#সংসার(০৮)
#শেষ_পর্ব
#তাহরীমা
“আম্মু তুমি অই বুড়ি কে এসব দিবে না।
–আমার জিনিস আমি যাকে ইচ্ছে দিবো তুই বলার কে?
–দিবে না মানে দিবে না।(রাগ দেখিয়ে)
“তনুর শাশুড়ি কিছু পেঁপে খুঁজতে এসেছিল তনুর ননদকে রেঁধে দিবে তাই।তনু যখন পেঁপে দিতে যাবে তাওহীদ রাগ দেখিয়ে এসব বলতে শুরু করে,সে মোটেও চায়না তার দাদুকে কিছু দিক।অতীতের কথাগুলো তার মনে পরে।এখনো ও তনুর শাশুড়ি তাওহীদ এর দোষ খুঁজে বেড়ায়,ছেলের কাছে নালিশ দেয়,তাই মাঝেমাঝে তাওহীদ ও দাদুকে দেখলে এমন রিয়েক্ট করে।
তনু ছেলেকে বুঝাতে চেষ্টা করে-
–আমরা যে যেমন তার সাথে যদি তেমন ব্যবহার করি তফাৎ কি থাকলো?
–যে যেমন তার তেমন ব্যবহার পাওয়া উচিৎ তবে ই বুঝবে।
–নাহ কখনো বুঝবে না,কারণ যে মনে মনে নিজ থেকে দায়িত্ব না বুঝবে তার কখনো বিবেক হবেনা।
–তুমি তারপর ও অই বুড়িকে দিবে তাহলে?
–তুই ও যদি তোর দাদুর মতো হোস তাহলে মনে রাখিস তোর ও পরিণতি এমন হবে,একটা সময় আপন কাউকে নিজের কাছে পাবিনা।সবাই কে তো আল্লাহ বুঝার জ্ঞান দেননা।সবাই তো পরকালকে ভয় পায়না?
–হুহ এত কিছু জানিনা।
–একটা কথা মনে রাখবি,বন্ধু হোক শত্রু হোক সবার সাথে ভাল ব্যবহার করবি,কারো মন ভেঙ্গে কেউ বড় হতে পারেনা।আর উনি তোর দাদু,উনার শাস্তি তো আল্লাহ দিচ্ছেন ই।
“তাওহীদ আর কিছুই বলেনা।একটা সময় পুকুরের মাছের সবটা বড় মাছ টা তনুর শাশুড়ি নিজের জন্য নিয়ে যেতো।আরো বলতো -“আমি বেশিদিন বাঁচবো না তাই নিয়ে নিচ্ছি।
কখনো ই নাতি অথবা ছেলেবউ কে খেতে দেয় নি।তনু যদি এখন মাছ রেঁধে খাওয়ায়,সে বলে-আমি আমার ছেলের অধিকারে খাচ্ছি।
“অথচ অতীতের সব কিছু ভুলে গেছে।অই যে তনু বলে-যে বুঝবে না মনে মনে,তাকে কেউ বুঝাতেই পারেনা।
“তানির ও প্রচুর রাগ উঠে,দাদুকে কিছু দিতে গেলে,মা কে গিয়ে রাগ দেখাতে গেলে ই তনু বলে-“কাউকে কিছু দেয়াতে ই আনন্দ, নেয়াতে নয়।যে দিতে জানবে না সে বুঝবে না আনন্দ কতটুকু।আর গাছের ফল সব আল্লাহর দেয়া।সবার উপর ই অধিকার থাকে খাওয়ার।
“তানি ধম বন্ধ করে চলে যায়।কিছুক্ষণ ভাইবোন মিলে চিল্লাপাল্লা করবে তারপর আবার শান্ত হয়ে যাবে।বুঝেনা তারা মায়ের এত ধর্য্য আসে কোথেকে?এখনো পর্যন্ত দাদু নানুর বাড়ির কারো আসা খাওয়া পছন্দ করে না।শোধরালো না এ বয়সে ও,আফসোস….!!!
“তানি কখনো নিজের বাবার ছাড়া কারো থেকে কখনো কিছু পায়নি,না চাচা,না দাদা,না দাদু।তারপর ও মা বাবার থেকে পাওয়া সবকিছুতেই সে সন্তুষ্ট।প্রতিবার জন্মদিনে মা তাকে কাপড় গিফট করে সাথে মজার বিরিয়ানি রান্না করে,এতে খুশির শেষ নেই তার।
তনু বলে-যে অল্প তে সন্তুষ্ট হয় সে ই প্রকৃত সন্তুষ্ট হতে পারে।তনুর মা ই নাকি শিখিয়েছিল-সবসময় ছোট হয়ে থাকতে,ছোট হয়ে থাকলেই আল্লাহ বড় করে।নিজেকে বড় ভেবে কেউ কখনো বড় হয়না।
“তনু মা,বাবা,বড়বোন সবার উপদেশ মেনে চলে সবার সব দায়িত্ব পালন করে গেছে।ধর্য্য ধরে গেছে সারাজিবন।
———–
“তনুর দেবরেরা এখন দিনে এনে দিনে খায় কোনোমতে,টেনেটুনে সংসার চালায়।আর কাজ না করলে সাথে বউয়ের আজেবাজে কথা তো রয়েছে।কারোর সম্মানের দিকে কেউ ভাবেনা।বর বউ দুজনে একজন আরেকজন কে যা ইচ্ছে বলে ঝগড়ায়।এদিকে তনু আর তার বর কে কখনো রেগে কথা বলেনি,তনু রাগলে বর চুপ থাকে বর রাগলে তনু চুপ থাকে,শেষমেশ ঝগড়া ও হয়না।
“তানি এখন সে ই ছোট্ট তানি নেই।তানি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।এখন আর চাচার দিকে অসহায় হয়ে ফিরে তাকায় না,ভয় ও করে না।তাওহীদ ইঞ্জিনিয়ার এ পড়ে।আর তানির ছোটবোন ৬ষ্ট শ্রেণী তে পড়ে।তিনভাই বোন মিলে হাসি ঝগড়ায় মাতিয়ে রাখে পরিবার।
তানি মাঝেমাঝে মা কে হাসির জোক্স বলে বলে হাসায়।তানি ভীষণ কথা বলতে পছন্দ করে,অবসরে অথবা কাজের ফাঁকেফাঁকে অতীতের স্মৃতিগুলা তনু মেয়ের কাছে তুলে ধরে।বিভিন্ন মুহুর্তে বিভিন্ন স্মৃতি মনে পরে,সেসব অন্ধকার দিনের কথা ভাবলে এখনো ভয় লাগে।তাই মেয়ের সাথে কথাগুলো শেয়ার করে হালকা হয়।অনেক ঘটনা তানি মায়ের কাছ থেকে ই শুনে আসছে।মাঝেমাঝে সে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়াকে ও ভয় করে।তার যদি এমন অন্ধকার জগতে পরে কখনো কি মায়ের মতো ধর্য্য ধরতে পারবে?
“তনু অনেক সুন্দর করে নকশি কারুকাজ করতো।সেসব দেখলে তানি নিজেই অবাক হয়,তার মায়ের কত গুণ। অথচ সে গুনের গ টাও নেই তার কাছে।খালি বসে বসে খেতে জানে।এসব ভেবে আনমনে হাসে।
“তনুর ননদ বেড়াতে আসলে তনুর হাজারটা ভুল ধরতে চাই,অথচ সে ও ভুলে গেছে কি না করেছে তনু তার জন্য?তারপর ও মায়ের সাথে তানি সারাক্ষণ এটা ওটা কাজে হেল্প করে।মাঝেমাঝে ফুফুদের সাথে কথা ও বলেনা।তাই ফুফুরা তাকে খারাপ বলে।কিছু স্বার্থপর মানুষ আছে পৃথিবীতে,যাদের জন্য আপনি যতক্ষণ করতে পারবেন ততক্ষণ মনে রাখবে আপনাকে,তারপর ভুলে ই যাবে।আর সেসব মানুষ দের কখনো দূর্বলতা দেখাতে নেই।তাই তানি ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাটে।নিজের রক্ত রা যদি তার দোষ খুঁজে বেড়ায়,তার তো আর করার কিছুই থাকেনা।আর ফুফুরা সবসময় একটা কথায় বুঝাতে চাই তানি তার মায়ের মতো ই হয়েছে,মানে খারাপ।
তারপর ও সংসারে সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলতে হয়।মানিয়ে নিতে পারলে ই সে ভাল,আর মানিয়ে নিতে না পারলে সমাজ তাকে কতকিছুই না বানিয়ে দেয়।অথচ কষ্টের সময় সে সমাজ কখনো ই পাশে থাকেনা।
“ইদানীং তনুর ননদের বর তনুকে খুব সম্মান করে,তাই তনুর ননদ ও বাধ্য ভাবিকে সম্মান করতে।তনুর ছেলেমেয়ে রা বড় হয়েছে তাই তাকে সবাই সম্মান দিয়ে কথা বলে,বরং বাড়ির কিছু মানুষ যারা হিংসা করতো তারা ই বলে-এই একটা মেয়ে একা ই লড়াই করে গেছে,একা ই ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছে।
“তানি আর তাওহীদ কে ক্লাস এইট পর্যন্ত কখনো তনু টিচার দেয়নি,কারণ টিচারের খরচ দেয়ার মতো টাকা তার কাছে ছিল না বরং সে নিজেই পড়িয়েছে।অনেকে এটা বিশ্বাস না করলে ও সত্যি এটাই…!!
বলে রাখা ভালো তনু সাইন্স নিয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে।তখনকার এপর্যন্ত পড়া অনেক কষ্টের আর সুনামের ছিলো।অনেক মেধা ছিল তনুর,বাবার কাজ করে রাতে হালকা সময় পেত পড়ার,একবার পড়েই সব মনে রাখতে পারতো।তনু ইংরেজি তে অনেক দক্ষ ছিল কিন্তু ভাগ্যে পড়ালেখা ছিল না,তাই করা হয়ে উঠে নি।
“আজ তনুর কিছুর অভাব নেই,যাকে বলে পরিপূর্ণ সংসার।যে যেমন কাজ করবে আল্লাহ তাকে তেমন ই শাস্তি দিবে সেটা ইহকাল অথবা পরকাল,সেটা বিশ্বাস করাটা খুবই জরুরী।আর যে পরকাল কে ভয় পেয়ে আল্লাহর পথে চলে তার সাথে আল্লাহ সবসময় থাকেন।
“তনু মেয়েকে পর্দা করা শিখিয়েছে,ছেলেমেয়েদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছে নিজেই।তনুর বাবা ই তনুকে শিখিয়েছিল-যে নিজে কোরআন পড়ে,এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় সে ই উত্তম ব্যক্তি।তনু ও তার সন্তানদের এসব শেখায়।ভাল পথের কথা ও বলে খারাপ পথের কথাও বলে।
“মাঝেমাঝে তনুর অসুস্থ লাগলে মৃত্যুর কথা ভাবে,তানির মন অনায়াসে খারাপ হয়ে যায়।মা ই তার একমাত্র আপন আর বন্ধু যে,যাকে বিশ্বাস করে কখনো ঠকে না।সে মা কখনো কারোর চলে না যাক সে দোয়া ই করে।
“সবচেয়ে মজার বিষয় তানির কাছে,মায়ের রান্না।এত মজা লাগে।যে দাদু তনুর রান্না মজা লাগতো না বলে ঘৃণা করতো আজ তনুর রান্না খাওয়ার জন্য বসে থাকে।সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে দিন খারাপ হোক ভাল হোক চলে ই যায়।কিছুক্ষেত্রে সুদিন ফিরে আসে,আসতে হয় যে।
“তনু ভবিষ্যৎ এ কি হবে জানেনা,তবে বর্তমানের সবকিছুর জন্য আল্লাহ কে শুকরিয়া জানায়।আল্লাহ ই তো একমাত্র পাশে ছিল আছে থাকবে।
আর তানি ও এমন মা পেয়ে গর্ববোধ করে।তার মা তার আদর্শ।সে আগের মতো মা ছাড়া কাউকে ভাল লাগেনা।এখনো ইচ্ছে করে কোলে বসে জ্বালাতে আর মজার মজার কবিতা শুনে ভাত খেতে…….
(সমাপ্ত)
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ, জিবনের গল্প কখনো শেষ হয়না😊,তানি চরিত্র টা হচ্ছে মূলত আমার চরিত্র।আশা করি বুঝতে পেরেছেন তনু কে?ধর্য্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।আর যাদের ভাল লাগেনি ইগনোর করুন,সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ)
কি বলব আপু? অসাধারণ হইছে।ধন্যবাদ আপনার আম্মুর জীবনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার আম্মু আসলেই অসাধারণ একজন মানুষ। দোয়া করি যাতে উনি সুস্থ থাকেন।আর আপনার জন্য শুভ কামনা রইল। 💞
Ha sotti apu golpote khub valo hoyeche.Karon etai meyeder jiboner bastobota.Karon gorib gharer ekti meye jokhon biye hoye emon ekta porobare jai tokhon tar emon situation e porte hoi.R j ei situation te katiye uthte pare shei jibone jayi hoi.Apnake onek thanks erokom ekta golpo deoar janno.
অনেক সুন্দর। গল্প থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না এটাই বলতে চাই দিনশেষে সবাই ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে বেস্ট অফ লাক আপি