#শ্রাবণের_মেঘ?
#পর্ব_১১
#Tabassum_Kotha
” মুখ খুলো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
খাবার প্লেট টা হাতে নিয়ে বিছানায় বসতে বসতে নীলকে কথাটা বললো কথা।
— তোকে দেখে বউ বউ ফিলিং আসছে কেনো জানি।
— কারণ আমি তোমার বউ এজন্যই আমাকে দেখে তোমার বউ ফিলিং আসছে।
— বা রে কবুল কোথায় পড়লাম?
— কবুল পড়তে কতোক্ষণ! কবুল! নাও পড়ে নিয়েছি। এখন আমি তোমার বউ।
— তুই একা পড়লেই কি আর হলো নাকি! আমাকেও পড়তে হবে। কবুল!
— হিহিহি। তুমি কিন্তু ফেঁসে গেছো। মি. জামাই এখন থেকে আমি যা বলবো সব শুনতে হবে।
— শুনবো মিসেস বউ।
— এই না তুমি আমাকে নীলবউ বলে ডাকবে।
— এটা আবার কেমন নাম হবে নীলবউ!
— যেমনই হোক। আমি চাই আমার আষ্টে-পৃষ্ঠে শুধুই নীল জরিয়ে থাকুক। সবাইকে জানতে হবে কথা শুধু নীল এর। আর এই ” নীল শুধু কথার।”
— এখন খাইয়ে দাও বউ। থুরি নীলবউ।
কথা আর নীল দুজন দুজনকে খাবার খাইয়ে দিলো। কথা আস্তে করে কিচেনে গিয়ে প্লেট রেখে পানির বোতল ভরে নিলো। নীল কে কথা তার ঘরে বসিয়ে রেখে দরজা ভালোমতো চাপিয়ে দিয়ে এসেছে যাতে কেউ নীল কে না দেখতে পায়। কিশোর সাহেব আর কাব্য যার্নি করে আসায় ক্লান্তিতে রোজকার থেকে আগে ঘুমিয়ে পরেছে। পুরো বাড়িতে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। তবুও কথা পা টিপে টিপে কিচেন থেকে বেরিয়ে ঘরের দিকে যাচ্ছে।
হঠাতই কথা কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যেতে নেয়। যদিও নিচে পরার আগেই কেউ একজন কথার কোমড় আঁকড়ে ধরে। অন্ধকার থাকায় কথা লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায় না তবে বুঝতে পারে যে লোকটা আদনান। কারণ একমাত্র আদনানই এই বাড়িতে পরপুরুষ। কথা নিজেকে সামলে উঠতে নিলে আদনান কথার কোমড় আরও শক্ত করে ধরে।
”
”
”
আদনান ভাইয়ার এভাবে ধরাতে আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। এতো শক্ত করে ধরে রেখেছে যে রীতিমত আমার শরীর কাঁপছে ভয়ে। তানিয়া আপুর হলুদের রাতে নীরব ভাইয়াও এতো শক্ত করে ধরে নি। আর এই লোকটা এমন কাজ করছে। বাইরে ভীষণ ঠান্ডা। তবুও আমার কপাল বেয়ে চিকন ঘাম ঝরে পরছে। নিজেকে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্য নীরবতা ভেঙে আমিই বলা শুরু করলাম।
— ছাড়েন আমাকে। করছেন টা কি? আমি এখন ঠিক আছি। নিজেকে সামলাতে পারবো।
— জানি পুচকু তুমি নিজেকে সামলাতে পারবে। অবশ্য না পারলেও শিখতে কতোদিন।
— জি?
— শীঘ্রই তোমাকে এসবকিছু শিখে নিতে হবে।
— আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
কথা নিজেকে আদনানের কাছে থেকে ছাড়িয়ে ঘরের দিকে ছুঁট লাগালো।
“আজকে পালিয়ে যাও পুচকু, একদিন না একনদিন তো আমার কাছেই আসতে হবে তোমাকে।” — একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আদনান কথাটা বলে কাব্য এর ঘরে চলে গেলো।
“ছেলেটা কে আর তোকে ওভাবে জরিয়ে ধরার সাহস কোথায় পেলো?”
কথা তার ঘরে ঢুকতেই নীল তীরের মতো প্রশ্নটা কথার দিকে ছুঁড়লো। নীল এর এভাবে চোখ মুখ গরম করে প্রশ্ন করায় কথা থতমত খেয়ে যায়।
— কি হলো চুপ করে আছিস কেনো? কে সেই ছেলেটা। তোকে স্পর্শ করার সাহস কি করে হলো ওর!
— আআরেহ রাগ দেখাচ্ছো কেনো? উনি আমার ফুফাতো ভাই হয়। আব্বু আর কাব্য ভাইয়া আতিকা ফুপি আম্মুর বাসায় গিয়েছিল। তাই হয়তো আদনান ভাইয়াকে সাথে নিয়ে এসেছে।
কথাগুলো বলতে বলতে কথা একটু এগিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। পিছন থেকে নীল কথার চুলের মুঠি টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। নীল এর ঠিক মুখ বরাবর কথার মুখ এনে চোখ মুখ গরম করে ফিসফিস করে নীল বললো,
— তুই শুধু আমার। তোকে অন্য কেউ স্পর্শও করুক সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না!
নীল এর রক্তিম মুখোবয়ব দেখে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে। নীল কে আমি রাগতে দেখেছি কিন্তু এই রূপ এর আগে কখনও দেখি নি। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— উনি আমার ভাই হয় সম্পর্কে। উল্টা পাল্টা ভাবো কেনো?
— জানি না। শুধু জানি তুই আমার। তোর ছায়াটাও অন্যকারো হতে দেবো না আমি।
— এতো ভালোবাসলে কিভাবে আমাকে?
— জানি না। শুধু জানি ভালোবাসি।
— একটা চুমু দাও তো!
ঠোঁট নীল এর দিকে এগিয়ে দিয়ে কথাটা বললো কথা। কথা তার চোখ বন্ধ করে ঠোঁট এগিয়ে নীল এর কাঁধে দুইহাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
নীল কথার ঠোঁটের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কথার গোলাপী ঠোঁট দুটো নীল এর চোখে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। নীল ধীরে ধীরে তার ঠোঁট জোড়া এগিয়ে আনছে। কথা আগের ভঙ্গিতেই দাড়িয়ে আছে। ক্রমশ নীল আর কথার নিশ্বাস গরম হয়ে আসছে। এই মুহূর্তে কথার মধ্যে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে নীলের। নীল আর কথার মধ্যে হয়তো দুই ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই।
নীল কথার ঠোঁটে ঠোঁট মিশাতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে দূরে সরে গেলো। কথা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নীল সড়ে গেলো কেনো? কথা প্রস্তুত ছিল নীল কে কিস করার জন্য।
— ঘুমা। আমি যাচ্ছি।
— কি বললে! চলে যাচ্ছো? কিস করবে না?
— না। ঘুমা তুই।
— কেনো কিস করবে না? সকালে তো জোর করে করলে এখন আমি চাইছি আর এখন তুমি কিস করবে না!
— সকালে আমার ইচ্ছা হয়েছিল তাই করেছি। এখন ইচ্ছা নেই।
— কেনো ইচ্ছা নেই। আমি কি দেখতে অসুন্দর?
— কথা এতো কথা বলিস না। ঘুমিয়ে পর। খুব ভোরে উঠে পড়তে বসবি। ভুলে যাস না সামনে মাসে তোর পরীক্ষা।
— হুম। যাও। সাবধানে যাবে। অনেক রাত হয়েছে। নিজের খেয়াল রেখো।
— তুইও নিজের খেয়াল রাখিস।
— ওগো শুনছো!
— কি বললি?
— বিয়ের পর তোমাকে এভাবেই ডাকবো। ” ওগো শুনছো “!
— পাগলি।
— কালকে বাইকে করে ঘুরাবে আমাকে?
— প্রমিজ। কালকের দিন শুধু তোর আর আমার।
নীল কথার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে গেলো। কথা লজ্জায় বালিশে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পরলো।
?
?
কানে হালকা সুরসুরি লাগাতে ঘুম ভেঙে গেলো নীল এর। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই নীল এর চোখ কপালে উঠে গেলো। স্কাই ব্লু রঙের শিফনের শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে নীল এর বিছানার সামনে দাড়িয়ে আছে। হাতে এক কাপ ধোয়া উঠা চা নিয়ে। রাতে ঘুমানোর সময় টি শার্ট খুলে শুধু ট্রাওজার পরে ঘুমিয়ে ছিল নীল। এভাবে একটা মেয়ের সামনে থাকায় বেশ অস্বস্তিতে পরে গেছে নীল। খাটের আশপাশ হাতিয়ে টিশার্ট টা গায়ে জরিয়ে নিলো নীল।
সামনে থাকা মেয়েটা আগের ভঙ্গিতেই দাড়িয়ে আছে মুখে লজ্জা মেশানো হাসি নিয়ে। মেয়েটিকে নিঃসন্দেহে অপ্সরী বলা চলে। আকাশী রঙে আরও বেশি স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে। নীল এর ঘরের ব্যালকোনির কাঁচ খুলা থাকায় দমকা বাতাসে মেয়েটির চুল গুলো উড়ে চলছে।
— মুনতাহা তুমি কবে এসেছো?
— আমি তো কালকেই এসেছি নীল। কিন্তু তুমি অনেক রাতে ফিরেছো। তাই তোমার সাথে দেখা হয় নি।
— হ্যাঁ কালকে একটু দেরি হয়েছিল।
— তা কি খবর? কাজিনদের যে কেউ এভাবে ভুলে যেতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না!
— আসলে ফাইনাল পরীক্ষা সামনে আবার কোচিং নিয়ে ব্যস্ততা। তাই আর কি।
— হুম। তুমি তো আর বলবে না, আমিই জিজ্ঞেস করছি কেমন দেখাচ্ছে আমাকে?
— সুন্দর!
— শুধুই সুন্দর?
— মুনতাহা তোমাকে আমি শেষ যখন দেখেছিলাম তখন তুমি আরো ছোট ছিলে। এখন বড় হয়েছো। সেই সাথে আরো সুন্দর হয়েছো। আর হ্যাঁ শাড়িটাতে তোমাকে ভালো লাগছে।
— চা টা আরও ভালো হয়েছে। খেয়ে দেখতে পারো। এই কয়েক বছরে রান্নার হাতটাও পাঁকা হয়ে গেছে।
— হ্যাঁ তুমি বানিয়েছো খেয়ে তো অবশ্যই দেখবো। কিন্তু আগে ফ্রেশ হবো। তুমি নিচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মুনতাহা কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নীল এর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নীল কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
চলবে..