শ্রদ্ধেয় বাবা-Samsiha Jannat Mimi

0
700

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

শ্রদ্ধেয় বাবা,
আসসালামু আলাইকুম । বাবা যখন আমি ছোট ছিলাম তোমার এই প্রবাসে থাকা নিয়ে আমার অনেক অভিযোগ ছিল । তুমি কেন আমাদের সাথে থাকো না তাই নিয়ে । আমি তো তখন ওতো কিছু বুঝতাম না । তবে আমার খুব কষ্ট হতো । ছোট বেলার আমার বয়সী ছেলে মেয়েরা যখন বাবার হাত ধরে কোনো মেলায় যেত আমি মায়ের কাছে কান্না করতাম আমাকে কে মেলায় যাবে বলে…
মা বলতো তোর মামাকে বলেছি নিয়ে যাবে । যদি বলতাম না আমি বাবার সাথেই যাবো, বাবা কেন আসে না?? মা বলতো এবার ঘুরে আয় পরের বার আসবে । আমিও চুপ হয়ে যেতাম ।

যখন একটু বড় হলাম ৫ম শ্রেণীতে পড়ি কোনো বিয়ে বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবার যত্নাত্তি দেখলে নিজেকে একা লাগতো মা কে বলতাম আব্বু কে এভাবে কখন পাবো । মা বলতো ছোট মামার বিয়ের সময় তুমি আসবে তখন পুসিয়ে দেবে । আমি চুপ করে থাকতাম ওদের দিকে আর তাকাতাম না ।

কিন্তু বাবা তুমি তো বাড়ি এসে আমাকে কখনো সময় দাওনি । আমি সব সময় কান পেতে থাকতাম কখন তুমি আমাকে একটু ডেকে আদর করবে । বাবা তুমি যখন বাজার যাবার সময় আমার মাথায় হাত রেখে বলতে আমার প্রিয় মিষ্টি আনবে আমার তখন মনে হতো আমি আকাশে ভাসছি । কিন্তু তুমি যখনই আমাকে একবারও ডাকতে না খুব কান্না পেত আমার বাবা ।

বাবা তুমি দেশে আসার সময় আমার কিছু লাগবে কি না? আমি তখনই সব পেয়ে গেছি মনে হতো । সেই তুমি যখন বাড়ি আসলে যখন আমার মামাতো ভাইদের আদর করো আমার খুব হিংসে হতো বাবা । আমি যখন দেখলাম তুমি আমার পাওয়া সময় গুলো ওদের দাও আর মা তোমাকে বললে যখন বলতে, “মেয়ে কে ভালোবাসি বুঝতে দিলে মেয়েটা বকে যাবে” । আমি শুনেই সেদিন থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকলাম । মনে হতে থাকলো আমার বাবা অন্যদের বাবার মতো নয় । টিভিতে মীনা-রাজুর কার্টুন দেখলে মীনার বাবা মীনাকে আদর করছে দেখলে আমার খারাপ লাগতো, চোখ জোড়া কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখতাম । আর মনে হতো, “ইশশশশ যদি আমার বাবা একটু আমায় ভালোবাসতো ।”

বড় হবার পর বান্ধবীর বাবা কে তার সাথে ফ্রেন্ডলি মিশতে দেখলে আমার মনে তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হতো । কিন্তু ততোদিনে আমি নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছি । নিজেকে বোঝাতে শিখেছি, আমার বাবা একজন প্রবাসী । তিনি আমাদের সুখের জন্য সব কিছুকে উপেক্ষা করে সূদুর সে প্রবাসে থাকছেন । তিনি অন্য বাবাদের মতো নয় ।

কিন্তু বাবা, ছোট বেলার সেই মনটা তো আজও সেই একি রকম আছে বাবা । সেই মান-অভিমান আঁকড়ে ধরেই দিন কে দিন অভিমান অভিযোগের পাল্লাটা ভারি করেই চলেছে । বাবা!!! তুমি কী কখনোই বুঝবে না? বাবা কখনো তুমি জানবে এই অভিযোগ গুলো? তোমাকে ছাড়া ছোট বেলা, বড় বেলা দুটোই যে খুব কষ্টে আর একা কেটেছে ও কাটছে বাবা । বাবা কখনো কি সেই কাঙ্খিত বাবার মতো করে তোমাকে পাবো না?? তা না হলে তো সব অভিযোগ গুলো বাড়তেই থাকবে বাবা….

ইতি
তোমার মেয়ে
শামসিহা জান্নাত মিমি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে