#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
|তৃতীয় পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
” ইরাবতী কে? আপনার ঐ পেত্নি গার্লেফ্রন্ড নাকি? কিন্তু তার নামের সাথে আরো একটা নামের মিল আমি কেন পাচ্ছি?”
” বাজে কথা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।”
কয়েকমাসে সন্ধ্যা খেয়াল করেছে নিলয় সন্ধ্যার সাথে কথা,কাজে না পারলে এড়িয়ে চলে যায়। আজও তাই। সন্ধ্যা নিলয়কে শায়েস্তা করার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না। সন্ধ্যা কানে ধরে রেখেছে ঠিকই কিন্তু তার পায়ের চলাচল বন্ধ করেনি।
নিলয়ের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
” কী ব্যাপার, বললেন না? ঐরাবতী, ইরাবতী এরা কে?”
নিলয় কী উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সন্ধ্যা নাছোড়বান্দা নিলয়ের পিছু ছাড়বে না। গোয়েন্দাদের কাজ অপরধীদের চোখে চোখে রাখা সন্ধ্যা ঠিক তেমন। নিলয়ের দুর্বল দিক খুঁজে পেয়েছে এজন্য অতিরিক্ত সাহস বেড়েছে তার। নিলয়ের চেয়ার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে উচ্ছুক দৃষ্টিতে নিলয়ের উওরের আশায়।
” এক না। তবে ভিন্ন যে, সেটাও বলব না।”
” বলতে হবে। নয়তো রাজা দাদাকে বলে দিব।”
নিলয় আকস্মাত দাঁড়িয়ে গেল। দুষ্টুমির ছলে সন্ধ্যা কানে ধরে কিছুটা নিলয়ের দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ছিল। নিলয়ের দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তার মাথা সন্ধ্যার থুতনিতে লাগল। সন্ধ্যা “ও মা গো” বলে আর্তনাদ করে নিচে বসে পড়ে। নিলয় হতভম্ব, এমন ঘটনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এদিকে সন্ধ্যা ছোট বাচ্চাদের মতো মরা কান্না শুরু করেছে। মরা কান্না বলার কারণ হচ্ছে, নিলয়ের নিকট সন্ধ্যার কান্না আসল কান্নার চেয়ে নকলই বেশি মনে হচ্ছে। যে কেউ দেখলে বলবে, সন্ধ্যা ইচ্ছে করেই চিৎকার করছে। নিলয়ের কেবিন সাউন্ড প্রুফ থাকায় সন্ধ্যার চিৎকার বাহিরে শোনা যাচ্ছে না। সত্যি কান্না হোক বা মিথ্যা, নিলয়ের কাছে সন্ধ্যার কান্না সহ্য হচ্ছে না। নিলয় নিঃশব্দে সন্ধ্যার পাশে বসে যায়। সন্ধ্যা চোখ বন্ধ করে থুতনিতে হাত রেখে কান্না করছে। চোখ বারবার পিটপিট করাতে এক ফোঁটা জল চোখের পাশে ছড়িয়ে পড়েছে। নিলয় তা দেখে হাসে। সন্ধ্যাবতীর পাগলামি মাঝে মাঝে সে খুব উপভোগ করে কিন্তু প্রকাশ করে না। নরম স্বরে সন্ধ্যাকে ডাক দিল সে।
” সন্ধ্যাবতী?”
সন্ধ্যা নিরুত্তর। নিলয় আয়েশ করে সন্ধ্যার পাশে বসে নরম স্বরে ছোটবেলার একটা ঘটনা বলে।
” সন্ধ্যা তোমার মনে আছে! ছোট বেলায় তুমি হুটহাট আমাকে উদ্ভট বাংলা শব্দের ইংরেজি অনুবাদ জিজ্ঞেস করতে?”
