শ্বাশুড়ি পর্বঃ৯

1
1166

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৯
.
.
বোরখা পড়াতে আলোর হাত, গলায় বেশ জ্বলছে। অয়ন অবশ্য বলেছে বোরখা পড়াতে সমস্যা হলে সালোয়ার কামিজ পড়েই যেতে। কিন্তু আলোর শরীরে দাগ গুলো তো স্পষ্ট, মানুষ ভালো চোখে নিবে না।
ঢিলাঢালা ভাবেই হিজাব পড়লো আলো৷ জিনিস পত্র বলতে আলোর কাপড় আর কিছু কসমেটিকস। অয়নের ব্যাগ সহ মোট দুটো ব্যাগ হলো। কিছুক্ষণ আগে আমিন এসে দুজনের টিকিট দিয়ে গেছে।
.
বাড়ি থেকে আসার সময় আলো যখন ওর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো আলোর সাথে উনি কথা বলে নি। অয়ন শুধু বলেছিলো
.
– মা! যে আলোকে তুমি আজ এত্ত দুচ্ছাই করলে ভবিষ্যৎে যে এই আলোর কাছেই আসতে হবে না এমন কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই। আমি আমার ছেলে হওয়ার দায়িত্ব পালন করবো। ভালো থেকো। আসছি বলবো না। আসছি বললে তো আবার ফিরে আসতে হবে কিন্তু আমি সহজে ফিরবো না। ভালো থেকো।
.
.
আলো যেদিন এ বাড়িতে প্রথম এসেছিলো সেদিন ওর চোখে পানি ছিলো আজ চলে যাচ্ছে তাও পানি। সংসার নামক মায়ায় সে বাধা পড়েছে কি না।
.
বাসে উঠে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করলো আলো। ঘুমের রেশ এখনো পুরোপুরি ভাবে কাটেনি। ঘুমিয়ে গেছে সে। হালকা খাবার নিয়েছে অয়ন গাড়ি ছাড়ার আগেই আলোকে এক হাত দিয়ে ধরে বসলো। আলো ঘুমিয়ে গেছে। অয়ন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি করে পারলো মেয়েটা এতটা সহ্য করতে? ও চাইলে বাড়ি ফিরে যেতে পারতো। ওর বাবা এ বিয়েকে বানোয়াট বলে দিব্যি চালিয়ে দিতে পারতো কিন্তু দাতে দাত চেপে ও ছিলো। শুধুই অয়নের জন্য। ভাবতেই অবাক লাগে।
পকেট থেকে ইয়ারফোন বের করে অয়ন গান শুনতে শুরু করলো। খুব পছন্দের একটা গান
.
.

Meri kismat ke har ek panne pe
Mere jeete ji baad marne ke
Mere har ik kal har ik lamhe me
Tu likh de mera usey
Har kahaani me saare qisson me
Dil ki duniya ke sacche rishton me
Zindagani ke saare hisso mein
Tu likh de mera usey
Aye Khuda aye Khuda jab bana uska hi bana
Aye Khuda aye Khuda jab bana uska hi bana

Uska hoon uss me hoon uss se hoon
Usi ka rehne de
Main toh pyaasa hoon hai
Dariya woh zariya woh jeene ka mere
Mujhe ghar de gali de shehar de
Usi ke naam ke
Kadam ye chale ya ruke ab usi ke vaaste
Dil mujhe de agar dard de uska par
Uski ho woh hasin goonje jo mera ghar
Aye Khuda aye Khuda jab bana uska hi bana
Aye Khuda aye Khuda jab bana uska hi bana
.
.
বাসা টা খুব একটা বড় না। দুইটা বেড রুম,একটা কিচেন, একটা বাথরুম আর একটা ডায়নিং স্পেস।অয়ন থাকতো ওর এক কলিগের সাথে। সে গত মাসেই বাসা ছেড়েছে। তাই ও সাবলেটে রুমমেট খুজছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভালোই হলো।
.
বাসায় তেমন কিছুই নেই। নিচে বিছানা পাতা। একটা কাপড় ঝুলানোর মতো র‍্যাক আর টুকটাক জিনিসপত্র।
মাত্র একটা প্লেট আর একটা গ্লাস। কিন্তু আলো ভিষণ খুশি৷ বাথরুমে আলোকে গোসলে ঢুকিয়ে অয়ন রান্না ঘরে কাজ করছে। আলো গোসল করে আসতেই ওর সামনে ভাত তুলে তাকিয়ে আছে।
.
-তুমি কখন রান্না করলে?
-যখন তুমি গোসলে ছিলে?
-আমি করতাম তো
-এই তুমি নতুন বউ না?
-জ্বী না! তিন মাস ছাড়িয়েছে
-কিন্তু এ বাসায় তো নতুন। সো নতুন বউয়ের মতো থাকবা।
.
আলো মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে আর অয়নের হাতে ভাত খাচ্ছে।
.
খাওয়া শেষে অয়ন বললো দুটো দিন অপেক্ষা করতে কারণ ও তো জানতো না যে আলো কে এভাবে নিয়ে আসবে তাহলে ঘর আগে থেকেই সাজিয়ে রাখতো আর যেহেতু ব্যাংক বন্ধ তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে।
.
আলো আবার বলে
-ওগো! এত সুখ আমার কপালে সইবে তো?
.
.
তিনদিন পর আলো অয়নের জন্য রান্না করছিলো। আজ অয়ন প্রথম অফিস গেলো আলো আসার পর। তাইতো রান্নার সুযোগ পেয়েছে। শরীরের জখম গুলো শুকালেও মনের গুলো দিব্যি তাজা। তাইতো রাতে কান্না করতে করতে জেগে উঠে।
.
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ আসায় আলো গিয়ে দরজা খুলে। অয়ন হাসি দিয়ে ওর মাথায় কাপড় দিয়ে দেয়৷
কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় জিনিসপত্র দিয়ে ভরে যায়। সব নিয়ে এসেছে অয়ন। কলমদানী থেকে শুরু করে কাটাচামচ সব।
.
-মিসেস! পাক্কা আড়াই লাখ টাকার জিনিস এখানে। জমিয়েছিলাম আপনার জন্য গহনা বানাবো বলে। প্রায় দু বছর যাবত কিন্তু…..
.
-লাগবে না। আপনি আছেন তো এটাই অনেক। চলেন আমাদের টোনাটুনির সংসার গুছিয়ে ফেলি?
-তার আগে বড্ড ক্ষুধা লেগেছে যে…
-ওহ হ্যা! রান্না করেছি তো।
– আজ না হয় বউয়ের হাতেই খাই? কাল থেকে আমি করবো….

.
.
.
ছেলের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না রাহেলা বেগম। এদিকে মেয়ের সংসার টা বুঝি ভেঙে গেলো। নাহ্! কিছু একটা করতে তো হবেই। আলোকে সে কোন দিন মাফ করবে না। আলোর জন্য এসব। আচ্ছা! আল্লাহ্ এমন কিছু কি করতে পারো না যাতে ওই মেয়েটা মরে যায়! আমিও শান্তি পাই।
.
.
চলবে।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে