#সন্দেহ
#সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
#পর্বঃ৩৪
.
.
বাহিরে ভালোই বৃষ্টি হচ্ছে।বেশ ঠান্ডা পড়েছে কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যেও ইরা অনবরত ঘেমে চলেছে। চুলগুলো গলার সাথে লেপ্টে আছে। কয়েকবার বমি করায় শরীর আর সায় দিচ্ছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে।
ভাবতেও পারেনি এমন ভাবে সব সত্যিটা সবার সামনে এসে যাবে। আর সত্যিটা আনবে নীলাভ্র।
.
ঘরে পিনপতন নীরবতা। সাম্যর হাত ওর মা ধরে আছে। ছাড়ছে না৷ কারণ ওর রাগ জানে। বাকী সবাই অবাক হয়ে আছে। বিগত তিনটে বছর যাবত ইরা মেয়েটাকে এভাবে অত্যাচার করেছে? চিন্তার বাহিরে সবার। কিন্তু নীলাভ্রর হাতে যা প্রমাণ আছে তার উপরে কেউ কোন কথা বলতে পারছে না৷ এমন কি ইরাও চুপ হয়ে আছে।
নিলয় ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। কি না করেছে সে অনুর সাথে । মেরেছে যে অবধি অনুর শরীর থেকে রক্ত না বের হয়েছে, কথা বলেনি,ক্যাম্পাস যাওয়া বাদ দিয়েছিলো,তাদের বাচ্চাটাকে নিয়ে কত কথা, শেষমেষ তো ডিভোর্স দিয়ে দিলো।
অনুর মামার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো নিলয়। পা ধরে কান্না করছে, মাফ চাইছে বিনিময়ে অনু কে ফেরত চাইছে।
.
সাম্য কিছু বলতে যাবে অমনি ওর ফোনে কল এলো। দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে।
এদিকে আশার ফোনে কল দিয়ে ওর কলিগ যেনো কি বললো। সাম্য বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ইরা আর কাজের মেয়েরা বাদ দিয়ে সবাই ছুটলো হাসপাতালে।
.
.
পুরো হাসপাতালের স্টাফ এক হয়েগেছে। সাম্যর চিল্লাচিল্লি করে হাসপাতাল মাথায় তুলেছে।
এভাবে একটা মেয়ে হঠাৎ উধাও হতে পারে না। তার মধ্যে সিজারিয়ান অপারেশনের পর তো আরো না। আহামাদ কোথায়?
.
এসব শুনে নিলয় পাগলের মতো খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও নেই।
সাম্যর কাধে হাত দিয়ে নীলাভ্র বললো
চলো সিকিউরিটি কন্ট্রোল রুমে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যাক।
.
.
অনু রুম থেকে ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে ছাদে যায়।
এটুক দেখাই সাম্যর জন্য যথেষ্ট। মনে হচ্ছে ও মরে যাবে। পরিবেশ টা ঠিক অনুর স্বপ্নের মতো।
অনু এক সময় রেলিং ধরে উপরে উঠে কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই সব ক্যামেরা এক সাথে সিগন্যাল প্রব্লেম। কিছুই দেখা যাচ্ছে। প্রায় ১০ মিনিট সব ক্যামেরা অফ। বিষয় টা অদ্ভুত কিন্তু ভাবার সময় নেই।
.
ওরা দ্রুত দৌড়ে হাসপাতালের পিছনে গেলো। সারা রাস্তা সাম্য শুধু চাইছিলো অনু এমন ভুল যেনো না করে। সব ঠিক হয়ে গেছে। এটুক অন্তত শুনতে অপেক্ষা করে যেনো।
পুরো এলাকা খুঁজেও অনুদের পাওয়া গেলো না।
তবে কি অনু আত্নহত্যা করেনি? যদি না করে তাহলে কোথায় গেলো?
.
কেবিনে ফিরে এসে দেখলো অনুর সব জিনিসপত্র রয়েছে এমন কি চুলের কাটা টাও৷ তাহলে শুধু দুটো মানুষ উধাও হতে পারে কিভাবে?
.
আশার ফোনে নিলয় আহামাদের ছবি গুলো দেখছিলো কে বলবে সে নিলয়ের ছেলে নয়? মুখের আদল, নাক সব তো ওর কিন্তু সে কই? অনুর কাছে এসেও কি তাকে হারিয়ে ফেললো.? অনু? এত বড় শাস্তি কি না দিলে হয় না?
প্লিজ ফিরে এসো শানসাইন।
.
.
দুই বছর পর
.
আজ অনুর জন্মদিন। হয়তো সবাই ভুলে গেছে কিন্তু সাম্য ভুলেনি। আজ অবধি সে অনুকে খুজছে।কিসের শাস্তি অনু তাকে দিচ্ছে? সে তো বলেছিলো অনু কে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। ও যা চাইবে তাই করবে কিন্তু অনু কেনো দূরে চলে গেলো? কেনো সে সেদিন অনুকে রেখে গিয়েছিল? কিন্তু ও জানে অনু ভালো আছে। একদিন ফিরেও পাবে। যেদিন সামনে আসবে সেদিন ওর গালে ঠাটিয়ে দুটো চড় দিবে।
.
ইরার বাচ্চাটা বেঁচেই আছে কিন্তু তার পরিবার থেকেও নেই৷ নীলাভ্র কিংবা ওর মেয়ে সব থেকেও ইরার নেই। তাছাড়া সৃষ্টিকর্তাও তো ছাড়েনি ।
.
আশা বিয়ে করে নিয়েছে। সাম্য কে ভুলতে নিজের সংসার প্রয়োজন ।
.
নিলয় অনুকে অনুভব করে এখনো। অনেক খুজেছে কিন্তু যে ইচ্চা করে হারিয়ে যায় তাকে কি খুজে পাওয়া যায়? অনুর কিছুই নেই তার কাছে। কোন স্মৃতি নেই। গিয়েছিলো সাম্যদের বাড়ি সাম্য কিছুই দেয়নি এমন কি আহামাদের একটা ছবিও না।
.
নীল সীমন্তিনী বিয়ে করেনি। অনুর জীবন টা তারা নষ্ট করেছে এটা নীল মানে তাই নিজের জীবন গুছানোর কোন আশা নেই তার।
কিন্তু নীলের মাঝেমধ্যে বড্ড #সন্দেহ হয় যে ওদের বাবা জানে অনু কই… কারণ সেরাতে বাবা অনেক দেরিতে বাসায় ফিরে প্রায় কাকভেজা হয়ে। তাছাড়া হসপিটালের এটেন্ডেন্স ফাইলে সব থেকে লাস্টের সাইন টা বাবার। অনু হারিয়ে যাওয়ার আগে সব শেষ তার বাবাই অনুকে দেখতে গিয়েছিলো। তবে কি সত্যি বাবা জানে অনু কোথায়?
.
সমাপ্ত……..
.
.
অনুরা হারিয়ে যায় না। অনুরা ফিরে আসে। অনুও আসবে। কারো উপর বোঝা হয়ে নয়, নিজের পরিচয়ে নিজের সন্তান কে নিয়ে। অনুদের কে মাঝেমধ্যে হারিয়ে যেতে হয় কারণ তা না হলে সমাজ,পরিস্থিতি বাধ্য করবে নিলয় কিংবা সাম্যর সাথে ভাগ্য লিখাতে। কিন্তু সব মেয়ে মানুষের বাঁচতে হলে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন হয় না৷ অনুদের বাঁচতে হয় আহামাদদের জন্য। হ্যাঁ! অনু ফিরবে, প্রতিটা কষ্টের শোধ নিতে………
.
.
প্রিয় তিতা পাঠকগনঃ অতপর স্টার প্লাস, স্টার জলসার লুতুপুতু প্রেমের কাহিনির সমাপ্ত ঘটিলো🤣🤣
এবং যাদের জোর করে এই লুতুপুতু প্রেমের কাহিনী পড়াইছি তাঁরা আজ থেকে মুক্ত 😂