শ্রাবণ মেঘের ভেলা ২৯তম পর্ব

0
1419

#শ্রাবণ_মেঘের_ভেলা
#২৯তম_পর্ব

এই সময় কোনো মেয়ে ঐন্দ্রিলার কাছে আসবে বলে জানা ছিলো না তার। কে এসেছে এটা ভাবতে ভাবতে সেই মেয়েটি কেবিনে প্রবেশ করে। মেয়েটি কেবিনে ঢুকলে ঐন্দ্রিলা জিজ্ঞেস করে,
– তুমি এখানে?
– আমাকে যে আসতেই হতো,কি করার বলো তোমার জীবন নষ্ট হবার আগে তোমাকে ওয়ার্নিং দিয়ে দেয়া বেটার নয় কি?

মেয়েটির কথায় ঐন্দ্রিলা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়। মেয়েটি আর কেউ নয় নিশি, এই কয়দিন সমানে ঐন্দ্রিলাকে ফোন দিচ্ছিলো বিধায় অভ্র সুন্দর মতো তার নাম্বার ব্লক লিষ্টে দিয়ে রেখেছিলো। তাই নিশি কোনোভাবেই ঐন্দ্রিলার সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। কোনোভাবে খোজ খবর নিয়ে তাই ঐন্দ্রিলার অফিসের ঠিকানা বের করেছে সে। চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে নিশি বললো,
– তুমি অনেক ভালো একটি মেয়ে, আমি চাই না তুমি অভ্রের মতো একজনের সাথে নিজের সারাটাজীবন কাটাও।
– এতো ভনিতা না করে আমাকে খোলসা করে বলো, কি বলতে এসেছো। অভ্রের মতো ছেলে বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছো?
– অকে, অকে। তাহলে শুনো অভ্রের একটি ছেলে আছে যার বয়স ছয় বছর। ও অলওয়েজ এমন। মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কটুকুই ওর কাছে প্রধান। আমি প্রিকশন নিয়েছি বলে আজকে হয়তো আমাকে এমন কিছু ফেস করতে হয় নি। বাট দেশের বাহিরে তো ব্যপারগুলো এমন থাকে না। মেয়েটা কন্সিভ করে। তারপর অভ্র বাচ্চাটিকে নিয়ে দেশে আছে। এটা আমি তোমাকে জানাবার জন্য ই এখানে এসেছি।
– ………
– আমিজানি তোমার কেমন লাগছে এগুলো শুনে, আসলে অভ্র এর কাছে মেয়েদের মূল্য শুধু বেডে। একটা সময় তোমাকেও ছুড়ে ফেলে দিতে ওর দু মিনিট ভাবা লাগবে না। তুমি বুঝছো তো আমি কি বলতে চাচ্ছি!

ঐন্দ্রিলা চুপ করে বসে রয়েছে, তার মুখের প্রতিচ্ছবি দেখে নিশি আরো ব্লে,
– আমি জানি তুমি কি ভাবছো, এখন ডিভোর্স কিভাবে দিবে, তোমার বাবা, ভাইকে কি বলবে? এসব ই তো? আমি বলি কি তুমি সবাইকে জানিয়ে দাও অভ্রের আসল ক্যারেক্টর তাহলে দেখবে তোমার বাবাই তার কাছ থেকে তোমাকে সরিয়ে আনবে
– না, আমি সেটা ভাবছি না। আমি ভাবছি তুমি কবে থেকে আমার এতো বড় শুভকাঙ্খী হলে। আমি যতদূর তোমাকে চিনি, ঐ রেস্টুরেন্টেই আমাদের দেখা হয়েছিলো। যখন তুমি অভ্রের কাইন্ড অফ পা ধরে কান্না করছিলে। আমার এতোটা শুভাকাঙ্খী তুমি সেটাই আমার মাথায় ঢুকছে না।
– কি বলতে চাচ্ছো ঐন্দ্রিলা? তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো?
– উহু অবিশ্বাসের কথাই আসছে না। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি তোমার স্বার্থ কি এতে। যে এতোটা কষ্ট হয়ে আমার অফিস অবধি এসে আমার ছেলের খবর আমাকে দিতে এসেছো তুমি
– তোমার ছেলে ?
– ওহ তুমি হয়তো জানো না, আমাকে দিশানের ব্যাপারে সব জানিয়ে দিয়েছে অভ্র। আমি জানি আমার বরের একটা ছ বছরের ছেলে আছে। কিন্তু এখন তুমি বলো আমাদের সম্পর্কের ভেতর এই যে বারংবার এসে ঝামেলা করছো, কেনো? তুম কি ভেবেছো আমি অভ্রকে ছেড়ে দিলে তুমি তাকে পেতে পারবে? একটা জিনিস মাথায় ঢুকিয়ে রাখো আমি না তোমাদের মতো টাইমপাস আর টাকা খসানোর জন্য না অভ্র কে বিয়ে করি নি। অভ্রের সাথে সারাজীবন কাটাবো বলে তাকে বিয়ে করেছি। তাই এসব কথাই যদি তোমার থাকে আমি চাইবো তুমি এখনঅই এখান থেকে বেড়িয়ে যাও।
– তারমানে অভ্র যে আমার সাথেও শারীরিক সম্পর্কে ছিলো তাতে তোমার কিছু যায় আসে না?
– হ্যা যায় আসে, যায় আসে যে কেনো আমি ওর জীবনে আগে আসি নি। কেনো না তোমাদের জন্য ওর মেয়েদের প্রতি ধারণা আরো খারাপ হয়েছে। যাক গে আর কথা বাড়িয়ো না, তোমার কথা আমি শুনেছি এখন তুমি এখান থেকে যেতে পারো। আর কোনোদিন আমার আর অভ্রের মাঝে আসার চেষ্টা করো না। আমি হয়তো অভ্রের মতো ডেয়ারিং না তবে কম ও নই। আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করো না। আমি ব্যাস্ত আছি। তুমি যেতে পারো।

ঐন্দ্রিলা বেশ কড়াভাবেই নিশিকে সাবধান হতে বলে দিলো। নিশির মুখ কালো হয়ে যায়, ভেবেছিলো এই উছিলায় হয়তো আবার অভ্রের জীবনে আসতে পারবে। কিন্তু সে গুড়েবালি। নিশি যাবার পর হাফ ছেড়ে বাঁচলো ঐন্দ্রিলা। এতো কড়া ভাবে কথা কেবলমাত্র অভ্রকেই সে শুনিয়েছে। আজ সেই অভ্রের জন্য আজ কোনো মেয়েকে এভাবে কড়াকথা শুনাবে এটা যেনো কল্পনার বাহিরে ছিলো তার। মানুষটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে যা। আর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কতাই এমন, একে অপরের ঢাল ই যদি হতে না পারে তবে কিসের এটো বড়াই করবে_____

২৯.
সকাল সকাল মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন শওকত সাহেব। তার মেজাজ বড্ড খারাপ, কারণ অভ্র এবং বদরুল সাহেবের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তারা যেনো উঠে পরে লেগেছে পিউ এর বিয়ে দিবে। কিন্তু শওকত সাহেবের কিছুতেই মন মানছে না। সে পিউ কে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। তার বন্ধুকে কথা দিয়েছে সে, সারাজীবন মেয়েটাকে দেখে রাখবেন। তিনি ব্যাকড্যাটেড নন। তবে একটা ভালো ছেলে পাওয়াও তো এখনের দুনিয়াতে সোজা নয়। দেখা গেলো ছেলেটি পিউ কে কেবল মাত্র শওকত সাহেবের অর্থের লোভে বিয়ে করছে। আর বিয়ের পর যদি মেয়েটি সুখী না হয় তখন। পিউ এর জীবনটাও পড়ে আছে। অভ্র কাল রাতে যেভাবে রাতে তাকে কথা শুনিয়েছে তাতে তার অনেক খারাপ লেগেছে। অভ্রের প্রতিটা কথাও ঠিক ছিলো। কালরাতে অভ্র বলেছিলো তাকে,
– তুমি পিউ কে স্নেহ করো বলেই কি ওকে অন্ধকারে ফেলে রাখতে চাচ্ছো? আসলে তুমি তোমার কনজারভেটিভ চিন্তাধারার জন্য এমনটা করছো। আর কিছুই না। নয়তো পিউ এর নির্ঘুম কান্নাগুলো তোমার চোখে পড়তো, আসলে কি বলোত তুমি দেখতেও চাও নি, পিউ আদৌ কষ্টে আছে কি না। তুমি শুধু তোমার ছেলের বউ আজীবন তোমার ছেলের বিধবাই বানিয়ে রাখতে চেয়েছো।

অভ্রের কথাগুলো কোথাও না কোথাও শওকত সাহেব কে অনেক হার্ট করেছে। এসব ভাবছিলেন হঠাৎ…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে