মোটেও না।
— আমিও কিন্তু একটা যাদু যানি।
—- কেমন?
শ্রাবন টেবিলে একটা কাগজের টুকরু রাখলো।
— মা তুমি এখন সুধু আমার হাত আর কাগজের দিকে তাকিয়ে থাকো। আর দেখতে থাকো জাদু। আমার আঙুলের ইশারায় কাগজটা কিভাবে নারাচারা করে দেখো। সেপালি তুমিও দেখো শুধু আমার হাত আর কাগজের দিকে।
মেঘলা চৌধুরি ও শেপালি দুজনই তাকিয়ে আছে কাগজটার দিকে। সত্যিই কাগজটা তার আঙুলের ইশারায় নাচছে। মেঘলা চৌধুরি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে কাগজটার দিকে।
—- আমার হাতের ইশারায় যে কাগজটা নাচছিলো সেটা তোমার বিশ্বাস হয়েছে?
মেঘলা চৌধুরি হ্যা বা না এর মাঝামাঝি উত্তর দিতে গিয়ে মুখ ফুসকে হ্যা বলে দিলো।
— তার মানে তুমি বিশ্বাস করছো যে আমার হাতের ইশারায় কাগজটা নাচছিলো?
— হ্যা।
— কিন্তু তুমি যা দেখেছো সবই ভুল, আর যা সত্য তা তুমি দেখোনি। তুমিকি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলে? আমি যে খুবই গোপনিয়তার সাথে ফু দিয়ে কাগজটা নারিয়েছি সেটা খেয়াল করেছিলে?
— না।
— হতে পারে অনিকার ব্যাপারটাও এরকোম। হয়তো সত্যিটা এখনো আমাদের জানার বাইরে।
কাগজ আর হাতের মাঝে ফুটা যেমন তোমাদের অজানা অনিকা এবং ছেলেটার মাঝেও এমন জন আছে তাও হয়তো আমাদের অজানা।
এসির মাঝেও শরিরটা কেমন ঘামাচ্ছে মেঘলা চৌধুরির। হয়তো ছেলের কথা শুনেই।
,
,
,
,
বিকেলে আদিত্ব মোহনার ঘরে গিয়ে দেখে মোহনা এখনো রেডি না হয়েই বসে আছে।
—- কিরে তুই এখনো রেডি হসনি?
—- আমি যাবোনা। তুমি তোমার বৌকে নিয়ে যাও।
— কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ কাপর চেন্জ করে রেডি হয়ে নে। আর খবরদার মুখে মেকাপ দিবিনা।
—- পারবোনা যাওতো এখান থেকে।
— তাহলে কি আমিই জামা পরিয়ে দিবো।
মোহনা এবার কিছুটা লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
,
,
,
,
আদিত্ব ড্রাইবিং করছে আর অপর সিটে মোহনা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্ব জোড় করেই তাকে নিয়ে এসেছে। দুজনার মাঝেই নিরবতা। আদিত্ব মাঝে মাঝে দুই একটা কথা বললেও মোহনা সারা দিচ্ছেনা। হয়তো আদিত্বের বলা কথাগুলো মোহনার কান অব্দি পৌছাচ্ছেনা।
হটাৎই গাড়ির জোড়ে ব্রেক করায় মোহনার ধ্যান ভাঙে।
— মোহারানি, অনুগ্রহ করে এবার নামবেন কি?
আদিত্বের কথা শুনে মোহনা বাইরের দিকে একটু ভালো করে চোখ দিতেই বড় একটা সাইন বোর্ডে লিখা দেখে কাজি অফিস।
মোহনার বুকের ছিনছিন ব্যাথা গুলো এবার ধিরে ধিরে কমে আসছে। কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে হৃদপিন্ডের ধুক ধুক শব্দটা।
গাড়ি থেকে নেমে নিচে দাড়ায় সে। আদিত্ব তার হাত ধরে সোজা কাজি অফিসের ভিতরে নিয়ে যায়।
মোহনার বুকের ধুক ধুক শব্দটা বেড়েই চলছে।
এতোদিনতো সে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো তাহলে কেনো আজ তার এতো ভয় করছে। আর এইসময় নিজেকে অনেক সার্থপরও মনে হচ্ছে তার। তার আপন মানুষ গুলোকে না জানিয়েই এতো বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছে সে? ভিতরে প্রবেশ করতেই দুইজনকে দেখতে পায় মোহনা হয়তো আদিত্বের বন্ধুই হবে।
কিছুক্ষনের ভেতর একটা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো দুজন। একশতএক টাকা দেনমোহরে বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেলো।
সব কিছু যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। মনের ভয়টা বেরেই চললো। সাথে কিছুটা লজ্জাও বোদ করছে।
একটু আড় চোখে আদিত্বের দিকে তাকায় সে। এই লোকটা এখন আমার বিবাহিত স্বামি ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু কেনো তার এতো লজ্জা লাগছে। সেতো ঠিকই তার সপ্নের ছোয়া পেতে যাচ্ছে। কিন্তু সবার মনে কষ্ট দিয়ে সুখি হতে পারবেকি?
রাত ঘনিয়ে এলো, আদিত্ব আর মোহনা বাড়ি ফিরে আসলো। বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই মোহনার বুকটা কেপে উঠে। কিন্তু আদিত্বের দিকে তাকিয়ে কোনো চিন্তার ছাপই দেখতে পায়না সে।
ওদিকে শ্রাবন বসে আছে ওই লোকটার সামনে। লোকটার মুখ থেকে আগুনের ঠিকানাটাই বের করতে পারছেনা সে। সে বলে যাচ্ছে আগুনের সাথে শুধু ফোনেই তার কথা হয়েছিলো। কিন্তু নাম্বারটাও বন্ধ। তাই লোকটার কথা শ্রাবন বিশ্বাস করতেই পারছে না। আগুনকে পেলেই হয়তো মুল বিষয়টা সামনে বেড়িয়ে আসবে। নাকি এর ভেতরেও অন্য কেও লুকিয়ে আছে তা শ্রাবনের জানার বাইরে।
ওদিকে রুমে একা বসে আছে মোহনা। নিজের মধ্যে একটা নতুন বৌ বৌ পিলিংস আসছে। বার বার যেনো হারিয়ে যাচ্ছে আদিত্বকে নিয়ে তার সপ্নের জগতে। কিছুটা লজ্জাও হচ্ছে তার। সাথে জড়িয়ে আছে কিছু ভয়। কি করে সবাইকে বলবে তাদের বিয়ের কথা?
To be continue…………….