সন্ধ্যা চোখ খুলে তাকায়। হারিয়ে যায় ছেলেবেলায়।
ছেলেবেলা,
সন্ধ্যা তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে আর নিলয় ষষ্ঠ শ্রেণীতে। তখন সকলে একই ছাদের নিচে বসবাস করতো। সন্ধ্যা লগ্নে সন্ধ্যা চুপি চুপি নিলয়ের ঘরে প্রবেশ করে। হাতে বাংলা বই। কিছু বাচ্চা আছে বই পেলে পুরো বইয়ের রং বেরঙের ছবি দেখে,আবার কেউ গল্প বা কবিতা বানান করে পড়ে, আবার কিছু দুষ্টু বাচ্চা আছে যারা সুযোগ পেলেই বইয়ের আঁকিবুকি করে। সন্ধ্যা ছিল ঠিক তেমন। পৃথিবীর উদ্ভট সকল চিন্তা ভাবনা ছিল তার মাথায়। নতুন বই আঁকিবুকি করতো আর সেসব আঁকিবুকিকে বিভিন্ন বস্তুর নাম দিতো। আজও তাই করেছে। নতুন বইয়ে কিছু একটা এঁকে নিলয়ের ঘড়ে এসে উপস্থিত হয় সে মূলত নিলয়ের কাছে সেই সকল বস্তুর ইংরেজি নাম জানতে আসে যেগুলো সে কিছুক্ষণ আগেই এঁকেছে।
” নিলয় ভাইয়া আমি একটা জিনিস এঁকেছি দেখবে?”
নিলয় জোরে জোরে ইংরেজি কবিতা পড়ছিল। সন্ধ্যার উপস্থিতিতে সে নড়েচড়ে বসে। কেননা সন্ধ্যা সবসময় কিছু একটা এঁকে নিয়ে আসে। আর নিলয়কে উদ্ভট জিনিসের নামের ইংরেজি শব্দ জিজ্ঞেস করে আর নিলয় বেচারার যদি বলতে দেরি হয় তো পুচকোটা হেসে লজ্জা দিয়ে বলে, ” তুমি এত বড়ো হয়েও এটার ইংরেজি শব্দ জানো না?”
নিলয় এবার ডিকশনারির অনেক শব্দ আয়ত্তে এনেছে যেন সন্ধ্যার সামনে লজ্জায় পড়তে না হয়।
” আপনি কী এঁকেছেন, দেখি?”
সন্ধ্যা হাসিমুখে বই নিলয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। কালো কলম দিয়ে চার থেকে পাঁচটা দাগ এঁকেছে সন্ধ্যা। নিচ থেকে উপরের দিকে টেনে গোল করে রেখেছে। নিলয় বইটা হাতে নিয়ে উপর নিচ করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকবার দেখেও বুঝতে পারল না। পরিশেষে সন্ধ্যাকেই জিজ্ঞেস করল, ” এটা কী এঁকেছো? তোমার বাড়ির কোন সীমানার অংশ শুনি?”
” আহ নিলয় ভাইয়া, তুমি কিছু বুঝোই না। এটা কোনো সীমানার চিত্র না। এটা হচ্ছে বাতাস। আমি বাতাস এঁকেছি। আচ্ছা ভাইয়া বাতাসের ইংরেজি কী?”
” এয়ার।”
” উঁহু তুমি পারো না। বাতাসের ইংরেজি হলো ফোঁস।”
নিলয়ের চোখ জোড়া বড়ো হয়ে আসে। সন্ধ্যার দ্বারা তে এমন উদ্ভট শব্দার্থ বলা সম্ভব তা যেন সে ভুলে গিয়েছিল। নিলয় চিন্তার ভাব ধরে বলে, ” কীভাবে হলো? ”
” তুমি মুখ দিয়ে ফোঁস বলো। দেখবে ফোঁস বলার সাথে সাথে মুখ দিয়ে বাতাস বের হচ্ছে।”
” তাই বলে তুমি বাতাসের ইংরেজি ফোঁস বলবে?”
“হ্যাঁ।”
” কিন্তু ফোঁস তো বাংলা শব্দ। এর অর্থও ভিন্ন।”
সন্ধ্যা এবার উঠে দাঁড়ায়। একে ছোট মানুষ তার উপর নিলয়ের সাথে কথায় পারবে না তাই সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মনে মনে নিলয়ের কথার উত্তর খুঁজে।
নিলয় সন্ধ্যা ভাবগতি বুঝে প্রশ্ন করে, ” কোথায় যাচ্ছো?”
