শ্রদ্ধেয় জননী-উর্মি

0
448

# গল্পপোকা_চিঠি প্রতিযোগিতা_২০২০

শ্রদ্ধেয় জননী,
আমার সালাম নিও। আশা করি ভালো আছো। আমিও ভালো আছি, আমার জন্য চিন্তা করো না। আজকে তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা মা, গগনের কুঞ্জে মানব-মানবীরা কতটুকু ভালো থাকে?খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
সেইখানে কি ভূ-মন্ডলের ন্যায় ঝগড়া,মারপিট,হিংসা,প্রতারণা এসব কর্ম চলে?নাকি কানন কুঞ্জের পুষ্প সুবাসে মোহিত থাকে?

যখন শুনি ভূ-মন্ডলের মানবেরা প্রফুল্লচিত্তে গদ ভক্ষণ করে গঙ্গাপ্রাপ্তি পেয়েছে তখন মনে হয় দেবলোক খুব ভালো স্থান।যার কারণে মানবেরা তিক্ততায় আচ্ছন্ন গদ গ্রহণ করে হাসিমুখে ভূ-লোক ত্যাগ করে। আবার যখন দেখি মৃত্যুপথযাত্রীরা অশ্রুবিসর্জনের মাধ্যমে দেবলোক গমনের পথে তীব্র বিরোধীতা জানায় তখন মনে হয় ঐ স্থানটা খুব খারাপ যার কারণে উক্ত মানব সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছে। আমি এই প্রসঙ্গে বড্ড দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমার এই সংশয় তুমি অপনোদন করে দাও। আমারও যে মাঝে মাঝে ইচ্ছে জাগে তোমার দ্বারে চলে আসতে।
যখন জীবন তরী সুখ সাগরের স্রোতে ভাসমান থাকে তখন বেঁচে থাকার আগ্রহ জন্মায় কিন্তু জীবন তরী অকূল-পাথার সরণিতে দাঁড়িয়ে গেলে
পরলোকগমনের আকাঙ্ক্ষা উদয় হয়।
আচ্ছা মা,জাগ্রত প্রহরগুলোতে কি তুমি আমাকে স্মরণ করো?
গগন কুঞ্জে কীভাবে প্রতিটি প্রহর নিঃশেষ করো?
সেখানে কি তোমার আমার মতো বন্ধুমহল আছে?সব বন্ধুরা কি ভালো? নাকি খারাপ বন্ধুও আছে?
জানো মা, আমার বন্ধুমহলে অনেক বন্ধু আছে কিন্তু ভালো বন্ধু মাত্র দু’জন আছে।এই ভূ-লোকে ভালো বন্ধুর সংকটকাল চলছে।

তুমি চলে যাওয়ার পরে বাবা আমাদের বাসায় একটা তুলতুলে পুতুল বৌ এনেছে।পুতুল বৌ আমাকে খুব আদর করে। পুতুল বৌ যখন আমার সাথে গল্প করে তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে।
কালকে পুতুল বৌয়ের সাথে নতুন নানুবাড়িতে যাবো।ঐ বাড়ির কেউ আমাকে আদর করে না,সবাই ভীষন পচা।কিছুদিন আগে যখন পুতুল বৌয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন এক নতুন আন্টি আমার হাতে খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছিলো।এখনো কালশিটে পড়ে আছে।সেদিন আমি ভীষন কেদেঁছিলাম।

আমি এখন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করি।এখন আর পড়ায় কোনো ফাঁকিবাজি করি না। আমাকে পড়াশোনা করে অনেক টাকা উপার্জন করতে হবে।সেই টাকা দিয়ে একটা রকেট কিনবো।তারপর রকেটের ভিতর খাবার ভরে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিবো।পুতুল বৌ আমাকে বলেছে,তোমার সেখানে ভালো খাবার পাওয়া যায় না।
আমাদের স্কুলের গণিত শিক্ষক খুব বাজে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।কোন অজুহাত পেলেই আমার গায়ে হাত দিতে আসতো।একদিন আমি প্রতিবাদী সুরে মানা করেছিলাম আমাকে স্পর্শ করতে,সেদিন স্যার আমাকে বেত দিয়ে খুব পিটিয়েছিলো। আমার জ্বর এসে পড়েছিলো।এর দু’দিন পর স্কুলে গিয়ে শুনতে পেয়েছিলাম,’বজ্র্যপাতে স্যার মারা গেছে।’
স্যার আমার সাথে অন্যায় করেছিলো বলে তুমি আকাশ থেকে বজ্র্য নিক্ষেপ করেছিলে,তাই না?

সন্তানের অথান্তরমুহুর্তে মা’য়েরা ছায়া হয়ে পাশে থাকে। আর আমি তোমাকে রোদ-বৃষ্টিরূপে পেয়েছি সর্বদা। আমার সকল সফলতায় সকল সংকটাবস্থায় তোমাকে স্মরণ করি।তোমার অঙ্গ থেকে আমার উৎপত্তি,তাই সুখকর মুহুর্তগুলোতেও তোমাকে ভুলে থাকা সম্ভব নয়।

আরো অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পায়রা টিমটিম একটার বেশি পাতার ভার বহন করতে পারবে না তাই এখানেই ইস্তফা রেখা টানছি।লেখায় অন্তিমদশা এঁকেছি বলে মন খারাপ করো না।তোমাকে বলবো বলে অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি। আগেতো জানতাম না তুমি অম্বরপানে ছিলে,তাই চিঠি দিতে পারিনি।কিন্তু এখন থেকে রোজ তুমি একটা করে চিঠি পাবে।

এই চিঠিতে ব্যবহৃত প্রতিটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের উত্তর আমার চাই। আমি পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম,গগনে কোন গাছ-পালা নেই।তাই আমার প্রশ্নের উত্তরমালা লিখার জন্য খাতা-কলম পাবে না।সেজন্য আমি বেলুনে সুতো দিয়ে খাতা-কলম বেধেঁ পাঠিয়ে দিবো। আর শুনো, পত্রবাহক পায়রার গায়ে একটু তোমার হাতের পরশ মেখে দিও। আমি তোমার আদরের ঘ্রাণ নিবো।

ইতি
তোমার রাজকন্যা
উর্মি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে