#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৯
________________________
জানালার পর্দাটা হাত দিয়ে সরিয়ে দিতেই সকালের মিটি মিটি মিষ্টি সুর্যের আলোটা ব্যস্ত হয়ে যায় অনিকার মুখ দর্শনে। মিষ্টি রোদের আলোটা মুখে পরায়, উজ্জলতা যেনো আরো দ্বিগুন বেরে গেলো তার। শ্রাবন দেখলে সে আবার নতুন করে অনিকার প্রেমে পরতে বাধ্য।
মিটি মিটি চোখ খুলতেই রোদের আলো চখে পরে তার। মুখ দিয়ে ‘চ’ সুচক একটা সব্দ করে উঠে সে। সুর্যের আলোটা এক হাত দিয়ে আড়াল করে মোহনার দিকে ফিরে তাকালো সে।
মোহনা এগিয়ে এসেই অনিকার মাথার নিচ থেকে বালিশটা এক টানে সরিয়ে ফেলে।
— এই সকাল সকাল কি শুরু করলি মোহনা?
— কি শুরু করলাম মানে? আজ যে তোর বিয়ে সে খবর আছে? কয়টা বাজে এখন?
— তোর হাতেইতো ফোন দেখছি, সেখানে দেখে নে।
— এখন নয়টা বাজে। আর তুই এখনো পরে পরে ঘুমুচ্ছিস। বলছিলাম এতো ঘুম আসে কোথা থেকে তোর?
— মোহনা প্লিজ কি শুরু করলি? এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি, এখন একটু ঘুমাই?
— এতো ঘুমাতে হবেনা উঠ ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নে।
রাতেই বিয়ে সকল কাজ কর্ম শুরু হয়ে গেলো। আদিত্বই সব কিছু সামলাচ্ছে। বলতে গেলে সে দুই পক্ষেরই। তাই কাজের চাপটা একটু বেশি।
রাত প্রায় ঘনিয়ে এলো। ঘনিয়ে আসছে বিয়ের সময়। আর কিছুক্ষন পরই একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে শ্রাবন আর অনিকা। হয়তো আগামি কাল সকালেই উঠবে দুজনের পবিত্র বন্ধনকে সুভেচ্ছা জানাতে একটা নতুন সুর্যের উদ্বয় হবে।
আদিত্ব খুব দক্ষতার সাথে সব কিছু পরিচালনা করে চলছে। গায়ে হালকা গোলাফি রংয়ের একটা পান্জাবি, কনুই পর্যন্ত উঠানো তার হাতা। মাথার উপরে থাকা মৃস্রন চুল। সব মমিলিয়ে যেনো এক অদ্ভুদ সুন্দর্য ফুটে উঠেছে। আড়াল থেকে গম্ভির চোখে সবযে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে কেও, তা আদিত্বের চোখে ধরা পরেনি। আদিত্বের গোলাফি ঠোঠের প্রসারিত হাসির রেখাটা যে কাপিয়ে তুলছে অন্য কারো বুক সেই বিষয়টাও হয়তো খেয়াল করেনি আদিত্ব। তার খেয়ালি বেখেয়ালি করা ছোট্ট কাজ গুলোও সবথেকে সুন্দর্য বলে চেঁচিয়ে উঠছে কারো মন তাও ছিলো তার ধারনার বাইরে। সব অনু ভুতি গুলো দরজার আড়ালেই থেকে গেছে। আড়াল থেকে দেখে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো মোহনার মুখে। খুবই লজ্জা মাখা একটা হাসি। কয়দিন পর এই লোকটা, হ্যা এই লোকটাই হবে আমার স্বামী ভাবতেই লজ্জায় কেপে উঠছে মোহনার শরিল।
অর্পিতার দিকে চোখ পরতেই মুহুর্তেই যেনো হাসি মাখা মুখটা গোমরা মুখে পরিবর্তন হয়ে গেলো মোহনার। আদিত্বের সাথেই ম্যচিং করে জামা পরেছে সে।
আদিত্বের লাল রং খুবই প্রিয়। তাইতো লাল শাড়ি পরলো মোহনা। কিন্তু অর্পিতা ও আদিত্বকে দেখেই কেমন যেনো হিংসে হচ্ছে তার। মোহনার মুখে ফুটে উঠা হাসিটার মাঝেও কি ভাগ বসাতে হয় অর্পিতার?
আদিত্বকে আর অর্পিতাকে ডাক দিলো আহান চৌধুরি। দুজনই তার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আদিত্বকে কার সাথে যেনো পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আহান চৌধুরি।
— এটাই হচ্ছে আমার একমাত্র ছেলে আদিত্ব।
আদিত্ব মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় ভদ্রলোকটার দিকে।
— আর এ হচ্ছে সালা বাবুর মেয়ে অর্পিতা। আমার এক মাত্র হবু পুত্রবধু।
মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে আছে অর্পিতা। লজ্জায় যেনো শিওরে উঠছে তার শরিল। হবু শশুরের মুখ থেকে বৌমা কথাটা শুনতেই বুকটা কেমন করে উঠছে তার।
মোহনা গোমরা মুখে সবটাই দেখে যাচ্ছে দুর থেকে।
আদিত্ব খেয়াল করলো মোহনা একটু দুরেই দাড়িয়ে।
,
,
,
____________________________
বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলো। মেঘলা চৌধুরির মুখেও হাসি, একমাত্র ছেলের বিয়ে সেকি গোমরা মুখে থাকতে পারে?
বিয়ে পরানো শুরু করে দিলো কাজি সাহেব।
হটাৎই পেছন থেকে কারো উচু গলায় স্টপ শব্দে স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই।
আদিত্ব একটু উচু হয়ে দেখার চেস্টা করছে তাকে।
একটা যুবক এগিয়ে আসছে সামনের দিকে। যুবকটিকে চেনা মনে হচ্ছেনা কারোরই।
সোজা কনের সামনে এসে দাড়ালো সে।
— তুমি আমায় ফেলে এই বিয়ে করতে পারবে অনিকা। তুমি না সেইদিও আমার কোলে মাথা রেখে বলেছিলে, আমি তোমার সব? এতো তারাতারি ভুলে গেলে তুমি?
লোকটার এতটুকু কথায় যেনো পুরু বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যায়।
শ্রাবন বসা থেকে ধিরে ধিরে উঠে দাড়ায়। অনিকা মাথাটা উচু করে হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কে এই লোক?
— যদি ছেরেই চলে যাবে তাহলে কেনো এই মিথ্য স্বপ্ন গুলো দেখালে আমায়। কেনো আমার জিবনটা নষ্ট করলে? উত্তর দাও অনিকা।
আদিত্ব ধিরে পায়ে লোকটার পাসে গিয়ে দাড়ালো।
— ওর সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক।
— সেটা আপনি অনিকার মুখ থেকেই জেনে নিন।
আদিত্ব রাগি দৃষ্টিতে অনিকার দিকে তাকায়।
অনিকা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিত্বের দিকে। যেনো বলতে চাচ্ছে, বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি ওই লোকটাকে চিনিনা। এই প্রথম দেখলাম এই লোকটাকে।
আদিত্ব এক পা এগিয়েই লোকটার জামার কলার ধরে ফেললো।
— আমি তোকে জিঙ্গেস করেছি ওকে নয়?
লোকটার হাতে থাকা খালের মতো কাগজের পেকেট থেকে দুই তিনটা ছবি বের করে সবার উদ্দেশ্যে উচিয়ে ধরলো। ছবিটা দেখা মাত্রই আদিত্ব দুই পা পছিয়ে গেলো। এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো সবাই। বিয়ের দিন কনে ছবি, তাও আবার একটা অপরিচিত লোকের সাথে আপত্বিকর অবস্থায় দেখলে এমনটাই হওয়া স্বাবাভিক।
—- ছি ছি আহান, তুই তোর এই নষ্টা মেয়েটাকে আমার শ্রাবনের কাধে ঝুলাতে চেয়েছিস? আমার ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে।
মোহনা গিয়ে অনিকার পাসে দাড়ায়।
—- বিশ্বাস কর মোহনা, এই লেকটাকে আমি আজ প্রথম দেখছি। এই সব কিছু মিত্যে। আমি ওকে চিনিওনা পর্যন্ত।
—- তাহলে এই ছবিগুলোওকি মিথ্যে?