” তোমার সাথে কথা নাই নিলয় ভাইয়া। তুমি অন্যরকম, খুবই অন্যরকম। কিন্তু আমার খুব পছন্দের । তবে আমার কথাই সঠিক, বাতাসের ইংরেজি হচ্ছে ফোঁস।”
বর্তমান,
নিলয় সেকালের ঘটনা মনে করে হাসছে। সন্ধ্যার কান্না থামলেও রাগ বেড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার ইচ্ছে করছে নিলয়ের মাথায় নিজ মাথা দ্বারা জোরে আঘাত করতে। কিন্তু সন্ধ্যার সেই সাধ্য নেই।
” হাসি থামান অসভ্য দুর্লয়। আপনাকে দেখতে পুরাই ভূতের নানার মতো লাগছে।”
নিলয় হাসি থামায়। প্রথমে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাকে ধরে উঠায়। কিছু একটা ভেবে বলে,
” নিজের ডেক্সে যান মিস ঐরাবতী। আপনার শাস্তি আজকের জন্য মওকুফ করা হলো। পরবর্তীতে উলটা পালটা কাজ করলে,,,,
নিলয় কথা শেষ করতে পারলো না এর আগেই সন্ধ্যা বলে, ” জানি জানি এরপর কী বলবেন। বলবেন যে পরবর্তীতে উলটা পালটা কাজ করলে রিজাইন লেটার লিখতে হবে তাইতো?”
” হ্যাঁ।”
সন্ধ্যা রাশভারী স্বরে বলল, ” সেই সুযোগ কখনো পাবেন না মিস্টার অসভ্য দুর্লয়। আমি আমার লক্ষ্য থেকে কখনো পিছপা হবো না।”
সন্ধ্যা ক্ষণিক সময়ও দেরী করেনি। নিলয়ের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। সন্ধ্যা চলে যেতেই নিলয় বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল, ” মিস ঐরাবতী মেয়ে মানুষ নাকি গিরগিটি যে, ক্ষণে ক্ষণে এর মন পরিবর্তন হয়?”
————–
কোনো এক গুপ্তঘরে কারোর আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। কেউ একজন চিৎকার করে বলছে, ” বেইমানরা কখনোই সফল হতে পারে না। যদিও সে ক্ষণিকের জন্য ভাবে সফল হয়েছে। বস্তুত সে নিজেও জানে না সে সর্বদিক থেকে ঠকে গেছে এবং কাজেও অসফল হয়েছে। কেননা, একজন আছেন। যিনি সৎ এবং অসৎদের সুযোগ দেন।”
” অসৎ কাজ করেই এজীবন সফল হয়েছি। তোর কথা শোনার আমার কোন ইচ্ছে নেই। তুই বেইমান, তোর শাস্তি একমাত্র মৃত্যু।”
” উপর ওয়ালা সব দেখছেন। খুব শীঘ্রই তোদের বিনাশ হবে।”
অপর লোকটি ভয়ংকর হাসলেন। হাতের সাইলেন্সার লাগানো গা’ন’টা আর্তনাদ করা লোকটির দিকে তাক করিয়ে বলে, ” আমার পরিচয় কেউ পেলে তো বিনাশ করবে। আরিফ সরকারের পরিবার অতি শীঘ্রই মাটির নিচে থাকবে। আমি নিজের হাতে এদের করব খুঁড়বো।”
নিঃশব্দে একটি তরতাজা প্রাণ জমিনে লুটিয়ে পড়লো। লোকটি কয়েকজন ছেলেদেরকে ইশারায় লা’টির ব্যবস্থা করতে বলে নিজ মনে বিড়বিড় করে বলল, ছক তো আভি সেই কবেই কষে নিয়েছি। এখন শুধু গুটি ফেলার পালা। আরিফ সরকারের তেজ খুব শীঘ্রই ভেঙে যাবে।”
চলবে……