হটাৎ অনামিকা বেগম এসে সবার সামনে ঠাস করে চর বসিয়ে দেয় অনিকার গালে।
— এই দিনটা দেখার জন্যই কি তোকে বড় করেছিলাম? তুই এতোটা নিচে নামবি এটা জানলে সেই ছোট বেলায়ই তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
মোহনা অনিকাকে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে যায়।
—- কি করছেন কি বড় মা? সত্যিটা জানার আগেই ওকে মারছেন কেনো? এমন ওতো হতে পারে লোকটা যা বলছে সব কিছু মিথ্যে। আমি সেই ছোট বেলা থেকে আজ পর্যন্ত অনিকাকে কোনো ছেলের সাথে ফোনে কথা পর্যন্ত বলথে দেখিনি। আর আপনি কোথা থেকে একটা অপরিচিত লোকের কথায় ওকে মারছেন?
পাস থেকে মেঘলা চৌধুরি মোহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— এই মেয়ে তুই এতো লাফাচ্ছি কেনো। তুই নিজেওতো সেরোকম নিজের নাই চরিত্রের ঠিক আসছে অপরের দালালি করতে।
শ্রাবন পাস থেকে দাড়িয়ে সব কিছুই দেখে যাচ্ছে। সব কিছু যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। কাকে বিশ্বাস করবে সে? অনিকা কে নাকি লোকটাকে?
আদিত্ব মোহনা ও অনিকার হাত ধরে সোজা সবার সামনে দিয়ে গেটের সামনে চলে আসে। দুজনকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো সে নিজেই।
ড্রাইবিং সিটে বসে ড্রাইবিং করছে আদিত্ব। পেছনের সিটে অনিকা কাদ হয়ে জড়িয়ে ধরে আছে মোহনাকে। আর অনাবরত কেদে যাচ্ছে সে।
একটু আগেও যেই বাড়িটা বিয়ে বাড়ির মতো হইচই ছিলো তা যেনো মুহুর্তেই মরা বাড়ির মতো হয়ে গেলো?
________________
অনিকা বসে আছে, সামনে আদিত্ব আর মোহনা। সবাই বাড়ি চলে এলো।ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ১ টা ছুই ছুই। সবাই বাড়িতে প্রবেশ করতেই আদিত্ব নিচে চলে গেলো পরিস্থিতি সামলাতে।
পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনা মুলক। আহান চৌধুরি একটা রাগি হওয়ায় বেশিই হয়ে যাচ্ছে।
রাত প্রায় আড়াইটা,
সবাই নিজের রুমে চলে গেলো, সকালে এর একটা বিহিত করবে বলে।
অনিকা মোহনাকে রুম থেকে বের করে দিলো একটু একা থাকবে বলে।
ঐদিকে শ্রাবন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে বেলকনিতে। ধটনা গুলো চখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার। এই কয়দিনে শ্রাবন অনিকার চোখে সুধু ভালোবাসার আভাসই দেখতে পেয়েছে। কিন্তু অনিকা কি করে পারলো এমন একটা কাজ করতে। যদিও শ্রাবন ঐ লোকটার প্রমানকেই বেশি সাপোর্ট করছে। কিন্তু অনিকাকেও অবিশ্বাস করতে পারছেনা। চেয়ারে হেলান দিয়ে এসব ভেবে যাচ্ছে শ্রাবন। আচ্ছা, এর মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত নেইতো আবার?
একাকি একটা রুমে বসে বসে অশ্রু বিশর্যন দিচ্ছে অনিকা। মোহনাকে সে এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়েছে রুম থেকে। মনে আসছে নানান চিন্তা, কাল সকালে তাকে হয়তো আরো বড় ঝরের মুখুমুখি পরতে হবে। কিন্তু কেওই তার কথা বিশ্বাস করবেনা।
যতই বসে আছে চিন্তা তাকে ঘিরে ধরছে। ঘুম কিছুতেই আসছেনা। ঘুম আসলেওতো আপাতত চিন্তাটার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো।
বিছানা থেকে নেমেই দু পা এগিয়ে গিয়ে ঘুমের ঔষধের পাতাটা বের করে সে। দেখে গুনে গুনে পাঁচটা আছে সেখানে।
সেখান থেকে সব কয়টা ঔষধ হাতে নিলো অনিকা। চোখ বন্ধ করে সবগুলো ঔষধ একসাথে খেয়ে নিলো সে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ দুটু যেনো ধিরে ধিরে লেগে আসছে তার। হয়তো এই ঘুমেই হবে তার জিবনের সমাপ্তি। হয়তো কাল সকালের মাঝে নিথর হয়ে যাবে সে। স্তব্দতায় ঘিরে ফেলবে সম্পুর্ন শরিল।
To be continue……….